জাতিসংঘের নতুন দ্বিবার্ষিক অর্থবছরের বাজেটে ২৮.৫ কোটি ডলারের বিশাল সংকোচন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দর কষাকষির ফলেই এই সংকোচনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি নিকি হ্যালি। গত রবিবার একে ঐতিহাসিক সংকোচন এবং সঠিক পথের দিকে পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করে তিনি জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের স্ফীত বাজেট সংকোচনের ব্যাপারে দরাদরি করেছিল।
জাতিসংঘের অদক্ষতা এবং অতিরিক্ত খরচের কথা সবার জানা আছে উল্লেখ করে নিকি হ্যালি বলেন, তারা অন্যদেরকে মার্কিন জনগণের উদারতার সুযোগ নিতে দেবেন না। তিনি আরো বলেন, এই বাজেট সংকোচনে তারা আপাতত খুশি, তবে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করে জাতিসংঘের দক্ষতা আরো বাড়ানোর ব্যাপারে তারা কাজ করে যাবেন।
চলুন এক নজরে জেনে নিই জাতিসংঘের বাজেট এবং এ বছর সেই বাজেট হ্রাস সংক্রান্ত কিছু উল্লেখযোগ্য তথ্য,
- জাতিসংঘের অর্থ পরিকল্পনা দ্বিবার্ষিক। সাধারণত প্রতি জোড় সংখ্যক বছরের জানুয়ারি মাসে পরবর্তী দুই অর্থ বছরের জন্য এ বাজেট অনুমোদিত হয়। গত ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরের জন্য এ বাজেটের পরিমাণ ছিল ৫৪০ কোটি মার্কিন ডলার।
- জাতিসংঘের বাজেটের সবচেয়ে বড় অংশ আসে যু্ক্তরাষ্ট্র থেকে। যুক্তরাষ্ট্র একাই জাতিসংঘের মোট বাজেটের প্রায় ২২ শতাংশ প্রদান করে থাকে। এই বাজেট সংকোচনের ফলে তাই যুক্তরাষ্ট্রকেও পূর্বের তুলনায় কম অনুদান দিতে হবে।
- জাতিসংঘের শান্তি কমিটির বাজেট, যা মূল বাজেট থেকে পৃথক, তার ২৮ শতাংশও আসে যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান থেকে। ট্রাম্প প্রশাসনের চাপের মুখে এ বছর সেই বাজেটেও ৬০ কোটি মার্কিন ডলার সংকোচন করা হয়েছিল।
- সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তা বাতিলের খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছিল। ঐ অধিবেশনের পূর্বেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন, যেসব রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভোট দেবে, তাদের প্রতি আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। নিকি হ্যালিও সে সময় হুঁশিয়ারি করেছিলেন, যারা তাদের বিরুদ্ধে ভোট দেবে, তাদের নাম লিপিবদ্ধ করে রাখা হবে।
- যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি সত্ত্বেও সাধারণ পরিষদে বিশাল ব্যবধানে খসড়া প্রস্তাবটি পাশ হয়। উপস্থিত ১৭২টি রাষ্ট্রের মধ্যে ১২৮টি রাষ্ট্রই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছিল। প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল মাত্র ৯টি রাষ্ট্র। বাকি ৩৫টি রাষ্ট্র ভোটদান থেকে বিরত ছিল।
- যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের চাপে ইতোমধ্যে উক্ত ৯টি রাষ্ট্রের একটি, গুয়াতেমালা তাদের ইসরায়েলস্থ রাজধানী তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চেক প্রজাতন্ত্র জানিয়েছে যে তারাও রাজধানী স্থানান্তরের কথা চিন্তা করছে।
- তবে জাতিসংঘের বাজেট সংকোচনের উপর গত সপ্তাহের সাধারণ পরিষদের ভোটাভুটির ফলাফলের সরাসরি প্রভাব না-ও থাকতে পারে। কারণ ডিসেম্বরের শুরুতেই জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুটেরেস পূর্বের বাজেটের চেয়ে ২০ কোটি ডলার সংকোচনের কথা বলেছিলেন। সে সময়ই যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল আরো ২৫ কোটি ডলার হ্রাস করতে।
- শেষ পর্যন্ত দর কষাকষির মাধ্যমে সর্বমোট ২৮.৫ কোটি হ্রাস করে নতুন বাজেট অনুমোদনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, যা পূর্বের বাজেটের চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ কম। বাজেট কমানোর বাইরেও যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘকে দেয়া অনুদানের পরিমাণ আরো হ্রাস করবে কিনা, সে ব্যাপারে পরিষ্কার কিছু জানানো হয়নি।
ফিচার ইমেজ- KENA BETANCUR/ AFP