তুরস্ক ২৭৬৬ সরকারি কর্মকর্তা এবং কর্মচারীকে সন্ত্রাসবাদের সাথে সম্পর্কের অভিযোগে বহিষ্কার করেছে। গতকাল রবিবার দুটি পৃথম গ্যাজেট প্রকাশের মাধ্যমে এ বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ৬৩৭ জন সামরিক, ৩৬০ জন আধা-সামরিক, ৬১ জন পুলিশ এবং ৪ জন কোস্টগার্ডের সদস্য। এছাড়াও আছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ৩৪১ জন সদস্য এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১৫০ জন সদস্য। আর বাকিরা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং কর্মচারী। ১৭টি প্রতিষ্ঠানকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, যাদের মধ্যে দুটি সংবাদপত্রও আছে।
গত বছরের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে তুরস্কের প্রশাসন এবং সামরিক বাহিনীতে যে ব্যাপক বিশুদ্ধিকরণ চালু হয়েছিল, তার ধারাবাহিকতায় এটি ছিল সর্বশেষ পদক্ষেপ।
জানা যাক এ সম্পর্কিত উল্লেখযোগ্য আরো কিছু তথ্য
- গ্যাজেটে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, যাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে তারা সবাই হয়তো ‘সন্ত্রাসী সংগঠনের’ সদস্য, অথবা তারা এমন কোনো সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিল, যারা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।
- গ্যাজেটে আরো উল্লেখ করা হয়, এখন থেকে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত বন্দীরা আদালতে কমলা এবং ধূসর বর্ণের পোশাক পরে উপস্থিত হবে। সম্প্রতি অভ্যুত্থানের অভিযোগে অভিযুক্ত এক ব্যক্তি আদালতে ‘হিরো’ লেখা টি-শার্ট পরে হাজির হয়েছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এর আগে বলেছিলেন, অভিযুক্তদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে কারাগারের বন্দীদের মতো কমলা রংয়ের পোশাক পরিধান করতে হবে।
- গত বছর তুরস্কে সংঘটিত ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত তুরস্কের সরকার ৫৫ হাজারেরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে এবং প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করেছে। এদের মধ্যে আছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং আদালতের বিচারকও।
- তুরস্কের অভিযোগ, এরা সবাই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তুর্কি ধর্মীয় নেতা ফেতহুল্লাহ গুলেনের সাথে সম্পর্কিত। তুরস্ক অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টার জন্য ফেতহুল্লাহ গুলেনকে দায়ী করে থাকে, যদিও গুলেন এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান রাষ্ট্রের অঙ্গ সংগঠনগুলোকে গুলেনের ‘ভাইরাস’ থেকে মুক্ত রাখার জন্য এই সকল বহিষ্কার এবং গ্রেপ্তারকে প্রয়োজনীয় হিসেবে বর্ণনা করেন।
- তবে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং তুরস্কের পশ্চিমা মিত্ররা অভিযোগ করে আসছে যে, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তার বিরুদ্ধে সংঘটিত ব্যর্থ অভ্যুত্থানকে কাজে লাগিয়ে মূলত তার বিরোধী মতকে দমন করার মাধ্যমে নিজের ক্ষমতাকে আরো পাকাপোক্ত করছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচে একে কর্তৃত্ববাদী সরকারের লক্ষণ বলে বর্ণনা করে।
- ইস্তাম্বুল থেকে মেতিন গুরকান নামে একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক আল-জাজিরাকে বলেন, এই ফরমানের মাধ্যমে বোঝা যায়, অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার ১৮ মাস পরেও তুরস্ক তার বিশুদ্ধিকরণ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তার মতে, তুরস্ক সেনাবাহিনীর কাঠামোগত কার্যকারিতার চেয়ে বরং একে গুলেনের প্রভাবমুক্ত করাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
- তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইয়েলদেরিম জানিয়েছেন, বিপুল সংখ্যক সরকারি চাকরিজীবীকে বহিষ্কার এবং গ্রেপ্তারের ফলে যেন কোনো প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য সরকার ২০১৮ সালে ১ লাখ ১০ হাজার নতুন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ করবে।
ফিচার ইমেজ- STR / AFP