কালের শ্রেষ্ঠ পদার্থবিদ আইজ্যাক নিউটন

আপনাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে সর্বকালের সেরা দুজন বিজ্ঞানীর নাম বলুন, তাহলে কি করবেন? নিশ্চয় প্রথমেই বলবেন আলবার্ট আইনস্টাইনের নাম, তারপর আইজ্যাক নিউটন। কিন্তু আমাকে জিজ্ঞেস করলে নিউটনের নামই আগে বলবো। আপনি যা-ই বলুন না কেন, নিউটন না থাকলে বিজ্ঞান আজকের অবস্থানে আসতো না। নিউটন না থাকলে আইনস্টাইন তার যুগান্তকারী আবিষ্কার করতে পারতেন না। নিউটন না থাকলে মানবজাতি আজ রকেটে চড়ে মহাকাশ চষে বেড়ানোর কথা কল্পনাও করতে পারতো না। হ্যাঁ, নিউটন না থাকলে এমন আরও অনেক কিছুই হতো না, যা ছাড়া আজকের বিশ্ব কল্পনাও করা মুশকিল। তার আগে পর্যন্ত বিজ্ঞানের সীমানা ছিল ছোট। তিনি সেটাকে প্রশস্ত করে দিয়ে গেছেন। তিনি পদার্থবিজ্ঞানের আমূল পরিবর্তন করে দিয়ে গেছেন। আর তার অবদানের জন্যই আজ আমরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পদার্থবিজ্ঞানের উপস্থিতি খুঁজে পাই।

শৈশব জীবন এবং শিক্ষা

এই বাড়িতেই বড় হয়েছিলেন স্যার আইজ্যাক নিউটন; Image Source: inversesquare.wordpress.com

আইজ্যাক নিউটন জুনিয়র ১৬৪৩ সালের ৪ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের লিনকনশায়ারের এক ছোট্ট গ্রাম উলসথোর্পে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা, যার নামও ছিল আইজ্যাক নিউটন, নিউটন জুনিয়রের জন্মের আগেই মারা গিয়েছিলেন। যদিও নিউটনের বাবা পড়তে লিখতে জানতেন না, তথাপি তিনি ছিলেন স্বচ্ছল। কেই বা জানতো সেই অক্ষর জ্ঞানহীন কৃষক বাবার ঘরে জন্মানো ছেলেটিই একদিন পৃথিবী বদলে দেবে!

নিউটনের যখন তিন বছর, তখন তার মা হান্না এস্কো একজন পাদ্রিকে বিয়ে করেন। কিন্তু নিউটন তাকে বাবা হিসেবে মেনে নিতে পারতেন না। তাই তিনি মা-বাবার সাথে না থেকে নিজের নানী মার্জারী এস্কোর নিকট চলে যান। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে সৎ বাবার প্রতি এবং মায়ের প্রতি তার এই রাগ বয়স বাড়ার সাথে সাথে আরও বেড়ে যায়। কিশোর বয়সে তো একবার তিনি তাদের বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়ারই হুমকি দিয়েছিলেন!

১২ বছর বয়সে তিনি কিংস স্কুলে ভর্তি হন। সেই স্কুলেই তিনি ক্লাসিক বিজ্ঞান শিক্ষা নিয়েছিলেন। গাণিতিক বিজ্ঞান সেখানে খুব একটা ছিল না, তথাপি নিউটন ছিলেন ক্লাসের সেরা শিক্ষার্থী। কিন্তু তার বয়স যখন ১৭, তখন তার মা তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন যাতে বাবার মতো কৃষক হতে পারেন নিউটন। কিন্তু সৌভাগ্যবশত কৃষিকাজে তার দারুণ অনীহা তার মাকে বাধ্য করে তাকে আবারো স্কুলে ভর্তি করাতে। ভাবতেই ভয় লেগে যায়, যদি নিউটনের কৃষিকাজ ভাল লেগে যেত, তাহলে কেমন হতো আজকের বিজ্ঞান?

উচ্চশিক্ষা

ট্রিনিটি কলেজে ২য় বিশ্বযুদ্ধে নিহতদের স্মারকের সামনে নিউটনের মূর্তি; Image Source: 123rf.com

১৬৬১ সালে নিউটন ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে আইন বিষয়ক ডিগ্রী নিয়ে পড়া শুরু করেন। একই সাথে তিনি ধনী ছাত্রদের ব্যক্তিগত ভৃত্যের কাজ করেও টাকা আয় করতে শুরু করেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যে বিজ্ঞানীর হাত ধরে পদার্থবিদ্যার এত উন্নতি, সেই বিজ্ঞানীর উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সময় পদার্থবিদ্যা বলতে আলাদা কোনো কিছু ছিলই না!

তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ করতে করতে তিনি গণিত ও প্রাকৃতিক দর্শনশাস্ত্রে নিজ চেষ্টায় বেশ দক্ষ হয়ে ওঠেন। অ্যারিস্টটল এবং প্লেটোর প্রাচীন গ্রীক তত্ত্বের প্রতি প্রাথমিকভাবে কিছুটা আকর্ষণ অনুভব করলেও খুব শীঘ্রই তিনি তাদের তত্ত্বগুলোতে ভুল ধরতে পারেন। ফলে কলেজের শিক্ষা তার নিকট গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে এবং তিনি রবার্ট বয়েল, গ্যালিলিও গ্যালিলি এবং জোহান কেপলারদের মতো তার যুগের আধুনিক বিজ্ঞানীদের বই পড়তে শুরু করেন। এ সম্পর্কে তার একটি বিখ্যাত উক্তি না বললেই নয়,

“প্লেটো আমার বন্ধু, অ্যারিস্টটল আমার বন্ধু, কিন্তু সবচেয়ে বড় বন্ধু হচ্ছে সত্য”

ব্যক্তিগত ভৃত্য হিসেবে কাজ করবার সময়ই তার মনে নানান প্রশ্ন জাগতো। তিনি একটি নিজস্ব নোটে সেসব প্রশ্ন লিখে রাখতেন। তার মধ্যে মহাকর্ষ, আলোর প্রকৃতি, আলোর বর্ণ ইত্যাদি নিয়েও প্রশ্ন ছিল। ক্যামব্রিজে তিন বছর কাটানোর পরই তিনি একটি চার বছরের স্কলারশিপ লাভ করেন।

১৬৬৫ সালে নিউটন তার প্রথম বৃহৎ কোন গাণিতিক আবিষ্কার করেন। তিনি দ্বিপদ রাশির সার্বজনীন সমীকরণ আবিষ্কার করেন। সেই বছর তার বিএ ডিগ্রীও শেষ হয়। এবার তিনি পুরো মনোযোগ দিলেন চিন্তাভাবনায়। কিন্তু চলে আসলো বাধা। ইংল্যান্ডের ইতিহাসে ভয়াবহতম মহামারী হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে প্লেগ। ফলে বন্ধ হয় কলেজ আর নিউটন চলে আসেন বাড়িতে।

গণিতশাস্ত্রের ফেলো এবং লুকেসিয়ান অধ্যাপক নিউটন

Image Source: theconversation.com

২৪ বছর বয়সে নিউটন ক্যামব্রিজে ফিরে আসেন এবং সে বছরই তিনি ফেলো নির্বাচিত হন। পরের বছর তাকে এমএ ডিগ্রীতে ভূষিত করে ট্রিনিটি কলেজ। ১৬৬৯ সালে ট্রিনিটি কলেজের তৎকালীন গনিতের লুকেসিয়ান প্রফেসর আইজ্যাক ব্যারো পদত্যাগ করেন এবং নিউটন মাত্র ২৬ বছর বয়সে লুকেসিয়ান অধ্যাপক হবার গৌরব অর্জন করেন।

আইজ্যাক নিউটনের জীবনের কিছু বিখ্যাত আবিষ্কারের পেছনের গল্প জানার আগে চলুন সংক্ষেপে জেনে নিই পদার্থবিজ্ঞানে তার অবদান।

  • দ্বীপদ রাশির সার্বজনীন সূত্র আবিষ্কার।
  • প্রিজমের মাধ্যমে সূর্যরশ্নির বিশ্লেষণ এবং সাতটি আলোর বিভাজন আবিষ্কার।
  • প্রতিফলন টেলিস্কোপ আবিষ্কার।
  • পরিবর্তনের গাণিতিক রূপ ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেন যা ছাড়া ইলেকট্রনের মতো ক্ষুদ্র কিংবা ছায়াপথের মতো বৃহৎ বস্তুর প্রকৃতি বোঝা সম্ভব ছিল না।
  • বিজ্ঞানের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ট বই প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা লেখেন।
  • মহাকর্ষ এবং সার্বজনীনন মহাকর্ষীয় ধ্রুবক আবিষ্কার।
  • গতির তিনটি সূত্র আবিষ্কার।
  • মহাকর্ষের কারণে বস্তুর কণিক গতিপথ আলোচনা করেন যেমন বৃত্তাকার, উপবৃত্তাকার বা অধিবৃত্তাকার যা মহাকাশে গ্রহ নক্ষত্রের গতিপথও আলোচনা করে।
  • মহাকর্ষের কারণে জোয়ার-ভাটা হওয়া প্রমাণ করেন।
  • পৃথিবী সম্পূর্ণ গোল নয় বরং মেরু অঞ্চলে কিছুটা চাপা এই ভবিষ্যদ্বাণী করেন।

নিউটনের কিছু যুগান্তকারী আবিষ্কার

নিউটন তার প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকাতে গতির সূত্র এবং মহাকর্ষ বর্ণনা করেন। কিন্তু শুরুতে সমসাময়িক প্রায় কেউই তা বুঝতে সক্ষম হয়নি। ঠিক যেমনটি হয়েছিল যখন আইনস্টাইন তার আপেক্ষিকতার সাধারণ সূত্র আবিষ্কার করেন। তবে নিউটনকে এ সময় বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীনও হতে হয়। যে বই কিনা পদার্থবিজ্ঞানকে দান করেছিল এক নতুন জীবন, সেই বইয়ের জন্যই প্রথমে কিছুদিন তার সমসাময়িক অনেক বিজ্ঞানী তো বটেই, তার অনেক শিক্ষার্থীর কটূক্তিও শুনতে হয়েছিল। তার এক ছাত্র তো একবার বলেছিল-

“ওই হেঁটে যায় এমন এক ব্যক্তি, যার লেখা বই না তিনি নিজে বুঝতে পারেন, না অন্যরা!”

ক্যালকুলাস

Image Source: rtmsd.org

ক্যালকুলাস হচ্ছে পরিবর্তন বিষয়ক গণিত। নিউটন ক্যালকুলাসকে সর্বপ্রথম সম্পূর্ণরূপে বিকশিত করেন। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান এবং ভৌত রসায়ন ক্যালকুলাস ছাড়া কল্পনাও করা যায় না। তাছাড়াও জীববিজ্ঞান এবং অর্থনীতির মতো বিষয়গুলোও ক্যালকুলাসের উপর অনেক ক্ষেত্রে নির্ভরশীল। নিউটন তার বইয়ে বলেছিলেন যে, তিনি পিয়েরে ডি ফারম্যাটের কাজ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। ফারম্যাট উদাহরণের সাহায্যে দেখিয়েছিলেন কিভাবে ক্যালকুলাস ব্যবহার করা যায়, আর নিউটন তা বাস্তবায়ন করেন। তবে নিউটনের আবিষ্কারের সমসাময়িক সময়েই লেবিনিজ ক্যালকুলাস নিয়ে তার কাজ প্রকাশ করেন। বর্তমানে তাই অনেক ক্ষেত্রেই ক্যালকুলাস আবিষ্কারে নিউটনের পাশাপাশি লেবিনিজকেও সমানভাবে স্মরণ করা হয়।

মহাকর্ষ, নিউটন এবং একটি আপেল

গাছ থেকে আপেলের পতন দেখে চিন্তায় নিবিষ্ট হন নিউটন; Image Source: tellmewhyfacts.com

অনেকেই বলে থাকেন যে, নিউটনের আপেল নিয়ে প্রচলিত ঘটনাটি একটি নিছক গল্প। তবে এরকম মনে করার কোনো কারণ নেই। কেননা নিউটন নিজে এ কথা বলেছেন যে, গাছ থেকে আপেল পড়তে দেখেই তিনি হঠাৎ একদিন মহাকর্ষের কথা ভাবতে শুরু করেন।

নিজ বাড়ির পাশে আপেল বাগানে বসে প্রায়ই বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তা করতেন নিউটন। একদিন একটি আপেল তার সামনে পড়লে তিনি ভাবতে শুরু করেন আপেলটি পৃথিবীর দিকে লম্বভাবে কেন পড়ছে? কেন উপরে যায় না বা আশেপাশে? এই ভাবনা থেকেই তার মাথায় আশে সৌরজগতের গ্রহগুলোর সূর্যকে কেন্দ্র করে এবং চাঁদের পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘোরার কথা। তিনি উপলব্ধি করতে পারেন যে, কোনো এক অদৃশ্য শক্তি আছে যা এসব বস্তুকে নিজেদের দিকে আকর্ষিত করে। নিউটন এর নাম দেন মহাকর্ষ। আর পৃথিবী চাঁদকে বা তার বাগানে পড়ন্ত আপেলকে বা অন্য সকল বস্তুকে যে বলে আকর্ষণ করে নিজের সাথে আটকে রাখে তা হচ্ছে অভিকর্ষ। সাথে তৈরী করেন তার মহাকর্ষ বল পরিমাপের অমর সমীকরণ। সমীকরণটি একবার দেখে নিতে পারেন।

নিউটনের মহাকর্ষীয় সূত্র

এই গাণিতিক সমীকরণটির সহজ বাংলা অনুবাদ এরকম- “মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণা পরস্পরকে আকর্ষণ করে এবং এই আকর্ষণ বলের মান বস্তুকণাদ্বয়ের ভরের গুণফলের সমানুপাতিক, দূরুত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক এবং এই বল বস্তুকণাদ্বয়ের কেন্দ্র বরাবর ক্রিয়া করে।

নিউটনের গতিসূত্র

নিউটনের গতির তিনটি সূত্র; Image Source: youtube.com

চিরায়ত বলবিদ্যাকে কেন নিউটনিয়ান বলবিদ্যা বলা হয় তা নিউটনের গতির সূত্র তিনটি পড়ার পর অনুভব করতে পারা যায়। তার সূত্রগুলো তখন যেমন বলবিদ্যার জীবন ছিল, আজও তেমনি আছে। চলুন একনজরে দেখে নিই সূত্রগুলো-

১ম সূত্রঃ বল প্রয়োগ করা না হলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির এবং গতিশীল বস্তু চিরকাল সরলপথে চলতে থাকবে।

২য় সূত্রঃ বলপ্রয়োগে কোনো বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তন এর উপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যেদিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনও সেদিকে হয়।

৩য় সূত্রঃ  প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।

তার গতিসূত্রের উপর ভিত্তি করেই আজকের বিশ্বে মানুষ প্রতিনিয়ত পৃথিবীর বাইরে রকেট পাঠাচ্ছে। হ্যাঁ, যে সূত্র নিউটন ৩০০ বছর আগে আবিষ্কার করেছিলেন, তার উপর ভিত্তি করে আজ রকেট চলছে। তবে নিউটনের সূত্রেরও রয়েছে সীমাবদ্ধতা। আলোর কাছাকাছি গতিতে গতিশীল কোনো বস্তুর ক্ষেত্রে এই সূত্র প্রযোজ্য হবে না। তখন আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সূত্র প্রযোজ্য হবে। আবার অত্যন্ত ক্ষুদ্র বস্তু, যার ভর কিনা ইলেকট্রন, প্রোটনের মতো ক্ষুদ্র, তাদের ক্ষেত্রেও এই সূত্র প্রযোজ্য হয় না।

আলোকবিজ্ঞান

মহাকর্ষ আর গতির সূত্র দেখে কেবল নিউটনকে ভাবুক বিজ্ঞানী ভাবার অবকাশ নেই। কারণ পরীক্ষানিরীক্ষা করার জন্যও তিনি বেশ দক্ষ ছিলেন। তিনি পৃথিবীর প্রথম প্রতিফলক টেলিস্কোপ উদ্ভাবন করেন। তাছাড়া আলো নিয়ে পরীক্ষা করে তিনি প্রমাণ করেন যে, সূর্যের আলো একবর্ণী আলো নয়। প্রিজমের মধ্য দিয়ে সূর্যের আলো গেলে তা সাতটি রঙের পর্যায়ক্রমিক বর্ণালী সৃষ্টি করে। আবার এই সাতটি রঙকে প্রিজমের মধ্য দিয়ে একত্রে প্রবেশ করালে সাদা আলো পাওয়া যাবে। এই সাতটি আলো হচ্ছে রঙধনুর সাতটি রঙ। এগুলো পর্যায়ক্রমে ‘বেনীআসহকলা’ দিয়ে প্রকাশ করা হয় (বেগুনী, নীল, আসমানি, সবুজ, হলুদ, কমলা, লাল)।

আলকেমি ও অন্যান্য

নিউটনকে আমরা যে বিষয়টির জন্য চিনি তা হচ্ছে পদার্থবিজ্ঞান। কিন্তু আপনি কি জানেন তার ল্যাবরেটরির কাগজ পত্র বলে তিনি আলকেমি (তৎকালীন নাম, এখন কেমিস্ট্রি বা রসায়ন) এর ওপর অনেক বেশি সময় দিতেন।

অধিকাংশ ঐতিহাসিকগণই নিউটনের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার ব্যাপারটি লক্ষ করেন। তার বৈজ্ঞানিক ক্যারিয়ারের প্রথমদিকে তিনি তার কাজের খুব কমই প্রকাশ করতেন। কেননা একবার রবার্ট হুক তার একটি গবেষণা পত্রের সাথে অমত প্রকাশ করেন। এরপর থেকেই তিনি হুকের প্রতি যতিদিন বেঁচে ছিলেন বীতশ্রদ্ধ ছিলেন। তাছাড়া তিনি যখন ক্যালকুলাসে পারদর্শী, তখনও তিনি ক্যালকুলাস বিষয়ক তার কাজের খুব কম অংশই প্রকাশ করেছিলেন। ফলে লেবিনিজ যখন ক্যালকুলাস নিয়ে নিজের কাজ প্রকাশ করতে শুরু করেন, তখন তা একটি বিতর্কের সৃষ্টি করে। এমনকি তিনি লেবিনিজের বিরুদ্ধে তার গবেষণা চুরি করার অভিযোগও করেন!

ব্যক্তিজীবনে নিউটন ছিলেন ভীষণ ধার্মিক। আনঅর্থডক্স প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টবাদে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। জীবনে অনেক সময় নিউটন ব্যয় করেছিলেন ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশুনা করে, লেখালেখি করে এবং বাইবেলের ব্যাখ্যা করে। তিনি অপরাপর পদার্থবিদদের মতো ছিলেন না, বরং পুরো মাত্রায় আস্তিক ছিলেন। তিনি মহাকাশের জটিলতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছিলেন- এগুলো ঈশ্বর ছাড়া আর কারো পক্ষে সৃষ্টি করা সম্ভব নয়।

শেষের কথা

Image Source: en.wikipedia.org

১৬৯৬ সালে নিউটন রাজকীয় টাকশালের ওয়ার্ডেনের দায়িত্ব পান। ১৭০০ সালে তিনি টাকশালটির ‘মাস্টার’ পদে নিয়োগ পান। সেই বছরই তিনি ক্যামব্রিজ একেবারের জন্য ছেড়ে লন্ডন চলে যান। সোজা কথায় তার বৈজ্ঞানিক ক্যারিয়ারের ইতি টানেন। ১৭০৩ সালে তিনি রয়েল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। দু’বছর পর ১৭০৫ সালে তিনি ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত হন এবং ‘আইজ্যাক নিউটন’ থেকে হয়ে যান ‘স্যার আইজ্যাক নিউটন’।

১৭২৭ সালের ৩১ মার্চ নিউটন ৮৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে তাকে সমাহিত করা হয়। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী বলেই তার পরিচয় শেষ করা যায় না। তিনি এসকল বিশেষণের উর্ধ্বে। শেষ করছি কালের আরেকজন শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীর তার সম্বন্ধে করা উক্তিটি দিয়ে।

“প্রকৃতি ছিল নিউটনের কাছে একটি খোলা বইয়ের মতোই, যার পাতাগুলো নিউটন কোনোরকম কষ্ট ছাড়াই পড়তে পারতেন”– আলবার্ট আইনস্টাইন।

This article is in Bangla language. It's about the most influential scientists of all time, Isaac Newton.

Featured Image: newstes.ru

Source: 

১) en.wikipedia.org/wiki/Isaac_Newton

২) famousscientists.org/isaac-newton/

৩) biographyonline.net/scientists/isaac-newton.html

৪) bbc.co.uk/timelines/zwwgcdm

৫) mentalfloss.com/article/23631/10-things-you-didnt-know-about-isaac-newton

৬) factslegend.org/25-interesting-weird-sir-isaac-newton-facts

Related Articles

Exit mobile version