১৯১৫ সাল। সদ্য নোবেল পাওয়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একশোটি কবিতা নিয়ে একটা বই প্রকাশ করলেন ম্যাকমিলান থেকে। মৌলিক না, অনূদিত বই। মূল লেখাগুলো ভারতীয় সন্ন্যাসীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন ক্ষিতিমোহন সেন। যেগুলো যুগ যুগ ধরে প্রচলিত হয়ে আসছে পঞ্চদশ শতকের এক মহাপুরুষের নামে, কবির। শিখধর্মের প্রধান কিতাব ‘গ্রন্থসাহিব’-তেও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তার উক্তি। ছিলেন ধর্মগুরু নানকের অনুপ্রেরণা। ভারতীয় ধর্মবিশ্বাসের তার ধাক্কা এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল যে, বদলে যায় পরবর্তী ইতিহাস। উইলিয়াম হান্টার এজন্যই তাকে অভিহিত করেছেন ভারতবর্ষের মার্টিন লুথার নামে।
আহমেদাবাদের দাদুপান্থের প্রবক্তা দাদু দয়াল এবং অযোধ্যায় সত্যনামী মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা জগতজীবন দাসের চিন্তায় কবিরের ঐতিহ্য স্পষ্ট। সাধ মতবাদের বীরভন সাধজী এবং মালওয়ার বাবা লাল এবং গাজিপুরের শিব নারায়ণের মতো ধর্মসংস্কারকদেরকেও প্রভাবিত করেছেন কবির। তার শিক্ষা ও আদর্শের উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্বতন্ত্র এক মতবাদ, কবিরপান্থ। ২০০৩ সালের হিসাব অনুসারে যার অনুসারীর সংখ্যা ৯.৬ মিলিয়ন।
কবির
রহস্যে ঢাকা কবিরের জীবন থেকে সত্যিকার সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া কঠিন। চতুর্দশ শতকের শেষ দিকে তার বসবাস ছিল বলে ইঙ্গিত করেন ঐতিহাসিকগণ। কেউ অবশ্য আরেকটু এগিয়ে জীবনকাল আঁকতে চান (১৪৪০-১৫১৮) খ্রিষ্টাব্দের ভেতরে। বারানসির ব্রাহ্মণ কুমারীর কোলে জন্ম। যীশুখ্রিষ্টের জন্মের সাথে তুলনা করা যেতে পারে গল্পটা। অবশ্য কবিরের মা পুত্রকে ভাসিয়ে দেন পানিতে। এক মুসলিম তাঁতী দম্পতি নিরু এবং নিমা তাকে কুড়িয়ে নিয়ে যান নিজেদের ঘরে। তবে আধুনিক ঐতিহাসিকদের ভাষায় নও মুসলিম তাঁতী দম্পতির ঘরেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন কবির। মোটাদাগে পালিত সেই ইসলাম অনেকটা নাথধর্মের কাছাকাছি। আচার সর্বস্ব ধর্ম চর্চায় শান্তি পাচ্ছিলেন না শিশু কবির। অল্প বয়সেই শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন বারানসিতে ভক্তিবাদের গুরু রামানন্দের। ‘ঈশ্বর সমগ্র জীব এবং জড়ের মধ্যেই বর্তমান’ বক্তব্যের মারফতে ইতোমধ্যে বেশ পরিচিতি পেয়েছিলেন রামানন্দ। কবিরের একত্ববাদের হাতেখড়ি সেখানেই।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করা হয়নি। তাঁতী পরিবারে বেড়ে উঠেও নেওয়া হয়নি প্রশিক্ষণ। পরবর্তী জীবনে কবিতায় স্বীকারোক্তি, ‘কবির ত্যাগ করেছে সুতা কাটার পেশা, হরির নাম তার শীরের জুড়ে’। গুরু রামানন্দের কাছেই আধ্যাত্মিকতার গোপন মন্ত্র ‘রাম’ নামের প্রেমে পড়েন। শেখ তাক্বি নামের মুসলিম সুফি পণ্ডিতের কাছেও শিষ্য হিসেবে পাঠ নেন মারেফাতের। এইজন্যই কবিরের দর্শনে সুফিবাদের প্রভাব স্পষ্ট। ব্যক্তিজীবনে বিয়ে করেন লোই নাম্নী জনৈকা নারীকে। জন্ম নেয় পুত্র কামাল এবং কন্যা কামালি। অবশ্য তার চিরকুমার থাকা নিয়েও অভিমত বিদ্যমান।
দীর্ঘ জীবন পেয়েছিলেন কবির। যে বয়সে ঠিকভাবে লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়ানো যায় না। অথচ যৌবনে ঈশ্বরপ্রেমের সঙ্গীত উদযাপনে নৃত্য করেছেন। জীবনের অবসান ঘটে গোরক্ষপুরের মাঘার অঞ্চলে। শৈবধর্মের পুরোধা পুরুষ গোরক্ষনাথের ভূমি। শিষ্যরা বারবার অনুরোধ করেছে কাশিতে থেকে যাবার জন্য। জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে সেখানে। তাছাড়া, সেই পূণ্যভূমিতে মৃত্যুর মানে আত্মা সরাসরি রামের কাছে পৌঁছাবে। শিষ্যদের ভর্ৎসনা করেন কবির। রামের ক্ষমতা এত কম যে কাশি ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোথাও ভক্তকে রক্ষা করতে পারবেন না?
তার মৃত্যু নিয়েও প্রচলিত হয়েছে কিংবদন্তি। মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্তে হিন্দু এবং মুসলমানরা উপস্থিত হয় পাশে। মুসলিমরা চেয়েছিল মৃত্যুর পরে কবিরের দেহ কবর দিতে আর হিন্দুরা চেয়েছে পুড়িয়ে ফেলতে। কবির তাদের বিতর্ক শুনে নিজেকে কাঁথায় ঢেকে দিতে বললেন। আশ্চর্য! কিছুক্ষণ পরেই কাঁথার নিচে থেকে কবির উধাও। সেখানে পড়ে আছে কিছু জীবন্ত ফুল। হিন্দুরা অর্ধেক ফুল নিয়ে বারানসিতে পুড়িয়ে ফেললো। বাকি অর্ধেক মাঘারেই কবর দিল মুসলমানগণ।
চিন্তা
কবিরের সময়ে হিন্দু আর মুসলিম ধর্মনেতাদের চিন্তায় বাহ্যিক আইন-কানুনের কড়াকড়ি। কবির ভক্তিবাদের সংস্পর্শে ঈশ্বরপ্রেম এবং সুফিবাদের কাছে থেকে পরিশুদ্ধ জীবন রপ্ত করেন। আইন-ই আকবরি এবং দাবিস্তান-ই মুহসিন ফানি গ্রন্থে তাকে একত্ববাদী বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। বস্তুত উপনিষদের অদ্বৈতবাদ এবং ইসলামের একত্ববাদ তাকে আন্দোলিত করেছে। একদিকে ভক্তের প্রেম অন্যদিকে সুফির আত্মসমর্পণ। জন্ম সংক্রান্ত উপকথা এবং কতিপয় চিন্তায় খ্রিষ্টিয় বিশ্বাসের চিহ্নও বিদ্যমান। সবকিছু ছাপিয়ে কবির রামভক্ত আর রাম বিষ্ণুর অবতার। কবিরের রাম ব্যক্তিক গুণাবলির ঊর্ধ্বে উঠে এক পরম পরাক্রমশালী প্রেমময় সত্তা। স্থান আর কাল যাকে আবদ্ধ করতে পারে না।
মানুষ দুনিয়ায় এমনভাবে জীবন যাপন করে, যেন দুনিয়া তার স্থায়ী বসবাসের স্থান। চিন্তায় কেবল শরীর আর পার্থিব খায়েশ। সম্পত্তি জমা করে যেন মৃত্যুকেও কিনে ফেলতে পারবে। বস্তুত এই মানুষ কোনোদিন সুখ লাভ করতে পারে না; যতক্ষণ না সবকিছু ছেড়ে এক সৃষ্টিকর্তার দিকে মুখ ফেরায়। তার জন্য প্রয়োজন আধ্যাত্মিকতার জ্ঞান। নিরবিচ্ছিন্ন ধ্যান ও স্রষ্টার নাম স্মরণ। আত্ম-অহমিকাই আত্মার অগ্রগতিতে সবথেকে বড় বাধা। মানুষ শরীরকে নিজের ভাবে। অথচ জন্মের পরে পিতা-মাতা, যৌবনে স্ত্রী, পরিণত বয়সে সন্তান, মৃত্যুর পরে আগুন- সবাই তার শরীরের দাবিদার। খারাপ আত্মাগুলো অনেকগুলো গিঁটের মাধ্যমে পার্থিবতায় আটকে থাকে। সত্যিকার মুক্তি এর থেকে মুক্ত হবার মধ্যে।
খোদা মানুষের খুব কাছাকাছি অবস্থান করে। অন্তর কাঁচের মতো। মহাসত্যের মুখ দেখতে হলে সেই আত্মাকে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। মুক্তা পরে আছে পথেই, কেবল অজ্ঞরাই বুঝে না। আলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সামনে, কেবল অন্ধরাই দেখতে পায় না। মানুষ দুনিয়াতেই সন্তুষ্ট হয়ে আছে, যেভাবে মাছ নিয়মিত জাল ফেলা পুকুরেই সন্তুষ্ট। অথচ সে সমুদ্র প্রত্যাশা করতে পারতো। যে ক্ষমা করতে পারে না, সে খোদার দেখা পাবে না। লাখো কোটি দুষ্ট ব্যক্তির সংস্পর্শেও শুদ্ধ পুরুষ তার শুদ্ধতাকে হারাতে দেয় না।
জীবন ও পথ
স্রষ্টা একজন। মানুষের জন্ম এক রক্ত থেকেই। তাহলে পৃথিবীতে ধর্ম ও বর্ণের দোহাই দিয়ে এত বিভাজন কেন? জোর-জবরদস্তি কিংবা আতঙ্ক সৃষ্টি করে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করা যায় না। হিন্দু আর মুসলমান উভয়েই তীর্থ করছে, অথচ আত্মা পরিশুদ্ধ না। ঠোঁটে স্রষ্টাকে স্মরণ করছে, কিন্তু হৃদয়ে রাখছে না। ধর্মগ্রন্থ পড়ছে হরহামেশা, কিন্তু বুঝতে পারছে না। এভাবে পালিত আচারকে বড়জোর অভ্যাস ও ঐতিহ্য বলা যেতে পারে, ধর্ম না। ধর্মকে যারা নিজেদের জন্মগত সম্পত্তি বানিয়েছে, তারা ব্রাহ্মণ বা মৌলভি না। ব্রাহ্মণ এবং মৌলভি তারাই, যারা নিজের ভেতরে স্রষ্টাকে ধারণ করতে পারে। সকল মানুষ সমান। একটা আলোই যেভাবে হরেক রঙে বিভাজিত হয়; মানুষের মূল উৎস তেমন এক ও অভিন্ন।
ধর্মের মূল কথা হচ্ছে পরম সত্যের সংস্পর্শ। সকল মানুষ নিজেদের তরিকায় খোদায় মগ্ন হোক। ঐতিহ্যকে অনুসরণ কিংবা অযথা বিতর্কে কেবল অশান্তি বাড়ে। খোদার মর্জি কেউ বুঝতে পারে না। বিশ্বাসই মানুষকে রক্ষা করবে দিনশেষে। আধ্যাত্মিক অনুভূতি কেবল অনুভব করা যায়, ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। যে খোদার উপর ভরসা রাখে এবং আত্মসমর্পণ করে, তার কোনো ভয় নাই। সত্যিকার ভালোবাসা ভয়কে উড়িয়ে দেয়। নিজেকে বোঝার মধ্য দিয়েই মানুষ তার সৃষ্টিকর্তাকে বুঝতে সক্ষম হয়। জ্ঞান দিয়ে নিজের চেষ্টায় পরম সত্যের রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব না। যদি না তিনি নিজে ভক্তের সামনে নিজেকে প্রকাশ না করেন। পরম সত্যের অনুসন্ধানে তাই নিজের হৃদয়কে উর্বর রাখতে হয়। বড় বড় বই আর ধর্ম চর্চা করে পথ পাওয়া যায় না, উল্টো অহংকার বেড়ে যায়। অনেকের ধর্ম কেবল স্বার্থের জন্যই বরাদ্দ। সত্যিকার পথ তো কেবল স্রষ্টার প্রতি ভালোবাসায়। সত্যিকার সাধু স্রষ্টা বিচ্ছিন্নতাকে নিজের জন্য মৃত্যুর চেয়েও ভয়ঙ্কর মনে করে। খোদা তাদের ভালোবাসেন।
বিজাক
কবিরের শিক্ষার সম্পূর্ণ সংগ্রহ হিসেবে গণ্য করা হয় বিজাককে। খুব সম্ভবত ১৫৭০ সালের দিকে সংকলিত হয় এটি। শিখ ধর্মের পঞ্চম গুরু অর্জুন তার বাণীগুলোকে স্থান দেন আদিগ্রন্থে। বর্তমানে দুইটা সংস্করণ ব্যাখ্যা সমেত বেশ প্রচলিত। প্রথমটা মহারাজা বিশ্বনাথ সিং-এর এবং দ্বিতীয়টা বাবা পুরান দাসের। উত্তর ভারতে সৃষ্টিকর্তাকে উদ্দেশ্য করে ভজন এবং গজলের প্রচলন বহু আগে থেকেই। সেই পথেই এগিয়েছেন কবির। তার শিক্ষার অন্য দুই দলিল পঞ্চবাণী এবং গুরুগ্রন্থের চেয়ে বিজাক অনেক বেশি নাটকীয়। আদর্শ শিক্ষকের মতো সেখানে ঘুমন্ত শিষ্যদের স্নেহপরবশ হয়ে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করে চলছেন প্রতিনিয়ত। তার বক্তব্য স্পষ্ট, দ্বিধাহীন এবং নির্দেশনাপূর্ণ।
কবিরের সবচেয়ে আলোচিত শব্দ সংক্রান্ত মতবাদ। সকল চিন্তাকে প্রকাশ করতে গেলে ভাষার প্রয়োজন পড়ে। ভাষার গঠনে আবার প্রতিটির বর্ণের তাৎপর্যমূলক অবদান আছে। মানুষ যখন দুনিয়ার প্রপঞ্চকে অতিক্রম করতে পারে, তখন সকল বর্ণ আর শব্দ সহাবস্থানে থেকে অখণ্ড হিসাবে দৃশ্যমান হয়। কবিরের কাছে ‘রাম’ নামের জপ হলো সেই ঐক্যবদ্ধ অখণ্ডকে প্রকাশের সবচেয়ে নিকটবর্তী পথ।
প্রবচনসমগ্র
সত্যকে প্রকাশের জন্য কবিরের রচিত দ্বিপদী কবিতাগুলো সাখি নামে পরিচিত। অবশ্য কতেক সাখিতে সুফিশিক্ষা, পারসিক কবিতা, কোরান, বেদ এবং বাইবেলের রস খুঁজে পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে কবিরের মৌলিক সৃষ্টির সংখ্যাও নেহায়েত কম না। শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে মুখে মুখে চর্চিত হয়ে আসছে তার বাণী।
‘বুরা জো দেখা মে চালা, বুরা না মিলিয়া কোয়ি
জো মুন খোজা আপনা, তো মুজছে বুরা না কোয়ি।কূটিল ব্যক্তির তালাশ করলাম, কিন্তু কাউকে পেলাম না
তারপর নিজের ভেতরে তাকালাম, পেলাম সেই কূটিল লোক’।‘কাল কারে সো আজ কার, আজ কারে সো আব
পাল মে প্রলায়া হোয়েগি, বাহুরি কারোগি কাব?কালকের কাজ আজকে করো, আজকের কাজ এখন
যদি সময় হারিয়ে যায়, কাজ করা হবে কখন?’‘ধীরে ধীরে রে মান, ধীরে সাব কুচ হোয়ে
মালি সিচি সো ঘারা, রিতু আয়ে ফল হোয়েআস্তে আস্তে রে মন, আস্তেই সকল কিছু হয়
মালি শত বালতি পানি দিলেও ফল নির্দিষ্ট মৌসুমেও হয়।’‘বড়া হুয়া তো কিয়া হোয়া, জ্যায়সে পের খেজুর
পান্থি কো ছায়া নাহি, ফল লাগে আতিদূর।বড় হয়ে ফায়দা কই? কেবল তো খেজুর গাছের মতোই
না পথিকের জন্য ছায়া হলো, আর ফল তো ধরাই যায় না।’‘পুথি পড়্ পড়্ কার জাগ মুয়া, পান্ডিত ভায়ো না কোয়ে
ধাই আখার প্রেম কে, জো পড়ে সো পণ্ডিত হোয়ে।বই পড়ে সবাই মরে গেছে, কেউ জ্ঞানী হয়নি কখনো
ভালোবাসার শব্দ যে পড়তে পেরেছে, কেবল সে-ই জ্ঞানী।’‘জো তো কো কাটা বইয়ে তাহি বোই তু ফুল
তো কো ফুল কে ফুল হ্যায়, ভাকো হ্যায় তিরশুল।যে তোমার পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখে, তার পথে ফুল ছিটিয়ে দাও
কারণ তোমার জন্য এইসব ফুল, কিন্তু তার জন্য ফুলও ত্রিশূল।’
অতঃপর
কবিরের মতবাদ পরবর্তীতে ধর্মসংস্কারকদের জন্য অনুপ্রেরণায় পরিগণিত হয়। বিশেষ করে গুরু নানকের শিখধর্মের পত্তন ঘটনোর সময় কবিরের দেখানো পথ অনুসরণ করেছেন। কবিরের সদস্য ধর্মদাস কবির সাগর নামে গ্রন্থ রচনা করে কবিরের মতবাদগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। দেখিয়েছেন সৃষ্টির আদি থেকে আত্মার মুক্তি লাভ অব্দি কবিরের শিক্ষার প্রয়োগ। অঙ্কিত সেই পথকে অভিহিত করা হয় কবির পন্থা নামে। আর যারা এই পথ অনুসরণ করে, তাদের বলা হয় কবিরপন্থী। যদিও অন্যান্য ধর্মের মতো কবিরপন্থীরাও কয়েকটা উপদলে বিভক্ত। সবচেয়ে বিখ্যাত দুই উপদল বারানস এবং ধমাখেদা। সব মিলিয়ে বর্তমানে কবিরপন্থীর সংখ্যা নেহায়েত কম না। কবিরের দুয়েকটা দোহা তুলে দেয়া হলো নিচে। দেখার সময় সাবটাইটেল অন করে রাখার অনুরোধ রইলো। সাবটাইটেলের ভাষাও অনন্য।
ভারতে সুলতানি শাসন শেষদিকে, মুঘল সাম্রাজ্য তখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল ধর্মীয় নৈরাজ্য। সাধারণ মানুষ অনেকটা বিরক্তি ভরেই আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে সহজিয়া সুফি এবং ভক্তদের কাছে। সেই সুফিবাদ আর ভক্তিবাদের মিলনবিন্দুতে কবিরের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। ফলে ধর্মের ইতিহাসে শুরু হলো নয়া অধ্যায়। ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসার যে আন্দোলন তিনি তৈরি করলেন, তা ছড়িয়ে পড়েছে তামাম ভারত।