![](https://assets.roar.media/Bangla-News/2017/12/newstatesman.com-2.png?w=1200)
ভুয়া ছবি নিয়ে রোর বাংলায় এর আগেও একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। ‘যে ভুয়া ছবিগুলো সারা বিশ্বকে ধোঁকা দিয়েছিল‘ শিরোনামের ঐ লেখায় স্থান পেয়েছিল বিভিন্ন সময়ের বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত ভুয়া ছবিগুলো। কিন্তু চলুন আজ দেখে নিই শুধুমাত্র ২০১৭ সালে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভুয়া ছবি, যেগুলোকে মানুষ সত্য ভেবে ধোঁকা খেয়েছিল।
বিশ্বনেতা ভ্লাদিমির পুতিন
![](https://assets.roar.media/Bangla-News/2017/12/DENzE2ZW0AI1DPA-701x432.jpg)
জি২০ সম্মেলনে পুতিনের ভুয়া ছবি; Source: Twitter
এ বছরের সবচেয়ে ভাইরাল ফেক ছবি ছিল সম্ভবত রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এই ছবিটি। ছবিতে দেখা যায় জি২০ সম্মেলনে পুতিনকে মধ্যমণি করে গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে আলোচনা করছেন বিশ্বের অন্যান্য শক্তিশালী রাষ্ট্রের নেতারা – তুরস্কের এরদোয়ান, জার্মানির মার্কেল এবং খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবিটি ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং পুতিনের ভক্তরা এটাকে শেয়ার করতে থাকে এই বলে যে, যুক্তরাষ্ট্র না, বরং রাশিয়াই এখন বিশ্বের প্রধান পরাশক্তি। বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিকও ছবিটিকে সত্য মনে করে ‘যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বহীন এক বিশ্ব’ শিরোনামে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করেছিল।
বলাই বাহুল্য, ছবিটি দেখতে অত্যন্ত নিখুঁত মনে হলেও এটি ফটোশপ করা একটি ছবি। মূল ছবিটিতে পুতিনের আসনটি ফাঁকা ছিল। সেখানে বসার কথা ছিল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র। গেটি ইমেজের জন্য মূল ছবিটি তুলেছিলেন ফটোগ্রাফার কায়হান ওজার। এছাড়াও কাছাকাছি সময়ে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে অ্যাসোশিয়েটেড প্রেসের মার্কাস শ্রাইবার সহ অন্যান্য ফটোগ্রাফাররাও একাধিক ছবি তুলেছিলেন।
![](https://assets.roar.media/Bangla-News/2017/12/DEImBvzXcAA1cOW-701x432.jpg)
জি২০ সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের আসল ছবিটি; Source: Kayhan Ozer/ Getty Images
ছবিটি কে সম্পাদনা করে অথবা সর্বপ্রথম কে সম্পাদনা করে, সেটা জানা যায়নি, তবে প্রথম দিকে ছবিটি শেয়ার করা বিখ্যাত ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন রাশিয়ান সাংবাদিক ভ্লাদিমির সলোভিভ। পরে অবশ্য সমালোচনার মুখে পড়ে তিনি ছবিটি তার টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ডিলিট করে দেন। একদিকে যেমন প্রচুর মানুষ না বুঝে ছবিটি শেয়ার করে, অন্যদিকে ছবিটির অনেকগুলো ব্যাঙ্গাত্মক সংস্করণও তৈরি হয় এবং মানুষ মজা করে সেগুলোও শেয়ার করতে থাকে।
নরওয়ের বাসে নিকাব পরা নারীরা
![](https://assets.roar.media/Bangla-News/2017/12/20414339_10154636634075248_8867720759349583471_o-701x703.jpg)
নরওয়ের বাসের সীট, যাতে বোরকা এবং নিকাব পরা নারীদের ছবি বলে ভুল করেছিল মানুষ; Source: Facebook
নরওয়ের ‘ফাদারল্যান্ড ফার্স্ট’ সংগঠনটি একটি অভিভাসন বিরোধী সংগঠন। এ বছরের জুলাই মাসে কেউ একজন সংগঠনটির ১৩,০০০ সদস্য বিশিষ্ট ফেসবুক গ্রুপে এই ছবিটি পোস্ট করে জানতে চায়, সদস্যদের কার কী মত। যদিও ছবিটি মূলত একটি বাসের ছয়টি খালি সিটের ছবি, কিন্তু গ্রুপটির ইসলামবিদ্বেষী সদস্যদের অধিকাংশই একে বোরকা এবং নিকাব পরা ছয় নারীর ছবি বলে ভুল করে।
গ্রুপটির সদস্যরা ছবিটির নিচে একের পর এক ইসলাম বিদ্বেষী মন্তব্য করতে শুরু করে। মুসলমানরা কিভাবে নরওয়েতে অনুপ্রবেশ করে নরওয়ের সংস্কৃতি নষ্ট করে দিচ্ছে, সেটা নিয়ে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে। এই নারীদের বোরকার নিচে বোমা লুকানো আছে কি না, সেটা নিয়েও অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করে। নরওয়ের এক সাবেক এমপি গ্রুপটির সদস্যদের এরকম প্রতিক্রিয়াশীল মন্তব্যগুলোর স্ক্রিনশট ফেসবুকে প্রকাশ করলে ছবিটি ভাইরাল হয়ে যায় এবং গ্রুপটি প্রচন্ড সমালোচনার সম্মুখীন হয়।
সিএনএনের কাকতালীয় ব্রেকিং নিউজ
![](https://assets.roar.media/Bangla-News/2017/12/Melissa-Jo-Peltier-701x394.jpg)
সিএনএনের ভুয়া ব্রেকিং নিউজ; Source: Melissa Jo Peltier
স্টিভ ব্যানন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ উপদেষ্টা এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এনএসসি) প্রিন্সিপাল কমিটির সদস্য। এপ্রিল মাসে ব্যাননের দায়িত্ব হ্রাস করা হয় এবং তাকে এনএসসির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সে সময় ইন্টারনেটে এই ছবিটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ছবিটি সিএনএনের একটি ব্রেকিং নিউজ স্ক্রোল চলাকালীন মুহূর্তের স্ক্রিনশট, যে সময় কাকতালীয়ভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং খ্রিস্টানদের ধর্মীয় উৎসবের একটি প্রতীক ইস্টার বানিকে দেখানো হচ্ছিল।
এমি অ্যাওয়ার্ড জয়ী টিভি ব্যক্তিত্ব মেলিসা জো পেলটায়ার এই ছবিটি টুইট করেন এই বলে যে, কখনো কখনো ব্রেকিং নিউজগুলো একেবারে সঠিক সময়ে হাজির হয়। তিনি বোঝাতে চান, ব্যাননের ক্ষমতা হ্রাস করানোর সাথে ইস্টার বানির ছবিটি একই মুহূর্তে প্রচারিত হওয়াটা সিএনএনের একটি অনিচ্ছাকৃত ভুল ছিল, যার মাধ্যমে ব্যাননের ভূমিকাটি খরগোশের সাথে তুলনীয় হয়ে ওঠে।
Sometimes Breaking News comes at exactly the perfect moment: pic.twitter.com/0SNczBHCzU
— Melissa Jo Peltier (@MelissaJPeltier) April 17, 2017
মেলিসার টুইট বার্তাটি ৩৫ হাজার বার রিটুইট হয় এবং ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায়, এটি রাজনৈতিক ব্যঙ্গাত্মক টিভি শো ‘দ্য ডেইলি শো উইথ ট্রেভর নোয়া‘র সোশ্যাল মিডিয়া টিমের তৈরি একটি সম্পাদিত ছবি। ছবিটির উপরের বাম কোণে লক্ষ্য করলে ‘দ্য ডেইলি শো’র একটি জলছাপও দেখা যাবে।
এলিজাবেথ টেইলর এবং মেরিলিন মনরো
![](https://assets.roar.media/Bangla-News/2017/12/twitter1-701x645.jpg)
এলিজাবেথ টেইলর এবং মেরিলিন মনরো; Source: Twitter Historyinmoment
![](https://assets.roar.media/Bangla-News/2017/12/snopes-701x231.jpg)
যে পৃথক দুটি ছবইর সমন্বয়ে তৈরি হয়েছিল ভুয়া ছবিটি; Source: snopes.com
এলিজাবেথ টেইলর এবং মেরিলিন মনরো সমসাময়িক কালের দুই বিখ্যাত অভিনয় শিল্পী এবং মডেল। তাদের দুজনের পাশাপাশি দাঁড়ানো একটি ছবি এ বছর ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। কে সর্বপ্রথম ছবিটি পোস্ট করে, সেটা অবশ্য জানা যায়নি, তবে জনপ্রিয় টুইটার অ্যাকাউন্ট ‘হিস্টোরী ইন মোমেন্টস‘ সহ অনেক ওয়েব সাইটই সত্য ভেবে ছবিটি প্রচার করে।
কিন্তু ছবির সত্যতা যাচাইকারী ওয়েব সাইট ‘হোক্স আই‘ প্রমাণ করে যে, ছবিটি আসলে দুটি পৃথক ছবির সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছিল। এলিজাবেথ টেইলরের ছবিটি তোলা হয়েছিল ১৯৪৮ সালে, যদিও তা প্রথম প্রকাশিত হয় টেইলরের মৃত্যুর পর, ২০১১ সালে। অন্যদিকে মেরিলিন মনরোর ছবিটি তোলা হয়েছিল ১৯৫০ সালে, যা প্রথম প্রকাশিত হয় ২০০৯ সালে।
রাতের আকাশে উড়ন্ত গ্যাস বেলুন
![](https://assets.roar.media/Bangla-News/2017/12/C7-Olm1VUAMn5iV-701x468.jpg)
তারকাখচিত রাতের আকাশে গ্যাসবেলুন; Source: Husham Alasadi/ 500px.com
রাতের আকাশের ছবি অনেকের কাছেই অত্যন্ত প্রিয়। এই ছবিটিও ‘স্পেস সাপ্লাই‘, ‘অ্যাস্ট্রো ফটোগ্রাফি‘ সহ বিভিন্ন জনপ্রিয় টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা হয় এবং হাজার হাজার বার রিটুইট করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অসাধারণ দৃষ্টিনন্দন এই ছবিটি আসলে আসল ছবি না।
ছবির সত্যতা যাচাই বিষয়ক টুইটার অ্যাকাউন্ট ‘পিক পেড্যান্ট‘ ব্যাখ্যা করেন, ছবিটি আসল হতে পারে না এই কারণে যে, এরকম উজ্জ্বল তারা ক্যামেরায় ধরার জন্য অনেক দীর্ঘ এক্সপোজারের প্রয়োজন হয়। এত দীর্ঘ সময় ধরে ছবি তুললে শুধুমাত্র স্থির বস্তুর ছবিই পরিস্কার আসবে, অতি ধীরে চলন্ত বস্তুর ছবিও ঝাপসা দেখা যাবে। অথচ এই ছবিতে বেলুনগুলোর ছবিও অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে ধরা পড়েছে। পরবর্তীতে ছবিটির চিত্রগ্রাহক হুসাম আল-আসাদি নিজেও স্বীকার করেন, ছবিটি আসলে দুটি ভিন্ন ভিন্ন ছবির সমন্বয়ে তৈরি।
সৌদি মিডিয়াতে মার্কেলের চুল
![](https://assets.roar.media/Bangla-News/2017/12/capture-jpg-700x-1.jpg)
টুইটারে ছড়িয়ে পড়া অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের ভুয়া ছবি; Source: stepfeed.com
![](https://assets.roar.media/Bangla-News/2017/12/capture-jpg-700x.jpg)
খাস্সা নিউজ থেকে প্রকাশিত ছবি, শুধুই মজা করার জন্য; Source: stepfeed.com
এ বছর মে মাসে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল সৌদি আরব সফরে গিয়েছিলেন। সে সময় এই ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দাবি করা হয়, সৌদি আরবে গিয়ে মাথায় স্কার্ফ না পরার কারণে সৌদি টিভি চ্যানেলে মার্কেলকে দেখানোর সময় তার চুলের অংশটুকু ঘোলাটে করে দেখানো হয়েছিল। এ সংক্রান্ত টুইটগুলো হাজার হাজার বার রিটুইট হয়। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, ছবিটি আসলে ভুয়া। সৌদি টিভি চ্যানেলগুলোতে এবং সংবাদ মাধ্যমগুলোতে অবিকৃতভাবেই মার্কেলের ছবি প্রচারিত এবং প্রকাশিত হয়েছিল।
এছাড়া মার্কেলই প্রথম নারী ছিলেন না, যিনি স্কার্ফ ছাড়া সৌদি আরব ভ্রমণ করেছিলেন। এর আগে মিশেল ওবামা, থেরেসা মে সহ আরো অনেকেই স্কার্ফ ছাড়াই সৌদি বাদশাহর সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। সে সময়ও অবিকৃতভাবেই তাদের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। মার্কেলের সম্পাদিত ছবিটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ‘খাস্সা নিউজ‘ নামের একটি বিদ্রুপাত্মক ফেসবুক পেজে, যারা ছবিটির উপর লিখে দিয়েছিল যে, এটি শুধুমাত্র মজা করার উদ্দেশ্যেই তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য ওয়েব সাইট এবং টুইটার ব্যবহারকারীরা সেটা যাচাই না করেই সত্যি ভেবে ছবিটি শেয়ার করে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তায় হাঙ্গর
![](https://assets.roar.media/Bangla-News/2017/12/sss1-701x657.png)
হিউস্টনের রাস্তায় হাঙ্গরের ছবি সংক্রান্ত ভুয়া টুইট; Source: Twitter
![](https://assets.roar.media/Bangla-News/2017/12/sharkkayak-701x469.jpg)
ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হাঙ্গরের আসল ছবি; Source: snopes.com
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের হিউস্টনে এ বছর হারিকেন হার্ভির পর প্রবল বর্ষণের ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সে সময় অন্য অনেক আসল ছবির সাথে সাথে ভাইরাল হয়ে যায় এই ভুয়া ছবিটিও। এতে দাবি করা হয়, হিউস্টনের ফ্রিওয়ের ছবি এটি, যেখানে একটি হাঙ্গরকে সাঁতার কাটতে দেখা যায়।
জলাবদ্ধ পানিতে হাঙ্গরের ছবি অবশ্য এবারই প্রথম না, এর আগেও বিভিন্ন সময় ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও হিউস্টনের এ ছবিটি ছড়িয়ে পড়ে, এবং এবারও বিপুল সংখ্যক মানুষ এটি বিশ্বাস করে শেয়ার করে।ভুয়া সংবাদ এবং ছবি যাচাই করার ওয়েব সাইট স্নুপস আরো আগেই প্রমাণ করেছিল যে, এই বিখ্যাত হাঙ্গরের ছবিটি নেওয়া হয়েছিল ২০০৫ সালে প্রকাশিত একটি ম্যাগাজিনের ছবি থেকে।
ফিচার ইমেজ- newstatesman.com