গরমে সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরে এক গ্লাস ঠান্ডা ফলের শরবতে কিন্তু প্রাণ জুড়াবে সহজেই। আবার স্বাস্থ্যের দিকটাও রক্ষা পাবে এতে। তাছাড়া গ্রীষ্মকালকে তো বলাই হয় ফলের কাল। এমন সময়ে বিভিন্ন ফলের শরবত না খেলে কি চলে? তাই আজ আপনাদের জন্য দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ফলের শরবতের রেসিপি।
তরমুজের শরবত
এটি বানাতে প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো মধ্যে থাকছে তরমুজের টুকরো, চিনি, বিটলবণ, পুদিনা পাতা, লেবুর রস ও বরফ।
প্রণালি: প্রথমে দুই কাপ পরিমাণ তরমুজ টুকরো নিয়ে বিচি ছাড়িয়ে নিতে হবে। এবার ব্লেন্ডারে টুকরোগুলো ৩০ সেকেন্ড ব্লেন্ড করে তাতে দুই চা চামচ লেবুর রস ও অর্ধেক চা চামচ বিটলবণ দিয়ে আবার ব্লেন্ড করে নিন। বারবার আলাদা আলাদা উপাদান দিয়ে ব্লেন্ড করলে একদিকে যেমন মিশ্রণ ভালো হয়, অন্যদিকে তরমুজের টুকরোগুলো আরো মিহি হয়। এবার এতে দুই চা চামচ চিনি ও সামান্য পুদিনা পাতা দিয়ে আবার ব্লেন্ড করে নিতে হবে। পুদিনা পাতা দেওয়াটা ঐচ্ছিক, ইচ্ছা করলে বাদও দেওয়া যেতে পারে।
এখন এতে চার টুকরো বরফ দিয়ে শেষবারের মতো ব্লেন্ড করে নিতে হবে। আর কেউ যদি চিনি খেতে না চায় তবে জিরোক্যাল বা চিনি ছাড়াও বানিয়ে ফেলতে পারেন এই শরবতটি। চিনি ছাড়াও খেতে কিন্তু মন্দ হবে না।
এটি গ্লাসে ঢেলে সরাসরি পান করা যায়। আবার ছাঁকনিতে ছেঁকে নিয়ে সুন্দর গ্লাসে তরমুজের একটি টুকরো দিয়ে সাজিয়েও পরিবেশন করতে পারেন অতিথিদের সামনে।
কাঁচা আমের শরবত
কাঁচা আমের সময় তো এখনই। খুব সহজেই এখন পেয়ে যাবেন কাঁচা আম। এই কাঁচা আমের আচার যেমন জিভে জল এনে দেয়, তেমনি বাইরের কড়া রোদ থেকে এসে কাঁচা আমের শরবতও কিন্তু প্রাণ জুড়ায়। আসুন জেনে নিই কাঁচা আমের দুটি শরবতের রেসিপি।
১) কাঁচা আম ও পুদিনা পাতার শরবত
এই শরবতটি তৈরি করতে প্রয়োজন হবে এক কাপ খোসা ছাড়ানো কাঁচা আম, চার টেবিল চামচ চিনি, এক চিমটি লবণ, অর্ধেক চা চামচ বিটলবণ, দশটি পুদিনা পাতা, এক টেবিল চামচ ধনিয়াপাতা কুঁচি, একটি কাঁচা মরিচ, দুই চা চামচ লেবুর রস, এক চা চামচ ভাজা জিরা গুঁড়া ও ঠাণ্ডা পানি।
প্রণালি: প্রথমে ব্লেন্ডার জগে এক কাপ কাঁচা আম নিয়ে তাতে চার টেবিল চামচ চিনি, বিটলবণ ও সাধারণ লবণ যোগ করে এক কাপ পানি দিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। চিনির পরিমাণ আম কতোটুকু টক ও কেমন স্বাদের শরবত আপনি খেতে চান তার ওপর নির্ভর করবে। প্রথম ব্লেন্ড করার সময় এক কাপের বেশি পানি দেওয়া ঠিক হবে না, কেননা বেশি পানিতে আম ভালোভাবে ব্লেন্ড হয় না। এবার এতে পুদিনাপাতা, ধনিয়াপাতা, কাঁচামরিচ কুঁচি, জিরা গুঁড়া ও লেবুর রস দিয়ে আবার ভালোভাবে পেস্ট করে নিতে হবে। ভালো মিহি পেস্ট তৈরি হয়ে গেলে এতে দুই গ্লাস ঠান্ডা পানি দিয়ে আবার ব্লেন্ড করে নিয়ে পরিবেশন করুন ঠান্ডা, মজাদার পুদিনাপাতা ও কাঁচা আমের শরবত।
২) কাঁচা আমের টক-ঝাল-মিষ্টি শরবত
এটি বানানোর জন্য প্রয়োজন হবে এক কাপ খোসা ছাড়ানো কাঁচা আম, ছয় চা চামচ বা স্বাদমতো চিনি, এক চা চামচ বিটলবণ, অর্ধেক চা চামচ কাসুন্দি, এক চা চামচ ভাজা জিরা গুঁড়ো, এক চা চামচ ধনিয়া পাতা কুঁচি, দুটি কাঁচা মরিচ ও ঠান্ডা পানি।
প্রণালি: এক কাপ কাঁচা আম ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিতে হবে। আমের টুকরোগুলো ঝুরি করে নিলে ভালো হয়। ব্লেন্ডার জগে আমের কুঁচি ও ধনে পাতা নিয়ে অল্প একটু পানি দিয়ে পেস্ট করে নিতে হবে। এরপর এতে একে একে কাসুন্দি, জিরা গুঁড়ো, কাঁচা মরিচ কুঁচি, বিটলবণ, চিনি ও দুই গ্লাস ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। ব্যাস, অত্যন্ত সহজেই প্রস্তুত হয়ে গেল কাঁচা আমের টক-ঝাল-মিষ্টি শরবত। চিনি ও মরিচের পরিমাণ নিজের স্বাদমতোও নির্ধারণ করা যায়।
কাঁচা আমের এই দুটি শরবত একদিকে যেমন বেশ পরিচিত, অন্যদিকে যথেষ্ট জনপ্রিয়ও। কিন্তু এছাড়াও বানানো যায় কাঁচা আমের ভিন্নধর্মী বিভিন্ন শরবত। ঘরোয়া উপাদানেই একটু ভিন্ন প্রস্তুত প্রণালিতে তৈরি কাঁচা আমের একটু অন্যরকম শরবতের স্বাদ আমরা কয়জন নিয়েছি? স্বাদের বৈচিত্র্য আনতে আনতে চলুন জেনে নেওয়া যাক কাঁচা আমের একটু ভিন্নধর্মী শরবতের রেসিপি।
পোড়া আমের শরবত
পোড়া আমের শরবত তৈরির জন্য দরকার হবে একটি মাঝারি আকারের কাঁচা আম, এক চা চামচ বিটলবণ, অর্ধেক চা চামচ গোল মরিচের গুঁড়ো, ছয় চা চামচ বা স্বাদমতো চিনি, অর্ধেক চা চামচ জিরার গুঁড়ো ও কয়েকটি পুদিনা পাতা।
প্রথমে আমটি ধুয়ে মাঝে মাঝে খোসাসহ চিরে নিতে হবে। এবার আস্ত আম চুলায় পুড়িয়ে নিতে হবে। আমের খোসা কালো হয়ে আসলে বোঝা যাবে যে শরবতের জন্য আম প্রস্তুত হয়ে গেছে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন ভিতরের আম পুড়ে না যায়। এখন আমটি ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে একদম ঠান্ডা হয়ে যাওয়া পর্যন্ত। অন্যদিকে শরবতে অন্যান্য মসলার জন্য জিরা ভেজে এক চামচ পরিমাণ গুঁড়ো করে নিতে হবে। এতে বিটলবণ, গোলমরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে নিতে হবে। এখন আমের খোসা ছাড়িয়ে ভালো করে ধুয়ে নিয়ে মাংসল অংশটা ব্লেন্ডার জগে নিয়ে তাতে একে একে চিনি, মেশানো জিরা, বিটলবণ ও গোল মরিচ গুঁড়ো, কয়েকটা পুদিনা পাতা দিয়ে এক কাপ পানি দিয়ে পেস্ট করে নিতে হবে। মিহি পেস্ট তৈরি হয়ে গেলে তাতে দুই থেকে তিন কাপ ঠান্ডা পানি দিয়ে আবার ব্লেন্ড করে নিতে হবে। কয়েকটি বরফের টুকরোও মিশিয়ে নেওয়া যায়। একটি ছাঁকনিতে ছেঁকে নিলেই প্রস্তুত হয়ে যাবে পোড়া আমের শরবত।
এই শরবতে স্বাদ আরেকটু বাড়িয়ে নেওয়ার জন্য পরিবেশনেও আনতে পারেন ভিন্নতা। সুন্দর গ্লাসের মুখের ধার ঘেঁষে লাগিয়ে নিন লেবুর রস। এবার এটি একটি বাটিতে রাখা গুঁড়ো মরিচ ও লবণের মিশ্রণে ডুবিয়ে নিন। এবার সাবধানে গ্লাসের ভিতর শরবত ঢেলে পরিবেশন করুন এই গরমে মজাদার, ঠান্ডা, পোড়া আমের শরবত।
তেঁতুলের শরবত
গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে ও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে তেঁতুলের শরবতের তুলনা নেই। আবার ভারী খাবারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দূর করতেও ভূমিকা রাখে তেঁতুলের শরবত। বাইরে থেকে ঘরে ফিরেও এক গ্লাস ঠান্ডা তেঁতুলের শরবত ক্লান্তি দূর করে আমাদের করে তুলবে তরতাজা। আসুন জেনে নিই মজাদার তেঁতুলের শরবতের একটি রেসিপি।
তেঁতুল-গুঁড়ের শরবত
এটি তৈরি করতে লাগবে আড়াইশ গ্রাম পাকা তেঁতুল, এক টেবিল খেজুরের গুঁড় ও এক চা চামচ বিটলবণ। সাধারণ খাবার লবণ ও চিনি দিয়েও এই শরবত করা যায়, তবে তাতে গুঁড় ও বিটলবণের মতো স্বাদ হয় না।
প্রণালি: তেঁতুল পানিতে আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। পানিতে ভিজিয়ে না রাখলে তেঁতুল গলানো সহজ হয় না। ফ্রিজে রাখা তেঁতুল হলে দুই থেকে তিন ঘন্টা বা সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হয়। আধা ঘন্টা পরে হাত দিয়ে তেঁতুলের শাঁস পানিতে গুলিয়ে নিয়ে বিচি ও তেঁতুলগোলা পানি আলাদা করে নিতে হবে। এবার অন্য একটি পাত্রে স্বাভাবিক পানিতে খেজুরের গুঁড় ভালোভাবে গুলিয়ে নিয়ে এতে বিটলবণ যোগ করে মিশিয়ে নিতে হবে। এতে তেঁতুলের পানি যোগ করে শরবতের জন্য প্রয়োজনীয় পানি যোগ করে ছেঁকে নিন। প্রস্তুত হয়ে গেল তেঁতুল গুঁড়ের শরবত। এই শরবত দুদিন পর্যন্ত ফ্রীজে রেখে খাওয়া যায়।
এই গরমে সামনে আসছে রোজা। রোজার টেবিলও কিন্তু ভরে তুলতে পারেন এমন মজাদার ও স্বাস্থ্যকর সব ফলের শরবতে।
ফিচার ইমেজ: banglatribune.com