করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজে বাঁচতে, এবং আশেপাশের অন্যদেরকেও সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে, মাস্ক পরা অতি জরুরি। বিশ্বের অন্য অনেক দেশের দেখানো পথ অনুসরণ করে, বাংলাদেশেও সম্প্রতি ১১ ক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ঘরের বাইরে কিংবা যেকোনো জনসমাগমে তো বটেই, এমনকি বাড়িতে কারো করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকলে পরিবারের সুস্থ সবার মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
মাস্ক পরিধানকে এতটা গুরুত্বারোপের কারণ সহজেই বোধগম্য। ইতোমধ্যেই যে বিশ্বব্যাপী ১৫ মিলিয়ন মানুষ কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছে, আর মারাও গেছে ছয় লক্ষাধিক মানুষ। কিন্তু তারপরও হতাশার বিষয় হলো, অনেক মানুষই এখন পর্যন্ত মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধিই করতে পারছে না, এবং মাস্ক পরছেও না। অন্যান্য পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) বা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম তো দূরস্থান।
গবেষণায় দেখা গেছে, মাস্ক পরতে না চাওয়ার প্রবণতা নারীদের চেয়ে পুরুষদের মাঝেই বেশি। অথচ যেসব দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোর অধিকাংশে কিন্তু মৃত পুরুষের সংখ্যাই বেশি। এবং এটিও জানিয়ে রাখা প্রয়োজন যে, পুরুষদের নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখতে না চাওয়ার এই প্রবৃত্তি দৃশ্যমান ছিল ইতিহাসের পূর্ববর্তী বিভিন্ন মহামারিতেও।
তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে, বিশ্বব্যাপী একটি বড় অংশের পুরুষের এ ধরনের মানসিকতার নেপথ্যের কারণ কী? তারা কেন মাস্ক, পিপিই ইত্যাদি পরার মাধ্যমে নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখতে চায় না?
পুরুষদের গৌরব ও অহংকার
পুরুষদের আচরণ নিয়ে সম্প্রতি একটি বিশ্লেষণমূলক গবেষণা চালিয়েছেন মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র লেকচারার ভ্যালেরিও কাপরারো এবং বার্কলির ম্যাথমেটিকাল সায়েন্স রিসার্চ ইনস্টিটিউটে কর্মরত কানাডিয়ান গণিতবিদ হেলেন বারসেলো।
এই দুই শিক্ষাবিদ যুক্তরাষ্ট্রের ২,৪৫৯ জন অংশগ্রহণকারীর উপর একটি জরিপ চালিয়ে জানতে পেরেছেন, পুরুষরা মাস্ক পরতে নারীদের চেয়ে কম আগ্রহীই শুধু নয়, পাশাপাশি তারা মাস্ক পরাকে ‘লজ্জাজনক’, ‘আনকুল’ এবং ‘দুর্বলতার চিহ্ন’ বলেও মনে করেন। ড. কাপরারোর মতে, এ প্রবণতা আরো বেশি বিদ্যমান সেসব দেশে, যেখানে করোনাকালীন মহামারিতে মুখ ঢেক রাখা বাধ্যতামূলক নয়।
“পুরুষরা তাদের মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক পরতে কম আগ্রহী, এবং এর একটি প্রধান কারণ হলো এই যে, তারা মনে করে কোভিড-১৯ রোগে তারা নারীদের চেয়ে কম আক্রান্ত হবে। এটি খুবই হাস্যকর, কেননা অফিসিয়াল পরিসংখ্যান কিন্তু দেখাচ্ছে যে, করোনাভাইরাস নারীদের চেয়ে পুরুষদের উপরই বেশি প্রভাব ফেলছে।”
জরিপে এই তথ্যটিও উঠে এসেছে, ঘরের বাইরে যাওয়ার সময় পুরুষদের তুলনায় দ্বিগুণ সংখ্যক নারী মাস্ক পরতে আগ্রহী।
এছাড়া অন্যান্য বেশ কিছু গবেষণা থেকেও জানা যাচ্ছে, পুরুষরা হাত ধোয়ার মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাথমিক পরিচ্ছন্নতায়ও কম আগ্রহী। সাম্প্রতিক এক জরিপে জানা গেছে, ৬৫ শতাংশ নারীর বিপরীতে মাত্র ৫২ শতাংশ পুরুষ নিয়মিত হাত ধুয়ে থাকে।
পুরুষদের অতি আত্মবিশ্বাস
মাস্ক পরার ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে যে লৈঙ্গিক বিভেদ, এর পেছনে পুরুষদের অতি আত্মবিশ্বাসী মানসিকতারও একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন জেন্ডার গবেষণায় উঠে এসেছে, যেকোনো ঝুঁকিপূর্ণ বা বিপদজনক বিষয়কে নারী ও পুরুষ ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, রাস্তা পার হওয়ার বিষয়টি। ঢাকা কিংবা দেশের অন্য যেকোনো জায়গায় বাইরে বের হলেই দেখা যায়, পুরুষরা বেপরোয়াভাবে রাস্তা পার হচ্ছে। সে তুলনায় নারীরা বেশি সাবধানতা অবলম্বন করে থাকে।
এই একই ধরনের সাবধানতার বিষয়টি লক্ষণীয় যেকোনো মহামারির ক্ষেত্রেও। ২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লু মহামারির সময়েও দেখা গিয়েছিল পুরুষদের তুলনায় নারীরাই মাস্ক পরছে বেশি। এমনকি এশিয়ার কিছু দেশে মাস্ক পরার প্রথা দীর্ঘদিন ধরে চালু থাকলেও, সেখানেও দৈনন্দিন জীবনে নারীদের মাস্ক পরার প্রবণতাই বেশি। ২০০২-০৩ সালে সার্স মহামারির সময়ে হংকংয়ে নারীদেরকেই তুলনামূলকভাবে বেশি মাস্ক পরতে এবং নিয়মিত হাত ধুতে দেখা গিয়েছিল।
চলমান করোনা মহামারিতেও অনেক পুরুষ একই ধরনের অতি আত্মবিশ্বাস দেখিয়ে চলেছে। তারা মনে করছে, কোনোভাবেই তারা করোনায় কুপোকাৎ হবে না। আর সে কারণেই তারা যাবতীয় ভয়-ভীতিকে উপেক্ষা করে, নিঃসংকোচে মাস্ক না পরে ঘরের বাইরে বেরিয়ে পড়ছে।
পুরুষদের উদাসীনতা
অতি আত্মবিশ্বাসের বাইরেও পুরুষরা ঘন ঘন বিপদের পড়ার পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো তাদের উদাসীনতা। সাংসারিক ছোটখাটো বিষয় থেকে শুরু করে দেশ পরিচালনার মতো বড় বড় কাজেও, নারীদেরকেই তুলনামূলকভাবে বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে দেখা যায়। এবং এই বিষয়টিকে বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃতও বলা যায়। যেমন: বিশ্বের অনেক দেশে কার ইনস্যুরেন্সের ক্ষেত্রে বহু বছর ধরেই পুরুষদের তুলনায় নারীদের প্রিমিয়াম কম ধরা হচ্ছে। এর কারণ, পুরুষরা সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয় বেশি।
অবশ্য এক্ষেত্রে পুরুষদের বেশি গাড়িচালনা পেশায় আসাও একটি কারণ। পুরুষরা যেমন সহজেই গাড়িচালনায় আসতে পারে, নারীদের ক্ষেত্রে তা হয় না। তাদেরকে সর্বোচ্চ দক্ষতার প্রমাণ দেখিয়েই গাড়িচালনায় আসতে হয়। এ থেকে আরেকটি সিদ্ধান্তেও পৌঁছানো যায় যে, ঐতিহাসিকভাবে পুরুষরা অধিকাংশ কাজে জন্মগত স্বাধীনতা লাভ করে এলেও, নারীদেরকে যেহেতু আগে সমাজের সামনে নিজেদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে হয়, ক্রমাগত পরীক্ষা দিয়ে যেতে হয়, সম্ভবত সে কারণেই তারা সবক্ষেত্রে এত বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে ও মনোযোগের চর্চা করতে শিখে গেছে। তাছাড়া রাস্তাঘাটে বেরিয়ে, কিংবা ঘরের ভেতর বসেও, নারীদের এমন আরো অনেক বিষয়েই সাবধান থাকতে হয়, যেগুলো পুরুষদের প্রয়োজন পড়ে না। সম্ভবত এতসব সাবধানতারই প্রতিফলন দেখা যায় বিভিন্ন মহামারি চলাকালীন তাদের প্রতিক্রিয়ার ভেতরেও।
পুরুষরা আইনের প্রতি বাধ্য, সামাজিক রীতির প্রতি অবাধ্য
সমাজে যেকোনো নতুন রীতিনীতি গড়ে উঠলে, নারীদেরকেই দেখা যায় প্রথম সেখানে আত্মসমর্পণ করতে। কিন্তু পুরুষরা সহজেই সেসব রীতিনীতিকে মেনে নেয় না। বরং তারা বিরুদ্ধাচরণ শুরু করে। যতদিন সম্ভব তারা সমাজের বেঁধে দেয়া নিয়মকানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে চায়, এবং দেখায়ও। এখানেও সমাজে পুরুষের অবাধ স্বাধীনতার বিপরীতে নারীর স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতার দিকটিই প্রকট হয়ে ওঠে। সমাজ পুরুষের সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ডকে মেনে নিতে না পারলেও, একটা সময় পর্যন্ত সহ্য করে, নারীর ক্ষেত্রে যা করে না।
তবে পুরুষরা সামাজিক রীতি-প্রথার বিরোধিতা করলেও, আইনের প্রতি তারাও কিন্তু নারীদের মতোই সমান শ্রদ্ধাশীল। কেননা, আইন মানা না মানার সাথে যে সরাসরি শাস্তি-জেল-জরিমানার সম্পর্ক রয়েছে। তাই চলমান করোনা মহামারির ভেতর বিশ্বব্যাপী একটি সাধারণ ফেনোমেনন হলো শুরুর দিকে পুরুষদের মাস্ক পরতে অস্বীকৃতি, কিন্তু পরে আইনের মাধ্যমে বিষয়টিকে বাধ্যতামূলক করে দিলে তাদের সমান অংশগ্রহণ।
এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এ চিত্র দেখা গিয়েছে। ধারণা করা যায়, বাংলাদেশে যেহেতু এখন মাস্ক পরাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, এর পরের ধাপ হিসেবে মাস্ক না পরা ব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা গেলে, এ দেশেও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের মাস্ক না পরে ঘরের বাইরে যাওয়ার হার কমে যাবে।
পুরুষদের সামষ্টিক চিন্তার অভাব
ঐতিহাসিকভাবেই পুরুষদের চিন্তাভাবনায় ‘আমি’ আর নারীদের চিন্তাভাবনায় ‘আমরা’ উঠে আসে। অর্থাৎ, নারীরা যেখানে সামষ্টিকভাবে চিন্তা করে, পুরুষদের চিন্তার পরিধি সীমাবদ্ধ থাকে নিজের ব্যক্তিসত্তায়। তাই দেখা যায়, যেকোনো কাজের পরিকল্পনায় নারীরা তাদের আশেপাশের সবাইকে একাত্ম করলেও, পুরুষদের চিন্তাভাবনায় স্বেচ্ছাচারিতা ও বিচ্ছিন্নতা ফুটে ওঠে।
চলমান সময়েও এই বিষয়টি দেখা যাচ্ছে। পুরুষরা যেহেতু আত্মবিশ্বাসী যে, করোনাভাইরাসে তাদের কিছু হবে না, তাই তাদের মধ্যে অনেকেই মাস্ক কিংবা পিপিই ছাড়াই ঘরের বাইরে যাওয়ার দুঃসাহস দেখাতে পারছে। তারা একটু এগিয়ে চিন্তা করছে না, করোনাভাইরাসের ফলে তাদের তেমন কিছু না হলেও, পরবর্তী সময়ে তাদের দ্বারাই সংক্রমিত হতে পারে অন্য অনেকে। কিন্তু নারীদের ভেতর এই সামষ্টিক চিন্তার প্রবণতা বেশি। তারা শুধু নিজেদের নিয়েই ভাবে না। তারা এটিও ভাবে, তারা যদি সুরক্ষিত অবস্থায় বাইরে না যায় এবং করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে আসে, তাহলে ঘরে ফিরলে তাদের দ্বারাই পরিবারের অন্য সদস্যেরা আক্রান্ত হতে পারে।
প্রভাব রয়েছে রাজনীতিরও
অনেক দেশেই রাজনৈতিক মতাদর্শ একটি বড় প্রভাবকের ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে এই বিষয়টি সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলে মহামারি চলাকালীন কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাবে, তা ঠিক করে দিচ্ছে তাদের সমর্থিত রাজনৈতিক মতাদর্শ।
এক জরিপে উঠে এসেছে, ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থকদের চেয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির সমর্থকরা মাস্ক পরছে তুলনামূলভাবে কম। কেননা, ট্রাম্প নিজেই একটা সময় পর্যন্ত মাস্কের বিরোধিতা করে এসেছেন। জুলাই মাসে এসে তিনি প্রথম প্রকাশ্যে মাস্ক পরেন। এরপর থেকে তার দলের অনেক সদস্যই মাস্ক পরার দিকে ঝুঁকছে। কিন্তু এর আগে পর্যন্ত তারা ছিল মাস্কের কট্টর বিরোধী।
২০২০ সালের ২৫ জুন প্রকাশিত পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ৭৬ শতাংশ ডেমোক্র্যাট ভোটার সবসময় কিংবা প্রায় সবসময় মাস্ক পরে থাকে। অপরদিকে রিপাবলিকানদের মধ্যে মাস্ক পরিধানের পরিমাণ ছিল মাত্র ৫৩ শতাংশ।
তবে রিপাবলিকানদের মধ্যেও মাস্ক পরার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের একটি বিশাল তারতম্য রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাইজার ফ্যামিলি ফাউন্ডেশনের মে মাসে করা এক জরিপে দেখা গিয়েছিল, ৬৮ শতাংশ রিপাবলিকান-সমর্থক নারী ঘরের বাইরে মাস্ক পরে বের হন। অথচ একই কাজ করা রিপাবলিকান-সমর্থক পুরুষ? মাত্র ৪৯ শতাংশ!
পুরুষদের চিন্তাধারায় পরিবর্তন আনা কি সম্ভব?
অবশ্যই সম্ভব। ইতোমধ্যেই বিশ্বের যেসব দেশে মাস্ক পরাকে আইনত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, সেসব দেশে পুরুষরা মাস্ক পরা শুরু করেছে। তবে এক্ষেত্রে তারা কতটুকু মন থেকে কাজটি করেছে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। কিন্তু একদম নিজেদের উপলব্ধি থেকেও অনেক পুরুষই সাম্প্রতিক সময়ে মাস্ক পরতে শুরু করেছে। সেখানে প্রধানত দু’টি বিষয় কাজ করেছে।
প্রচারণা
করোনাভাইরাস বিষয়ক প্রচারণা সবচেয়ে বেশি সহায়ক নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের মনোজগত ও আচার-আচরণে পরিবর্তন আনতে। শুরুর দিকে অনেকেই এই ধারণার বশবর্তী ছিল যে, “যার করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার সে হবেই, একে আটকানো অসম্ভব“। অনেকে আবার এমন মনে করত যে, তারা শারীরিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী, তাদের নিজেদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেক বেশি। তাই তারা চাইলে মাস্ক না পরেই বাইরে বের হতে পারবে। কিন্তু জোর প্রচারণার মাধ্যমে তারা অনেকেই এখন বুঝতে সক্ষম হয়েছে, করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে প্রত্যেকের সচেতনতা আবশ্যক, এবং নিজেদের কোনো ক্ষতির আশঙ্কা না থাকলেও, আশেপাশের অন্যদের কথা চিন্তা করে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।
এছাড়া পুরুষরা যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্ত নয়, বরং পুরুষদেরই মৃত্যুর হার বেশি, এই বিষয়টি সঠিকভাবে প্রচার করার ফলেও অনেক পুরুষই পূর্বাপেক্ষা সচেতন হয়ে গেছে। তাই বলা যায়, দেশব্যাপী প্রচারণাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ করোনাভাইরাসের ব্যাপারে ব্যক্তিবিশেষের মানসিকতা পরিবর্তনে।
পিয়ার প্রেশার
হ্যাঁ, এই বিষয়টিও নারী-পুরুষ উভয়ের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে খুব জরুরি। কারণ, একজন ব্যক্তি কী করবে না করবে, তা সবসময় তার একক সিদ্ধান্তই হয় না। বরং এক্ষেত্রে তার পিয়ার বা সমকক্ষ ব্যক্তিদের কাজ বা কথাও একটি বড় প্রভাব ফেলে। যেমন: কোনো ব্যক্তি হয়তো আগে কোনোদিন একটি কাজ করেনি। কিন্তু তার বন্ধুমহলের সবাই কাজটি শুরু করল, এক পর্যায়ে তারও বন্ধুদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কাজটি করার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
একই কথা বলা চলে করোনাভাইরাসের ব্যাপারে সচেতনতার ক্ষেত্রেও। কোনো ব্যক্তি নিজে থেকে হয়তো সচেতন নয়, কিন্তু তার বন্ধুমহল বা যাদের সাথে তার নিত্য ওঠা-বসা বা যোগাযোগ, তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠের মধ্যেও যদি সচেতনতা উদ্ভূত হয়, তাহলে সেখান থেকে ওই ব্যক্তির নিজের সচেতন হওয়ারও সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আপনার কোনো পরিচিত ব্যক্তি যদি করোনাভাইরাসের ব্যাপারে এখনো পুরোপুরি সচেতন হয়ে না থাকে, আপনিই কিন্তু হতে পারেন তার সেই শুভাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তি, যে তার মনোভাব ও আচার-আচরণে পরিবর্তন নিয়ে আসবে।