Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ইয়াবা পাচারের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু এখন বাংলাদেশ

একটি দেশের যুবসমাজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়ার জন্য তাদের হাতে মাদকদ্রব্য ধরিয়ে দেওয়াই যথেষ্ট। বাংলাদেশ প্রকৃতপক্ষে একটি উন্নয়নশীল দেশ। এক যুগ আগেও এদেশে মাদকের ব্যবহার এতটা প্রকট ছিল না, যা এখন দেখা যায়। বর্তমানে এদেশে মাদক এতটাই সহজলভ্য হয়ে গিয়েছে যে, এগুলোর চোরাচালান ঠেকানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর থেকে কঠোরতর পদক্ষেপ হাতে নিতে হচ্ছে।

মাঝারি আয়ের এই দেশের মানুষের সাময়িক আনন্দের জন্য মদ্যপানের বিলাসিতা নেই। কিন্তু তাই বলে এই নয় যে, এ দেশে মাদক সেবনের হার একেবারে কম। বিভিন্ন বয়সের মানুষ আমাদের দেশে নানা ধরনের নেশাজাত দ্রব্যের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। এরকম বহু ধরনের নেশাজাত দ্রব্যের মাঝে একটি হলো ইয়াবা। ২০০২ সালে প্রথম এই বস্তুটি বাংলাদেশে আসা শুরু করে। বর্তমানে আমাদের দেশে এর ব্যবহার অন্যান্য সকল মাদকদ্রব্যের চেয়ে তুলনামূলক বেশি। ব্যবসা প্রসারের উদ্দেশ্যে ইয়াবা উৎপাদনকারী বিদেশী ড্রাগ কারটেলগুলো তাই বাংলাদেশকে চিহ্নিত করেছে। এদের ব্যবসার অন্যতম লাভজনক স্থানে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ

আমাদের দেশে মাদক হিসেবে ইয়াবা সেবন উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে; Image Source: flickr.com

মানুষ কেন ইয়াবা আসক্ত হয়?

ইয়াবা আদতে একটি গোলাপি বর্ণের ট্যাবলেট। মেথামফেটামিন ও ক্যাফেইনের সংমিশ্রণে এই ট্যাবলেট তৈরি করা হয়। মেথামফেটামিন, সংক্ষেপে মেথ হলো একটি তীব্র নেশা উদ্রেককারী রাসায়নিক বস্তু। একজন ইয়াবা আসক্ত ব্যক্তি এই ট্যাবলেট বাষ্প করে কিংবা গুড়ো করে নাক দিয়ে টেনে গ্রহণ করে। গোলাপি বর্ণ ছাড়াও এটি লাল, নীল ও আরো বিভিন্ন বর্ণের হতে পারে।

ইয়াবা জনপ্রিয় হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো এটি সেবনের পর নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির মাঝে বাহ্যিক কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না। একজন মদ্যপায়ী ব্যক্তির মুখে মদের গন্ধ থাকে। অন্যান্য মাদকদ্রব্য সেবনের কারণেও নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির শারীরিক, বাহ্যিক ও আচরণগত পরিবর্তন দেখা যায়। কিন্তু ইয়াবা আসক্ত ব্যক্তির আসক্তি সহজে চোখে পড়ে না। ট্যাবলেট জাতীয় ও আকারে অনেক ছোট হওয়ায় এটি সহজে বহনযোগ্যও বটে। একজন স্বাভাবিক ব্যক্তি ইয়াবা সেবন করা শুরু করলে প্রাথমিকভাবে তার মাঝে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে। মাদকাসক্তিতে বিশেষজ্ঞ মনোরোগ চিকিৎসক ডক্টর আশিক সেলিম এ ব্যাপারটিকে বিশেষভাবে আলোকপাত করেছেন। তিনি বলেছেন,

শুরুর দিকে আপনি অনেক মিশুক হবেন। আপনি গান, সিগারেট, যৌন সম্পর্ক ইত্যাদি অপেক্ষাকৃত বেশি উপভোগ করতে শুরু করবেন। বাংলাদেশে ইয়াবা ও যৌন সম্পর্কের মাঝে খুবই অসাস্থ্যকর একটা সম্পর্ক রয়েছে। ইয়াবা সেবনের কারণে আপনি বেশিক্ষণ রাত জাগতে পারবেন, আপনার শরীরের শক্তি তুলনামূলক হারে বৃদ্ধি পাবে, আপনি অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হবেন। অথচ এর কোনো উইথড্রয়াল সিনড্রোম নেই। অর্থাৎ অ্যালকোহল কিংবা হেরোইনের মতো এটি ছেড়ে দেওয়ার পর আপনার মাঝে এর প্রতি অমানুষিক চাহিদা সৃষ্টি হবে না। কিন্তু এই ইয়াবার প্রভাবটাই বেশি নেশার উদ্রেক করে। এটি খুবই, খুবই ক্ষতিকর একটি মাদকদ্রব্য।

কম দামি ও সহজলভ্য এই মাদকদ্রব্যটি এখন বাংলাদেশের মাদকের চোরাচালান ও বাজার দুটোতেই প্রতিনিধিত্ব করছে।

ইয়াবার একেকটি ট্যাবলেটের মূল্য ৩০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে; Image Source: dhakatribune.com

ইয়াবার ক্ষতিকর প্রভাব

ঐশী নামের ঐ মেয়েটির কথা কি আপনাদের মনে আছে? সেই ২০১৩ সালের ঘটনা। মাত্র সতেরো বছর বয়সী ঐশী রহমান ইয়াবা আসক্ত ছিল। মেয়েটির উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য তার বাবা-মা তার ফোন জব্দ করে নেয়। তাকে নিজেদের ঢাকার বাসায় আবদ্ধ করে রাখে। তীব্র ক্রোধের কারণে মেয়েটি তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে এবং এক অচিন্ত্যনীয় অপরাধ করে বসে। রাতে ঘুমের সময় সে মা-বাবার কফিতে অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। তাতে কাজ না হলে শেষে ছুরিকাঘাতের মাধ্যমে সে নিজের বাবা-মাকে হত্যা করে।

এই অমানবিক কাজটির জন্য পেছনে অনেক পারিবারিক ও সামাজিক কারণ উল্লেখ করা যেতে পারে। কিন্তু ইয়াবা আসক্তির ব্যাপারটা একেবারে ফেলে দেওয়া যাবে না। ইয়াবাতে আসক্ত একজন মানুষের চরমভাবে নৈতিক অবক্ষয় ঘটে। সে কোনটি ভালো ও কোনটি মন্দ তা বাছবিচার করার অবস্থায় থাকে না।

অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে বাষ্প করে একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি ইয়াবা সেবন করেন ; Image Source: frontiermyanmar.net

মূলত ইয়াবা সেবনের পর আসক্ত ব্যক্তির মাঝে বেশ কিছু মানসিক পরিবর্তন দেখা যায়। সেবনের পর ইউফোরিয়া বা অনেক সুখকর অনুভূতির সৃষ্টি হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে উত্তেজনা বাড়তে থাকে এবং ব্যক্তির বিচারবুদ্ধি লোপ পেতে শুরু করে। নিদ্রাহীনতা বা ইনসমনিয়া দেখা দেয়। দিনের পর দিন আসক্ত ব্যক্তি ঘুমাতে পারে না। এসব মিলিয়ে তার ব্যক্তিত্ব ও আচরণের চরম অবনতি ঘটে। ধীরে ধীরে তার ক্ষিপ্রতা বাড়ে ও যে কাউকে আঘাত করার মানসিকতা তৈরি হয়। শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যথা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে বিভিন্ন মানসিক ও শারীরিক  রোগের দরজা খুলে যায়। আসক্ত ব্যক্তির মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়। দীর্ঘ দিন ধরে আসক্ত থাকলে ব্যক্তির নৈতিকতার চূড়ান্ত অবক্ষয় ঘটে। তার মধ্যে আক্ষরিক অর্থে যেকোনো কিছু করার মতো সাহস ও মনমানসিকতা তৈরি হয়ে যায়।

ইয়াবা চোরাচালান ও বাংলাদেশ

প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে ইয়াবা পাচার করা হয়। এই ইয়াবা প্রধানত প্রস্তুত করা হয় মায়ানমারে। দেশটি থেকে এশিয়ার অন্যান্য বিভিন্ন দেশে প্রচুর পরিমাণে ইয়াবার চালান দেওয়া হয়। প্রতিবেশী দেশ হওয়ার কারণে বাংলাদেশও তাই এই তালিকার বাইরে নেই।

নাফ নদীর মাধ্যমে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে ইয়াবা পাচার হয় ; Image Source: CNN

১৯৯০ সালের শেষের দিকে মায়ানমারের মাদকদ্রব্য প্রস্তুতকারী দলসমূহ হেরোইন বন্ধ করে ইয়াবা উৎপাদন শুরু করে। তাদের ব্যবসার এই আকস্মিক পরিবর্তনের পেছনে বেশ কিছু কারণ দর্শানো যায়। একে তো হেরোইন প্রস্তুত করা জন্য আফিমের চাষ করা লাগে, তার উপর পাচার করতেও এর স্মাগলারদের অনেক ঝক্কি পোহাতে হতো। এই দিক থেকে ইয়াবা আকারে অনেক ছোট। প্রস্তুত করতে খুব বড় জায়গার দরকারও পড়ে না। তাই এটি অতি সহজে পাচার করা যায় এবং ধরা পড়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।

বেগুনের ভিতর লুকিয়ে ইয়াবা পাচারের দৃশ্য; Image Source: thedailystar.net

মায়ানমারের ইয়াবা পাচারের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু দেশ ছিল চীন ও থাইল্যান্ড। কিন্তু এই দুই দেশের সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক সংস্কার করা হয়েছে। ড্রাগ গ্যাং বা মাদক প্রস্তুতকারী এই দলগুলোর তাই নতুন একটি জায়গার দরকার ছিল। আর এভাবেই তাদের টার্গেটে পরিণত হয় বাংলাদেশ। ২০০২ সাল থেকে নাফ নদীর মাধ্যমে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত হতে এদেশে ইয়াবার চোরাচালান শুরু হয়।

ডিপার্টমেন্ট অফ নারকোটিকস কন্ট্রোল (ডিএনসি) এর ২০১৪ সালের এক বাৎসরিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ইয়াবা আসক্ত জনসংখ্যার মধ্যে শতকরা ৮৮ ভাগের বয়স চল্লিশের নিচে। এদের মাঝে এক বিরাট সংখ্যা ২২–২৯ বছর বয়সের মধ্যে পড়ে।

প্রতিবছর বাংলাদেশে উদ্ধারকৃত ইয়াবার পরিসংখ্যান; Image Source: thedailystar.net

ইয়াবার উৎপাদনকারীরা তাদের প্রোডাক্টের ব্র্যান্ডিংও করে থাকে। এই যেমন বাংলাদেশে “আর সেভেন” ব্র্যান্ডটি সব থেকে বেশি জনপ্রিয়। ঢাকা ট্রিবিউনের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, একটি আর সেভেন ট্যাবলেটের বাজারমূল্য ৯০০ টাকা। এর সস্তা একটি সংস্করণ রয়েছে “পিংক চম্পা”, যার বাজারমূল্য ৩০০ টাকা। আবার “কন্ট্রোলার” নামের একটি দামী ও শক্তিশালী ব্র্যান্ডও রয়েছে। এর বাজারমূল্য ২,০০০ টাকা।

প্রতি বছর সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো থেকে ইয়াবার পাচার বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অনুমতি দেওয়ার পর এই ব্যবসা এক নতুন মোড় নিয়েছে। আবাসহীন রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে ইয়াবার পাচার করা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। ট্যাবলেটগুলো আকারে ছোট হওয়ার কারণে তা পুরুষ ও নারীদের গোপনাঙ্গে লুকিয়ে রেখেও পাচার করার নমুনা পাওয়া যায়। বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ২০১৮ সালে প্রায় ৫ কোটি ইয়াবার ট্যাবলেট জব্দ করেছে। ব্যবসায়িক হিসাব নিকাশ করলে এই চোরাচালান থেকে উৎপাদনকারীরা প্রতি বছর প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের সমান আয় করতে পারে।

ফোনের পেছনের অংশে লুকিয়ে ইয়াবা পাচার করার দৃশ্য; Image Source: thedailystar.net

আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা

ইয়াবা বর্তমানে একটি জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এমন কোনো পেশা নেই, যাতে ইয়াবা অনুপ্রবেশ করেনি। সমস্যা এতটাই প্রকট যে ইয়াবা পাচারের সাথে জড়িত থাকলে বাংলাদেশ সরকার তাদের প্রতি “জিরো টলারেন্সে” – এর ব্যবস্থা জারি করেছে। এমনটি শোনা যায় যে, পাচারকারীরা নিজেদের সাথে আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্রও বহন করে। ২০১৮ সালের ইয়াবা পাচারের জন্য প্রসিদ্ধ শহর টেকনাফে দুজন ব্যক্তি পুলিশের সাথে অস্ত্রযুদ্ধে মারা যায়। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় বিশ হাজারের মতো ইয়াবা ট্যাবলেট ও বন্দুক উদ্ধার করা হয়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ তাদের দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন ; Image Source: thedailystar.net

একটি মানবাধিকার সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের প্রথম সাত মাসে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অ্যান্টি-ড্রাগ অপারেশনে প্রায় ৩০০ জন মানুষ মারা যায়। আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যমগুলো এগুলোকে ক্রসফায়ার হিসেবে চিহ্নিত করে। তবে অনেকের দাবী- এসব ক্রসফায়ারের নামে কেবল সাজানো নাটক। কিন্তু কক্সবাজারে পুলিশের সুপারিন্টেনডেন্ট এ বি এম মাসুদ হোসেন ব্যাপারটির সাথে ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি নিশ্চিত করেন, ইয়াবা পাচারের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের উপর কোনো “শুট টু কিল” নীতি আরোপ করা হয়নি। তিনি মৃত্যুর ব্যাখা দিয়েছেন এভাবে,

পাচারের সাথে জড়িত একজনকে গ্রেফতার করার পর আমরা তাকে থানায় নিয়ে যাই। থানায় জেরা করে তার কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য উদ্ধার করা হয়। এসব তথ্যের ভিত্তিতে আমরা আমাদের অপারেশন পরিচালনা করি। অনেক সময় দেখা যায় যে, আমরা যে সকল ক্রিমিনালদের ধরতে যাই তারা বন্দুক দিয়ে আমাদের পাল্টা আক্রমণ করে। এই পাল্টাপাল্টি গোলাগুলির কারণেই কিছু লোক মারা যায়।

তিনি এটাও নিশ্চিত করেন যে, পাচারকারীদের নিয়ে তাদের কোনো ক্রসফায়ারের তালিকা নেই। আসলে সব বন্দুকযুদ্ধের প্যাটার্ন একই রকম হওয়ার কারণেই এই ভুল ধারণা তৈরি হতে পারে।

ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ইয়াবা উৎপাদনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়ার আশংকা রয়েছে ; Image Source: thenewhumanitarian.org

কঠোর পুলিশি তৎপরতার কারণে উপকূল অঞ্চলের অনেকেই আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের পরিচয় গোপন রেখে ইয়াবা সেবন ও পাচার থেকে বের করে আনার জন্য নানা পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। এর দরুণ কক্সবাজারে ইয়াবা পাচারের হার প্রায় ৭০ শতাংশ হ্রাস পায়। এমনটিই দাবী করেছেন পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন।

ইয়াবা পাচার কিন্তু তবুও পুরোদমে চলছে। এর কারণ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিম্ন পদমর্যাদার কর্মচারীরাও ইয়াবার ভয়ংকর ছোবলের বাইরে নেই। তাছাড়া এর পেছনে অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গের হাতও থাকতে পারে।

কক্সবাজারের নারকোটিকস কন্ট্রোল বিভাগের সহকারী পরিচালক সোমান মন্ডল এই কথাগুলোর সাথে একমত নন।

আমার কর্মচারীরা মাদক পাচারের সাথে জড়িত আছেন, এমন কোনো অভিযোগ আমি কখনো পাইনি। এসব মাদক আমাদের দেশে এভাবে ঢুকতে থাকে, কারণ এখানে আমাদের কর্মরত স্টাফদের সংখ্যা তুলনামূলক কম।

বাসের সিটে থেকে ইয়াবা উদ্ধার করছেন একজন বিজিবি কর্মকর্তা ; Image Source: bbc.com

কীভাবে এই ক্যান্সার দমন করা যায়

ইয়াবা এখন সবখানে ছড়িয়ে গেছে। এটি শুনতে খারাপ লাগলেও স্বীকার করতে হবে যে, স্কুলপড়ুয়া ছাত্ররাও এখন ইয়াবার সংস্পর্শে চলে এসেছে। তাই এ ব্যাপারে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সকল দিক থেকে পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলাদেশে ডিপার্টমেন্ট অফ নারকোটিকস কন্ট্রোলের তালিকানুযায়ী মাত্র চারটি সরকার পরিচালিত পুনর্বাসন কেন্দ্র চালু রয়েছে। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৫ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী এ দেশে মোট ৬৮টি বেসরকারি পুনর্বাসন কেন্দ্র বা রিহ্যাব চালু রয়েছে।

দেশে মাদকাসক্তদের সংখ্যার তুলনায় এই চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোর সংখ্যা তুলনামূলক কম। তাই সরকার ও ব্যক্তিগত উদ্যোগের প্রয়োজন অনেক বেশি। এসব পুনর্বাসন কেন্দ্রের আধুনিকীকরণ অত্যন্ত জরুরি। এখানকার পরিবেশ আরো উন্নত হতে হবে এবং দক্ষ চিকিৎসক নিয়োগ দিতে হবে।

কক্সবাজারে ইয়াবা সেবন ও পাচারের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে; Image Source: cnn.com

দিন দিন আমাদের ছাত্র সমাজ প্রচুর পরিমাণে মাদকের দিকে ঝুকে পড়ছে। পারিবারিক পরিবেশ, সঙ্গদোষ, বিষণ্নতা ইত্যাদির কারণে এমনটি হতে পারে। যে ছেলেটি কখনো সিগারেট মুখে দেয়নি, সে হয়তো এখন ইয়াবা ছাড়া চলতে পারে না। ব্যাপারটি আসলেই দুঃখজনক। এজন্য আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের একজন মাদকাসক্তের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।

আমাদের সমাজে মাদকাসক্তদের প্রতি একপ্রকার বিতৃষ্ণা কাজ করে। এতে ভুলটা আমরা নিজেরাই করি। কাউকে মাদক নিতে দেখলে তাকে এড়িয়ে যাওয়া ঠিক নয়। বরং তাকে এর থেকে বের করে আনার চেষ্টা করতে হবে। আর মাদকাসক্তরা অনেক সংবেদনশীল হয়। তাই অবশ্যই তাদের পুনর্বাসনের জন্য সঠিক পন্থা অবলম্বন করতে হবে। আমাদের প্রচেষ্টায় যদি একজন ব্যক্তিকেও এই দুর্দশা থেকে ফিরিয়ে আনা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে ঐ ব্যক্তির প্রচেষ্টায় আরো পাঁচজনকে হয়তো আমরা আসক্ত হওয়া থেকে বাঁচাতে পারবো। এতেই আমাদের সার্থকতা।

This bengali article is about how yaba trafficking has affected Bangladesh and how it has become a popular drug among commoners. Necessary reference have been hyperlinked within the article.

Feature Image Source: Youtube

Related Articles