একটা সময় পর্যন্ত মোবাইল ফোনের ব্যবহার শুধুমাত্র কথা বলা ও বার্তা আদানপ্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। সময়ের আবর্তে, যুগের পরিবর্তনে, প্রযুক্তির স্পর্শে মোবাইল ফোনে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন সব ফিচার। বর্তমানে ক্যামেরা ও কম্পিউটারের অনেক কাজই মোবাইলে করা সম্ভব।
অনেকে ফোন ব্যবহার করে থাকেন প্রয়োজনের ভিত্তিতে আবার অনেকে প্রয়োজনের পাশাপাশি শখ বা ফ্যাশনের জন্যও মোবাইল ব্যবহার করে থাকেন। স্যামসাং, সিম্ফনি, নোকিয়া প্রভৃতি সাধারণ ফোন প্রায় সকলেই ব্যবহার করে থাকে। তবে প্রসঙ্গটা যখন প্রয়োজন ছাড়িয়ে বিলাসিতার পর্যায়ে চলে যায় তখন আর সেটা সাধারণ থাকে না। চলে আসে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং দৃষ্টিনন্দন করার নিমিত্তে ব্যবহৃত হয় মূল্যবান সব উপাদান। ফলে এসব ফোনের বাজারমূল্য হয়ে যায় আকাশচুম্বী। এরকমই কিছু মূল্যবান ফোন নিয়ে আলোকপাত করা হলো এখানে।
১. ডায়মন্ড রোজ আইফোন ফোর, ৩২ জিবি
বিশ্বের সবচেয়ে দামী ফোনের তালিকায় সবার শীর্ষে রয়েছে এটি। এর ফ্রেমটি গোলাপী রংয়ের হীরা দিয়ে তৈরি। পুরো ফোন জুড়ে প্রায় ৫০০টি হীরক খচিত রয়েছে। ফোনের পেছন দিকটি গোলাপী আভার স্বর্ণ দিয়ে তৈরি এবং সামনের দিকটি প্লাটিনামের তৈরি। নেভিগেশন কি-তে প্লাটিনামের ফ্রেমের মাঝে গোলাপী রঙা একটি হীরক খণ্ড বসানো রয়েছে। অ্যাপলের লোগোটিতেও বসানো আছে ৫টি হীরক খণ্ড। এর দাম ৮ মিলিয়ন ডলার।
২. সুপ্রিম গোল্ডস্টিকার আইফোন থ্রিজি, ৩২জিবি
তালিকার দ্বিতীয় ফোনটিও অ্যাপলের আইফোন। সর্বপ্রথম ২০০৯ সালে এটি বাজারে আসে। এর পুরো বডি জুড়েই আছে মূল্যবান হীরক খণ্ড। এ ফোনের কেসিং তৈরি করতে ২২ ক্যারেটের কাশ্মীর স্বর্ণ ব্যবহার করা হয়েছে। এর স্ক্রীনটিও হীরার তৈরি। ন্যাভিগেশন বাটনেও রয়েছে ৭.১ ক্যারেটের একটি হীরক। সব মিলিয়ে এর বাজারমূল্য ৩.২ মিলিয়ন ডলার।
৩. আইফোন থ্রিজি কিং’স বাটন
এর ডিজাইন করেছেন অস্ট্রিয়ার একজন জুয়েলার ও ডিজাইনার। এটি তৈরি করা হয়েছে হোয়াইট গোল্ড, রোজ গোল্ড ও ইয়েলো গোল্ডের সমন্বয়ে। এর মূল অপারেটিং বাটনে রয়েছে ৬.৬ ক্যারেটের একটি হীরা। চারপাশে হোয়াইট গোল্ডের একটি বর্ডার এবং তার উপরে বসানো ১৩৮টি হীরক খণ্ড যেন ফোনের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ। ফোনটির মূল্য ২.৪ মিলিয়ন ডলার।
৪. গোল্ডভিশ লা মিলিয়ন
দৃষ্টিনন্দন ও ভিন্ন ধাঁচের এই ফোনের ডিজাইন করেছেন সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত ডিজাইনার ইমানুয়েল গেট। ২০০৬ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দামী মোবাইল ফোন হিসেবে গিনেজ বুকে এর নাম ওঠে। সুইস কারুশিল্পের আলোকে এর ডিজাইন করা হয়েছে। ১৮ ক্যারেট স্বর্ণ দিয়ে ফোনটি তৈরি এবং এর বহিরাবরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ১২০ ক্যারেটের ডায়মন্ড টুকরো। এর বাজারমূল্য ১.৪ মিলিয়ন ডলার।
৫. ডায়মন্ড ক্রিপটো স্মার্টফোন
তালিকায় পঞ্চম স্থানে থাকা এ ফোনটি সাদা ও গোলাপি বর্ণের স্বর্ণের এক সুন্দর সম্মিলনে তৈরি। এছাড়াও এতে বসানো হয়েছে প্রায় ৫০টি হীরার টুকরো। এদের মাঝে ১০টি খণ্ড বিরল নীল বর্ণের। এ ফোনটিতে রয়েছে কিছু বাড়তি নিরাপত্তা। কিডন্যাপিং এবং প্রযুক্তিগত ব্ল্যাকমেইলিংয়ের হাত থেকে আপনাকে সুরক্ষা দেবার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে কিছু অত্যাধুনিক ফিচার। এর মূল্য ১.৩ মিলিয়ন ডলার।
৬. গ্রীসো লাক্সর লাস ভেগাস জ্যাকপট
২০০৫ সালে সুইজারল্যান্ডে সর্বপ্রথম এটি বাজারজাত করা হয়। মূলত স্বর্ণের তৈরি এবং এর পেছনের দিকটা বিশ্বের সবচেয়ে দামী কাঠ প্রায় ২০০ বছরের পুরনো আফ্রিকান ব্যাকউডস দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। সামনের স্ক্রীনে রয়েছে ৪৫.৫ ক্যারেটের ব্ল্যাক ডায়মন্ড। ফোনের বোতামগুলো স্যাফায়ার ক্রিস্টালের তৈরি। ১৮০ গ্রাম ভরের এ ফোনটির মূল্য প্রায় ১০ লক্ষ ডলার।
৭. ভার্চু সিগনেচার কোবরা
এর ডিজাইন করেছেন বউশেরন নামক একজন ফরাসি জুয়েলার। বহুমূল্য রত্ন পাথর ছাড়াও এর দুই পাশে রয়েছে দুইটি কোবরা আকৃতির বস্তু। এতে রয়েছে একটি পেয়ার কাট ডায়মন্ড, অনেকগুলো সাদা হীরা, দুটি পান্না (সাপের চোখে বসানো) এবং ৪৩৯টি রুবি পাথর। এর দাম ২.৩ কোটি রুপি। বিক্রেতার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল- এ ফোন মোট ৮টি বানানো হবে এবং তা চীনের একটি ই-কমার্স সাইটে পাওয়া যাবে। ফোনটি কিনতে আগ্রহীদের ১০ হাজার রুপি অগ্রিম পরিশোধ করতে হবে। কিনলে ক্রেতার কাছে হেলিকপ্টারে করে ফোনটি পৌঁছে দেয়া হবে।
৮. ব্ল্যাক ডায়মন্ড ভিআইপিএন স্মার্টফোন
এই ফোনটিতে দুটি হীরা বসানো হয়েছে, একটির অবস্থান নেভিগেশন বাটনে এবং অপরটি ফোনের পেছনে। মিরর ডিটেইলিং, পলিকার্বনেট মিরর ও অর্গানিক এলইডি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এতে। জারেন গহ নামক একজন ডিজাইনার এই স্টাইলিশ ফোনটি ডিজাইন করেছেন। দাম ৩ লক্ষ ডলার।
৯. আইফোন প্রিন্সেস প্লাস
এই ফোনের ফিচারগুলো অ্যাপলের অন্যান্য আইফোনের মতোই। তবে কিছুটা বিশেষত্ব রয়েছে, যার কারণে এটি শীর্ষ দশে নিজের স্থান করে নিয়েছে। আইফোন থ্রিজি কিং’স বাটনের পাশাপাশি এটিরও ডিজাইন করেছেন পিটার অ্যালয়সন। বিশেষ এই ফোনে ১৬.৫০ থেকে ১৭.৭৫ ক্যারেটের প্রায় ১৩৮টি প্রিন্সেস কাট হীরা এবং ১৮০টি ব্রিলিয়ান্ট কাট হীরা ব্যবহার করা হয়েছে। রীমের চারপাশে ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণের প্রলেপ যেন ফোনের ঔজ্জ্বল্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ। বর্তমান মূল্য ১ লক্ষ ৭৬ হাজার ৪০০ ডলার।
১০. ভার্চু সিগনেচার ডায়মন্ড
ভারতের মহারাষ্ট্রের ভার্চু ব্রান্ডটি লাক্সারি মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারক হিসেবে সুপরিচিত। ২০০৫ সালে সর্বপ্রথম তারা লাক্সারি ফোন তৈরি ও বাজারজাতকরণ শুরু করে। এ ব্রান্ডের ভার্চু সিগনেচার ডায়মন্ড ফোনটি তালিকায় দশম স্থানে রয়েছে। ফোনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে প্লাটিনাম ও ০.২৫ ক্যারেটের হীরা, বসানো আছে মোট ২০০টি হীরক খণ্ড। কোনো মেশিনের সাহায্যে নয়, বরং হাতে তৈরি করা হয়েছে পুরো ফোনটি। শুধুমাত্র কি-প্যাড তৈরির পেছনে প্রায় ৮ জন ডিজাইনার ৪ বছর ধরে কাজ করেছেন। একজন দক্ষ ব্যক্তির প্রায় ৩ বছর সময় লেগে যাবে শুধু এটি শিখতে যে এ ফোনটির সবগুলো অংশ কীভাবে একসাথে জুড়তে হয়। ফোনটির বাজার মূল্য ৮৮ হাজার ডলার।
ফিচার ইমেজ- wonderslist.com