করোনার ধাক্কায় বইয়ের জগতে ধস, কীভাবে টিকে থাকবে প্রকাশনা শিল্প?

কথায় আছে, বই মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় সঙ্গী। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে, বই আর যা-ই হোক, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসমূহের একটি নয়। তাই করোনাভাইরাসের ধাক্কা বেশ জোরেশোরেই লেগেছে দেশের বইয়ের জগতে। চরম সঙ্কটাপন্ন সময়ে অন্য আর সব খাতের মতোই, ভালো নেই দেশের প্রকাশনা শিল্পও।

মার্চের ৮ তারিখ, অর্থাৎ অমর একুশে গ্রন্থমেলা সমাপ্তির মাত্র এক সপ্তাহ পরেই, দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণের কথা জানা যায়। সেই থেকেই দেশে সৃজনশীল বইয়ের বিক্রি একপ্রকার বন্ধই বলা চলে। আর বই বিক্রি হচ্ছে না বলে, ছাপা হচ্ছে না নতুন বইও। সব মিলিয়ে অভাবনীয় দুর্দিন নেমে এসেছে প্রকাশক থেকে শুরু করে বই বিক্রেতা, পরিবহনকারী কিংবা ছাপাখানার মালিক, কর্মচারী, মুদ্রক, বই বাঁধাইকর্মী- সকলের জীবনে। প্রকাশনা শিল্পের অবস্থা এতটাই করুণ যে, ইতোমধ্যেই ধস নেমেছে এই খাতে, ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকায়

উপর্যুপরি ক্ষতির ধাক্কা সামলাতে না পেরে ঝাঁপ নামিয়ে নিতে চাচ্ছে রাজধানীর কাঁটাবনের ক্যাফে বুকশপ ‘দীপনপুর’, ‘কবিতা ক্যাফে’, ‘নালন্দা’, ‘পেন্সিল’, ‘মধ্যমা’। জাগৃতি প্রকাশনী, উৎস প্রকাশন কিংবা শ্রাবণ প্রকাশনীর মতো অনেকেই চালিয়ে যাচ্ছে টিকে থাকার লড়াই। সৃজনশীল ও পাঠ্য বইয়ের পাইকারি বাজার বাংলাবাজারে করোনার কারণে বদলে গেছে নিত্যদিনের চিত্র। লেখক, প্রকাশক, ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা নেই। বেচাকেনা প্রায় বন্ধ। একই চিত্র নীলক্ষেতের বইয়ের বাজারেও। মহামারির ভয়াল থাবায় দোকান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন পুরোনো বইয়ের দোকানি গোলাম মোস্তফা, সবার কাছে যিনি মোস্তফা চাচা নামেই পরিচিত। নিউ মার্কেটের দোকানিদেরও ক্রেতার অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। সারাদিনে হয়তো হাতেগোনা এক-দুজন করে ক্রেতা পাচ্ছেন তারা। ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে গত ৩১ মে থেকে প্রকাশনা সংস্থাগুলোর শো-রুম খুলেছে বটে, কিন্তু তাতেও সার্বিক পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন ঘটেনি।

বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েও সরে এসেছে দীপনপুর; Image Source: Desh Rupantor

সৃজনশীল বইয়ের পাশাপাশি মন্দা পাঠ্যপুস্তক বিক্রিতেও। এখন পর্যন্ত নতুন একাদশ শ্রেণীতে ওঠা শিক্ষার্থীদের কলেজে ক্লাস শুরু হয়নি। অন্যদিকে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের তো পরীক্ষাই এখন পর্যন্ত শেষ হলো না। তাই একাধারে যেমন নতুন কলেজে ওঠা শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক খুব বেশি বিক্রি হচ্ছে না, তেমনই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে পাঠ্যপুস্তকের দোকানগুলোতে বছরের এই সময়টায় যে রমরমা অবস্থা থাকে, তা-ও এবার অনুপস্থিত। বন্ধ রয়েছে অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাও। ফলে বিক্রি হচ্ছে না এ সংক্রান্ত কোনো বইও। বই বিক্রেতাদের ভাষ্যমতে, প্রস্তুতির বই প্রতি বছরই পাল্টায়, ফলে এ বছর যেসব বই বিক্রি হবে না, সেগুলো পড়েই থাকবে।

বই বিক্রিতে ভাঁটা পড়ার ধাক্কা সামলাতে পারছে না ছাপাখানাগুলো। আরামবাগ, ফকিরাপুল, পল্টন এলাকায় কম করে হলেও আড়াই হাজার ছাপাখানা রয়েছে, যার বেশিরভাগেরই চাকা ঘুরছে না। মালিকেরা পড়েছেন বিপাকে। তারা না পারছেন ঘর ভাড়া দিতে, না পারছেন শ্রমিকদের পাওনা মেটাতে। এদিকে বর্তমান আবহাওয়াও আবির্ভূত হয়েছে চিন্তার বড় কারণ হিসেবে। ছোট-বড় দোকানগুলোতে পড়ে আছে লক্ষাধিক টাকা মূল্যমানের বই। গুদামগুলোতেও অবহেলা-অযত্নে গড়াগড়ি খাচ্ছে কাগজ ও অন্যান্য সামগ্রী। গ্রীষ্মের পর বর্ষার এই সময়ে উষ্ণতা ও আর্দ্রতার হেরফেরে আলো-বাতাসহীন প্রকোষ্ঠে বইয়ের কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে, কেউ অনুমানও করতে পারছে না।

আলো-বাতাসহীন প্রকোষ্ঠে বইয়ের অবস্থা কী, জানে না কেউ; Image Source: Ittefaq

অথচ এরকমটা হবার কথা ছিল না। এমন যে হবে, কেউ ধারণাও করতে পারেনি আগে। সাধারণত বইমেলার পর প্রকাশনার বড় কাজগুলো হয় মার্চ থেকে জুনের মধ্যে। বইমেলায় প্রকাশিত নতুন বইগুলো দেশব্যাপী পাঠানোর ব্যবস্থাও করেন প্রকাশকরা, যার মাধ্যমে বইমেলা পরবর্তী সময়েও চাঙ্গা থাকে তাদের ব্যবসা। এ বছর সেই সময়টাতেই কি না করোনার জন্য বন্ধ সবকিছু। তাই প্রকাশনা শিল্পের ব্যবসা কমে গেছে প্রায় ৯০ শতাংশ। ইতোমধ্যেই যে বিনিয়োগ করে রেখেছিলেন প্রকাশকরা, আশঙ্কা দেখা গিয়েছে সেগুলো গচ্চা যাওয়ারও।

বাংলাদেশে জ্ঞান ও সৃজনশীল পুস্তক প্রকাশক সমিতির সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠান সংখ্যা ২০৫। তবে এর বাইরেও আরো শ’খানেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব রয়েছে। এদিকে দেশে পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সদস্য প্রকাশক ও বিক্রেতা রয়েছেন প্রায় ১২ হাজার। ঢাকা শহরে বাঁধাইখানা আছে প্রায় ২৫০টির মতো। করোনার প্রাদুর্ভাবে ভুক্তভোগী কমবেশি তারা সকলেই। এবং যেহেতু বই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য নয়, এমনকি আজকাল বিলাসদ্রব্য হিসেবেও এর নেই তেমন একটা কদর, তাই লকডাউন শেষে অন্যান্য ব্যবসা সচল হলেও, প্রকাশনা ব্যবসা সচল হতে হয়তো অনেকটা সময় লেগে যাবে।

আগামী বইমেলার ভবিষ্যৎ নিয়েও সন্দিহান অনেকে; Image Source: UNB

করোনা পরিস্থিতি যদি আরো দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে তার পরিণাম যে প্রকাশনা শিল্পের জন্য একদমই সুখকর হবে না, সেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে চলতি মাস থেকেই। কেননা জুলাই মাস নাগাদই বড় বড় প্রকাশনা সংস্থাগুলো পরের বছরের বইমেলার জন্য তাদের কাজ অর্ধেক এগিয়ে রাখে। কিন্তু এবার সেই কাজ শুরু করাই হয়নি। তাই আগামী ফেব্রুয়ারির আগে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেলেও, বইমেলা আদৌ হবে কি না, সে ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ রয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি যে কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা কল্পনারও অতীত। অবশ্য তারপরও প্রকাশকরা আশায় বুক বাঁধছেন, ২০২১ সালের বইমেলা সঠিক সময়েই হবে। কেননা সারা বছরের অর্ধেক বই তো মেলাতেই বিক্রি হয়। সুতরাং চলতি বছরের ক্ষতি পোষানোর সুযোগ তারা কার্যত পরবর্তী বইমেলাতেই পাবেন। কিন্তু সেই ক্ষতি পোষানোর তাগিদে বইয়ের দাম পাঠকের ক্রয়ক্ষমতাকে ছাপিয়ে যাবে কি না, সে আশঙ্কাও অমূলক নয়।

করোনার সময়ে অনলাইনে বই বিক্রির চিত্রকেও আশানুরূপ বলা যাবে না। বিগত বছরগুলোতে অনেকেই বই ক্রয়ের ক্ষেত্রে অনলাইনমুখী হয়েছিলেন। বইমেলায় সশরীরে হাজির হতে না পারলেও, বইমেলার পর অনলাইনে অর্ডার দিয়ে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কাঙ্ক্ষিত বইগুলো পেয়ে যেতেন তারা। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে দু’মাস অনলাইনেও বই বিক্রি বন্ধ ছিল। এর ফলে বড় একটা ধাক্কা খেয়েছে অনলাইনভিত্তিক বই বিক্রির প্ল্যাটফর্মগুলো। বর্তমানে আবার সেগুলো চালু হয়েছে বটে, কিন্তু বই বিক্রির পরিমাণ স্বাভাবিক সময়ের মতো নয়। ভর্তি ও নিয়োগ পরীক্ষার বই বেশি বিক্রি হচ্ছে, আবার সৃজনশীল বইয়ের মধ্যে আত্মোন্নয়ন বিষয়ক বইগুলোর প্রতিও অনেকের আগ্রহ রয়েছে। সাধারণ গল্প-উপন্যাস-কবিতা-প্রবন্ধ জাতীয় বইয়ের বিক্রিবাট্টা এখনো সন্তোষজনক নয়। এক্ষেত্রে হোম ডেলিভারির পরিবর্তে নিকটস্থ কুরিয়ার অফিসে গিয়ে বই সংগ্রহ করা এবং ক্যাশ অন ডেলিভারি ব্যবস্থা বন্ধ থাকা প্রধান কারণ হতে পারে।

তবে এরপরও, করোনাকালীন সঙ্কটের মধ্যে অনলাইনেই কিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগের দেখা মিলেছে। সেরকম একটি হলো ‘পাশে আছি’ ইনিশিয়েটিভের প্রকল্প গ্রন্থমঙ্গল। নীলক্ষেতে কয়েকজনকে বই বিক্রেতাকে ক্রমবর্ধমান অনলাইন মার্কেটপ্লেসে উঠতে সহায়তা করছে তারা, এবং এর মাধ্যমে ওই বিক্রেতারা তাদের দুর্দশা অনেকাংশেই কাটিয়ে উঠতে সমর্থ হয়েছেন। ‘পাশে আছি’ ইনিশিয়েটিভের এ প্রকল্পের ফলে গৃহবন্দি দেশবাসীর কাছে কাঙ্ক্ষিত বই পৌঁছানোর একটি ভালো উপায় যেমন তৈরি হয়েছে, তেমনই নীলক্ষেতের দুর্দশাগ্রস্ত বই বিক্রেতাদের পাশাপাশি অনেক বেকার শ্রমিকদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যারা বর্তমানে বইয়ের প্যাকেজিং কিংবা বই ডেলিভারির কাজ করছেন। এ প্রকল্প থেকে আয় করা অর্থের একাংশ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বন্যাদুর্গত মানুষদের সাহায্যার্থেও ব্যবহার করা হচ্ছে।

এদিকে ফুটপাত থেকে ফেসবুকে উঠে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রিয়মুখ, বই বিক্রেতা হাবিবুর রহমানও। বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার কিছুদিন পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে গেলে বিপাকে পড়েছিলেন তিনি। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তার বইয়ের বিক্রি। কিন্তু সম্প্রতি ফেসবুকে ‘বুক ডেসটিনি’ নামক পেজ খোলার মাধ্যমে পুনরায় বই বিক্রি শুরু করেছেন তিনি। ইতোমধ্যেই মিরপুর, মগবাজার, মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, ফার্মগেট ও খিলগাঁও এলাকায় বই ডেলিভারি করা হচ্ছে। পরিকল্পনা রয়েছে ভবিষ্যতে ঢাকার বাইরেও এ সেবা চালু করার।

করোনার সঙ্কটের শুরুর দিকে আশার প্রদীপ দেখা গিয়েছিল দেশি প্রকাশনা সংস্থাগুলোর ই-বুক প্রকাশের ক্ষেত্রেও। শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকটি প্রকাশনীই গৃহবন্দি পাঠকদের কথা চিন্তা করে বিনামূল্যে তাদের কিছু বইয়ের ই-বুক সংস্করণ উন্মুক্ত করেছিল অনলাইনে। ফলে কোনো অর্থ ব্যয় না করেই বেশ কিছু বই মোবাইল, ট্যাব বা ল্যাপটপে পড়ে ফেলার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল পাঠকরা। এ থেকে অনেকেই আশা করেছিল, করোনাকালীন ‘নিউ নরমাল’ হিসেবে শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা সংস্থাগুলো হয়তো এবার অনলাইনে তাদের বইয়ের ‘পেইড ই-বুক ভার্সন’-ও প্রকাশ করতে শুরু করবে।

যদি সে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতো, তাহলে বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশের পাঠকদেরও টাকা দিয়ে শীর্ষ প্রকাশনীগুলোর বই ই-বুক আকারে কিনে পড়ার অভ্যাস গড়ে ওঠার একটা সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো, এখন পর্যন্ত কোনো শীর্ষ প্রকাশনা সংস্থাই অনলাইনে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তাদের নতুন বই প্রকাশের চল শুরু করেনি। এখনো তারা আস্থা রাখছে চিরাচরিত কাগজের বইয়ের উপরই, এবং অনলাইনে বিনামূল্যে ই-বুক প্রকাশ করা কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থা এই করোনার মধ্যেই পুনরায় কাগজের বই প্রকাশ শুরুও করে দিয়েছে।

দোকান বিক্রি করে দিয়েছেন গোলাম মোস্তফা; Image Source: Kalerkantho 

তবে এ কথা অবশ্যই সত্য যে অহেতুক পাইরেসির ঝুঁকি নেয়ার বদলে, চিরাচরিত উপায়ে ব্যবসা করাকে বেশি গুরুত্ব দেয়ার পেছনে অনেক যুক্তিও রয়েছে প্রকাশনা সংস্থাগুলোর। কেননা, প্রকাশনা শিল্পের সাথে প্রকাশক ও লেখক বাদেও যে আরো অনেক মানুষের জীবন ও জীবিকা জড়িত রয়েছে। প্রকাশনা সংস্থাগুলো চাইলেই তাদের কথা ভুলে যেতে পারে না, এবং তা তাদের নীতিবিরুদ্ধও বটে।

চলমান সঙ্কটের ভেতরও প্রকাশনা সংস্থাগুলো যেভাবেই হোক, তাদের কার্যক্রম যে অব্যাহত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে, সেজন্য তারা প্রশংসার দাবিদার। অনেক প্রকাশকই কর্মচারীদের বেতন কিছুটা কমিয়ে হলেও তাদেরকে কাজে বহাল রাখছেন। কিন্তু সেটি করতে পারছেন না, এমন অনেক প্রকাশকও রয়েছেন। ইচ্ছা সত্ত্বেও তাদেরকে ১৮-২০ জন কর্মী থেকে ছাঁটাই করে কর্মী ৮-১০ জনে নামিয়ে আনতে হচ্ছে। ফলে বেকার হয়ে যাচ্ছেন অনেক কর্মীই, এবং সহায়হীন হয়ে পড়ছে তাদের উপর নির্ভরশীল পরিবারের আরো অসংখ্য সদস্য। অনেক প্রকাশনী আবার ব্যয় কমানোর জন্য গুদাম বন্ধ করে দিয়ে বই অফিস কিংবা বাসায় নিয়ে যাচ্ছে।

নীলক্ষেতের বই বিক্রেতাদের পাশে দাঁড়িয়েছে ‘পাশে আছি’ ইনিশিয়েটিভ; Image Source: UNB

করোনা পরিস্থিতি যতদিন ভালোর দিকে না গড়াবে, ততদিন প্রকাশনা শিল্পের এই দুরবস্থাও ক্রমশ বাড়তে থাকে। এই দুরবস্থা কিছুটা হলেও কমাতে পারে সরকারি প্রণোদনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই শিল্পকে ফের মাথা তুলে দাঁড়াতে সাহায্যের জন্য সরকারের প্রণোদনার প্রয়োজন। না হলে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির পক্ষ থেকে সমিতির সদস্য ও এর সঙ্গে জড়িত কর্মীদের প্রায় দুই লাখ পরিবারের জন্য স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি তিনটি স্তরে অনুদান ও প্রণোদনার কথা বলা হয়েছে। তবে ভুলে গেলে চলবে না, এই সমিতির বাইরেও প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে জড়িত আরো হাজার হাজার মানুষের কথা। তারা প্রত্যেকেই এই শিল্পের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তারা ভালো না থাকলে গোটা প্রকাশনা শিল্পই মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য।

সরকারি প্রণোদনার পাশাপাশি প্রয়োজন সরকারের সহযোগিতাও। বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন উইং থেকে বই কেনা হয়। এছাড়া ইতোপূর্বে আরো অনেকগুলো উইং থেকেও বই কেনা হতো। করোনা দুর্যোগ থেকে প্রকাশনা শিল্পকে বাঁচানোর জন্য এখন প্রয়োজন সবগুলো উইং চালু করে, এক্ষেত্রে বাজেট বাড়ানোর মাধ্যমে, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সব প্রকাশকদের থেকে বই কেনা। সরকারি তথ্যমতে, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রকাশনা ব্যবসার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে গত অর্থবছরে বেসরকারি পাঠাগারগুলোর জন্য যে বই কেনা হয়েছে, তা বিগত বছরের চেয়ে প্রায় এক কোটি টাকারও বেশি। চলতি অর্থবছরে ক্রয়কৃত বইয়ের পরিমাণ আরো বাড়বে, গোটা প্রক্রিয়াটি আরো স্বচ্ছ হবে, এবং সকল প্রকাশকের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে, এটিই এখন কাম্য।

This article is in Bengali language. It is about the present condition of Bangladeshi publishing industring amid the coronavirus pandemic. Necessary references have been hyperlinked inside.

Featured Image © British Council

Related Articles

Exit mobile version