Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

খাবারে ব্যবহৃত অদ্ভুত যত উপাদান

‘খাবার’ শব্দটি শুনলে কারো বা জিভে জল চলে আসে, আবার কেউবা অনীহায় নাক সিঁটকান। কেউ কেউ বাঁচার জন্য খেয়ে থাকেন এ কথা যেমন ঠিক, তেমনি আবার খাওয়ার জন্য বাঁচেন এমন লোকের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। মতাদর্শ যেমনই হোক না কেন, একটি ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। আর সেটি হলো- খাবারদাবার জীবনের খুব অপরিহার্য একটি অংশ। খাবারকে সুস্বাদু ও আবেদনময় করে তুলতে খাবারে ব্যবহার করা হয় নানা ধরনের উপকরণ। এ লেখাটি সাজানো হয়েছে খাদ্যে ব্যবহৃত এমন সব উপকরণ নিয়ে যেগুলো অদ্ভুত তো বটেই, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে পিলে চমকাবার মতো। নিজেরা রান্নার সময় আমরা জানি কী ব্যবহার করছি এবং কী খাচ্ছি। কিন্তু খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকারী কোম্পানিগুলো আমাদের থেকে কী আড়াল করে রাখছে তার অনেক কিছুই কিন্তু আমরা জানি না। এ লেখাটি পড়ার পর অনেক খাবার খেয়ে যাবেন নাকি বর্জন করবেন সেই ভার পাঠকের ওপরই রইলো!

সোনা

সোনা বলতে প্রথমেই স্বর্ণালঙ্কারের কথা মাথায় আসাই স্বাভাবিক। মনোলোভা গয়না তৈরিতে ব্যবহারের পাশাপাশি সোনা বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিতেও ব্যবহৃত হয়। কিন্তু যদি বলি সোনার ব্যবহার খাবারের ক্ষেত্রেও রয়েছে? খাদ্যে সংযোজনীয় দ্রব্য হিসেবে এর ব্যবহার আছে। ওয়াইন সাজানোর কাজে সোনা ব্যবহৃত হয় ‘গোল্ড লিফ’ (সোনার পাতলা তবক) বা ‘গোল্ড ফ্লেক’ আকারে যার ই নাম্বার ই১৭৫!

গোল্ড ফ্লেক দেয়া কিউভি; ছবিসূত্র- goldspirits.com

পোলিশ এবং জার্মান এক প্রকার ওয়াইনের নাম ‘গোল্ডওয়াসার্’ (গোল্ড ওয়াটার) যাতে টুকরো করা গোল্ড লিফ দেয়া হয়। এছাড়াও এখন কিউভি, ভদকা প্রভৃতি নানা ধরনের মদেও এর ব্যবহার আছে। উল্লেখ্য যে, দেহের ওপর এ সোনা খাওয়ার কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না। এটি যেমন পানীয়টির সাথে দেহে প্রবেশ করে, তেমনি দেহের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দেহ থেকে নিষ্কাশিতও হয়ে যায়।

বিভারের পায়ু নিঃসৃত পদার্থ ও মূত্র

ভ্যানিলা আইসক্রিম ভালোবাসেন? কিংবা র‍্যাস্পবেরি? গরমের দিনে ঠান্ডা ঠান্ডা আইসক্রিমের জুড়ি মেলা ভার। আর ভ্যানিলা কিংবা র‍্যাস্পবেরি ফ্লেভার বেশ জনপ্রিয়ও বটে। কিন্তু আপনি জানেন কি, এই ভ্যানিলা এবং র‍্যাস্পবেরি ফ্লেভারের ফ্লেভারবর্ধক হিসেবে কোন দ্রব্য কাজ করে? বিভার নামক প্রাণীর পায়ু নিঃসৃত তরল এবং মূত্রের মিশ্রণে তৈরি ক্যাস্টোরিয়াম এ ফ্লেভারগুলোর স্বাদ বাড়িয়ে এনে দেয় সুন্দর আমেজ! এমনকি অনেক সুগন্ধি, চুইংগাম এবং সিগারেটেও এর ব্যবহার আছে। তবে ফ্লেভারের সাথে বিভারের পায়ু নিঃসরণের মিশেলের কথা প্রথম কার মাথায় এসেছিল তা সত্যিই ভাবনার বিষয় বৈকি!

‘বিভার’ নামক সেই প্রাণীটি;  ছবিসূত্র- Readers Digest

বিভারের পায়ুর নিকটে অবস্থিত ‘ক্যাস্টর স্যাক সেন্ট গ্ল্যান্ড’ থেকে নিঃসৃত এই ক্যাস্টোরিয়ামকে এখনো কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা সম্ভব হয়নি। ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন (এফডিএ) একে প্রাকৃতিক ফ্লেভার হিসেবে অভিহিত করেছে। এটি বিভিন্ন ক্যান্ডি, গাম, পুডিং ও জেলাটিনে ব্যবহৃত হয়।

চামড়া বা অস্থি থেকে পাওয়া জেলাটিন

টলটলে জেলাটিনের ব্যবহার নানা খাদ্যদ্রব্যে রয়েছে। তবে নিরামিষভোজীদের জন্য দুঃসংবাদ হলো এ জেলাটিন কিন্তু মোটেই উদ্ভিজ্জ উত্‍স থেকে পাওয়া যায় না, এটি একটি প্রাণীজ পদার্থ। জেলাটিন পাওয়া যায় কোলাজেন নামক প্রোটিন হতে। প্রাণীর চামড়া, হাড় এবং কানেকটিভ টিস্যুতে কোলাজেন পাওয়া যায়। বর্তমান জেলাটিন তৈরি হয় ৫০% শূকরের চামড়া এবং ২৫% গরুর হাড় ফোটানোর মাধ্যমে।

শূকরের চামড়া থেকে তৈরি হয় জেলাটিন;   ছবিসূত্র- businessinsider.com

উদ্ভিজ্জ নয়, প্রাণিজ জেলাটিন; ছবিসূত্র- kraftrecipes.com

এই জেলাটিন ইয়োগার্ট, সাওয়ার ক্রিম, ক্যান্ডি, ফ্রস্টেড সিরিয়াল প্রভৃতি খাদ্যে ব্যবহৃত হয়। জেলাটিন যে একাধিক ধর্মের মানুষের কাছেই হালাল নয় তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। তবে সামুদ্রিক আগাছা থেকে তৈরি কারাগিন্যান (Carrageenan) নিরামিষাশীদের জন্য জেলাটিনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ভাইরাস

ঠিকই পড়েছেন! ভাইরাসও খাবারে ব্যবহার করা হয়, তবে সেটা অবশ্যই নিয়ম ও নিয়ন্ত্রণ মেনে। ব্যাকটেরিয়া খাবারে জন্মায় এবং এই ব্যাকটেরিয়ার কার্যকারিতা রহিত করতেই খাবারে ব্যবহার হয় ব্যাকটেরিওফায ভাইরাস, যা কিনা ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে। এভাবে মেরে ফেলা সম্ভব হয় খাবারে জন্মানো ফুড পয়জনিং-এর জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াগুলো এবং অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াও। ২০০৬ সালে ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এই পদ্ধতিটির অনুমোদন দেয়।

একপ্রকার ভাইরাস; ছবিসূত্র-listverse.com

প্রতি বছর প্রায় ২৫০০ আমেরিকান লিস্টেরিয়া বা লিস্টেরিওসিস (listeriosis) এর ভুক্তভোগী হন। তাই এর প্রতিকারে তারা ভাইরাস যুক্ত করে দেয়া খাবার খায়। বিশেষ করে ‘রেডি টু ইট’ ধাঁচের মাংসজাত খাবারে এই পদ্ধতির ব্যবহার রয়েছে। মোট ধরনের ভাইরাস মাংসে ব্যবহার করা হয়। ফুড এন্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিষ্ট্রেশনের বিবৃতি অনুযায়ী, “যতদিন পর্যন্ত এটা নিয়ম মেনে ব্যবহৃত হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত আমরা এটাকে নিরাপদ হিসেবেই দেখছি।” এমনকি এজন্য এভাবে ভাইরাস ব্যবহৃত খাদ্যে এর কোনোপ্রকার উল্লেখযুক্ত লেবেল লাগানোর নিয়মও করেনি তারা। কাজেই জানার উপায় নেই আপনি কী খাচ্ছেন এবং সেজন্য পুরোটা জেনে আপনি খাবারটি খাবেন কিনা সেই সিদ্ধান্তের স্বাধীনতাটি আপনার থাকছে না।

আলকাতরা

লালরঙা ফুড কালার হিসেবে পূর্বে আমারান্থ-এর ব্যবহার ছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা খুঁজে পান আমারান্থ বিষাক্ত এবং ক্ষতিকর। আমারান্থের বিকল্প হিসেবে চলে আসে নতুন লাল খাবার রং ‘অ্যালোরা রেড এসি’, যার ই নাম্বার ই১২৯. কয়লাকে কোল গ্যাস কিংবা কোক এ রূপান্তরিত করার সময় উপজাত হিসেবে যে আলকাতরা তৈরি হয় তা হতে অ্যালোরা এসি তৈরি হয়। এই আলকাতরা উকুননাশক শ্যাম্পুতে এবং টাইলিনল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। অ্যালোরা এসি বিষাক্ত না হলেও অনেক ক্ষেত্রেই কিছু মানুষের বমি ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সঞ্চার করেছে। এতদসত্ত্বেও এফডিএ একে অনুমোদন দিয়েছে এবং নানান ক্যান্ডি ও কোমল পানীয়তে এর ব্যবহার বেশ সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠেছে।

আলকাতরা; ছবিসূত্র-listverse.com

এছাড়াও কমলা, হলুদ কিংবা সবুজ খাদ্য রংগুলো তৈরি হয় টার্ট্রাজিন থেকে, যেটা পাওয়া যায় এ আলকাতরা থেকেই। কিছু কিছু সমীক্ষা অনুযায়ী এটি বাচ্চাদের মধ্যে অতিচাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।

ভেড়ার লোম

ব্যা ব্যা ব্ল্যাকশিপ, হ্যাভ ইউ এনি উল? …” ইংরেজিতে এই ছড়াটি কম-বেশি আমাদের অনেকেরই পড়া। তবে এই উল তথা বাংলায় যেটা ভেড়ার লোম সেটিরও অবদান কিন্তু খাবারে আছে! ভেড়ার লোমে পাওয়া যায় একটি তেলতেলে লেইসদৃশ পদার্থ- ল্যানোলিন। এই ল্যানোলিন ব্যবহৃত হয় চুইংগাম নরম করবার কাজে। এছাড়াও লোশন, সানস্ক্রিন, শিশুদের ব্যবহার্য বস্তু এবং বিভিন্ন প্রসাধনীতেও ব্যবহৃত হয় ল্যানোলিন।

ভেড়া। আলোকচিত্রী- Kai Morgener

শেল্যাক

ক্যান্ডির উপরে যে চকচকে প্রলেপ দেয়া থাকে তা হলো শেল্যাক। এটি ক্যান্ডিকে শুধু মসৃণ অবয়বই এনে দেয় না, পাশাপাশি আপনার হাতে ক্যান্ডির গলে যাওয়াকেও প্রতিরোধ করে। ক্যান্ডি গ্লেজ বা কনফেকশনার্স গ্লেজ হিসেবে বের হওয়া এই শেল্যাক প্রকৃতপক্ষে ল্যাসিফার ল্যাক্কা (Laccifer lacca) বা ক্যারিয়া ল্যাক্কা (Kerria lacca) নামক ‘ল্যাক বিটল’ পোকার থেকে নিঃসৃত পদার্থ থেকে তৈরি হয়। এই পোকাগুলো ভারত ও থাইল্যান্ডের বনগুলোতে পাওয়া যায় এবং যে পদার্থটি তারা নিঃসরণ করে তা তারা গাছের ডালে নিজেদের কোকুন বা গুটি আটকাতে ব্যবহার করে।

খাবারে ব্যবহৃত হয় শেল্যাক! ছবিসূত্র- desiblitz.com

শেল্যাক হার্ড কোটেড ক্যান্ডি, ক্যান্ডি কর্ন, জেলি বীন প্রভৃতিতে ব্যবহৃত হয়। খাদ্যের পাশাপাশি নেইল পলিশ এবং প্রসাধনীতেও এর ব্যবহার আছে।

পোকা

ককিনিল (Cochineal) এবং কারমিন (Carmine) হলো দুটি লাল খাদ্য রং যা কিনা ককিনিল (Cochineal) নামক পোকা থেকে পাওয়া যায়। সরাসরিভাবে পোকাটিকে শুকিয়ে গুঁড়ো গুঁড়ো করে ককিনিল বানানো হয়, আর কারমিন বানানো হয় ককিনিল পাউডার থেকে। পোকাগুলোকে প্রথমে গরম পানিতে চুবিয়ে মারা হয়। যত বেশি সময় পোকাগুলোকে গরম পানিতে রাখা হবে, রংয়ের গাঢ়ত্ব তত বেশি হবে। এভাবেই হালকা কমলা থেকে গাঢ় লাল রং তৈরি হয়।

ককিনিল পোকা। ছবিসূত্র-flickr.com

দুই পাউন্ড রং তৈরিতে প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজারটি পোকা প্রয়োজন। শতাধিক বছর ধরে ককিনিল রং হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এটি একটি বহুল ব্যবহৃত কাপড়ের রংও। অনেক ক্ষেত্রে অ্যামোনিয়া কিংবা সোডিয়াম কার্বনেটে স্ত্রী-পোকাগুলোর খোলস ফুটিয়েও কারমিন রংগুলো তৈরি করা হয়। আইসক্রিম, ইয়োগার্ট, মিস্টি এবং নানা ফলজাত খাবার ও জুসে রং হিসেবে এগুলো ব্যবহৃত হয়।

ককিনিল পোকার থেকে পাওয়া রং দিয়ে তৈরি খাবার। ছবিসূত্র- crazyeddiethemotie.blogspot.com

তবে জানা যায় পোকাভিত্তিক এ রংগুলো অনেকের ক্ষেত্রে মারাত্মক এলার্জি সৃষ্টি করেছে যার মধ্যে প্রাণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এনাফাইল্যাকটিক প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। তাই এফডিএ এখন থেকে খাবার কিংবা প্রসাধনী যে ক্ষেত্রেই রংগুলো ব্যবহার হোক না কেন, এদের নামোল্লেখ করে লেবেল করা বাধ্যতামূলক করেছে। স্টারবাকস এর স্ট্রবেরী ফ্র্যাপুচ্চিনো এবং স্মুদিগুলোতেও আগে ককিনিল রং এর ব্যবহার ছিল। কিন্তু নিরামিষভোজী সম্প্রদায় থেকে আপত্তি জানানো হলে এর ব্যবহার তুলে নেয়া হয়। change.org এর একটি আবেদন অনুযায়ী, ইয়োগার্ট, মারাশ্চিনো চেরি, জ্যাম, কেক এবং টমেটোজাত পদার্থ মিলিয়ে আপনি জীবনে কম করে হলেও এক পাউন্ড এসব লাল রং চেখেছেন। অর্থাৎ অন্তত ৭০,০০০ ককিনিল বিটল সাবাড় করেছেন আপনি!

মাছের বায়ুথলি

বিয়ারে ব্যবহৃত হয় আইসিং গ্লাস নামক জেলাটিন সদৃশ পদার্থ। এই আইসিং গ্লাস না ছেঁকে রাখা অপাস্তুরিত বিয়ারের যেকোনো প্রকার ইস্ট ও অশুদ্ধি প্রতিরোধ করতে ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি এটি বিয়ারকে তার সোনালি জেল্লা দিতেও ভূমিকা রাখে। এই আইসিং গ্লাস তৈরি হয় মাছের বায়ুথলি থেকে। কাজেই বিয়ার আর মাছের কোথাও একটা যোগসূত্র আছে এটা আমরা বলতেই পারি।

বিয়ার। ছবিসূত্র- inside.com

কাঠের গুঁড়া

কাঠ এবং তুলা থেকে আমরা মূলত যা পাই যা হলো সেলুলোজ। এই সেলুলোজ কাগজ কারখানার পাশাপাশি কখনো কখনো ব্যবহৃত হয় খাবারে। গাছের এবং কাঠের ছোট ছোট টুকরো বা গুঁড়ায় থাকা সেলুলোজ কুচোনো পনিরে ব্যবহার করা হয় যা পনিরের ক্ষুদ্র টুকরোগুলোকে ঝরঝরে রাখতে সাহায্য করে এবং পরষ্পর জোড়া লেগে দলা পাকিয়ে উঠতে দেয় না। ক্রাফট পারমেসিয়ান চিজেও সেলুলোজ ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও লো-ফ্যাট আইসক্রিমকে আরো ক্রীমি ও ঘন দেখাতে অনেক সময় সেলুলোজ ব্যবহৃত হয়। তবে সেলুলোজ মানুষের দেহে কোনো পুষ্টিই যোগায় না, কেননা মানুষ সেলুলোজ হজম করতে পারে না।

কাঠের গুঁড়া মিশ্রিত চীজ। ছবিসূত্র- desiblitz.com

ইঁদুরের লোম

এটা মোটেও বলা উচিত হবে না যে ইঁদুরের লোম দিয়ে খাবার, যেমন- চকোলেট কিংবা অন্য কিছু বানানো হয়। তবে বড় বড় খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থায় যে ইঁদুরের উপস্থিতি থাকবেই এটা একপ্রকার ধরেই নেয়া যায়। তাই ভুলক্রমে খাবারে চলে আসতে পারে ইঁদুরের লোম। এফডিএ তাই প্রতি ১০০ গ্রাম চকলেটে একটি, প্রতি ১০০ গ্রাম সিনামনে ২২টি এবং এক জার পিনাট বাটারে ৫টি পর্যন্ত ইঁদুরের লোম থাকলে সেটিকে বৈধতা দিয়েছে।

খাবারে চলে আসতে পারে ইঁদুরের লোম যা নির্দিষ্ট পরিমাণ পর্যন্ত হলে বৈধ!  চীজ, সোনা, বিয়ার, মদ ছবিসূত্র- .foxnews.com

মানুষের চুল ও হাঁসের পালক!

খাবারে চুল দেখলে আমরা যারপরনাই বিরক্ত হই। কিন্তু যদি বলি খাবার তৈরিতেই ব্যবহার হয় চুল! খটকা লাগছে কি? প্রিয় পাঠক, সন্দেহ ঝেড়ে ফেলুন, কেননা আসলেই চুলের ব্যবহার খাবারে আছে! তবে সেটি সরাসরিভাবে নয়। এল-সিস্টিন (L-Cysteine) এক প্রকার অ্যামিনো অ্যাসিড যা বেক করা খাবারে প্রচুর ব্যবহৃত হয়। এটি খাবারে স্থিতিস্থাপকতাই দেয় না শুধু, পাশাপাশি খামিরে নরম ভাব এনে দেয়। এই এল-সিস্টিন নানাবিধ মজার খাবার যেমন- ব্যাগেল, ডোনাট, ব্রেড, কুকিজ এবং অন্যান্য অনেক খাবারে ব্যবহৃত হয়। এল-সিস্টিনের সবচেয়ে সহজ এবং সস্তা উৎস মানুষের চুল।

খাবারে ব্যবহৃত হয় মানুষের চুল ও হাঁসের লোম থেকে তৈরি উপাদান। ছবিসূত্র- webecoist.momtastic.com

মানুষের চুল থেকে বিশেষ রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এল-সিস্টিন তৈরি করা হয় চীনে। চীনে বানানো সয়া সসে মানুষের চুল ব্যবহৃত হয়। জনৈক সয়াসস উৎপাদনকারীকে কিভাবে সয়াসস সিরাপ বা পাউডার বানানো হয় জিজ্ঞেস করা হলে জানা যায়, “পাউডার মানুষের চুল থেকে বানানো হয়। যেহেতু চুলগুলো আসে দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা সেলুন, নাপিতের দোকান কিংবা হাসপাতাল থেকে। এগুলো অস্বাস্থ্যকর এবং মানুষের ব্যবহার করে ফেলে দেয়া নানা বর্জ্যপদার্থ যেমন- ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, ন্যাপকিন, হাসপাতালের তুলা ইত্যাদি মিশ্রিত থাকে।

মানুষের চুলের পাশাপাশি এল-সিস্টিন পাওয়া যায় হাঁসের পালক থেকেও। যদিওবা খামিরের কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহৃত এল-সিস্টিনের শতকরা ৮০ ভাগ তৈরি হয় মানুষের চুল থেকে, কিন্তু ম্যাকডোনাল্ডস হাঁসের পালক থেকে তৈরি এল-সিস্টিন তাদের বেকড হট অ্যাপল পাই এবং ওয়ার্ম সিনামন রোল এ ব্যবহার করে।

এভাবেই পরিচিত খাবারের পর্দার ওপারে লুকিয়ে আছে এমন অনেক উপকরণের চিত্র যা আমরা জানি না, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে যা ভাবতেও পারি না। এমনি কিছু খাবারে ব্যবহৃত উপাদানের গল্প নিয়ে দেখা হচ্ছে লেখাটির আগামী পর্বে।

পাদটীকা

ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সুইজারল্যান্ডে যে সকল বস্তুকে খাবারে খাদ্য সংযোজন পদার্থ হিসেবে ব্যবহার করার অনুমোদন দেয়া হয় সেগুলোকে ই-নাম্বার দিয়ে প্রকাশ করা হয়। ই বলতে ইউরোপ বুঝায়। খাদ্য রং, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, থিকেনার, স্ট্যাবিলাইজার, ইমালসিফায়ার প্রভৃতি খাদ্য সংযোজক পদার্থের ই-নাম্বার দেয়া হয়।

দ্বিতীয় পর্বঃ খাবারে ব্যবহৃত অদ্ভুত যত উপাদান – ২

Related Articles