জনপ্রিয় ১০টি বার্বি পুতুল

ছেলে হোক বা মেয়ে, ছোটবেলায় পুতুল খেলেনি এমন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে মেয়ে বাচ্চাদের পুতুলের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ দেখতে পাওয়া যায়। শপিং সেন্টারে পুতুলের দোকানগুলোর সামনে দিয়ে গেলেই বাচ্চাদের কাকুতি-মিনতির অন্ত থাকে না। অনেক বাচ্চাই আবার হাত-পা ছুঁড়ে কান্নাকাটি শুরু করে দেয় পুতুল কেনার বায়নায়। শুধু বাচ্চারাই না, প্রাপ্ত বয়স্কদের অনেকেরই রয়েছে পুতুলের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা। অনেকে আবার শখের বশে পুতুল কেনেন। ঘর সাজানোর জন্যেও অনেকে পুতুল কিনে থাকেন। আর সেই পুতুলগুলো যদি হয় বার্বি পুতুল, তাহলে তো কথাই নেই। বার্বি পুতুলের আছে অনেক রকমফের।

বার্বি পুতুলের ছোট ইতিহাস

রাথ হ্যাডলার, ‘ম্যাটেল’ কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা একদিন দেখলেন তার ছোট মেয়ে বার্বারা কাগজের পুতুল দিয়ে খুব আনন্দ সহকারে খেলছে। তখন তার মনে হলো সে যদি তার মেয়ের জন্য ত্রিমাত্রিক পুতুল বানিয়ে দিতে পারে তাহলে মেয়ের আনন্দ কতটাই না বাড়বে! যেই ভাবা সেই কাজ। ১৯৫৯ সালে প্রথম মেয়ের নামেই এই পুতুল বানান এবং নিউ ইয়র্কের পুতুল মেলায় প্রথম তুলে ধরেন।

 

বার্বি পুতুল; source: adage.com

প্রথম দিকে বার্বি তেমন একটি জায়গা করে নিতে পারেনি খেলনা জগতে। কিন্তু এর ৫৫ বছরে বার্বি হয়ে দাঁড়িয়েছে আইকন স্টার! নানারকম ফ্যাশনে, নানা পেশায়, নানা বর্ণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে এসেছে বার্বি পুতুলগুলো এবং সবগুলোই জনপ্রিয়তার শীর্ষে। ২০১৭ সালের সর্বাধিক বিক্রি হওয়া খেলনার তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে এই বার্বি পুতুলই।

চলুন জেনে নেওয়া যাক বিশ্বের তেমনি কিছু জনপ্রিয় বার্বি পুতুল সম্পর্কে।

জনপ্রিয়তায় শীর্ষ ১০ বার্বি পুতুল

নানা ধরনের বার্বি পুতুলের মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে এমন ১০টি বার্বি পুতুলের সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

১) গর্ভবতী মিজ হাডলে (Midge Hadley)

গর্ভবতী মিজ বার্বি; source: babble.com

বাচ্চারা যেখানে জানেই না কীভাবে বা কোথা থেকে বাচ্চা আসে এবং না জেনে প্রশ্ন করে বিব্রত পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়, সেখানে এই পুতুলগুলো বাচ্চাদেরকে খুব সহজেই বুঝতে সাহায্য করবে যে বাচ্চা মায়ের গর্ভে থাকে। বার্বির ঘনিষ্ঠ বান্ধবী মিজ। সে একটি সুখী পরিবারের অংশ যেখানে গর্ভবতী মিজ রয়েছে, রয়েছে মিজের বর অ্যালেন এবং দুটি বাচ্চা- রায়ান এবং কাস্যান্দ্রা। মিজ পুতুলটির পেটে একটি ঢাকনা রয়েছে যেটি খোলা যায় আবার লাগানো যায়। ঢাকনার ভেতরে রয়েছে ছোট্ট পুতুল নিকি যেটি কিনা মিজের তৃতীয় সন্তান। চাইলেই মিজের পেট থেকে নিকিকে বের করে আনা যায়, অনেকটা সিজারিয়ান ডেলিভারির মতো। ১৯৮২ সালে বাজারে আসা এই গর্ভবতী পুতুল নিয়ে পরবর্তীতে অনেক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। অনেক বাবা-মা বলতে থাকেন, মিজের বয়স অনুযায়ী এতগুলো বাচ্চার মা হিসেবে দেখানো ঠিক হচ্ছে না। অনেকেই আবার বলেন, মিজ যদি বিবাহিত পুতুল হয়ে থাকে তাহলে কেন তার হাতে বিয়ের আংটি নেই! এমন নানা সমালোচনার মুখে ২০০২ সাল থেকে এই পুতুল বিক্রি বন্ধ রয়েছে।

২) ভারতীয় বার্বি

ভারতীয় বার্বি; source: indianexpress.com

১৯৮২ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক বাজারে আসে বাদামী বর্ণের বার্বি পুতুল যেগুলো কিনা ‘পৃথিবীর পুতুল’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সেই সময়ে ভারতীয়দের সম্পর্কে বিশ্বের সকলের জ্ঞান মোটামুটি কমই ছিল। তো ম্যাটেল এই বাদামী বার্বিগুলোকে সকলের সাথে পরিচিত করাতে চাইলেন, যেন বাচ্চারা ইউরোপের বাইরের দেশগুলোর মানুষ এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারে। প্রথমে পুতুল বানানো কোম্পানি ভেবেছিল এগুলো বুঝি বিক্রি হবে না। তাই পরীক্ষামূলক এক জোড়া বার্বি তৈরি করে এবং প্যাকেটের গায়ে লেখা হয়- “এই বার্বি নিয়ে খেলার মজা: ভারত নিয়ে জ্ঞান পাওয়া”। অবিশ্বাস্যভাবে এই ভারতীয় বার্বিগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এবং এখন পর্যন্ত বিশ্বে সর্বাধিক জনপ্রিয় বার্বি পুতুলগুলোর একটি।

ভারতীয় বিয়ের সাজে বার্বি; source: amaniwdevainart.com

৩) ব্যালেরিনা বার্বি ‘কারা’

বল নাচের উপযুক্ত পোশাকের এই বার্বি পুতুলটি ১৯৭৫ সালের। এর আগে নিগ্রো বল নাচিয়ের সংখ্যা ছিল নগণ্য। গোলাপি পোশাকে সোনালী ফিতার ব্যবহার, সাথে বল নাচের গোলাপি চটি এবং সোনালি মুকুটে রানীর রূপে অসাধারণ লাগে ব্যালেরিনা বার্বিকে।

বলেরিনা বার্বি ‘কারা’; source: flickriver.com

৪) সোনালি স্বপ্নের বার্বি

সোনালি চুলে, সোনালি পোশাকে, সোনালি গহনায় অপূর্ব সোনালি স্বপ্নের আবির্ভাবে রয়েছে এই বার্বি, যা সহজেই আকর্ষণ করবে পুতুল প্রেমীদের। এই পুতুলটি ১৯৮০ সালের সৃষ্টি।

সোনালী স্বপ্নের বার্বি; source: Pinterest

৫) ব্ল্যাক কেন

কোঁকড়ানো ঝাকড়া মাথার চুল, যে চুলে চিরুনি চালানো অসম্ভব, পোশাকে অনাকর্ষণীয় বলা চলে কেননা একটা কমলা বর্ডার দেয়া হলুদ হাফপ্যান্ট তার সাধারণ পোশাক, সেই ব্ল্যাক কেন দাপিয়ে বেড়ায় তার খেয়াল খুশিতেই। বার্বির মজা করে বেড়ানোর সঙ্গী হিসেবে বিভিন্ন সময় কেনকে দেখা গিয়েছে ১৯৬৯-৮১ সালের ভেতরে কোনো এক সময় থেকে। তবে কেনকে ১৯৬৯ সালের ব্র্যাডের সাথে গুলিয়ে ফেলাটা ঠিক হবে না। ব্র্যাড হলো ক্রিস্টি বার্বির ছেলে বন্ধু।

ব্ল্যাক কেন; source: Pinterest

ব্র্যাড; source: Pinterest

৬) সুপার স্টার বার্বি

গ্ল্যামার, গ্ল্যামার এবং গ্ল্যামার যার রূপে, ঢেউ খেলানো চুলে, চলনে, নড়নে- তেমনই এক বার্বি এই সুপারস্টার বার্বি। মিষ্টিরঙা গাউনের সাথে কাঁধে এবং হাতের সাথে পেঁচিয়ে রাখা ‘বোয়া’ তাকে আকর্ষণীয় করে তোলে।

সুপার স্টার বার্বি; source: Pinterest

৭) ক্রিস্টি

বার্বির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ বান্ধবী ক্রিস্টি। ১৯৬৮ সালে বার্বির বান্ধবী হিসেবে ক্রিস্টিকে পরিচয় করানো হয়। এই বার্বি বানানোর উদ্দেশ্য ছিল সবাইকে বোঝানো যে কীভাবে একটি কৃষ্ণাঙ্গ বালিকার ভাবনা এবং আচরণ তার বয়সী একটি শ্বেতাঙ্গ বালিকার সাথে মিলে যায়। গায়ের রঙে বিচার করা ঠিক নয়, সেই ভাবটিই ফুটিয়ে তোলার জন্য এই বার্বি।

ক্রিস্টি; source: Pinterest

৮) পশ্চিমা বার্বি

পশ্চিমা বার্বি তার সঙ্গী ডালাস নামক ঘোড়ার সাথে বেশ মানায়। কাউগার্ল বুট এবং কাউগার্ল হ্যাট পরলে কী অদ্ভুত সুন্দরই না লাগে তাকে! আশির দশকের ভুবন ভোলানো চুলের ছাটে বেশ মানানসই বার্বি। ও হ্যাঁ, বার্বির পিঠে একটি বোতাম রয়েছে। বোতামটি চাপ দিলেই বার্বি আপনাকে চোখ টিপে দেবে।

পশ্চিমা বার্বি; source: Pinterest

৯) ডে টু নাইট বার্বি

চাকরি এবং জীবনের আনন্দকে পাশাপাশি রেখে সকাল-সন্ধ্যা হাসিমুখে ঘুরে বেড়ানোর এক অদ্ভুত মেয়ে এই বার্বি। সকালে স্যুট-কোট পরে চুল ঠিকঠাক আঁচড়ে বেরিয়ে পড়বে, আবার সন্ধ্যাবেলা কাজ থেকে ফিরে স্লিভলেস ফ্রকে বাউন্সী চুলে পার্টিতে যাবে। সাধারণ পোশাকে ঘরকন্যার কাজও করবে। এই পুতুলগুলো সেই ১৯৮৪ সালে তৈরি করা হয়েছিল ছোট মেয়েদের মাঝে ক্যারিয়ার গড়ার আগ্রহ সৃষ্টিতে। শুধু মডেলিং নয়, অফিসে ৯টা-৫টা ডিউটিও মেয়েরা চাইলেই করতে পারে- এই ধারণার সাথে সহমত স্থাপন করে বার্বিটি তৈরি করা হয়।

ডে টু নাইট বার্বি; source: flickr.com

১০) আসল বার্বি

এতগুলো সুন্দর সুন্দর বার্বি দেখার পর বার্বির ‘অরিজিনাল ভার্সন’ আর পছন্দ না হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই বার্বিগুলো এখনো তার ছিপছিপে দেহ, মায়াবী চোখ আর সাধারণ সাঁতারু পোশাকে অবেহেলার যোগ্য নয়। সাধারণ একটি মেয়ে, সাধারণ সাজপোশাকে এখনো জনপ্রিয় সেই ১৯৫৯ সাল থেকে।

 

অরিজিনাল বার্বি; source: Pinterest

ফিচার ইমেজ- mydailynews.com

Related Articles

Exit mobile version