গত রবিবার অস্ট্রেলিয়ায় এক ভয়াবহ তাপ প্রবাহের (Heatwave) ফলে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১১৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায়। সেলসিয়াস স্কেলের হিসেবে সেদিনের তাপমাত্রা ছিল প্রায় ৪৭.৩ ডিগ্রি। গত ৭৮ বছরে সিডনি শহরে এত গরম কখনো পড়েনি। স্থানীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, এটি নতুন রেকর্ড।
এই ঘটনার পরোক্ষ প্রভাবে রেকর্ড নিম্ন তাপমাত্রার শীতে কাঁপছে পৃথিবীর অপরপ্রান্তের মানুষেরা। তবে সপ্তাহের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছে সিডনির শহরতলী পেনরিথে। নিউ সাউথ ওয়েলস আবহাওয়া দপ্তরের জরিপ অনুযায়ী, এই শহরতলীর ত্রৈধবিন্দু তাপমাত্রা ১৯৩৯ সালের রেকর্ড ১১৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে সামান্য কম ছিল।
#SydneyHeat: Sorry, in our earlier checks we missed a 47.8 degrees C temperature recorded at an old #Richmond station (now closed) in 1939. 47.3 today still beats the previous #Penrith record.
— Bureau of Meteorology, New South Wales (@BOM_NSW) January 7, 2018
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া জুড়ে তাপমাত্রা এতটাই উষ্ণ হয়ে ওঠে যে, প্রতিবেশী প্রদেশ ভিক্টোরিয়ার পুলিশ টুইটারে চালকদের সতর্ক করে বলেছেন “৬-মাইল ফ্রি ওয়ে গরমে গলতে শুরু করেছে”।
Police are warning motorists to expect delays and to avoid the right-hand lane of the Hume Freeway (heading toward the city) near Broadford as there is a 10km stretch of road that is melting. pic.twitter.com/icI1hecmvn
— Victoria Police (@VictoriaPolice) January 5, 2018
এছাড়াও মাত্রাতিরিক্ত গরমে ইতোমধ্যে বেশক’টি দাবানল সৃষ্টি হবার ঘটনার পর অগ্নি সতর্কবার্তা ও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
UPDATE 6pm. 20 fires continue to burn across #NSW 4 are yet to be contained. Today there were 51 new fires thankfully none threatened homes. Lightning has been detected in a number of areas this evening & we will be checking these areas for new fires over coming days. #NSWRFS pic.twitter.com/lltfcbl8oV
— NSW RFS (@NSWRFS) January 7, 2018
সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এনএসডব্লিউ পরিবেশ ও ঐতিহ্য কার্যালয় স্বাভাবিকের চেয়ে উচ্চমাত্রার ওজোন স্তরের কারণে বায়ুমণ্ডলের গুণগত মানের পরিবর্তন ঘটতে পারে।
Even the otters at Taronga Zoo were feeling hotter … they were fed some prawn ice blocks while 8yo Fergus the hippo preferred a carrot confection. Pics: ABC News / Emily Laurence #SydneyHeatwave pic.twitter.com/Lh1Wt5hZ1m
— ABC Sydney (@abcsydney) January 7, 2018
এমনিতেই অসহ্য গরম, তার উপর সেই কষ্টের পাল্লা ভারী করতেই যেন সেদিন সিডনিতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়। হাজার হাজার মানুষ এসময় বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় ছিলেন। স্থানীয় সংবাদে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, তাপমাত্রা তখন ৯১ থেকে ১১৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটে ওঠানামা করছিল।
অস্ট্রেলিয়ার স্পেশাল ব্রডকাস্টিং সার্ভিসের কাছে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, অসগ্রিড নামের স্থানীয় বিদ্যুৎ প্রদানকারী একজন মুখপাত্র এই বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পেছনে কারণ হিসেবে গরমে অতিরিক্ত হারে বিদ্যুৎ ব্যবহারকে দায়ী করেছেন।
অবশ্য উদ্ভট এই আবহাওয়া শুধু অস্ট্রেলিয়াতেই নয়। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল জুড়ে এবং আলাস্কাতেও সাম্প্রতিক সময়ে অস্বাভাবিকভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। NPR এর একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সেখানকার তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ থেকে ২০ ডিগ্রি বেশি অনুভূত হয়েছে। এতে করে বরফ স্তর নিয়ে কর্তৃপক্ষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
গত সপ্তাহে ফ্লোরিডা উত্তরাঞ্চলে যখন তুষারপাত হচ্ছে, তখন আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে উষ্ণ। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের তাপমাত্রা অবিশ্বাস্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। বিভিন্ন স্থানে জায়গায় তাপমাত্রা ছিল শূন্যেরও নিচে। নিউ ইয়র্ক সিটির জন এফ কেনেডি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্রের আবহাওয়াবিজ্ঞানী বব ওরাভেক রয়টার্সকে জানিয়েছেন, গত শনিবার সেখানকার তাপমাত্রা ছিল ৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এর আগে সেখানকার তাপমাত্রা কখনও এত নিচে নামেনি।
Can you please send some of that heat my way please its so cold hear in Ohio #SydneyHeat pic.twitter.com/7gkgnleyro
— slasher Mc’ mack (@Michael85232236) January 7, 2018
এদিকে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মুখপাত্র ক্লেয়ার নুলিস গত শুক্রবারে জানিয়েছেন, ইউরোপের মানুষকেও অস্বাভাবিক তাপমাত্রার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। জাতিসংঘের একটি অধিবেশনে অংশ নেওয়ার পর সেখানে তিনি বলেছেন,
“গত বুধবার ফ্রান্সের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৫২.৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট), যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।”
জাতীয় জলবায়ু পরিষেবা কেন্দ্র গত রোববার তাদের এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ অঞ্চলের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থেকে বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফিচার ইমেজ: The Washington Post