Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রবার্ট লুই স্টিভেনসন: এক মাদকাসক্ত গল্পকারের নানা দিক

কালজয়ী লেখক স্যার হেনরী রাইডার হ্যাগার্ডকে একবার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন তার বড় ভাই। ‘পারলে ট্রেজার আইল্যান্ড-এর মতো একটা রক্ত গরম করা উপন্যাস লিখে দেখাও দেখি!’ সেই চ্যালেঞ্জ থেকে তার সবচেয়ে বিখ্যাত উপন্যাসগুলোর একটা, কিং সলোমন’স মাইনস-এর জন্ম। তবে আজকের আলোচনা হ্যাগার্ডকে নিয়ে নয়। তিনি যে লেখক হ্যাগার্ড হয়ে উঠেছেন তার নেপথ্যে থাকা বই ট্রেজার আইল্যান্ড-এর লেখক রবার্ট লুই স্টিভেনসনকে নিয়ে।

ট্রেজার আইল্যান্ড-এর লং জন সিলভার কিংবা ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড-এর বিজ্ঞানী সাহেবকে কে না চেনে। বইপড়ুয়াদের কাছে এদের স্রষ্টা রবার্ট লুই স্টিভেনসন এক নামে পরিচিত। এগুলো ছাড়াও কিডন্যাপড, দ্য ব্ল্যাক অ্যারো, ক্যাট্রিওনার মতো চমৎকার সব ক্লাসিক উপহার দিয়েছেন তিনি। তারই কিছু অজানা বিষয় নিয়ে আজকের আয়োজন। 

রবার্ট লুইস স্টিভেনসন
রবার্ট লুই স্টিভেনসন; Image Source: Wikimedia Commons
  • কেচ্ছা-কাহিনীর প্রতি ছোটবেলা থেকেই অন্যরকম টান অনুভব করতেন রবার্ট। মাত্র ছয় বছর বয়সে প্রথম গল্প ফেঁদেছিলেন। গল্পের নাম ছিল ‘A History of Moses’। আর মজার বিষয় হচ্ছে তিনি পড়তে শিখেছিলেন আরো পরে, সাত কি আট বছর বয়সে।
  • কৈশোরে ভেলভেটের কোট আর চওড়া কানওয়ালা হ্যাট পরতেন। এজন্য তার ডাকনাম হয়ে গিয়েছিল ‘ভেলভেট জ্যাকেট’।
  • এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় চৌদ্দ শিকের ভেতরটা দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল তার। কারণ? তুষার লড়াই। তাও বিনা কারণে। তুষার দিয়ে বল বানিয়ে একে অপরের দিকে ছুঁড়ে মারছিল স্থানীয় লোকজন আর ছাত্ররা। সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছিলেন স্টিভেনসন।
  • ট্রেজার আইল্যান্ড সর্বপ্রথম একটি শিশু সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছিল ক্যাপ্টেন জর্জ নর্থ ছদ্মনামে।
  • স্লিপিং ব্যাগের আবিষ্কারক কে জানেন? রবার্ট লুই স্টিভেনসন। বেশ ভ্রমণপিপাসু ছিলেন তিনি। সবসময় একটা ছ’ফুটি বস্তামতো জিনিস সাথে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। রাতে ওটার ভেতরই থাকতেন।
  • প্যারিস ভ্রমণের সময় ফ্রান্সিস অসবোর্ন ফ্যানি নামের এক নারীর সাথে দেখা হয় স্টিভেনসনের। আমেরিকান এ নারীর সাথে বেশ খাতির হয়ে যায় তার। প্রেমে পড়ে যান তিনি। কিন্তু কিছুদিন পরই প্যারিস ছেড়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় পাড়ি জমান ফ্রান্সিস। বন্ধু-বান্ধব আর পরিবারের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে ঘোষণা দিলেন স্টিভেনসন- ফ্রান্সিসের খোঁজে ক্যালিফোর্নিয়া যাবেন তিনিও। সকল প্রকার আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দেন তার বাবা। অনেক কষ্ট সহ্য করে, আটলান্টিক পারি দিয়ে আমেরিকা পৌঁছান তিনি। সেখানে তার ভগ্ন স্বাস্থ্য আরো খারাপ হতে থাকে। এমন অবস্থা দেখে মন গললো ফ্রান্সিসের। ধোঁকাবাজ স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে বয়সে এগারো বছরের ছোট স্টিভেনসনকে নতুন জীবনসঙ্গী করে নেন তিনি।
স্টিভেনসনের স্ত্রী, ফ্রান্সিস অসবোর্ণ ফ্যানি
স্টিভেনসনের স্ত্রী ফ্রান্সিস অসবোর্ণ ফ্যানি; Source: Wikimedia Commons
  • স্টিভেনসনের দাঁতগুলো ছিল নকল। ফ্রান্সিসের খোঁজে আমেরিকা আসার পর তার দাঁতে সমস্যা দেখা দেয়। স্থানীয় এক ডেন্টিস্ট তার সবগুলো দাঁত তুলে ফেলে কাঠের নকল দাঁত বসিয়ে দেন।
  • তিনি পিয়ানো আর বাঁশিও বাজাতে পারতেন। গান লিখেছেন খান দশেক। তাছাড়া শতাধিক মিউজিক কম্পোজিশনও তিনি করেছেন।
  • পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান চলচ্চিত্রে জ্যাক স্প্যারো রূপী জনি ডেপ আর তার দোসরদের মুখে একটা লাইন নিশ্চয়ই শুনেছেন- ‘ইয়ো হো হো, অ্যান্ড আ বটল অব রাম…’। তিন গোয়েন্দা সিরিজের পাঠকদের কাছেও এই লাইনটা পরিচিত হওয়ার কথা। এটা একটা গানের লাইন। ট্রেজার আইল্যান্ড বইয়ের জন্য এ গানটা লিখেছিলেন স্টিভেনসন।
  • ট্রেজার আইল্যান্ডের লং জন সিলভার চরিত্রটি কবি ডব্লিউ. ই. হেনলির আদলে বানান তিনি। ভদ্রলোক টিউবারকোলোসিস রোগে আক্রান্ত ছিলেন। ১৮৬৮ সালে তার পা কেটে ফেলে দেবার পর নকল কাঠের পা ব্যবহার করা শুরু করেন। সেখান থেকেই লং জন সিলভারের আইডিয়া মাথায় আসে স্টিভেনসনের।
  • ছোটবেলায় উইলিয়াম ব্রুডি নামের এক স্কটিশ ক্রিমিনালের ভক্ত ছিলেন তিনি। এমনিতে ক্রিমিনাল ব্রুডি ফার্নিচারের দোকানে কাজ করতো, তবে রাজনীতিবিদ আর যাজক হিসেবেও তার পরিচিতি ছিল। ভালোমানুষির মুখোশের আড়ালে জুয়া, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে যুক্ত ছিল এই ব্রুডি। তবে আইনের চোখকে ফাঁকি দিতে পারেনি সে। ধরা পড়ে এবং ফাঁসিও হয় তার। সেখান থেকেই আইডিয়া নিয়ে লিখেন ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড নামের উপন্যাসটি যেখানে একটি ব্যক্তি ভালো ও মন্দ এই দুই সত্ত্বা নিয়ে বসবাস করে।
  • সারাটা জীবন নানা রোগে ভুগেছেন। উনিশ শতকের আগ পর্যন্ত আবিষ্কৃত প্রায় সবগুলো রোগ বাসা বেঁধেছিল তার দেহে। বিশেষ করে ছোটবেলায় যক্ষ্মা বাধিয়েছিলেন তিনি। এটি জ্বালিয়েছে সারাটা জীবন। তাছাড়া নানা দেশ ভ্রমণের কারণে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, টাইফাস, কলেরা, ম্যালেরিয়া সহ নানা রোগের সাথে বসবাস করতে হয়েছে তাকে।
  • ১৮২০ সালের দিকে এডিনবার্গে একাধিক মৃতদেহ চুরির ঘটনা ঘটে। এর পেছন মূলত ডাক্তারদের হাত ছিল। বিখ্যাত সার্জন রবার্ট নক্স দুজন ক্রিমিনালকে টাকা দিয়েছিলেন মৃতদেহ যোগাড় করার জন্য। ক্রিমিনাল দুজন অর্থাৎ, উইলিয়াম হেয়ার (William Hare) এবং উইলিয়াম বু্র্ক (William Burke) ষোলটা খুনের জন্য দায়ী ছিল। খুনের পর মৃতদেহগুলো রবার্ট নক্সকে পাঠাতো ওরা। নক্স সাজা থেকে বাঁচতে পারলেও, ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায় তার। স্কটল্যান্ড ছাড়তে হয় তাকে। এই ঘটনার ওপর ভিত্তি করে ১৮৮৪ সালে ‘দ্য বডি স্ন্যাচার’ গল্পটি লিখেন স্টিভেনসন। পরে এর ওপর ভিত্তি করে একটি সিনেমাও বানানো হয়।
‘পল মল গ্যাজেট’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘দ্য বডি স্ন্যাচার’
পল মল গ্যাজেট পত্রিকায় প্রকাশিত ‘দ্য বডি স্ন্যাচার’; Image Source: The Lancet
  • বাবা-মায়ের সাথে বোঝাপড়া ভালো ছিল না স্টিভেনসনের। তার বাবা, থমাস স্টিভেনসন চাইছিলেন ছেলে তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হবে। কিন্তু তার আশায় জল ঢেলে দিলেন রবার্ট। এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় একটা ক্লাবের পালের গোদা ছিলেন তিনি। সেই ক্লাবের মূলমন্ত্র ছিল, ‘বাবা-মা যা শিখিয়েছে, ওসব পাত্তা দেওয়ার দরকার নেই!’ বাবা-মাকে খুশি করার জন্য আইন বিষয়ে পড়লেও কখনো সেটাকে পেশা হিসেবে নেওয়ার কোনো আগ্রহ দেখায়নি রবার্ট। আর তাছাড়া, বিয়ে থা করার পরেও বাবা-মায়ের কাছ থেকে টাকা নিতেন তিনি। সেজন্য বাবা মায়ের সাথে সম্পর্কটা খারাপই ছিল তার।
  • নিয়মিত কোকেন সেবন করতেন তিনি। ১৮৮৫ সালের এক রাতে নেশার ঘোরে দুঃস্বপ্ন দেখছিলেন। স্ত্রীর ডাকে হঠাৎ জেগে উঠেন। তিন দিনের মাঝে সেই দুঃস্বপ্ন একটি পূর্ণাঙ্গ নভেলায় রূপ নেয়। ওটা তার স্ত্রীকে পড়তে দিলে দীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হন। তাই পুড়িয়ে ফেলেন পান্ডুলিপি। আরো তিন দিনের মাঝে আগের গল্পটাকেই একটু মার্জিত করে রূপ দেন ‘ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড’-এ। তবুও প্রথমদিকে এই গল্প ছাপাতে রাজি হচ্ছিলো না প্রকাশকরা। কিন্তু তাদেরকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে প্রকাশের পর মাত্র ছয় মাসেরও কম সময়ে ৪০ হাজার কপি বিক্রি হওয়া এই বইটি স্টিভেনসনের সেরা কাজের তকমা পেয়ে যায়।
  • ১৮৮৯ সালে স্টিভেনসন সামোয়া ভ্রমণে যান। জায়গাটা তার এতই ভালো লেগে যায় যে, সাথে সাথেই ৩০০ একর জায়গা কিনে দোতলা একটি বাড়ি বানিয়ে ফেলেন। বাড়ির নাম দেন ‘ভাইলিমা’ (Vailima)। ইউরোপীয় উপনিবেশিক শক্তি সামোয়াকে গ্রাস করতে চাইলে রুখে দাঁড়ান স্টিভেনসন। তার দৃঢ় ভূমিকা না থাকলে হয়তো জার্মান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেত সামোয়া। স্থানীয় সবাই তার কৃতজ্ঞতার বাঁধনে বাঁধা পড়ে যায়। শ্রদ্ধা ভরে সবাই তাকে নাম দেয় ‘Tusitala’ বা গল্পবলিয়ে। মৃত্যুর পর তার দেহাবশেষ মাউন্ট ভিয়ার (Mt. Vaea) চূড়ায় দাফন করা হয়। তার এপিটাফে লেখা-

Under the wide and starry sky
Dig the grave and let me lie,
Glad did I live and gladly die
And I laid me down with a will.
This be the verse you grave for me.
Here he lies where he longed to be.
Home is the sailor, home from the sea.
And the hunter home from the hill.

স্টিভেনসনের সমাধি
স্টিভেনসনের সমাধি; Image Source: findagrave

তথ্যসূত্র: র‍্যাংকার, দ্য টেলিগ্রাফ, বায়োগ্রাফি ডট কম, এডিনবার্গ নিউজ

ফিচার ছবি- The Telegraph

Related Articles