দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল অক্ষশক্তি এবং মিত্রশক্তির মধ্যে। অক্ষশক্তির প্রধান সদস্য রাষ্ট্রগুলো ছিল জার্মানি, ইতালি ও জাপান। অন্যদিকে, মিত্রশক্তির প্রধান সদস্য রাষ্ট্রগুলো ছিল ব্রিটেন, ফ্রান্স, তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। অর্থাৎ এই যুদ্ধের সময় ব্রিটেন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল মিত্ররাষ্ট্র, এবং তারা একই পক্ষে যুদ্ধ করছিল। কিন্তু যদি বলা হয়, এই যুদ্ধ চলাকালে ব্রিটিশরা অন্তত ২,০০০ সোভিয়েত সৈন্যকে হত্যা করেছিল, তাহলে কেমন হবে? বাস্তবে এই ঘটনাটিই ঘটেছিল ১৯৪৪ সালের ২৭ নভেম্বর, উত্তর ইউরোপীয়/স্ক্যান্ডিনেভীয় রাষ্ট্র নরওয়ের জলসীমায়।
২৭ নভেম্বর, ১৯৪৪। সেদিন সকালে ব্রিটিশ এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ‘এইচএমএস ইমপ্ল্যাকেবল’–এর (HMS Implacable) অন্তর্ভুক্ত একটি রিকনিস্যান্স বিমান (Reconnaissance aircraft) উত্তর নরওয়ের নিকটবর্তী জোত্তা ও রুসোয়া দ্বীপদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে একটি জার্মান কনভয়কে দেখতে পায়। কনভয়টিতে ছিল একটি বৃহৎ পরিবহন জাহাজ ‘এমএস রিগেল’ এবং দুইটি প্যাট্রোল বোট। কনভয়টি দক্ষিণ দিকে কোনো গন্তব্যস্থলের দিকে যাচ্ছিল। সঙ্গে সঙ্গে এইচএমএস ইমপ্ল্যাকেবল থেকে ব্রিটিশ বিমান বহর উড্ডয়ন করে এবং কনভয়টির ওপর আক্রমণ চালায়। কিন্তু ব্রিটিশ বৈমানিকদের জানা ছিল না, তারা মূলত একটা বড় ধরনের ভুল করতে যাচ্ছে!
‘এমএস রিগেল’ ছিল একটি নরউইজীয় মালবাহী জাহাজ। ১৯২৪ সালে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে জাহাজটি নির্মিত হয়। ৩,৮২৮ টন ওজনবিশিষ্ট এই জাহাজটির গতি ছিল ১১ নট। জাহাজটির নামকরণ করা হয়েছিল ‘ওরিয়ন’ নক্ষত্রমণ্ডলীর সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র ‘রিগেল’–এর নামানুসারে। ‘বের্গেন স্টিমশিপ কোম্পানি’র মালিকানাধীন এই জাহাজটি বাণিজ্যিক দ্রব্যাদি পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪০ সালের এপ্রিলে জার্মানি নরওয়ে দখল করে নেয় এবং একই বছরের আগস্টে নরওয়ের দখলদার জার্মান প্রশাসন রিগেলকে জার্মান সামরিক বাহিনীর জন্য বাজেয়াপ্ত করে।
জার্মানদের অধীনে প্রথমে রিগেলের ক্রুরা ছিল নরউইজীয় এবং এটিতে নরওয়ের পতাকা ওড়ানো হতো। কিন্তু ১৯৪০ সালের নভেম্বরে জাহাজটির নরউইজীয় ক্রুদের অপসারণ করে তদস্থলে জার্মান ক্রুদের নিযুক্ত করা হয় এবং জাহাজটিতে জার্মান পতাকা ওড়ানো আরম্ভ হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবশিষ্ট সময় ধরে জার্মানরা জাহাজটিকে তাদের সৈন্যসামন্ত ও সামরিক উপকরণ পরিবহনের কাজে ব্যবহার করে।
১৯৪৪ সালের নভেম্বর নাগাদ জাহাজটির ক্যাপ্টেন ছিলেন হাইনরিখ রোডে নামক জার্মান নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা। ১৯৪৪ সালের ২১ নভেম্বর তার অধীনে জার্মান পতাকাবাহী রিগেল নরওয়ের বিয়ের্কভিক থেকে যাত্রা করে। এসময় জাহাজটিতে ছিল ১১৪ জন জার্মান সৈন্য এবং ৯৫১ জন যুদ্ধবন্দি। নার্ভিক বন্দরে পৌঁছানোর পর জাহাজটিতে আরো ৩৪৯ জন যুদ্ধবন্দিকে তোলা হয় এবং এর পাশাপাশি জার্মান পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তারকৃত ৯৫ জন দলত্যাগী জার্মান সৈন্য (deserter) ও ৮ জন নরউইজীয় বন্দীকেও জাহাজে তোলা হয়। এরপর জাহাজটি কতিপয় ক্ষুদ্র নৌযানের সঙ্গে কনভয় হিসেবে তমেরনেসেতে পৌঁছায়। সেখানে আরো ৯৪৮ জন যুদ্ধবন্দীকে তোলা হয়।
এরপর রিগেল বোদো বন্দরে পৌঁছায় এবং ২৬ নভেম্বর বন্দরটি ত্যাগ করে। বোদো ত্যাগের সময় জাহাজটিতে মোট ২,৮৩৮ জন আরোহী ছিল। এদের মধ্যে ছিল জাহাজটির ২৮ জন জার্মান ও ১ জন নরওয়েজীয় ক্রু, ২ জন জার্মান ও ১ জন নরওয়েজীয় উপকূলীয় বৈমানিক, ৪৫৫ জন জার্মান সৈন্য, ২,২৪৮ জন যুদ্ধবন্দী, ৯৫ জন জার্মান দলত্যাগী সৈন্য এবং ৮ জন নরওয়েজীয় বন্দি। যুদ্ধবন্দীদের মধ্যে অন্তত ২,০০০ জন ছিল সোভিয়েত সৈন্য, আর বাকিরা ছিল পোলিশ ও যুগোস্লাভ সৈন্য/গেরিলা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে জার্মানরা পোল্যান্ড ও তদানীন্তন যুগোস্লাভিয়ার সম্পূর্ণ অংশ এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশবিশেষ দখল করে নিয়েছিল। লক্ষ লক্ষ সোভিয়েত, পোলিশ ও যুগোস্লাভ সৈন্য/গেরিলা জার্মানদের হাতে বন্দী হয়েছিল। সোভিয়েত, পোলিশ ও যুগোস্লাভরা ছিল মূলত জাতিগতভাবে স্লাভিক এবং উগ্র জাতীয়তাবাদী জার্মানরা স্লাভদেরকে ‘অবমানব’ (subhuman) হিসেবে বিবেচনা করত। স্লাভ যুদ্ধবন্দিদের তারা দাস হিসেবে ব্যবহার করে এবং এই উদ্দেশ্যে জার্মানিসহ জার্মান–অধিকৃত ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে তাদেরকে প্রেরণ করে। এরকমভাবে জার্মানরা নরওয়েতে সাত শতাধিক বন্দীশিবির স্থাপন করে এবং অন্তত ৯০,০০০ সোভিয়েত যুদ্ধবন্দীকে এগুলোতে অন্তরীণ করে রাখা হয়েছিল। এর পাশাপাশি সেখানে কিছু পোলিশ ও যুগোস্লাভ যুদ্ধবন্দীও ছিল।
আগেই বলা হয়েছে, রিগেল ছিল কার্যত একটি মালবাহী জাহাজ। এটি বন্দি পরিবহনের জন্য উপযোগী ছিল না এবং এত বিপুল সংখ্যক বন্দিকে ধারণ করার মতো পর্যাপ্ত জায়গা জাহাজে ছিল না। এর ফলে খোঁয়াড়ে পশুদের যেভাবে রাখা হয়, বন্দিদেরও অনেকটা সেরকমভাবেই জাহাজটির কার্গো হোল্ডে রাখা হয়েছিল। বন্দীরা খুবই ঘনবসতিপূর্ণ ও নোংরা পরিবেশে ছিল, এবং তাদের জন্য পর্যাপ্ত বাতাস সরবরাহ বা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ছিল না।
এসময় ব্রিটিশ নৌবাহিনী (আনুষ্ঠানিক নাম ‘রাজকীয় নৌবাহিনী’ বা ‘Royal Navy’) নরওয়ের উপকূলবর্তী সমুদ্রে একটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করছিল। ‘অপারেশন প্রোভিডেন্ট’ (Operation Provident) নামক এই অভিযান ১৯৪৪ সালের ২২ থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। অভিযানের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল নরওয়ের উপকূলে চলাচলরত জার্মান জাহাজগুলোর ওপর আক্রমণ পরিচালনা করা। অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন অ্যাডমিরাল স্যার হেনরি মুর, যার ফ্ল্যাগশিপ ছিল ব্রিটিশ এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ‘এইচএমএস ইমপ্ল্যাকেবল’।
১৯৪৪ সালের ২৭ নভেম্বর সকালে উক্ত এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার থেকে আসা একটি গোয়েন্দা বিমান রিগেলের সন্ধান পায়। তাদের ধারণা হয়, তারা একটি জার্মান সৈন্যবাহী জাহাজ খুঁজে পেয়েছে এবং জাহাজে করে মধ্য ইউরোপের যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য অতিরিক্ত জার্মান সৈন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই অনুমানের ভিত্তিতে তারা তৎক্ষণাৎ জাহাজের ওপর আক্রমণ চালিয়ে সেটিকে ডুবিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। পরবর্তীতে ব্রিটিশরা যে তথ্য প্রদান করে, সেটি অনুযায়ী রিগেলে যে সোভিয়েত, পোলিশ ও যুগোস্লাভ যুদ্ধবন্দিরা অবস্থান করছিল, সেটি তাদের জানা ছিল না। তাদের মতে, এই তথ্য জানা থাকলে তারা কখনোই রিগেলের ওপর আক্রমণ চালাত না।
কিন্তু তারা রিগেলকে জার্মান সৈন্যবাহী জাহাজ মনে করে এবং সেই মোতাবেক ‘এইচএমএস ইমপ্ল্যাকেবল’ থেকে ব্রিটিশ ‘সুপারমেরিন সিফাইটার’ জঙ্গিবিমান এবং ‘ফেয়ারি ফায়ারফ্লাই’ বোমারু বিমানের একটি বহর রিগেলের ওপর আক্রমণ চালায়। অন্তত ৪০টি ব্রিটিশ বিমান এই আক্রমণে অংশগ্রহণ করে। দুর্বল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংবলিত রিগেলের পক্ষে ব্রিটিশ বিমান হামলা মোকাবিলা করার কোনো সুযোগ ছিল না বললেই চলে। ব্রিটিশ বিমান থেকে নিক্ষিপ্ত বেশ কয়েকটি বোমা রিগেলে সরাসরি আঘাত করে এবং জাহাজটি ডুবতে শুরু করে। বোমার আঘাতে কার্গো হোল্ডের সিঁড়িগুলো বিধ্বস্ত হয়ে যায় এবং এর ফলে শত শত যুদ্ধবন্দীর সলিলসমাধি ঘটে।
যারা কোনোক্রমে জাহাজটির ডেকে উঠে আসতে সক্ষম হয়, তাদের মধ্যে জাহাজে বিদ্যমান স্বল্প সংখ্যক জীবন রক্ষাকারী উপকরণ (লাইফজ্যাকেট, লাইফবোট ইত্যাদি) হস্তগত করা নিয়ে হাতাহাতি শুরু হয়। জাহাজের সিংহভাগ আরোহী হয় আগুনে পুড়ে নয়তো হিমশীতল সমুদ্রের পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করে। যারা জাহাজের আগুন থেকে বাঁচার জন্য লাইফবোটে চড়েছিল কিংবা পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তাদের ওপরেও ব্রিটিশ বিমানগুলো গোলাবর্ষণ করতে থাকে। ফলে তাদের মধ্যেও সিংহভাগই প্রাণ হারায়।
জাহাজডুবি থেকে বেঁচে যাওয়া অসবিয়র্ন শুল্টজের ভাষ্যমতে, “এটা ছিল জীবন মরণের লড়াই!” শুল্টজ ছিলেন রিগেলে অবস্থানরত ৮ জন নরওয়েজীয় বন্দির একজন। একজন জার্মান সৈন্যের সঙ্গে মারামারি করার কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জাহাজে থাকা নরওয়েজীয়দের মধ্যে একমাত্র তিনিই প্রাণে বাঁচতে সক্ষম হন। তার মতে, সেসময় তিনি তরুণ ও শক্তিশালী ছিলেন এবং বেঁচে থাকার তীব্র চেষ্টা করেছিলেন।
শুল্টজ একটি লাইফবোটে করে কোনোক্রমে পরিত্যক্ত রুসোয়া দ্বীপে পৌঁছতে সক্ষম হন। দ্বীপটি ছিল জাহাজডুবির স্থান থেকে কয়েকশ মিটার দূরে। ভাগ্যের পরিহাসে, লাইফবোটে শুল্টজের সঙ্গে ছিলেন একজন জার্মান সৈন্য এবং একজন সোভিয়েত যুদ্ধবন্দী। অর্থাৎ, প্রাণ বাঁচানোর দায়ে নরওয়েজীয় বন্দি, সোভিয়েত যুদ্ধবন্দী আর জার্মান সৈন্য অল্প সময়ের জন্য একজোট হয়েছিলেন! অবশ্য তীরে পৌঁছানোর পর তারা যে যার মতো আলাদা পথে চলে যান।
ব্রিটিশ আক্রমণের ফলে জাহাজের অন্তত ২,৫৭১ জন আরোহী নিহত হয়, যাদের মধ্যে অন্তত ২,০০০ জন ছিল সোভিয়েত যুদ্ধবন্দী। নরওয়ের ইতিহাসে সংঘটিত অন্য কোনো জাহাজডুবিতে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রাণ হারায়নি। এই দিক থেকে এমএস রিগেলের সলিলসমাধি ছিল নরওয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ জাহাজডুবির ঘটনা। অবশ্য রিগেলের ক্যাপ্টেন হাইনরিখ রোডে শেষ মুহূর্তে বিধ্বস্ত জাহাজটিকে রুসোয়া দ্বীপের তীরবর্তী সংকীর্ণ পানিতে আনতে সক্ষম হন। এর ফলে জাহাজটির ২৬৭ জন আরোহী প্রাণে বেঁচে যায়।
ব্রিটিশ বিমানবাহিনীর আক্রমণে ২,০০০ সোভিয়েত সৈন্য নিহত হয়েছে– স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এরকম ঘটনা ব্রিটেন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে তীব্র কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করত এবং যুদ্ধাবস্থাও সৃষ্টি করতে পারত। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এমন এক মুহূর্তে এই ঘটনাটি সংঘটিত হয়, যখন ব্রিটেন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের পরস্পরকে প্রয়োজন ছিল এবং যখন কোনো পক্ষেরই নতুন কূটনৈতিক/সামরিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ ছিল না, কারণ উভয়েই অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াইয়ে ব্যস্ত ছিল। তদুপরি, সেসময় সোভিয়েত ইউনিয়নে শত্রুপক্ষের হাতে বন্দী হওয়াকে অসম্মানজনক হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ফলে সোভিয়েত যুদ্ধবন্দীদের নিচু দৃষ্টিতে দেখা হতো এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিশ্বাসঘাতক হিসেবেও চিহ্নিত করা হতো। এজন্য সম্ভবত কিছু যুদ্ধবন্দীর মৃত্যুকে সোভিয়েত সরকার বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেনি।
তাই ব্রিটিশরা ভুলক্রমে নিজেদের অজান্তে রিগেলে অবস্থানরত সোভিয়েত যুদ্ধবন্দীদের সলিলসমাধি ঘটিয়েছে, এই ব্যাখ্যায় সোভিয়েত সরকার সন্তুষ্ট থাকে এবং এই ঘটনা নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করা থেকে বিরত থাকে। এর ফলে এই ঘটনাটি ইতিহাসের ‘স্বল্পপরিচিত ঘটনাবলি’র প্রকোষ্ঠে নিক্ষিপ্ত হয়। কিন্তু সোভিয়েত যুদ্ধবন্দিদের ডুবিয়ে দেয়ার ঘটনাটি ব্রিটিশরা আসলেই ভুলক্রমে ঘটিয়েছিল, নাকি একটি জার্মান জাহাজ ডুবিয়ে দেয়ার স্বার্থে ইচ্ছাকৃতভাবেই সোভিয়েত যুদ্ধবন্দিদের ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’ হিসেবে বিবেচনা করেছিল– সেটি কখনোই জানা যায়নি।
রিগেলের সলিলসমাধি ঘটার পর দীর্ঘদিন যাবৎ রিগেলের হতভাগ্য আরোহীদের মৃতদেহ তীরে ভেসে আসতে থাকে অথবা স্থানীয় জেলেদের জালে আটকা পড়তে থাকে। অবশ্য অধিকাংশের জন্য রিগেলের ধ্বংসস্তূপই একটি গণকবরে পরিণত হয়। ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত রিগেলের ধ্বংসাবশেষ অর্ধ–ডুবন্ত অবস্থায় জনমানবহীন রুসোয়া দ্বীপের তীরেই ছিল। কিন্তু সেই বছর একে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া হয় এবং রিগেলের আরোহীদের মৃতদেহগুলোর অবশিষ্টাংশ উদ্ধার করা হয়। ১৯৭০ সালে পার্শ্ববর্তী জোত্তা দ্বীপে ‘জোত্তা আন্তর্জাতিক যুদ্ধ সমাধিক্ষেত্র’ নির্মিত হয় এবং সেখানে রিগেলের আরোহীদের মৃতদেহ (বা মৃতদেহের অবশিষ্টাংশ) সমাহিত করা হয়।