Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য পালকির ইতিকথা

পালকি! বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এক প্রাচীন বাহন। মানুষ বহন করার কাজেই এ পালকি ব্যবহার হয়ে থাকে। বিলাসবহুল বাহন হিসেবেই এর পরিচিতি। প্রাচীনকালে সাধারণত ধনী গোষ্ঠী এবং সম্ভ্রান্ত বংশের লোকেরা এর মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভ্রমণ করতেন।

Source: bangla.newsnextbd.com

Source: bangla.newsnextbd.com

পালকি চাকাবিহীন এক বাহন। তাই কয়েকজন মানুষকেই এই পালকি ঘাড়ে করে বহন করতে হয়। সাধারণত পালকিকে কয়েকজন ঘাড়ে ঝুলিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। যারা পালকিকে ঘাড়ে বা, কাঁধে করে বহন করে থাকেন তাদের পালকির বেহারা বা, কাহার বলে। পালকির ভেতরে ১ জন বা, ২ জন থাকত, আর পালকির বেহারা হিসেবে থাকত ২ থেকে ৮ জন। আজ আমরা গ্রাম বাংলার এই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য পালকির ইতিহাস-ঐতিহ্য, উৎপত্তি থেকে শুরু করে আরো কিছু বিষয়ে জানার চেষ্টা করব।

পালকির ইতিহাস

ধারণা করা হয় প্রাচীনকালে দেব-দেবীকে আরোহন বা, দেব-দেবীর মূর্তি বহনের জন্য পালকি সদৃশ বাহন ব্যবহার করা হতো। অনেক প্রাচীন মন্দিরেই পালকি দিয়ে দেবতাদের বহনের দৃশ্য ভাস্কর্য আকারে তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুদের রামায়নেও আনুমানিক খ্রীষ্টপূর্ব ২৫০ সালের সময়ের দিকে পালকির উল্লেখ পাওয়া যায়। ব্রিটিশ শাসন আমলে ইউরোপের উচ্চ শ্রেণীর সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা এই পালকিতে চলাচল করতেন। তবে উপমহাদেশে রেলগাড়ি প্রচলেন পর ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের মাঝে পালকির ব্যবহার অনেকটাই কমে আসে।

Source: bdface.net

Source: bdface.net

ইউরোপের পালকিগুলোকে শোবার উপযোগী করে বানানো হতো। কোন কোন পালকি খোলা হতো আবার কোনটি হতো বন্ধ। মিশরীয় চিত্রকর্মেও পালকির দেখা পাওয়া যায়। পারস্য রাজ্যেও পালকির অস্তিত্ব ছিল। বিখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতা থেকে শুরু করে চতুর্দশ শতকে পর্যটক জন ম্যগনোলি ভ্রমণের জন্য পালকি ব্যবহার করতেন বলে জানা যায়। সম্রাট আকবরের শাসন আমলে এবং তারও পরবর্তি সময়ে সেনাধ্যক্ষদের যাতায়াতের জন্য প্রধান বাহন হিসেবে পালকিই ব্যবহৃত হতো।

পালকির বিভিন্ন নাম

পালকি শব্দটি এসেছে সংস্কৃত “পল্যঙ্ক” বা, “পর্যঙ্ক” থেকে। এর অর্থ বিছানা বা খাট। হিন্দী এবং বাংলা উভয় ভাষায় এটাকে পালকি বলা হয়ে থাকে। পালি ভাষায় একে “পালোঙ্ক” বলা হয়। এই যানকে কোন কোণ জায়গায় ডুলি, শিবিকা এসব নামেও ডাকা হয়। পর্তুগীজরা এর নাম দিয়েছিলো পালাঙ্কুয়িন।

কোরিয়ার পালকি গামা (Source: bn.wikipedia.org)

কোরিয়ার পালকি গামা (Source: bn.wikipedia.org)

রোমে লেটিকা, চীনে জিয়াও, ভিয়েতনামে কিউ, স্পেনে লিটারা, ফ্রান্সে পালানকুইন, পর্তুগালে লিটেইরা, থাইল্যান্ডে ওহ, কোরিয়ায় গামা, জাপানে নোরিমোনো, তুরস্কে টাহটিরেভান ইত্যাদি নামে পালকি পরিচিত হয়ে আসছে। লন্ডনে পালকিকে সিড্যান চেয়ার বলে ডাকা হয়। চীনের সনাতনি ধারায়ও এই সিডান চেয়ারের ব্যবহার দেখা যায়।

১৭৭৫ সালে রবার্ট অ্যাাডাম অঙ্কিত সিড্যান চেয়ার (Source: bn.wikipedia.org)

১৭৭৫ সালে রবার্ট অ্যাাডাম অঙ্কিত সিড্যান চেয়ার (Source: bn.wikipedia.org)

বাংলাদেশের পালকি

বাংলাদেশে এক সময় অভিজাত শ্রেণীরা এই বাহনে চলাচল করতো। দীর্ঘদিন ধরে বিয়ে এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানেও এর ভালই প্রচলন ছিল। বিয়েতে বর এবং কনের জন্য পালকি ব্যবহারের প্রথা চালু ছিল। এছাড়াও অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে বা, অক্ষম মানুষকে বিভিন্ন স্থানে নেয়ার জন্যও পালকি ব্যবহার হতো।

Source: khajamahbub1.blogspot.com/

Source: khajamahbub1.blogspot.com

বাংলাদেশের পালকিগুলো বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে। এর গঠন শৈলীতেও রয়েছে ভিন্নতা। সবচেয়ে ছোট এবং সাধারণ নকশার পালকিকে ডুলি বলা হয়। এই ডুলি সাধারণত ২ জন বহন করে নিয়ে চলে। বাংলাদেশে এক সময় হাড়ি, মাল, দুলে, বাগদি বা, উড়ি প্রভৃতি সম্প্রদায়ের লোক পালকি বহনের কাজ করতো। এরা পালকি বহনের পাশাপাশি দিনমজুরের কাজ এবং মাছের ব্যবসাও করতো।

কাঠ মিস্ত্রীরা সেগুন কাঠ, শিমুল কাঠ, গান কাঠ প্রভৃতি কাঠ দিয়ে তৈরি করতো পালকি। পালকির বহন করার দন্ডটিকে বাঁট বলে। এই বাঁট তৈরি হত বট গাছের বড় ঝুরি দিয়ে। তখন বাংলাদেশে তিন রকমের পালকি দেখা যেতো। সাধারণ পালকি, আয়না পালকি এবং ময়ূরপঙ্খি পালকি। সাধারণ পালকি দেখতে আয়তাকার ছিল। ঢালু ছাদ এবং চারদিকে কাঠের আবরণ এর প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল। এর দু দিকে দুটি দরজাও থাকতো।

db-01

Source: weddingdecore.d4y.us

আয়না পালকির বৈশিষ্ট্য হলো এতে আয়না লাগানো থাকতো। ভেতরে চেয়ারের মতো দুটি বসার জায়গা এবং একটি টেবিলে রাখা হতো। তবে আয়তনের দিক থেকে বলতে গেলে ময়ূরপঙ্খি পালকি সবচেয়ে বড়। এই পালকিটি ময়ূরের আকৃতিতে তৈরি করা হয়। এর ভেতরে দুটি চেয়ার, একটি টেবিল এবং একটি তাকও থাকতো।

তবে উনবিংশ শতাব্দীতে এসে সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে যাতায়াতের বাহন হিসেবে পালকির ব্যবহার প্রায় বন্ধই হয়ে যায় বলা চলে। বিশেষ করে ১৯৩০ এর পর থেকে শহরাঞ্চলে রিক্সার প্রচলন শুরু হলে পালকির ব্যবহার উঠে যায়। বর্তমানে আমাদের পালকিকে আমাদের অতীত ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবেই ধরা হয়। বেহারাদের কাঁধ থেকে পালকির স্থান এখন হয়েছে বিভিন্ন জাদুঘরে। সভ্যতা এবং বাস্তবতার কথা চিন্তা করলে পালকিকে হয়ত আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তবে আমরা এবং আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে পালকির কথা ভুলে না যাই সেদিকে আমাদের সচেষ্ট দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।

 

 

This article is in Bengali Language. Palki is a box-like vehicle carried on shoulders by six men. It is an intriguing part of Bangladeshi art and culture.

Featured Image: bangla.newsnextbd.com

Related Articles