বর্নি
খারাপ আবহাওয়ার কারণে তিনদিন বসে থাকার পর তিন প্রুশিয়ান সেনাবাহিনী ৯ আগস্ট থেকে আবার যাত্রা শুরু করে। তাদের পথে ছিল দুটি ছোট ফরাসি দুর্গ। ফ্লাসবর্গ আর বিটশ। দুই দুর্গ অবরোধের প্রয়োজনীয় সেনা রেখে যাওয়া হল। ফ্লাসবর্গের পতন হয় ১৮৭০ সালের ডিসেম্বরের ১২ তারিখ। আর বাভারিয়ানদের সামনে বিটশ টিকে ছিল পরের বছরের ২৬ মার্চ পর্যন্ত।
ব্যাডেনের ডিভিশনসহ থার্ড আর্মির একাংশ ১৪ তারিখ স্ট্র্যাসবুর্গ এসে পৌঁছল। মল্টকে জানতেন না ফরাসি সেনাদলের দুর্দশার কথা। তার চিন্তা ছিল মোজেলের অঞ্চলে জুড়ে শত্রুরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। নেপোলিয়ন যে ইতোমধ্যেই পিছিয়ে যাবার তোড়জোড় করছেন তা মল্টকের জানা ছিল না। ফলে তার পরিকল্পনা মতো থার্ড আর্মি ম্যাকমোহনের পথ ধরল। ফার্স্ট আর্মি গেল মেটজের দিকে। সেকেন্ড আর্মি ফার্স্ট আর্মির দিক থেকে ঘুরে গিয়ে মেটজের দক্ষিণ দিক দিয়ে মোজেল নদী পার হয়ে আসল। ১২ তারিখ তারা আর থার্ড আর্মি বেশ কাছাকাছি চলে আসে। সেকেন্ড আর্মির উদ্দেশ্য ছিল ম্যাকমোহন যাতে কোনোভাবেই মেটজের দিকে আসতে না পারেন সেটা নিশ্চিত করা।
মেটজের পূর্বদিকে মোজেল নদীর অপর পারে ছোট ছোট কিছু গ্রাম। এখানেই বর্নি গ্রামের সামনে আগস্টের ১৪ তারিখ ফার্স্ট আর্মির একটি দল ফরাসী কিছু সেনার দেখা পায়। সংঘর্ষ চলাকালে মোজেল পার হয়ে চলে যাওয়া কিছু ফরাসি সৈন্য ফেরত এলো সঙ্গীদের সাহায্য করতে। প্রুশিয়ানরাও দলে দলে বর্নির দিকে আসতে থাকে।
অনেকক্ষণ লড়াইয়ের পরেও কেউ কোনোদিকে অগ্রসর হতে সক্ষম হলো না। ফলে দুই দলই দাবি করল তারাই বিজয়ী। ফরাসিরা খুশি তারা প্রুশিয়ানদের আটকে দিয়েছে। প্রুশিয়ানরা খুশি যে এদিক দিয়ে ফরাসি বাহিনী মেটজ থেকে শ্যালন্সের দিকে যেতে পারবে না। সুতরাং তারা বাধ্য হবে ৩০ মাইল দূরে ভার্দুনের দুর্গে পিছিয়ে যেতে। সেকেন্ড আর্মি মেটজ-ভার্দুন রাস্তার দিকে রওনা দিল।
মার্সে-লা ত্যুর
ভার্দুনের রাস্তা ধরতে ফরাসি বাহিনী বেশ দেরি করে। ১৫ আগস্ট পর্যন্তও তাদের সেনাদের বড় অংশ মেটজের উত্তর আর পশ্চিমে তাঁবু ফেলে ছিল। তাদের এই হেলেদুলে চলার কথা সেকেন্ড আর্মি জানত না। তারা মনে করেছিল বাজাইনের মূল সেনারা বোধহয় এতক্ষনে ভার্দুন পৌঁছে গেছে। কাজেই তারা পরিকল্পনা করছিল অবশিষ্ট সৈন্যদের পাশ থেকে হামলা করে ছিন্নভিন্ন করে দেবার।
১৬ আগস্ট বেশ গরম পড়েছিল। এর ভেতরেই নেপোলিয়ন শ্যালন্সের পথে যাত্রা করেন। বাজাইনের উপর আদেশ হলো ভার্দুন হয়ে শ্যালন্সের রাস্তা ধরতে। সেনাদের গোছাতে বিকেল অবধি সময় নিলেন বাজাইন। এর মধ্যেই দক্ষিণ থেকে একদল প্রুশিয়ান অশ্বারোহী এসে উপস্থিত হয় পার্শ্ববর্তী মার্সে-লা ত্যুর এলাকাতে। তাদের সাথে থাকা আর্টিলারি এখানে ভায়োনভিল গ্রামে ক্যাম্প করে থাকা ফরাসিদের উপর গোলা মারতে থাকে। কিছু সময় পরেই লেফটেন্যান্ট জেনারেল অ্যাল্ভেনস্লেবেনের অধীনে আরো একদল প্রুশিয়ান হাজির হলো। অ্যাল্ভেনস্লেবেনের মনে করছিলেন ভায়োনভিলের লোকেরা বোধহয় বাজাইনের রেখে যাওয়া সেনা। তিনি ঘুনাক্ষরেও কল্পনা করতে পারেননি এতদিন নাকে তেল দিয়ে ঘুমানো ফরাসিরা তখনো মেটজ ছেড়ে নড়েইনি। প্রুশিয়ান সেকেন্ড আর্মি তখন বীরদর্পে চলছে ভার্দুনের দিকে। তারা তো আর জানে না ভার্দুন খাঁ খাঁ।
এদিকে বাজাইন প্রুশিয়ান আক্রমণের সংবাদে ভয় পেলেন এরা ভার্দুনের রাস্তা বন্ধ করে দিল বলে। তার চিন্তাতেই আসেনি লড়াই হচ্ছে ছোট এক প্রুশিয়ান দলের সাথে, তাদের মূল কর্পস এখনো দূরে। প্রুশিয়ানরা মনে করছিল আমরা লড়ছি ফরাসিদের রেখে যাওয়া ছোট এক দলের সাথে, আর ফরাসিরা ভাবছিল বিশাল প্রুশিয়ান বাহিনী তাদের উপর হামলা করেছে। দুপুর হতে হতে মাত্র ৩০,০০০ প্রুশিয়ান সেনা জমা হয়েছিল, যারা প্যারিসের দিকে পিঠ দিয়ে বাজাইনের ১,৩৫,০০০ সৈন্যবাহিনীর মোকাবেলা করছিল। আবার ফরাসিদের পিঠ ছিল জার্মান সীমান্তের দিকে। ফলে এক অদ্ভুত অবস্থার সৃষ্টি হয়।
ভায়োনভিল বেদখল হয়ে যাবার পর বাজাইন সর্বাত্মক হামলার নির্দেশ দেন। প্রবল ক্ষয়ক্ষতির মুখেও প্রুশিয়ানরা মাটি কামড়ে পড়ে থাকে। বাজাইন মনোযোগ দিয়েছিলেন মেটজের পূর্বদিকে সেনাব্যুহ শক্তিশালী করতে, কারণ সেখান দিয়েই প্রুশিয়ানরা আক্রমণ বেশি চালাচ্ছিল। তাদের লক্ষ্য সেদিকে রেজনভিল শহর আর ভায়োনভিলের মাঝের ফরাসি অবস্থান ধ্বংস করে দেয়া। কেবল এই উপায়েই স্বল্প সংখ্যক সৈন্য বাজাইনকে কিছু সময় থামিয়ে রাখতে পারবে। আশা করা যার এর মধ্যে সেকেন্ড আর্মি এসে পড়বে, যাদের খবর পাঠানো হয়েছে।
বাজাইন যদি একটি মাথা খেলাতেন তাহলে তিনি তার সংখ্যাধিক্য কাজে লাগাতে পারতেন, যেভাবে মল্টকে বারবার ফরাসিদের বিপক্ষে জার্মান বাহিনীর সংখ্যাগরিষ্ঠতা কাজে লাগিয়েছেন এবং লাগাবেন। বাজাইনের পক্ষে সম্ভব ছিল একদল সেনাকে আলাদা করে দক্ষিণপশ্চিমে পাঠানো, তারা ঘুরপথে প্রুশিয়ান অবস্থানের পার্শ্বভাগে ঝাঁপিয়ে পড়ে শত্রুদের খতম করে দিতে পারত। কিন্তু তিনি গোছানো পরিকল্পনা করেননি, কেবল আলাদা আলাদাভাবে একেক কমান্ডারকে একেক আদেশ দিয়ে যাচ্ছিলেন।
ধীরে ধীরে হলেও ফরাসিরা প্রুশিয়ানদের পর্যুদস্ত করে ফেলে। সময় তখন বিকেল। গোলাগুলি প্রায় শেষের পথে, সাহায্যও এখনো কয়েক ঘণ্টা দূরে। এতক্ষণ প্রুশিয়ানরা টেকে কিনা সন্দেহ। ফলে অ্যাল্ভেনস্লেবেন দুঃসাহসিক এক সিদ্ধান্ত নিলেন। ফরাসি মধ্যভাগ রক্ষা করছে ক্যারোবেয়ার গোলন্দাজ সেনারা। প্রুশিয়ান সংরক্ষিত দু’দল অশ্বারোহী নিয়ে গুলিবৃষ্টির মধ্য দিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে যান অ্যাল্ভেনস্লেবেনের সহকারী ভন ব্রেডো । এই কাজ ছিল আত্মহত্যার শামিল, সেজন্য তাদের এই চার্জ বিখ্যাত দ্য ডেথ রাইড নামে।
৮০০ জন অশ্বারোহী রণক্ষেত্রের ধোঁয়া আর উঁচু-নিচু জমি কাজে লাগিয়ে ক্যারোবেয়ার খুব কাছে চলে আসে। এরপর হুঙ্কার ছেড়ে তারা ধেয়ে যায়। চমকিত ফরাসিরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। ক্যারোবেয়া আদেশ দিলেন ঘোড়ার পিঠে কাউকে দেখলেই ফেলে দিতে। এতে অনেক ফরাসি অশ্বারোহী, যারা ব্রেডোকে ঠেকাতে গিয়েছিল, তারাও মারা পড়ে। ব্রেডো যখন প্রুশিয়ানদের মাঝে ফিরে আসলেন, অর্ধেক লোকই তার সাথে নেই। তবে কাজ হলো। ঘন্টাখানেকের জন্য শত্রুরা বেসামাল হয়ে পড়ে। এর মধ্যেই দলে দলে প্রুশিয়ান সেনা আসতে আরম্ভ করল। রাতের মধ্যে প্রুশিয়ানদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯৫,০০০। এই যুদ্ধে বিসমার্কের দুই ছেলে হার্বার্ট আর উইলিয়াম অংশ নেন। দুজনেই আহত হন এবং একসময় বিসমার্ক ধরে নেন কোনো ছেলেই বেঁচে নেই।
আলো ফুরিয়ে গেলে ফরাসি বাহিনী মেটজে ফিরে যায়। তারা মোজেলের আশেপাশের গ্রামগুলি, বিশেষ করে সেন্ট প্রিভেট গ্রাম বরাবর শক্ত ব্যুহ গড়ে তোলে। তাদের মুখোমুখি সেকেন্ড আর্মি, যাদের সাথে ফার্স্ট আর্মির কিছু ইউনিট যোগ দেয়ার প্রুশিয়ানদের সংখ্যা এখন প্রায় ২,৩০,০০০। কিন্তু প্রুশিয়ানদের সমস্যা হলো ফরাসিদের উদ্দেশ্য আর অবস্থান সম্পর্কে তাদের পরিষ্কার ধারণা নেই। তারা কি এখানেই লড়াই করবে নাকি উত্তর-পশ্চিমে আবার ভার্দুনের দিকে যাবার চেষ্টা করবে? ফলে ১৮ তারিখ মল্টকে বলে পাঠালেন সেন্ট প্রিভেটের নিকটবর্তী গ্র্যাভেলত গ্রাম মাঝখানে রেখে বাহিনীর দুই অংশ উত্তর আর পূর্বদিকে যাত্রা করবে। এর ফলে যদি বাজাইন ভার্দুনের দিকে যাবার চেষ্টা করেন তাহলে শত্রুদের পার্শ্বভাগ প্রুশিয়ানদের সামনে উন্মুক্ত হয়ে যাবে। বাজাইন যদি গ্যাঁট হয়ে বসে থাকেন তাহলেও সমস্যা নেই। প্রুশিয়ান দুই বাহিনী দুপাশ থেকে ঘাঁটি করে থাকা ফরাসিদের ঘায়েল করবে।
গ্র্যাভেলত আর সেন্ট প্রিভেট
১৭ তারিখ দেখা গেল প্রুশিয়ান আর ফরাসী মূল বাহিনী মুখোমুখি। প্রুশিয়ান সেকেন্ড আর্মি আর ফার্স্ট আর্মির অংশবিশেষ মিলে তাদের দলে ২ লাখের বেশি মানুষ। বিপরীতে বাজাইন কমান্ড করছেন ১,২০,০০০ এর মতো সেনা। তারা ঘাঁটি গেড়েছে প্রুশিয়ানদের থেকে উঁচুতে। ফরাসি বামবাহু পড়েছে রেজনভিল, আর ডানবাহু সেন্ট প্রিভেট গ্রামে। বামবাহু ছিল মোজেল আর মেটজ শহরের নিকটবর্তী এবং অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী। তাদের দিকে যেতে পাড়ি দিতে হবে দু’পাশে খাড়া দেয়াল সম্বলিত নিচু পথ। বাজাইন নিজের হেডকোয়ার্টার বসালেন বামবাহুর পেছনে, মোজেলের উপকণ্ঠের প্লাপভিল এলাকায়। ফরাসি ইম্পেরিয়াল গার্ড তার কাছেপিঠেই থাকল। ওদিকে ডানবাহুতে সেন্ট প্রিভেটের সামনে খোলা ময়দান সরাসরি ইনফ্যান্ট্রি চার্জের পক্ষে সুবিধাজনক নয়।ফলে ফরাসি অবস্থান বেশ সুরক্ষিত বলতে হবে।
১৮ অগাস্ট দুপুরের দিকে কামানের গোলা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে যুদ্ধের সূচনা হয়। প্রুশিয়ান জেনারেল ম্যানস্টেইন কামানের ছত্রছায়ায় আমানভিল গ্রামের দিকে যাত্রা করেন। কিন্তু আগের রাতেই সেখানে ট্রেঞ্চ খুঁড়ে ফরাসিরা ওঁত পেতে বসেছে। তাদের রাইফেল আর মেশিনগানের সম্মিলিত আঘাতে বহু জার্মান সৈন্য নিহত হয়। দুপুরের দিকে স্টেইনমেটজ একদল সৈন্য নিয়ে আক্রমণ করেন ফরাসি বামবাহুর উপর। সেখানেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো। ফলে তারা এগোতেই পারছিল না। সহায়তাকারী সেনা আসার পর স্টেইনমেটজের আদেশে ইনফ্যান্ট্রি আর অশ্বারোহীরা একযোগে অগ্রসর হলো। কিন্তু কয়েকবার হামলার পরেও সুবিধা করতে না পেরে সন্ধ্যার দিকে ফার্স্ট আর্মি পিছু হটে। তবে অতিরিক্ত সেনা তাদের সাথে যোগ দিলে তারা ফরাসি অবস্থানের কাছাকাছি নিজেদের একটি ব্যুহ তৈরি করতে সক্ষম হয়।
সারা বিকেল ধরে কামান গর্জে গেল, এর মধ্যেই প্রুশিয়ানরা ছোট ছোট দলে বিভিন্ন দিকে শক্তিশালী ফরাসি অবস্থানের বিরুদ্ধে সরাসরি হামলা করছিল। এতে তাদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি পোহাতে হয়। মধ্য বিকালে প্রুশিয়ানরা সেন্ট প্রিভেটে এবং এর পার্শ্ববর্তী ঘরবাড়ি আর গ্রামে আক্রমণ করতে যায়। সেখানে ক্যারোবেয়ার নেতৃত্বে শক্ত ফরাসি অবস্থান থেকে চ্যাসেপট রাইফেল আর মিট্রাউজ মেশিনগানের প্রবল আঘাতে তারা পিছু হটতে বাধ্য হলো। ফরাসি বন্দুকের সাথে তাল মেলানো সম্ভব না বলে প্রুশিয়ানরা আর্টিলারির দ্বারস্থ হয়। ২০০ কামান একযোগে সেন্ট প্রিভাটের উপর মৃত্যুবাণ ছুড়তে শুরু করলে ফরাসিদের আস্থায় চিড় ধরে। এরপর প্রুশিয়ানরা আবার তাদের উপর সন্ধ্যার দিকে হামলা করলে তারা পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়। গ্রামের দখল চলে যায় প্রুশিয়ানদের হাতে।
এদিকে সেন্ট প্রিভেটের সৈন্যদের সাহায্যার্থে বাজাইন ততক্ষণে ইম্পেরিয়াল গার্ডদের সেদিকে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন। জেনারেল বুর্বাকির অধীনে তারা যখন আসছিল বিশৃঙ্খলভাবে পশ্চাদপসরণ করে আসা ফরাসি সৈনিকেরা তাদের উপর গিয়ে পড়ে। বুর্বাকি যখন দেখলেন সেন্ট প্রিভেট ছেড়ে সেনারা পালাচ্ছে তিনি অগ্রসর হতে অস্বীকার করে ফিরতি পথ ধরেন। ইম্পেরিয়াল গার্ডদের চলে যেতে দেখে আশেপাশের অনেক স্থান থেকেই ফরাসি সেনারা হতাশ হয়ে সরে পড়তে থাকে। রাতের মধ্যে ফরাসিরা চলে যায় মেটজ ঘিরে থাকা দুর্গগুলোর ভেতরে। সারাদিনের লড়াইতে প্রায় ২০ হাজার প্রুশিয়ান হতাহত হয়, অন্যদিকে বাজাইনের ক্ষতি হয় ১২,০০০ সেনা। পুরো যুদ্ধে এটাই ছিল সর্ববৃহৎ এবং সবথেকে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।
পরদিন আর ফরাসিরা দুর্গ ছেড়েই বের হলো না। প্রুশিয়ানরা তাদের ঘিরে ততক্ষণে মোজেল নদীর দুই পাড়ে অবস্থান নিয়ে ফেলেছে। ইতোমধ্যে মল্টকের নতুন নির্দেশ এসে পৌঁছল। ফ্রেডেরিক চার্লসের নেতৃত্বে ফার্স্ট আর্মি আর সেকেন্ড আর্মির কিছু অংশ রয়ে গেল মেটজ অবরোধ করে রাখতে। এই দলে ছিল প্রায় ১,৭০,০০০ সেনা, যারা মেটজকে ঘিরে প্রায় ৩০ মাইল একটি বেষ্টনী গড়ে তোলে। যুদ্ধের শুরু থেকেই বর্ষীয়ান স্টেইনমেটজের কিছু হঠকারী পদক্ষেপের কারণে তার দায়িত্ব কমিয়ে দেয়া হয়, পরে সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ তাকে সরিয়ে দেয়া হলো প্রুশিয়ার প্রদেশ পোসেনের সামরিক দায়িত্ব দিয়ে।
এদিকে সেকেন্ড আর্মির বাকি অংশ এবং জার্মান মিত্রদের নিয়ে মল্টকে তৈরি করলেন আর্মি অফ ময়েজ (Meuse)। এখানে ছিল প্রায় ৮৬,০০০ সৈন্য। এর অধিনায়ক স্যাক্সোনির ক্রাউন প্রিন্স অ্যালবার্ট। তারা থার্ড আর্মির পাশাপাশি শ্যালন্সের দিকে রওনা দিল।