শৈশবের দিনগুলোতে মেঘের ভেতর থেকে বিভিন্ন আকৃতি খুঁজে নেওয়া আমাদের জন্য বেশ আমুদে ছিলো। শরতের ছেড়া ছেড়া মেঘের উড়োউড়ি দেখতে দেখতে কেউ কেউ হয়তো পার করে দিতাম অসংখ্য ক্লান্ত বিকেল। তারপর একদিন হঠাৎ যান্ত্রিক ব্যস্ততা আমাদের দৈনন্দিন অবসরকেও গ্রাস করে নিল, তখন আকাশের বুকে মুখ তুলে একটিবার চাওয়ারও ফুসরত মেলে না আমাদের। তবু কিছু চির সবুজ মানুষ আছেন আমাদের মাঝে, যারা তাদের শৈশবকে বয়ে নিয়ে বেড়ান আজীবন। শৈশবেই বাঁচেন তারা, বুড়ো হন না কখনও। তেমনই একজন মানুষ, জার্মানীর মার্কাস আইনস্পেনিয়ার।
মার্কাসের প্রিয় বিষয় মেঘ। তাই মেঘকেই বানিয়েছেন খেলার সাথী। মেঘের সাথে তার মিতালীর উপাখ্যান আমাদেরকে আরেকবার ভাবাবে- কোনো কিছু প্রতি মানুষের ভালোবাসা কতোটা জোরালো হতে পারে আর তার দ্বারা তৈরি হতে পারে সৃষ্টিশীলতার মহাযজ্ঞ!
ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট মার্কাস আইনস্পেনিয়ারের মেঘপ্রীতির শুরুটা কৈশোরে, ১৩ বছর বয়েসে। জন্মদিনে বাবা-মা তাকে কিনে দেন একটি পোলারয়েড ক্যামেরা। আর তা দিয়ে ছবি তুলতে তুলতে হঠাৎ একদিন মার্কাসের খেয়াল হয়, তার তোলা ছবির মধ্যে মেঘের ছবি অসম্ভব রকম বেশি। নিজের অজান্তেই মেঘের প্রতি প্রচন্ড রকম ফ্যাসিনেশান অনুভব করেন মার্কাস।
তারপর থেকে মার্কাসের মতো মেঘকে নিয়ে এমন খেলা হয়তো এভাবে আর কেউ খেলেনি। শুধুমাত্র কল্পনাকে হাতিয়ার করে তিনি মেঘের দেশে বিচরন করেন বাঁধাহীন। তৈরি করেন এমন কিছু ছবি যা গল্প বলে যায়। মানুষের দৃষ্টিকোণ আর গল্প বলার ধরণ যে কতটা বিচিত্র হতে পারে তার উদাহরণ মার্কাসের ছবিগুলো। শুরু করা যাক।
১. মেঘে ঝেকে তুষারপাত!
জার্মানীর একটা বড় অংশে বছরের কোনো সময়ই তুষারপাত হয় না। মার্কাসের বড় ভাইয়ের বসবাস এমন এক তুষারবিহীন জনপদে। ব্যাপারটা মার্কাসের ভাইঝির মোটেই পছন্দ না। সে তুষারপাতের মধ্যে হাঁটতে চায়, তুষার স্পর্শ করতে চায়, স্নো বল দিয়ে বন্ধুদের সাথে খেলতে চায়। কিন্তু তার সেই সাধ পূরণ হয় না কখনও।
ভাইঝি মার্কাসকে ডাকে ‘মেঘাঙ্কেল’ বলে। একদিন সে তার মেঘাঙ্কেলের কাছে আবদার করে বসে এভাবে, “তুমি আমাদের এখানকার দু-চারটে মেঘকে ঝাঁকি দিয়ে কিছু তুষার ফেলতে পারো না? ধরো, তুমি যেভাবে তোমার #usetheclouds হ্যাশট্যাগে ইন্টাগ্রামের ছবি দাও, এবার এমন একটা ছবি দিবে যেন মনে হয় তুমি মেঘ ঝাঁকাচ্ছো আর তুষারে তুষারে ছেয়ে যাচ্ছে আমাদের উঠোন!”
ভাইঝির সেই আবদার মেটাতে মেঘ ঝেঁকে তুষার নামাচ্ছেন মার্কাস!
২. মেঘের বুকে স্নো-বোর্ডিং
মানুষ কেন যে স্নো-বোর্ডিং করতে অস্ট্রিয়া বা সুইজারল্যান্ডে যায় বুঝতে পারেন না মার্কাস। তার কথা হলো, সে তো চাইলেই মেঘের বুকে স্নো বোর্ডিং করতে পারে! আর সেটা পৃথিবীর সবখানেই সম্ভব। শুধু দরকার এরকম এক চিলতে মেঘ খুঁজে পাওয়া।
৩. যেতে নাহি দেব!
আপনার যা কিছু প্রয়োজন, তাকে আঁকড়ে ধরুন এভাবে!
৪. উদযাপনের মেঘ
আমাদের বিভিন্ন উদযাপনের সময় আকাশে যে এমন কোনো মেঘ ভাসে না, কে খেয়াল রাখে! খেয়াল রাখেন মার্কাস। তাইতো তার উদযাপনের বার্তা ছড়িয়ে পড়ে আকাশেও!
৫. মার্কাসের পানি গরম করা
মার্কাস পানি গরম করতে দিয়েছিলেন, কিন্তু তা বাষ্প না হয়ে একেবারে মেঘ হয়ে উড়ে গেল!
৬. মেঘের দেশে নাচানাচি
খুব নাচানাচির শখ পেঙ্গুইনটির, তাইতো উঠে পড়েছিলো মেঘের উপর। কিন্তু মেঘের রাজা মার্কাস তার সাথে দুষ্টুমি করতে ছাড়লেন না।
৭. পিক্সার একাডেমীর মেঘ ভ্রমণ
পিক্সারের সব কিউট কিউট চরিত্রেরা হয়তো এভাবেই একদিন হারিয়ে গিয়েছিলো মেঘের দেশে! সে ছবিটি স্বযত্নে রেখেছেন মার্কাস।
৮. বিচ্ছু হাতির কান্ড!
৯. যখন ভীষণ তাড়াহুড়ো!
১০. মেঘের বুকে শরীরচর্চা
৩০টা ডোনাট আর গাদা গাদা মদ গেলার পর শরীরচর্চা শুরু করেছে হোমার।
১১. মিস্টার ক্লাউডস্টেটার!
১২. মেঘের ‘পরে দাঁড়িয়ে মেঘের ছবি তোলা!
১৩. পড়ুয়া মার্কাস
পড়তে পড়তে এভাবেই মাথায় মেঘ উঠে যায় মার্কাসের!
১৪. রাধুনী মার্কাস!
১৫. কিন্তু মার্কাসের রান্নার হাত এতোটাই ভালো যে…
১৬. তবে বিখ্যাত শেফেদের রান্নার সময় যেমন ঝলসে ওঠে আগুন, তেমনিভাবে মার্কাসের রান্নায় খুব আহ্লাদে মেঘ উড়ে যায়!
১৭. মার্কাস সাহেব রেগে গেলে…
রেগে গেলে মার্কাসের মাথা এতোটাই গরম হয় যে তা দিয়ে দিব্যি রান্নার কাজ চলে যায়!
১৮. মেঘ আঁকিয়ে মার্কাস!
আকাশে মেঘের কমতি থাকলে এভাবেই তা পুষিয়ে দেন মার্কাস। যানবাহন রঙ করার যন্ত্র দিয়ে মেঘ ছড়িয়ে দিচ্ছেন আকাশে!
১৯. মার্কাসের মেঘ আঁকাআঁকির আরো কিছু নমুনা
২০. স্কেটিংয়ের জন্য এক চিলতে মেঘ এঁকে নিচ্ছেন মার্কাস
২১. চকলেট লাচ্ছির সাথে মেঘ!
চকলেট লাচ্ছির সাথে ক্রিমের কমতি হয়ে গেলে একটু মেঘ মিশিয়ে নেন মার্কাস!
২২. মেঘে মেঘে কত কথা বলে যান মার্কাস
২৩. কান পেতে রই
আবার কোনো খবর শোনার জন্য এভাবেই কান পেতে থাকেন মার্কাস।
২৪. ভয়ঙ্কর খবর!
মেঘেরা যখন মার্কাসকে ভয়াবহ কোনো খবর দিয়ে যায়…
২৫. ক্ষুধার্ত মেঘ
এক ক্ষুধার্ত মেঘকে কলা খাওয়াচ্ছেন মার্কাস!
২৬. মেঘের কারিগর মার্কাস
২৭. মেঘখণ্ড ঠেলে দূরে কোথাও পাঠিয়ে দিচ্ছেন মার্কাস
২৮. কিংবা দুটি মেঘখণ্ডকে জোড়া দিচ্ছেন
২৯. বিশাল মেঘকে ঠেকিয়ে রেখেছেন
৩০. জাদুকর মার্কাস
৩১. কিউট মেঘ
কিউট এই মেঘটিকে দেখে স্পর্শ করার লোভ সামলাতে পারেননি মার্কাস।
৩২. চা পানরত মার্কাস
আমাদের চা থেকে বের হয় ধোঁয়া, মার্কাসের চা থেকে বের হয় মেঘ!
৩৩. মারিওকে হাঁটা শেখাচ্ছেন মেঘের বুকে
৩৪. মেঘচূড়ায় মারিও
৩৫. আরেকটু মেঘরোপন!
৩৬. বাবা হবার খবর দিলো ভাইঝি!
এই হলো মার্কাসের সেই ভাইঝি। ভাইঝির সাথেও নাকি মেঘেদের খাতির চূড়ান্ত! তাই বাবা হবার খবরটি মার্কাসকে না দিয়ে এভাবে ভাইঝিকে দিয়ে যায় মেঘেরা।
৩৭. মার্কাসের ছেলের লাফ
মার্কাসের ছেলের প্রথম মেঘ ভ্রমণ। মার্কাসের ভাষ্য, তার ছেলে নাকি এক লাফেই মেঘের উপর উঠে যায়!
৩৮. নতুন বাবারা সাবধান!
বাচ্চাদের ডাইপার পাল্টানোর সময় পারলে নাকে ক্লিপ এঁটে নেবেন, নইলে…
৩৯. মার্কাসের ছেলের দস্যিপনা
জুতো পরবে না বলে মার্কাসের পিচ্চি ছেলে কোনো এক মেঘের উপর সেরে রেখেছিলো জুতোজোড়া। খুঁজে পেতে শেষে গলদঘর্ম হতে হয়েছিলো মার্কাসকে।
৪০. ছেলের আবদার
মার্কাসের ছেলে আবদার করেছিলো তার একটা হ্যাট চাই, মার্কাস তার এমন হ্যাটের ব্যবস্থা করে দেন ছেলেকে।
মার্কাসের এমন পাগলামীর অন্ত নেই। মার্কাস তার ইন্সটাগ্রাম আইডি (www.instagram.com/marcus1spannier) তে আপলোড করে যাচ্ছেন এমন সব পাগলামীর ছবি। মার্কাসের এ পাগলামী চলতে থাকুক, ছড়িয়ে পড়ুক মেঘের প্রতি ভালোবাসা সবার মাঝে, ভালো থাকুক সব মেঘ!