ঈশ্বরের বাণীর পরেই সঙ্গীতচর্চা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সম্পদ।
– মার্টিন লুথর কিং
গান কে না শোনে? অবসরে কিংবা মন খারাপে অনেকেই ডুবে যান গানের ছন্দের স্বর্গে। মানুষ দুঃখেও গান শোনে, সুখেও গান শোনে। বাউল শাহ আবদুল করিম কী সাধে বলেছেন?
গান গাই আমার মনরে বুঝাই,
মন থাকে পাগলপারা,
আর কিছু চায় না মনে গান ছাড়া।
তবে সাধারণ কোনো দুঃখ-সুখের গান নয়। আজকে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি এমন একটি গানের গল্প বলতে, যে গানটিকে ধরা হয় ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ গানগুলোর একটি হিসেবে। হবেই বা না কেন? মুক্তির সেই সত্তরের দশক থেকে আজও সেই গানটি যে শ্রোতাদের ভাবিয়ে বেড়ায়। গানটি শোনার সময় শ্রোতারা আজও আনমনে এর অর্থ খুঁজে বেড়ান।
সেই গানটি হচ্ছে ব্রিটিশ রক ব্যান্ডদল কুইনের ‘বোহেমিয়ান র্যাপসোডি’। নিয়মিত যারা গান শোনেন, বিশেষ করে রক ধারার গান যারা শোনেন, তাদের কাছে অনেক পরিচিত একটি নাম কুইন। ১৯৭০ সালে লন্ডনে গঠিত হওয়া এই ব্যান্ডদলের শেষ অ্যালবাম ১৯৯৫ সালে বের হলেও, তাদের গানগুলো আজও শ্রোতাদের মাতিয়ে বেড়ায়। বিশেষ করে তাদের ‘We Will Rock You’ এবং ‘We Are the Champions’ গান দুটি যেন বিভিন্ন ক্রীড়া অনুষ্ঠানের বন্দনাগীতি হয়ে উঠেছে।
বোহেমিয়ান র্যাপসোডি তাদেরই সৃষ্টি এবং এর কথা ব্যান্ডদলের মূল গায়ক ফ্রেডি মার্কারির নিজেই লিখেছেন তার লন্ডনের বাসায় বসে। মূলত রক ধারার গান হওয়া সত্ত্বেও এই গানটিকে বেশ কয়টি ভিন্ন ধারার গানের সাথে সংযুক্ত করেছেন তিনি, যেমন- প্রোগ্রেসিভ রক, সিমফোনিক রক, হার্ড রক এবং প্রোগ্রেসিভ পপ। অন্যান্য সুপরিচিত একক গানের মতো, এতে কোনো ধরনের কোরাস ছিল না।
বোহেমিয়ান র্যাপসোডি সঙ্গীতের ইতিহাসের সবচেয়ে অদ্ভুত, সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা জাগানো এবং সবচেয়ে দুর্বোধ্য গানগুলোর মধ্যে একটি। শোনার সময় প্রথমে আপনার মনে হবে আপনি অসাধারণ অর্থবোধক কিছু শুনছেন, আবার পরমুহুর্তে মনে হবে গায়ক চরম শোকে বোকার মতো বিলাপ করছেন। হয়তবা সেকারণেই ছেলেবুড়ো সবার মনে ঠাই খুঁজে পেয়েছে গানটি।
গানটি প্রথমে মুক্তি পেয়েছিল সেই ১৯৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর একক গান হিসেবে। মুক্তি পাওয়ার পর তৎকালীন বিশ্বে বেশ মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করলেও গানটি জায়গা করে নিয়েছে সব সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ গানের তালিকায়। তাছাড়া একে ধরা হয় কুইন ব্যান্ডদলের সবচেয়ে জনপ্রিয় গানের একটি হিসেবে।
পরে সে বছরেরই ২১ নভেম্বর মুক্তি পাওয়া কুইনের চতুর্থ অ্যালবাম ‘এ নাইট এট দ্য অপেরাতে’ গানটি যুক্ত করা হয়। প্রথম প্রকাশের পর প্রায় দুই মাস গানটি টপলিস্টে প্রথম স্থানে ছিল। গানের প্রত্যেকটি লাইন কেমন জানি একটু রহস্যময়। শুধু প্রথমবার না, যতোবারই আপনি গানটি শুনুন না কেনও, আপনি এই গানটির আগামাথা খুঁজে পাবেন না। গানটি নিজে অনেক গবেষণা করে লিখলেও, ইচ্ছা করেই গানের সামগ্রিক অর্থ অস্বচ্ছ রেখে দিয়েছেন গায়ক ফ্রেডি মার্কারি। চলুন তা হলে জেনে নেওয়া যাক কী আছে এই গানের কথায়।
গানটি শুরুতেই পিয়ানোর মায়াময় সুরের সাথে ছোটখাট একটি অভিঘাত দিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, “এ কি বাস্তব জীবন নাকি কল্পনা?”
পরের শ্লোকগুলো থেকে বোঝা যায়, আদালতে এক তরুণ খুনির বিচার চলছে, কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে নিজের ভুল বুঝতে পারা অনুতপ্ত যুবক। সহানুভূতিহীন একদল ধার্মিক জুরির সামনে দাঁড়িয়ে সে তার মুক্তির জন্য আর্জি করছে। জুরিদের অধিকাংশ যখন বলছে তার মুক্তি দেয়া হবেনা তখন তাদের আওয়াজ ছাপিয়ে সংখ্যালঘু অংশ বলছে তোমাকে মুক্তি দেয়া হবে।
গানের কিছু কথায় লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ছেলেটি নিজের নিয়তি মেনে নিচ্ছে, আবার পরমুহুর্তে বাঁচার জন্য হাহাকার উঠছে। সে একবার নিজের পরিণতি মেনে নিয়ে বলছে, “আমি শুধু একজন দরিদ্র ছেলে, কেউ আমাকে ভালোবাসে না”, আরেকবার তাকে ছেড়ে দেবার জন্য বিচারকদের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাচ্ছে।
১৯৮০ সালে ইরানে কুইন তাদের একটি গ্রেটেস্ট হিটসের ক্যাসেট ছাড়ে যার সাথে পার্সিয়ান ভাষায় গানগুলোর অনুবাদ এবং ব্যাখ্যা করা একটি লিফলেট দেয়া হয়। তাতে লেখা ছিল, গানটি আসলে ঘটনাক্রমে খুন করা এক তরুণকে কেন্দ্র করে যে কিনা ফাউস্টের মতো করে তার আত্মা বিক্রি করেছে শয়তানের কাছে। খুনের দায়ে তার ফাঁসি হবে এবং মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে সে বিসমিল্লাহ্ বলে আল্লাহকে ডাকছে যাতে তিনি ফেরেশতাদের দিয়ে শয়তানের কাছ থেকে তার আত্মা মুক্ত করেন।
তবে সমালোচকরা মনে করেন, গানের কথাগুলো শয়তানের তাড়া খাওয়া আত্মহত্যাপ্রবণ মানসিকতার খুনে ব্যক্তির কথা বলে, আবার অনেকের মতে আসলে গানটি ফাঁসির ঠিক আগমুহূর্তের দৃশ্যাবলী ফুটিয়ে তোলে; (ব্যাখ্যাটা ফ্রেঞ্চ লেখক অ্যালবের ক্যামুর ‘দ্য স্ট্রেঞ্জার’ উপন্যাসের দিক ইংগিত করে; সেখানে তিনি বলেন-
“গানটি মূলত এক তরুণকে নিয়ে, আবেগের বশবর্তী হয়ে করা খুনের দাঁয় শিকারের পর, ফাঁসির পূর্বে যে তার নিজের ভুল বুঝতে পারে। উপন্যাসের এই ঘটনাটাই সম্ভবত এখানে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।”
তবে এসব কিছু চাপিয়ে অনেকেরই ধারণা, ফ্রেডি সেই ছেলেটির মাধ্যমে তার সেই সময়কার অবস্থার কথা বুঝিয়েছেন। ফ্রেডির প্রথমে মেরি অস্টিনের সাথে সম্পর্ক ছিল, কিন্তু পরে এক সময় তিনি তার যৌনতা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েন। বাবা-মা তো বটেই, তিনি নিজের সাথেই যেন সংগ্রাম করে যাচ্ছিলেন। বিশেষ দুইটি লাইন দিয়ে গানটিকে ফ্রেডির জীবনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করা যায়।
“Caught in a landslide, no escape from reality”
ফ্রেডি আসলেই বিভ্রান্তিকর এক বাস্তবতা আটকে গিয়েছিলেন, যার থেকে মুক্তির কোনো পথ তিনি খুঁজে পাচ্ছিলেন না। নিজের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু মেরির সাথে ছয় বছরের বন্ধনের মাঝে তিনি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন অন্য এক পুরুষের (জিম হাটন) সাথে। নিরুপায় হয়ে শেষমেশ নিজেকেই প্রচণ্ড ঘৃণা করতে শুরু করেন।
“I’m just a poor boy, I need no sympathy”.
ফ্রেডির সাথে বিচ্ছেদের পর তাদের সম্পর্কের পরিণতির কথা বলতে গিয়ে মেরি বলেছিলেন, সেই সময় ফ্রেডি নিজেই নিজের উপর খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন। নিজেই যেন নিজের কাছে ছোট হয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি প্রচণ্ড অপরাধবোধে ভুগতেন আর প্রায়ই বলতেন, কারো সহানুভূতি বা ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার তার নেই।
হয়তো তার জীবনের এসব জটিলতা নিয়েই ফ্রেডি রূপক অর্থে লিখেছেন এই গানটি। গানের কথাগুলো তার নিজের জীবনেরই প্রতিচ্ছবি।
আর যে গানের লেখকই এর বিশ্লেষণ করতে চান না, অন্য কারো পক্ষে সেট বিশ্লেষণ করা প্রায় অসম্ভব। এমনকি ফ্রেডি বাদে কুইন ব্যান্ডদলের অন্য কোনো সদস্যই আজ পর্যন্ত গানটির অর্থ জানেন না, আর কখনও জানবেও না। কিংবা আদৌ এর কোনো অর্থই হয়তো নেই।
গানটির কথা
Is this the real life?
Is this just fantasy?
Caught in a landslide
No escape from reality
Open your eyes
Look up to the skies and see
I’m just a poor boy,
I need no sympathy
Because I’m easy come, easy go
A little high, little low
Anyway the wind blows, doesn’t really matter to me, to me
Mama, just killed a man
Put a gun against his head
Pulled my trigger, now he’s dead
Mama, life had just begun
But now I’ve gone and thrown it all away
Mama, ooo
Didn’t mean to make you cry
If I’m not back again this time tomorrow
Carry on, carry on, as if nothing really matters
Too late, my time has come
Sends shivers down my spine
Body’s aching all the time
Goodbye everybody – I’ve got to go
Gotta leave you all behind and face the truth
Mama, ooo – (anyway the wind blows)
I don’t want to die
I sometimes wish I’d never been born at all
I see a little silhouetto of a man
Scaramouch, scaramouch will you do the fandango
Thunderbolt and lightning – very very frightening me
Gallileo, Gallileo,
Gallileo, Gallileo,
Gallileo Figaro – magnifico
I’m just a poor boy and nobody loves me
He’s just a poor boy from a poor family
Spare him his life from this monstrosity
Easy come easy go – will you let me go
Easy come, easy go, will you let me go?
Bismillah! No, we will not let you go. (Let him go!)
Bismillah! We will not let you go. (Let him go!) Bismillah!
We will not let you go. (Let me go!)
Will not let you go. (Let me go!)
Never let you go (Never, never, never, never let me go)
No, no, no, no, no, no, no Oh, mama mia, mama mia (Mama mia, let me go.)
Beelzebub has a devil put aside for me, for me, for me.
So you think you can stone me and spit in my eye
So you think you can love me and leave me to die
Oh baby – can’t do this to me baby
Just gotta get out – just gotta get right outta here
Nothing really matters
Anyone can see
Nothing really matters
Nothing really matters to me
Anyway the wind blows…
গানটির অফিসিয়াল ভিডিও:
Feature Image © Queen