বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় গবেষণালব্ধ সাফল্যের সর্বোচ্চ স্বীকৃতির পর্যায় ‘নোবেল পুরস্কার’। প্রত্যেক গবেষক ও বিজ্ঞানীর কর্মজীবনের পরম আরাধ্য এই নোবেল। প্রতি বছরই রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান, শান্তি ও অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা মানুষদের এ পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে।
কিন্তু এখানেও লিঙ্গ-বৈষম্য প্রকটভাবে পরিলক্ষিত। এখন পর্যন্ত মাত্র ৩ শতাংশ নারী বিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন। তবে গত এক দশকে তার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ শতাংশে। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার মাঝে পদার্থবিজ্ঞানের মর্যাদা অনেক বেশি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আজ অব্দি বিজ্ঞানের এই শাখায় মাত্র তিনজন নারী নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। একজন বিখ্যাত পদার্থবিদ মেরি কুরি (১৯০৩)। সম্প্রতি, ২০১৮ সালে, কানাডার ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড ৫৫ বছর পর একবিংশ শতাব্দীর প্রথম নারী বিজ্ঞানী হিসেবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তবে আজ আমরা মূলত এই দুজনের মধ্যবর্তী সময়ে নোবেল অর্জনকারী নারী পদার্থবিদকে নিয়ে আলোচনা করব। তিনি জার্মান বংশোদ্ভূত আমেরিকান নারী পদার্থবিজ্ঞানী এবং বিংশ শতাব্দীর সর্বশেষ নোবেলজয়ী মারিয়া গোয়েপার্ট মায়ার।
১৯০৬ সালের ২৮ জুন আপার সিলিসিয়ার (বর্তমান জার্মানি) কাট্টোউইটজ শহরে মারিয়ার জন্ম। তার বাবা ফ্রেডেরিক গোয়েপার্ট ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তার মা মারিয়া নী উলফ ছিলেন পুরোদস্তুর গৃহিণী। ১৯১০ সালে মারিয়ার বাবা গটিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশুরোগ বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। এরই সুবাদে সপরিবারে তারা গটিংগেন শহরে আসেন ।
এখানেই মারিয়ার বর্ণিল শিক্ষাজীবনের সূচনা ঘটে। তিনি প্রথমে ‘Höhere Technische in Göttingen’ স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯২১ সালে তিনি ফ্রয়েন্সটুডিয়াম নামে এক বেসরকারি হাই স্কুলে ভর্তি হন। নারী অধিকার-কর্মীদের দ্বারা পরিচালিত এই স্কুলের মূল লক্ষ্য ছিল স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপযোগী করে গড়ে তোলা। সতের বছর বয়সে মারিয়া জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশ নেন। এই পরীক্ষায় পাশের মাধ্যমে তার উচ্চ শিক্ষা লাভের স্বপ্ন পূরণ হয়।
১৯২৪ সালে মারিয়া তার বাবার কর্মস্থল গটিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে ভর্তি হন। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি দশজনের মাঝে একজন নারী শিক্ষার্থী ছিল। সেই সময় গণিত বিষয়ে ছাত্রী বা শিক্ষিকা ছিল বেশ দুর্লভ। গণিতের কোন কোন ক্ষেত্রে নারীরা অবদান রাখতে পারবে সেটাও নিশ্চিত ছিল না। তাই কর্মসংস্থান সংকটের আশঙ্কায় অনেক নারীই গণিতে পড়তে অনাগ্রহী ছিল। এমনকি তখন গটিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতের মাত্র একজন নারী অধ্যাপক ছিলেন। তবে ভর্তি হওয়ার পর মারিয়া বুঝতে পারেন গণিতের চেয়ে বরং পদার্থবিজ্ঞানেই তার আগ্রহ বেশি।
এরই ফলশ্রুতিতে ১৯৩০ সালে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের জন্য গবেষণা শুরু করেন। তার গবেষণার মূল বিষয় ছিল পরমাণুকেন্দ্রিক। কোনো অণু বা পরমাণু একই বা পৃথক কম্পাঙ্কের ২টি ফোটনকে শোষণ করে নিম্ন শক্তিস্তর থেকে উচ্চ শক্তিস্তরে যেতে পারে কি না সেটাই ছিল তার গবেষণার বিষয়। তাত্ত্বিকভাবে তার অনুসন্ধানটি সফল হলেও তখনকার সময়ে তার পরীক্ষামূলক ফলাফল বের করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবে লেজার উদ্ভাবনের পর ১৯৬১ সালে গবেষণাগারে এর সত্যতা মেলে। তাই তার এই অসামান্য কীর্তির স্মরণে তার নামের আদ্যক্ষর অনুসারে অণু বা পরমাণুর ২টি ফোটন শোষণের সম্ভাব্যতার এককের নাম রাখা হয়েছে ‘GM’ (1 GM = 10−50 cm4 s photon−1)। তবে মারিয়া এই সাফল্যের জন্য বিখ্যাত জার্মান গণিতবিদ ও পদার্থবিজ্ঞানী ম্যাক্স বর্নের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ ছিলেন। তার নির্দেশনাতেই মারিয়া পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে প্রভূত জ্ঞানলাভ করেন।
পিএইচডি গবেষণাকালে মারিয়া জেমস ফ্রাঙ্কের গবেষণা সহযোগী আমেরিকান বিজ্ঞানী জোসেফ এডওয়ার্ড মায়ারের প্রেমে পড়ে যান। সেই প্রেম পরিপূর্ণতা পায় ১৯৩০ সালের ১৯ জানুয়ারি। বিয়ের পর মারিয়া তার স্বামীর সাথে স্বদেশ ছেড়ে আমেরিকায় পাড়ি জমান। তবে প্রবাসে তার কর্মজীবনের শুরুটা ভালো ছিল না। তিনি জোসেফের সাথে বাল্টিমোরে অবস্থিত জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের চেষ্টা করেন। তবে প্রফেসরের স্ত্রী হিসেবে তাকে শিক্ষিকা হিসেবে নেয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানায়। শেষমেষ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের জার্মান অনুবাদকদের সহকারী হিসেবে যোগ দেন। তার বেতন খুব কম ছিল। তবে তিনি তাতে দমে যাননি। সীমিত সুযোগের মাঝেও তিনি গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকেন। এরই ফলস্বরূপ ১৯৩৫ সালে তিনি ডাবল বিটা ক্ষয়ের উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন।
তৎকালে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে তেমন গবেষণা হত না। কিন্তু মারিয়া খ্যাতনামা অস্ট্রিয়ান-আমেরিকান পদার্থবিদ কার্ল ফার্ডিনান্ড হার্জফিল্ডের সুনজরে পড়েন। হার্জফিল্ড এবং স্বামীর অনুপ্রেরণায় তিনি রাসায়নিক পদার্থবিদ্যায় গবেষণা শুরু করেন। বিভিন্ন জৈব অণুর বর্ণালি নিয়ে তিনি হার্জফিল্ড এবং স্বামীর সহায়তায় বেশ কিছু পেপার প্রকাশ করেন।
দীর্ঘদিন প্রচেষ্টার পর মারিয়া কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি চাকরি পান। বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের চেয়ারম্যান তার জন্য অফিস বরাদ্দ দেন। কিন্তু তাকে সেখানে কাজের জন্য কোনো পারিশ্রমিক প্রদান করা হত না। সম্পূর্ণ অবৈতনিকভাবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে তার গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকেন। এর মাঝে হ্যারল্ড উরি এবং বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী এনরিকো ফার্মির সাথে তার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। বলা বাহুল্য, এই এনরিকো ফার্মিকেই ‘নিউক্লিয়ার যুগের স্থপতি’ বলা হয়ে থাকে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে তিনিই সর্বপ্রথম নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর তৈরি করেন।
১৯৪১ সালের ডিসেম্বরে মারিয়া বেতনভুক্ত খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে সারাহ লরেন্স কলেজে যোগ দেন। ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমা তৈরির গোপন মিশন ‘ম্যানহাটান প্রজেক্ট’-এ অংশ নেন।
মারিয়ার মূল কাজ ছিল ইউরেনিয়াম-২৩৫ আইসোটোপ থেকে প্রাকৃতিক বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম পৃথক করা। বিষয়টি সহজ বলে মনে হলেও গবেষকদের কাছে ছিল সেটা বড়ই দুঃসাধ্য। কারণ ইউরেনিয়াম-২৩৫ আইসোটোপে মাত্র ০.৭২ শতাংশ প্রাকৃতিক ইউরেনিয়াম রয়েছে। এত ক্ষুদ্র পরিমাণ অংশ শনাক্ত ও পৃথকীকরণ খুবই কঠিন কাজ। এই বিষয়ে কাজ করতে গিয়ে মারিয়া ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লুরাইডের রাসায়নিক এবং তাপগতিবিদ্যার ধর্মসমূহ অবলোকন করেন। তিনি আলোকরাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে আইসোটোপ পৃথক করার পরামর্শ দেন। তার সেই তত্ত্ব সেকালে বাস্তবে প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি। তবে লেজার রশ্মির আবির্ভাবে আলোর সাহায্যে আইসোটোপ থেকে প্রাকৃতিক মৌল পৃথক করা সম্ভব হয়েছে। এই সময় তিনি টেলার সুপার বোমের অবতারণাকারী এডওয়ার্ড টেলারের সান্নিধ্যে আসেন। টেলারের সুপার বোম তৈরিতেও তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল।
১৯৪৬ সালে তিনি শিকাগোতে চলে আসেন। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পদার্থবিজ্ঞানের স্বেচ্ছাসেবী সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। এছাড়াও নিউক্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞানের জ্ঞান থাকার কারণে তাকে আর্গন ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির খণ্ডকালীন গবেষক হিসেবেও নির্বাচিত করা হয়।
আর্গন ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময় তিনি তার জীবনের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কারটি করেন। ১৯৫০ সালে বিভিন্ন আইসোটোপের স্থিতিশীলতা নিয়ে গবেষণাকালে তিনি নিউক্লিয়াসের গঠন নিয়ে জগদ্বিখ্যাত একটি মডেল প্রকাশ করেন। সেটি ‘নিউক্লিয়ার শেল মডেল’ নামে বিজ্ঞানমহলে সুপরিচিত। তার এই মডেল অনুসারে পরমাণুর নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরে থাকা সুনির্দিষ্ট সংখ্যক নিউক্লিয়ন দ্বারা (নিউট্রন আর প্রোটনকে একত্রে নিউক্লিয়ন বলে) পরমাণুর স্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়। এছাড়াও তিনি এই মডেলের সাহায্যে কোনো স্থিতিশীল পরমাণুর নিউক্লিয়াসে বিদ্যমান প্রোটন বা নিউট্রনের সংখ্যাও নির্ণয় করতে সক্ষম হন। বিখ্যাত হাঙ্গেরিয়ান বংশোদ্ভূত আমেরিকান পদার্থবিদ ইউজিন উইগনার সেই সংখ্যাগুলোর নাম দেন ‘ম্যাজিক নাম্বার’ বা জাদুকরী সংখ্যা। সেই সংখ্যাগুলো হলো ২, ৮, ২০, ২৮, ৫০, ৮২ ও ১২৬। কোনো পরমাণুর নিউক্লিয়াসে এই সংখ্যাগুলোর যেকোনো একটি সংখ্যার সমপরিমাণ প্রোটন বা নিউট্রন থাকলেই পরমাণুটি স্থিতিশীল বলে গণ্য হবে। তবে উইগনার এই মডেলের কার্যকারিতা নিয়ে কিছুটা সন্দিহান ছিলেন।
মারিয়ার সমসাময়িক কালে আরও তিন জার্মান বিজ্ঞানী অটো হ্যাক্সেল, জেন্সেন এবং সুএস এই একই বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন এবং একই ফলাফলে উপনীত হন। ফলে তার অনুসন্ধান সঠিক বলে স্বীকৃতি পায়। ১৯৫০ সালে মারিয়া গোয়েপার্ট মায়ার তার স্বদেশী বিজ্ঞানী হ্যান্স জেন্সেনের সাথে দেখা করেন। ১৯৫৫ সালে তারা সম্মিলিতভাবে ‘Elementary Theory of Nuclear Shell Structure’ নামে তাদের উভয়ের গবেষণালব্ধ ফলাফল নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেন। তদানীন্তন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের দুজন শীর্ষ বিজ্ঞানীর এই মেলবন্ধন সত্যিই প্রশংসনীয়।
এই সাড়া জাগানো গবেষণার জন্য ১৯৬৩ সালে মারিয়া গোপার্ট মায়ার, জেন্সেন এবং উইগনারকে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। মেরি কুরির পর দ্বিতীয় নারী হিসেবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন মারিয়া। শুধু তা-ই নয়, আমেরিকান নারী হিসেবে তিনি প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র নোবেলজয়ী পদার্থবিদ।
মারিয়া ১৯৬০ সালে সান ডিয়েগোতে অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণকালীন অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। যোগ দেয়ার কিছুদিনের মাঝেই তিনি স্ট্রোক করেন। দৈহিক দুর্বলতা নিয়েও তিনি বেশ কয়েক বছর শিক্ষকতা করেন। এমনকি গবেষণাকর্মের সাথেও যুক্ত ছিলেন। অসুস্থ থাকাকালেই তিনি ১৯৬৫ সালে আমেরিকান আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স একাডেমির ফেলো নির্বাচিত হন। কিন্তু অবশেষে শারীরিক অসুস্থতার কাছে হার মেনে ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ৬৫ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সান ডিয়েগোর এল কেমিনো মেমোরিয়াল পার্কে তাকে সমাহিত করা হয়।
মারিয়া গোয়েপার্ট মায়ার মারা গেলেও পদার্থবিজ্ঞানীরা এখনও পরম শ্রদ্ধাভরে তাকে স্মরণ করেন। তার মৃত্যুর পর আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটি ‘মারিয়া গোয়েপার্ট মায়ার অ্যাওয়ার্ড’ নামে একটি পদক চালু করে। আমেরিকায় পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনকারী নারী পদার্থবিদদের মাঝে একজনকে এই পদকে ভূষিত করা হয়। পদকবিজয়ী নারীরা অর্থের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ৪টি গুরুত্বপূর্ণ ইনস্টিটিউটে তাদের গবেষণার উপর বক্তব্য দেয়ার সুযোগ লাভ করেন। তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটি আর্গন ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিকে একটি ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে ঘোষণা দেয়। আর্গন ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিও তার সম্মানার্থে প্রতিবছর একজন বিশিষ্ট নারী বিজ্ঞানী বা প্রকৌশলীকে পুরস্কার প্রদান করে।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তার স্মৃতি স্মরণে বার্ষিক মারিয়া গোয়েপার্ট মায়ার সম্মেলনের আয়োজন করে থাকে। এই সম্মেলনে নারী গবেষকরা বিজ্ঞানের সমসাময়িক বিষয়াদি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেন। এছাড়াও তার নামানুসারে শুক্র গ্রহে বিদ্যমান ৩৫ কিলোমিটার ব্যাসের একটি গর্তের নামকরণ করা হয়েছে।
১৯৯৬ সালে তার নাম ন্যাশনাল উইমেন্স হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১১ সালে আমেরিকার বিজ্ঞানীদের ছবি সম্বলিত পোস্টস্ট্যাম্পেও তার ছবি ছাপা হয়। তার রচিত গবেষণাপত্রগুলো ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইসেল লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, মারিয়া এবং তার স্বামী জোসেফ মায়ারের সম্মানে বিশ্ববিদ্যালয়টির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ভবনটির নাম রাখা হয়েছে ‘মায়ার হল’।
গবেষক হিসেবে মারিয়া ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী। তিনি কাজকে প্রচণ্ড ভালবাসতেন। তাই শত বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে, এমনকি কোনো ধরনের অর্থলাভের আশা ছাড়াই তিনি গবেষণা অব্যাহত রাখেন। তিনি কাজের মুহূর্তকে নোবেলপ্রাপ্তির সময়ের চেয়ে গুরুত্বারোপ করে বলেছিলেন, “পুরস্কার জেতার তৃপ্তি কাজে মগ্ন থাকার আনন্দের অর্ধেকের সমানও হয় না।“
বিংশ শতাব্দীর পুরুষতান্ত্রিক বিজ্ঞান সমাজে নিজেকে একজন সফল গবেষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মারিয়া গোয়েপার্ট মায়ারের সংগ্রামের গল্প ভবিষ্যৎ নারী বিজ্ঞানীদের যুগ যুগ ধরে অনুপ্রাণিত করবে।