আমরা যথার্থতা বজায় রাখতে চেয়েছি, কিন্তু তার মানে এই নয় যে সিনেমাটা দিয়ে আমরা ইতিহাস শেখাতে যাব।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের পার্ল হারবার আক্রমণ ও তৎপরবর্তী মার্কিন প্রতিক্রিয়ামূলক ঘটনাবলী নিয়ে বানানো চলচ্চিত্র পার্ল হারবার নিয়ে এমন মন্তব্যই করেছেন সিনেমাটির একজন প্রযোজক জেরি ব্রাখেইমার। কিন্তু পার্ল হারবার সিনেমায় ইতিহাস বিকৃতির মাত্রা এতটাই মারাত্মক যে, বলা যায়, পরিচালক মাইকেল বে সেটাকে একেবারে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। ত্রিভুজ প্রেমের দ্বন্দ্বের সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বন্দ্বের মিশেলে বানানো পার্ল হারবার ইতিহাসবিদ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভেটেরানদের যারপরনাই হতাশ করেছে। কিন্তু এতসব বিতর্কের পরও সিনেমাটি ঠিকই বক্স অফিস থেকে পুঁজি উঠিয়ে নিয়েছে।
পার্ল হারবার-এর গল্প এগিয়েছে দুজন পাইলট রেফ ম্যাককলি (বেন অ্যাফ্লেক) ও ড্যানিয়েল ওয়াকার (জশ হার্টনেট) এবং তাদের প্রেমিকা ইভিলিন জনসনকে (কেট বেকিনসলে) কেন্দ্র করে। রেফ ও ড্যানি বাল্যবন্ধু, দুজনই পাইলট। পার্ল হারবারে নিযুক্ত থাকার সুবাদে রেফের সাথে পরিচয় হয় নার্স ইভিলিনের, তারা একে অপরের প্রেমে পড়ে যায়।
১৯৪১ সাল; দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ততদিনে বেশ জমে উঠেছে। রেফ ম্যাককলি ব্রিটিশ রয়াল এয়ার ফোর্সের অধীনে ঈগল স্কোয়াড্রনের হয়ে যুদ্ধ করতে যুক্তরাজ্যে যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত যুদ্ধে তার বিমান ভূপাতিত হয়। এ খবর শুনে ভেঙে পড়ে ইভিলিন ও ড্যানি দুজনেই। একজনের প্রেমিক হারানোর দুঃখ, আর অপরজনের প্রিয় বন্ধুকে হারানোর দুঃখ-এই দুই দুঃখের ধারা একসাথে মিলিত হয় যখন ইভিলিন ও ড্যানি একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়। দুজনেই শোককে ভালোবাসায় রূপান্তর করে নতুন জীবনের সন্ধান করে। কিন্তু সব লেজেগোবরে পাকিয়ে যায় যখন ১৯৪১ সালের ৬ ডিসেম্বর রাতে রেফ ফিরে আসে।
সিনেমার একপর্যায়ে পরিচালক কৌশলে দেখিয়ে দেন, রেফ আসলে ডগফাইটে মরেনি, তাকে উদ্ধার করা হয়েছিল। কিন্তু এবার কী হবে? ইভিলিন কি ড্যানির প্রতিই অনুরক্ত থাকবে? তাহলে রেফের সাথে তার যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল সেটা যে মিথ্যে হয়ে যাবে। আবার এই মুহূর্তে ড্যানিকে ত্যাগ করাও তো সম্ভব নয়, সেটা কি আদৌ উচিত হবে? সিনেমার এই অবস্থায় এসে দর্শকও কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগবেন এই ভেবে যে, পার্ল হারবার কি কোনো যুদ্ধের সিনেমা নাকি একেবারে নিখাদ রোমান্টিক গল্প। কিন্তু না, দর্শককে এমন সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করতে পরিচালক পরের দৃশ্যেই রগরগে যুদ্ধের দৃশ্য অর্থাৎ হারবারের ওপর জাপানী আচানক আক্রমণের ঘটনা নিয়ে এলেন। রগরগে বলছি, কারণ আসলেই পার্ল হারবার-এর এই আক্রমণ দৃশ্যটি একধরনের ‘ওয়ার পর্ন’, যথেষ্ট উত্তেজক। পুরো পার্ল হারবার-এর এই একটি ব্যাপারই প্রশংসিত হয়েছে। মাইকেল বে বেশ দক্ষতার সাথেই পার্ল হারবার আক্রমণের ঘটনা দীর্ঘ পঁয়ত্রিশ মিনিট ধরে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সিনেমায় দর্শক মূলত কী দেখতে চায়? এটা বলা কঠিন, কারণ ব্যক্তিভেদে রুচি ও চাহিদার ভিন্নতার প্রসঙ্গ আসতেই পারে। কিন্তু এ কথা বলা যায় যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সিনেমায় মূল আলোকপাত করা হয় যুদ্ধ বা সংঘর্ষের ওপর, ঐ সময়ের সার্বিক সামরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর। কিন্তু পরিচালক মাইকেল বে হয়তো কিছুটা ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তার সিনেমাটি বানাতে চেয়েছেন। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন, যুদ্ধের সাথে প্রেমের মিশেলে একখানা ফিল্ম হবে বটে! হ্যাঁ, এটা সত্যি, যুদ্ধ ও প্রেম দুটো দুই মেরুর বাসিন্দা। এই দুটো অনেকটা থিসিস-অ্যান্টিথিসিসের মতো (সিনেমার ক্ষেত্রে)। কিন্তু তা-ই বলে এই দুটোকে কোনো ওয়ার ফিল্মের ভেতর যুগপৎ আনা যাবে না, মানে এই দুটো উপাদানকে সিনেমায় সিনথেসাইজ করা যাবে না, ব্যাপারটা মোটেই তা নয়।
আমরা দেখেছি গ্রেভ অভ দ্য ফায়ারফ্লাইজ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সিনেমা হলেও পুরো গল্পটি দুই ভাই-বোনের মানবিক প্রেম ও অপত্য স্নেহের গল্প। এই সিনেমায় (অ্যানিমে) যুদ্ধের কোনো বালাই নেই, বরং দেখানো হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ সময়ে জাপানী জনগণের করুণ অবস্থা, তাদের টিকে থাকার গল্প। গ্রেভ অভ দ্য ফায়ারফ্লাইজ যদি এদিক থেকে সফল হতে পারে, তাহলে মাইকেল বে কেন তার সিনেমায় ব্যর্থ? ব্যর্থ এজন্য, কারণ পার্ল হারবার পুঁজি উঠিয়ে নিতে পারলেও বোদ্ধা ও সমালোচক মহলে কোনো প্রশংসা লাভ করেনি। তার গল্পে ত্রিভুজ প্রেমের সংকট থাকলেও সেটাকে সার্থক ও যৌক্তিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেননি। যেমন- রেফের মৃত্যুর খবরের পর ইভিলিন খুব দ্রুতই ড্যানির প্রতি আসক্ত হয়ে যায়, যা অনেক দর্শক হজম করে নিতে পারেনি। একটি দৃশ্যে ইভিলিনকে বলতে শোনা যায়, আমি হয়তো ড্যানিকেই ভালোবাসি, কিন্তু জীবনে একটা দিনও আসবে না যেদিন আমি রেফের কথা একবারের জন্যও চিন্তা করব না। কোনো পুরুষই নিশ্চয়ই চাইবে না তার স্ত্রী মনে মনে অন্য কোনো পুরুষকে কামনা করুক।
হলিউডের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আরেকটি ক্লাসিক চলচ্চিত্র কাসাব্লাঙ্কা‘র সাথে পার্ল হারবার-এর এদিক থেকে কিছুটা মিল আছে। কাসাব্লাঙ্কায় এক অস্থিরচিত্ত, দ্বিধাজড়িত নায়িকাকে দেখানো হয়েছিল যে তার প্রাক্তন প্রেমিককে পুনরায় খুঁজে পেয়ে ঠিক করতে পারছিল না সে তার নিজের স্বামীর সাথে ঘর-সংসার করবে নাকি প্রেমিকের জীবনে আবারও ফিরে যাবে। আমাদের ইভিলিনও একসময় বুঝে উঠতে পারছিলেন না তিনি রেফকে ভালোবাসেন নাকি ড্যানিকে। পুরো সিনেমাজুড়েই দর্শকও ইভিলিনের প্রেমের জোয়ার আদতে কার দিকে বইছে তা ঠাওরাতে পারবেন না।
তবে প্রেমের অ্যাখ্যান বলতে গিয়ে একেবারেই অসফল হননি মাইকেল বে। কয়েকটি দৃশ্যে পরিচালক বেশ ভাবাবেগ ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। রেফের জন্য দর্শকের মনে করুণার উদ্রেক হতে পারে, কারণ সিনেমার একপর্যায়ে সে ব্যর্থ প্রেমিকে পরিণত হয়। ইভিলিনকে উদ্দেশ্য করে তাকে বলতে শোনা যায়,
আমি দূরে চলে যাচ্ছি। আমি তোমার কাছ থেকে আর কিচ্ছু চাইবো না।
এখানে রেফের দুঃখে দর্শকের প্রেমিক মন কাতর হতেই পারে।
চলচ্চিত্র সমালোচক রজার এবার্ট তার সমালোচনায় লিখেছিলেন, ‘পার্ল হারবার সিনেমাটি মোটাদাগে দুই ঘন্টার সিনেমা হলেও পরিচালক এটাকে টেনেটুনে তিন ঘণ্টায় দাঁড় করিয়েছেন’। তিন ঘন্টা তিন মিনিটের পার্ল হারবার-এর সাথে পার্ল হারবার আক্রমণের ওপর নিয়ে বানানো আরেক ফিল্ম ‘তোরা! তোরা! তোরা!‘র তুলনা করা যাক।
১৯৭০ সালে নির্মিত আড়াই ঘন্টার তোরা! তোরা! তোরা! বক্স অফিস থেকে বেশি আয় করতে না পারলেও ঐতিহাসিক সত্যতা খুব ভালোভাবেই বজায় রাখতে পেরেছিল। এই সিনেমাতে শুধু মূল ঘটনাবলীর ওপর আলোকপাত করা হয়েছিল বলে অনেক সমালোচক সিনেমার গল্পকে দুর্বল বলে সমালোচনা করেছিলেন। পার্ল হারবার-এ মাইকেল বে সমালোচকদের মুখে চুনকালি দিতে একেবারে ত্রিভুজ প্রেমের গল্প নিয়ে এলেন। কিন্তু লেবু বেশি কচলালে যেমন তেতো হয়, তেমনি তার সিনেমায় প্রেমকে তিনি এত মাখিয়েছেন যে, তা শেষপর্যন্ত দর্শক-সমালোচকের বিরক্তির কারণই হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সবচেয়ে হতাশার বিষয় হচ্ছে, সিনেমাটি দেখে মনে হয়, পরিচালক বে বা প্রযোজক ব্রাখেইমার কেউই পার্ল হারবারে বাস্তবে কী হয়েছিল তার বিন্দুবিসর্গও জানেন না। নয়/এগারোর পরবর্তী সময়ে মুক্তি দিয়ে, টাইটানিক সিনেমা থেকে কিছুটা নির্যাস নিয়ে তিনি সাধারণ দর্শকের কাছে সিনেমাটি বিক্রি করার চেষ্টা করেছেন এবং বক্স অফিসের হিসেব দেখলে বলা যায়, তিনি যথেষ্ট সফল হয়েছেন। প্রযোজক ব্রাখেইমার অবশ্য স্বীকার করেই নিয়েছিলেন, পার্ল হারবারের ইতিহাস নিয়ে তার বিশেষ কোনো জ্ঞান নেই। ‘হাই স্কুল ছাড়ার পর আমি আর ইতিহাস ছুঁয়েও দেখিনি।’
পার্ল হারবার সিনেমায় নির্লজ্জভাবে ইতিহাসের পিন্ডি চটকেছেন মাইকেল বে। তিনি এমন সব ঐতিহাসিক সত্যকে অস্বীকার করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন যেগুলো ক্ষমারও অযোগ্য। সিনেমার রেফ ও ড্যানির চরিত্র দুটোর মশলা বাস্তব থেকেই সংগ্রহ করেছেন মাইকেল বে। কিন্তু সেজন্য কোনোপ্রকার স্বীকৃতি প্রকাশ করেননি তিনি। জর্জ ওয়েলচ ও কেনেথ টেইলর পার্ল হারবারে আক্রমণের সময় দুটো প্লেন নিয়ে জাপানীদের মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং কয়েকটি জাপানী ফাইটারকে ভূপাতিত করেছিলেন। স্বাভাবিকভাবে তাদের কৃতিত্বকে বিনা কৃতজ্ঞতায় তার সিনেমার দুই প্রধান চরিত্রের সাথে যোগ করে দিয়ে বে আসল বীরদের একপ্রকার হেয়ই করেছেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সিনেমার সাথে যুদ্ধের ভেটেরান, প্রত্যক্ষদর্শী সবার আবেগ জড়িয়ে থাকে। তাই এ ধরনের ফিল্মে ইতিহাসকে ঠিকমতো তুলে ধরার সর্বোচ্চ প্রয়াস করা হয়। কিন্তু মাইকেল বে সেসবের ধার ধারেননি, তার আগাগোড়া লক্ষ্যই ছিল সিনেমাটি থেকে বেশ টু-পাইস কামানো। এখানে সিনেমার কয়েকটি ভুলের কথা উল্লেখ করা হলো।
১) সিনেমার শুরুর দৃশ্যপট ছিল ১৯২৩ সালের টেনেসির একটি ফার্মে ছোট্ট রেফ ও ড্যানি একটি বাইপ্লেনে বসে খেলা করছে। এ দৃশ্যে দেখানো হয় রেফের বাবা একটি ক্রপ-ডাস্টার প্লেন ওড়াচ্ছেন। বস্তুত, প্রথম ক্রপ-ডাস্টার প্লেন বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করা হয় ১৯৩০ সালের দিকে।
২) রেফ ম্যাককলিকে দেখানো হয়- সে ব্রিটিশদের হয়ে যুদ্ধ করার জন্য রয়াল এয়ার ফোর্সে যোগ দিয়েছে। সিনেমার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্লট এটি। কারণ রয়াল এয়ার ফোর্সে যোগ দেওয়ার কারণেই সে ইভিলিনের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, গল্পের মোড় ঘুরে যায়। কিন্তু বাস্তব ইতিহাসে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি, কারণ পার্ল হারবার আক্রমণের আগপর্যন্ত আমেরিকা অফিসিয়ালি নিরপেক্ষ ছিল।
৩) সিনেমার একটি দৃশ্যে দেখা যায়, ড্যানি ইভিলিনকে সঙ্গে নিয়ে প্লেন চালাচ্ছে। এই সময় একটি ম্যানুভার দেখানো হয়, যাকে সিনেমায় ‘ব্যারেল রোল’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এটি ছিল ‘এলেরন রোল’।
৪) পার্ল হারবার আক্রমণের সময় সিনেমায় দেখানো হয় জাপানী পাইলটরা হাসপাতালের ওপর আক্রমণ করছে। কিন্তু বাস্তবে ৭ই ডিসেম্বর এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। জাপানী পাইলটরা ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো হাসপাতাল আক্রমণ করেনি। শুধু ইভিলিন নার্স হওয়ার কারণে তার সাথে আক্রমণের ঘটনাকে সংযুক্ত করার জন্য এমন সত্যবিকৃতি করেছেন মাইকেল বে।
৫) মাইকেল বে দেখিয়েছেন, পার্ল হারবার আক্রমণের খবর শুনে প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট প্রচন্ড অবাক হন ও মানসিকভাবে ধাক্কা খান। কিন্তু বাস্তবতা হলো রুজভেল্ট আক্রমণের খবর তার ঘন্টাখানেক আগেই জানতে পেরেছিলেন।
৬) পার্ল হারবারের ঘটনার প্রতিআক্রমণ হিসেবে ডুলিটল রেইড পরিচালনা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মাইকেল বে পার্ল হারবার-এ দেখিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট তার জেনারেলদের রাজি করাচ্ছেন অপারেশন ডুলিটল এর জন্য। কিন্তু বাস্তবে এর উল্টোটাই ঘটেছিল। মার্কিন জেনারেলরাই এই সুইসাইড মিশনটি পরিচালনা করার জন্য প্রেসিডেন্টকে রাজি করিয়েছিলেন।
৭) অপারেশন ডুলিটল পরিচালনা করার সময় কোনো রেডিও ট্রান্সমিশন ছিল না, কিন্তু সিনেমায় দেখানো হয়েছে পাইলটরা বেজ কমান্ড সেন্টারের সাথে রেডিও যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে।
৮) ডুলিটল রেইডে নিহত কোনো বৈমানিকের লাশ প্রাথমিকভাবে আমেরিকায় ফিরিয়ে আনা হয়নি, কিন্তু সিনেমায় ঠিক এমনটাই দেখানো হয়েছে।
৯) এবং পুরো সিনেমায় এমন অনেক প্লেন দেখানো হয়েছিল যেগুলো ঐসময় ছিলই না। এমনকি অনেক যুদ্ধজাহাজের ডিজাইনেও ভুল ছিল।
এসব ছাড়াও পুরো সিনমাজুড়ে এরকম অসংখ্য কারিগরি ও ইতিহাস সংক্রান্ত ভুল রয়েছে।
সবমিলিয়ে অবশেষে একটা কথা বলতেই হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মানবসভ্যতার ইতিহাসে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। এই মহাযুদ্ধে লাখো মানুষের মৃত্যু হয়েছে, লাখো মানুষ আত্মীয়-স্বজন হারিয়েছেন। সুতরাং এমন সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে সিনেমা বানালে তার ঐতিহাসিক সত্যতা নিয়ে সচেতন থাকা উচিত। সিনেমায় আগাগোড়া সত্যতা থাকতে হবে ব্যাপারটা মোটেই এমন নয়। গল্পের স্বার্থেই কিছুটা অলীকের আশ্রয় নেয়া যেতে পারে। কিন্তু তা-ই বলে শুধু ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে, প্রোপাগান্ডা চালানো বা গ্ল্যামারাইজেশনের জন্য সিনেমায় সত্যের অপলাপ হওয়া উচিত নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে পার্ল হারবার জাতীয় সিনেমা নয়, বরং সেভিং প্রাইভেট রায়ান–এর মতো সিনেমা তৈরি হওয়া উচিত, যেখানে মানবতার চিত্রায়ণ হবে সার্থকভাবে।