প্রাচীনকালের মানুষ গুহায় বসবাস করতো এটা আমাদের সবারই জানা। কিন্তু সেই গুহাগুলোকে তারা কীভাবে বাসস্থান হিসেবে ব্যবহার করতো কিংবা গুহার ভেতরের চেহারাই বা কেমন ছিলো তা অনেকেরই অজানা। এমন অনেক প্রাচীন গুহার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে যার ভেতরের দিকটা যেন শিল্পীর হাতে আঁকা শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো। প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষ হওয়া সত্ত্বেও তারা যে এত সুন্দর চিত্র আঁকতে জানতো তা অনেকেরই বিশ্বাস হবে না। কিন্তু অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি। হাজার হাজার বছর আগে আদিম মানুষের হাতে আঁকা এত সুন্দর আর শৈল্পিক চিত্র বিস্ময়ের জন্ম দেবে যে কারো মনে। প্রাগৈতিহাসিক যুগের বিস্ময়কর সেসব গুহাচিত্রের পরিচয় দেয়ার প্রয়াস থাকবে এ লেখায়।
লস্কো গুহাচিত্র, ফ্রান্স
লস্কো গুহাটি প্রস্তর যুগের গুহাচিত্রের জন্য সারা বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত। এটি দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের দোর্দনে অঞ্চলের মন্তিনিয়াকে অবস্থিত।
১৯৪০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর চারজন ছেলে লস্কো গুহাতে তাদের পড়ে যাওয়া কুকুরের সন্ধান করছিলো। তাদেরই একজন মার্সেল রাবিদাত গুহাটির প্রবেশপথ খোলে এবং সবাই মিলে ভেতরে যায়। সেখানে তারা কিছু চিত্র দেখতে পায়। পরদিন তারা আরো ভালো প্রস্তুতি নিয়ে গুহায় প্রবেশ করে এবং গুহার ভেতরে বিস্ময়কর সব চিত্র আবিষ্কার করে। ১৯৪৮ সালে এটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
এই গুহায় ২ হাজারেরও বেশি চিত্র রয়েছে। ধারণা করা হয়, গুহাচিত্রগুলো বিশ হাজার বছরের পুরনো। গুহাটিতে বিভিন্ন প্রাণী, মানুষের অবয়ব এবং বিমূর্ত চিত্র চিত্রায়িত হয়েছে। লস্কো গুহা কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি সেকশন রয়েছে।
এগুলো হলো গ্রেট হল অফ বুলস (ষাঁড়ের বিশাল কক্ষ), ল্যাটরাল প্যাসেজ (পার্শ্ব পথ), শাফট অফ দ্য ডেড ম্যান (মৃত মানুষের খাদ), চেম্বার অফ এনগ্রেভিংস (নকশার চেম্বার), পেইন্টেড গ্যালারি (অঙ্কিত গ্যালারি) এবং চেম্বার অফ ফিলাইনস (বিড়ালের কক্ষ)।
এই সেকশনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় সেকশন হচ্ছে ‘গ্রেট হল অফ বুলস’। এটি মোট চারটি কালো ষাঁড়কে ফুটিয়ে তুলেছে। সতেরো ফুট দীর্ঘ কালো ষাঁড়ের চিত্রকর্মটি গুহা শিল্পকলায় আবিষ্কৃত বৃহত্তম পশুর চিত্র। প্রস্তর যুগের মানুষেরা এসব চিত্র আঁকার জন্য প্রাকৃতিক রঞ্জক পদার্থ ব্যবহার করেছিলো।
আলতামিরা গুহাচিত্র, স্পেন
আলতামিরা গুহাটি উত্তর স্পেনের কন্টাব্রিয়াতে আন্তিয়ানা দেল মার গ্রামের কাছে অবস্থিত। গুহাটি প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৮৬৮ সালে। মোদেস্তো কুবিলাস নামক এক ব্যক্তি প্রথম এটি দেখেন। পরে তিনি এর কথা প্রত্নতত্ত্ববিদ স্যান ডি সাওতোলাকে বলেন। স্যান ডি সাওতোলা গুহার ভেতরে বিভিন্ন গুহাচিত্র দেখে এগুলোকে প্রাগৈতিহাসিক গুহাচিত্র বলে চিহ্নিত করেন।
কিন্তু তখনকার কেউ এগুলোকে প্রস্তর যুগের গুহাচিত্র বলে মানতে রাজি হয়নি। কারণ সেসময় যতগুলো গুহাচিত্র আবিষ্কার হয়েছিলো তার মধ্যে এটির গুহাচিত্র ছিলো শতগুণে সুন্দর। পরে অবশ্য প্রত্নতাত্ত্বিকেরা এসব গুহাচিত্রকে প্রস্তর যুগের বলে স্বীকার করেন।
বর্তমানে গুহাটি ২৭০ মিটার লম্বা। গুহাটিকে তিনটি সেকশনে ভাগ করা যেতে পারে। যথা: প্রবেশদ্বার, পলিক্রোম রুম এবং গ্যালারি। প্রবেশদ্বার হচ্ছে গুহাটির সেই অংশ যেখানে সেকালের মানুষেরা বসবাস করতো। প্রত্নতাত্ত্বিকরা এখানে বিভিন্ন প্রাণীর হাড়ের অবশিষ্টাংশ, ছুরি, কুড়ালের মতো জিনিসের সন্ধান পেয়েছেন, যেটা প্রমাণ করে এখানে মানুষ বসবাস করতো।
গুহাটির দ্বিতীয় সেকশন পলিক্রোম রুম গুহাটির ভেতরের দিকে অবস্থিত, যেখানে প্রাকৃতিক কোনো আলো পৌঁছায় না। এই অংশটি বেশ কিছু রঙ দিয়ে চিত্রায়িত করা। বেশিরভাগ ছবিই এখানে। গুহার ছাদটা এখানে বেশ নিচু। তাই তখনকার মানুষেরা হয়তো এই ছাদের দেয়ালজুড়েই ছবিগুলো এঁকেছিলেন। শত শত ছবির মধ্যে বাইসন, হরিণ, বন্য শূকরের ছবিই বেশি। গুহাটির একেবারে শেষাংশে রয়েছে সরু গ্যালারি। কার্বন ডেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করে চিত্রগুলোকে পরীক্ষা করে ফরাসি প্রত্নতাত্ত্বিকেরা জানিয়েছেন, এগুলো প্রায় ১৪-১৭ হাজার বছর আগের আঁকা। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো গুহাটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে।
ক্যাকাডু রক আর্ট, অস্ট্রেলিয়া
ক্যাকাডু ন্যাশনাল পার্ক অস্ট্রেলিয়ার ডারউইনে অবস্থিত। এখানে রয়েছে রক আর্টস, পাথরের সরঞ্জাম এবং পাথরের শেল্টারসহ হাজারেরও বেশি আদিম সাইট।
ক্যাকাডু জাতীয় উদ্যানের রক আর্টগুলো চল্লিশ হাজারেরও বেশি বছর পূর্বের আদি মানব সভ্যতার প্রতিনিধিত্ব করে। ক্যাকাডুর প্রাচীন শিল্প মূলত শিকার, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন সময়কাল থেকে বসবাসরত বিভিন্ন আদিম জনগোষ্ঠীর সামাজিক জীবনকে উপস্থাপন করে। ক্যাকাডু ন্যাশনাল পার্কের সবচেয়ে প্রাচীন চিত্রটি আঁকা হয়েছিলো বিশ হাজার বছর আগে।
ক্যাকাডু ন্যাশনাল পার্কের সবচেয়ে জনপ্রিয় শিল্প হচ্ছে উবির রক আর্ট, নোরলাঞ্জি রক আর্ট, নাঙ্গুলুর গ্যালারি। ক্যাকাডু পার্কের এসব পাথর চিত্রে ফুটে উঠেছে তাসমানিয়ান বাঘ, মাগুর মাছ, বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ, গম, সাপের মাথাওয়ালা কচ্ছপের চিত্র। এসবের বাইরে এমন কিছু চিত্রও রয়েছে যেগুলো ক্যাকাডুর পূর্বপূরুষদের পৌরাণিক বিশ্বাসকে উপস্থাপন করে। তবে এসবের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে, উবির রক আর্ট সাইটে প্রাচীন বিশ্বের সবচেয়ে সেরা ‘এক্স-রে আর্ট’ এর নিদর্শন রয়েছে।
সোঁভে গুহাচিত্র, ফ্রান্স
সোঁভে গুহায় রয়েছে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন চিত্রগুলো। এটি দক্ষিণ ফ্রান্সের রোন-অ্যাল্পস অঞ্চলে অবস্থিত। রেডিও কার্বন ডেটিং সিস্টেমে জানা যায়, এর চিত্রগুলো প্রায় ৩২ হাজার বছর আগের আঁকা।
১৯৯৪ সালের ডিসেম্বর মাসে জ্যঁ মেরি সোঁভে এই গুহাচিত্র আবিষ্কার করেন। তিনি এবং তার গুহাপরিব্রাজক দল নদীর ধার দিয়ে হাঁটছিলেন। এসময় তারা গুহা থেকে আলোর রেখা দেখে গুহার ভেতরে যান এবং বিস্ময়কর চিত্রগুলো আবিষ্কার করেন। গুহার দেয়ালে এক হাজারেরও বেশি চিত্র রয়েছে। চিত্রগুলো এঁকেছিলেন প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষেরা।
চিত্রগুলোতে বিভিন্ন প্রাণীকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ম্যামথ, বন্য ছাগল, ঘোড়া, গণ্ডার, সিংহ, বাঘ, হায়না এবং ভালুক। বরফ যুগের দুর্লভ কিছু প্রাণীর চিত্রও রয়েছে এসবের মধ্যে। বেশ কিছু চিত্রের বাইরে রেখা টেনে প্রাণীগুলোর গতিশীলতা বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। চিত্রের বাইরেও এই গুহায় বিভিন্ন প্রাণীর ফসিলস, আঁচড়ের ছাপ পাওয়া গিয়েছে। ২০১৪ সালে ইউনেস্কো এই গুহাটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে।
মাগুরা গুহাচিত্র, বুলগেরিয়া
মাগুরা গুহাটি বুলগেরিয়ার অন্যতম বৃহৎ একটি গুহা। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২,৫০০ মিটার। এটি বুলগেরিয়ার ভাইডিন প্রদেশের বেলোগ্রাদচিক অঞ্চলের রাবিশা গ্রামে অবস্থিত। এজন্য একে রাবিশা গুহাও বলা হয়। এর দেয়ালগুলো চমৎকার সব চিত্র দিয়ে চিত্রায়িত করা। ধারণা করা হয়, এই চিত্রগুলো নিওলিথিক এবং ব্রোঞ্জ যুগের শুরুর দিকে আঁকা হয়েছিলো। এই গুহার বিভিন্ন দেয়াল থেকে ৭০০টিরও বেশি চিত্র খুঁজে পাওয়া গেছে।
চিত্রগুলোর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন দেব-দেবী, প্রাণী শিকার করার কৌশল, নারী, মুখোশ পরা পুরুষ, উদ্ভিদ এবং তারা। এই চিত্রগুলো আঁকা হয়েছিলো পাখির বিষ্ঠা দিয়ে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, সেই চিত্রগুলো এখনও টিকে আছে।
গুহার দেয়ালে একটি সোলার ক্যালেন্ডার স্থাপন করা হয়েছে, যেটি ৩৬৬ দিন এবং পাঁচটি বিশেষ উৎসবকে উপস্থাপন করে। এটি ইউরোপীয় মহাদেশে আবিষ্কৃত প্রাচীনতম সোলার ক্যালেন্ডার। এই গুহাটিতে আট প্রজাতির প্রায় দুই হাজারেরও বেশি বাদুড় বাস করে।
কুয়েভা ডি লাস মানোস, আর্জেন্টিনা
কুয়েভা ডি লাস মানোস গুহাটি আর্জেন্টিনার সান্টা ক্রুজ প্রদেশে অবস্থিত। এটি ‘কেইভ অফ হ্যান্ডস’ অর্থাৎ ‘হাতের গুহা’ নামেও পরিচিত। এমন নামের পেছনে কারণ হচ্ছে- গুহাটিতে অসংখ্য হাতের চিত্র রয়েছে। চিত্রগুলো আঁকা হয়েছিলো প্রায় ৯ হাজার থেকে ১৩ হাজার বছর আগে।
শুধু হাতের চিত্রই নয়, এর বাইরেও রয়েছে বিভিন্ন প্রাণী, শিকার করার দৃশ্য, জ্যামিতিক নকশা এবং বিভিন্ন আঁকাবাঁকা নকশা। আর্জেন্টিনার পাতাগোনিয়া অঞ্চলের আদিম লোকজন এসব চিত্র অঙ্কন করেছিলো। গুহাটিকে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে। তবে অবাক করার বিষয়- এই গুহায় যতগুলো হাতের চিত্র রয়েছে তার বেশিরভাগই বাম হাতের চিত্র।
প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা- সেকালের মানুষেরা তাদের ডান দিয়ে বাম হাতের উপর রং ছিটিয়ে এই চিত্রগুলো এঁকেছিলো বা ছাপ দিয়েছিলো। হাতে রঙ ছিটানো হয়েছিলো হাড় দিয়ে তৈরি পাইপ দিয়ে। রঙ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছিলো প্রাকৃতিক খনিজ রঞ্জক পদার্থ, যেমন- ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড (কালো), চীনামাটি (সাদা), ন্যাট্রোজারোসাইট (কালো), আয়রন অক্সাইড (লাল, রক্তবেগুনী)।
এখন পর্যন্ত এই গুহাচিত্রটি বিশ্বের সবচয়ে দীর্ঘ এবং বিস্ময়কর হাতের ছাপ। এই হাত দিয়ে আসলে কি বোঝানো হচ্ছে তার উত্তর কারো জানা নেই। তবে একটি তত্ত্ব বলে- কিশোরদের দীক্ষা অনুষ্ঠান বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে এই হাতগুলো আঁকা হতো। কারণ বেশিরভাগ হাতই কিশোরদের। বড়দের হাতের সংখ্যা খুব কম। অন্য একটি তত্ত্ব মতে, শিকারে যাওয়ার আগে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে এই হাতগুলো আঁকা হয়েছিলো।
ভীমবেটকা, ভারত
ভীমবেটকা গুহাটি ভারতের মধ্যপ্রদেশের রায়সেন জেলায় অবস্থিত। ১৯৫৭ সালে ভারতের প্রত্নতত্ত্ববিদ ভিএস ভাকান্দর এই গুহাটি আবিষ্কার করেন। এতে ৭৫০টির মতো গুহা-বসতি রয়েছে। এর মধ্যে ২৪৩টি ভীমবেটকা অঞ্চলে এবং ১৭৮টি লাখা জুয়ার অঞ্চলে অবস্থিত। এসব গুহা-বসতিতে অসংখ্য চিত্র পাওয়া গিয়েছে। সবচেয়ে প্রাচীন চিত্রগুলো আঁকা হয়েছিলো ৩০ হাজার বছর আগে। মধ্যযুগে আঁকা ছবিও রয়েছে এর মধ্যে। এত বছর আগের চিত্রগুলো এখনও টিকে আছে, কারণ বেশিরভাগ চিত্রই আঁকা হয়েছে গুহার একেবারে ভেতরের দিকে। তবে গুহার উপরের অংশেও কিছু চিত্র আঁকা হয়েছে এবং সেগুলো এখনো টিকে আছে।
বেশিরভাগ চিত্রই আঁকা হয়েছে লাল এবং সাদা রঙ দিয়ে। রঙ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছিলো কাঠকয়লা, ম্যাঙ্গানিজ, লাল পাথর। চিত্রগুলোতে সেসময়ের সামাজিক জীবন-যাপন, শিকার, পশুর লড়াই, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কিছু চিত্র উৎসর্গ করা হয়েছে শুধুমাত্র হিংস্র প্রাণীদের। আঁকা হয়েছে বাঘ, শূকর, হাতি, গন্ডার, হরিণ এবং বানরের চিত্র। ২০০৩ সালে ইউনেস্কো এই গুহাটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে।
ছেরা ডা ক্যাপিভারা, ব্রাজিল
ছেরা ডা ক্যাপিভারা গুহাচিত্র দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে প্রাচীন গুহাচিত্র। এটি ব্রাজিলে অবস্থিত। গুহাটিতে প্রায় ৩০ হাজারের মতো চিত্র পাওয়া গেছে। বেশিরভাগ চিত্রই ২৫ হাজার বছর আগের আঁকা। এগুলো আঁকা হয়েছিলো লাল রঙ দিয়ে। চিত্রগুলোতে শিকার, নাচ এবং মানুষ ও বিভিন্ন প্রাণীর গঠন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই গুহাচিত্রগুলো আমেরিকা মহাদেশে মানব সভ্যতার প্রথমদিকের দলিল হিসেবে পরিগণিত। ১৯৯১ সালে ইউনেস্কো এই গুহাটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে।
লাস গাল, সোমালিয়া
লাস গাল হচ্ছে উত্তর-পশ্চিম সোমালিয়ায় অবসিস্থত একটি জনপ্রিয় প্রত্নতাত্ত্বিক সাইট। ২০০২ সালে ফ্রান্সের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক দল গুহাচিত্রগুলো আবিষ্কার করেছিলেন। তারা যখন এই গুহাটিতে বসতির সন্ধানে খনন করছিলেন, তখন এই চিত্রগুলোর দেখা পান।
গুহাটিতে নিওলিথিক যুগের অসংখ্য চিত্র রয়েছে যেগুলো প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার বছর আগে আঁকা হয়েছিলো। এই চিত্রকর্মগুলো আফ্রিকার কয়েকটি সেরা সংরক্ষিত গুহা চিত্রকর্ম হিসেবে বিবেচিত। লাস গাল কমপ্লেক্সটিতে মোট আটটি প্রাচীন গুহা রয়েছে। বেশিরভাগ চিত্রই আঁকা হয়েছে কমপ্লেক্সটির প্রথম গুহাতে। বেশিরভাগ চিত্রতেই ফুটে উঠেছে হিংস্র প্রাণী এবং গরুর চিত্র। গরুর চিত্রটি এমনভাবে আঁকা হয়েছে যেন তাদেরকে আনুষ্ঠানিক পোশাক পরানো হয়েছে। লাস গাল কমপ্লেক্সের বাকি গুহাগুলো বসবাস এবং কারাগার হিসেবে ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে এটি সোমালিয়ার জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক সাইট।