Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ভ্লাড দ্য ইম্পেলার: রোমানিয়ার আসল ড্রাকুলা

রোমানিয়ার বুখারেস্টি শহরের পশ্চিম দিকে তাকালেই চোখে পড়বে বিশাল দুর্গ। তখন সবে সন্ধ্যা হয়েছে, লালরঙা আকাশের নিচের মাটি আরো লাল হয়ে গিয়েছে শহরের অভিজাতদের রক্তে। দুর্গের খাবার ঘরের চেয়ারগুলোর সাথে বিঁধে রয়েছে তাদের দেহ। কারো চোখের মধ্য দিয়ে ঢুকিয়ে ফেলা হয়েছে বাঁশের ফলা, কারো গলা ফাঁক হয়ে রয়েছে, কারো পশ্চাৎদেশ দিয়ে ঢুকে মুখ দিয়ে বের হয়ে এসেছে তীক্ষ্ণ বর্শা। সেগুলোর সামনে বসেই একমনে নিজের রাতের খাবার খেয়ে চলেছেন ভ্লাড টেপিস, তার আদেশেই খুন করা হয়েছে এতগুলো গণ্যমান্য ব্যক্তিকে।

ভ্লাড টেপিস, যার নামের অর্থ করলে দাঁড়ায় ভ্লাড দ্য ইমপেলার, পরিচিত রোমানিয়ার লোককাহিনীর বীর হিসেবে। শত্রুকে বিদ্ধ করে মেরে ফেলার জন্য যার উপাধিই ছিল ‘দ্য ইম্পেলার’, সে কীভাবে একটি দেশের জাতীয় বীরে পরিণত হলো? সে কাহিনীই শুনে আসা যাক।

অটোমান আতঙ্ক

তৃতীয় ভ্লাডের বেড়ে ওঠা খুব একটা স্বাভাবিকভাবে ঘটেনি, আর ‘দ্য ইম্পেলার’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া একজন মানুষের পক্ষে এটিই বরং স্বাভাবিক ছিল। যদিও ভ্লাডের পরিবার অনেকটা জমিদার গোছের ছিল, প্রতিষ্ঠা করেছিল ‘ভালাকিয়া’ রাষ্ট্র (বর্তমান দক্ষিণ রোমানিয়া), কিন্তু তাদের ব্যবহার মোটেই অভিজাতদের মতো ছিল না। যুদ্ধ ছিল তাদের ডিএনএ’র মধ্যে, আর রাজনীতি নিয়ে তর্ক করার চেয়ে যুদ্ধ করে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারই ছিল তাদের জন্য সহজ। আর যুদ্ধের বিভীষিকাময় রক্তাক্ত অবস্থা ছোট্ট ভ্লাডের মনের মধ্যে বেশ ভালো প্রভাব ফেলেছিল, আর সেটাই ভ্লাডকে পরিণত করলো এক রক্তপিপাসু রাজা হিসেবে।

কিন্তু ইতিহাস হয়তো অন্যভাবেও লেখা যেত যদি না ভ্লাডের বাবা দ্বিতীয় ভ্লাড তার ছেলের জন্য এক অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নিতেন। ভালাকিয়া তখন পার্শ্ববর্তী দুই পরাক্রমশালী রাজ্যের মধ্যখানে হাঁসফাঁস করছে, একদিকে সুলতান মেহমেদের অটোমান সাম্রাজ্য, অন্যদিকে আক্রমণাত্মক হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য। এরকম এক পরিস্থিতেই দ্বিতীয় ভ্লাড সিদ্ধান্ত নিলেন তুলনামূলকভাবে বেশি শক্তিশালী অটোমানদেরকে নিজের পাশে পাওয়ার জন্য, এজন্য তার দুই ছেলেকে পাঠিয়ে দিলেন তুরস্কের রাজসভায়। তারা সেখানে থাকবে বন্দী হয়ে, অটোমান সুলতানের অনুগত থাকার একটি চিহ্ন হিসেবে। স্বল্পকালীন সময়ের জন্য সিদ্ধান্তটি বেশ কার্যকরী ছিল, ভালাকিয়া আর অটোমানদের মধ্যে শান্তিচুক্তি হলেও দীর্ঘকালীন মেয়াদে এর পরিণাম হলো ভয়াবহ।

ভালাকিয়ার মানচিত্র; Source: Wikimedia Commons

তৃতীয় ভ্লাড ছোটবেলা থেকেই বেড়ে উঠতে থাকলেন শত্রুভাবাপন্ন এক পরিবেশের মধ্যে, তা-ও আবার বন্দী হিসেবে। এখানে থেকেই বন্দীদের উপর নির্যাতন করার শিল্প তার মাথার মধ্যে ঢুকে গেল, একইসাথে সবাইকে নিজের শত্রু হিসেবে কল্পনা করার ধারণাও তার মাথার মধ্যে গেঁড়ে বসল। দ্বিতীয় ভ্লাড ভেবেছিলেন তার দুই ছেলেই অটোমানদের কাছে সমান ব্যবহার পাবে, কিন্তু বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তৃতীয় ভ্লাডের ছোট ভাই রাদু কোনো এক বিশেষ কারণে শুরু থেকেই তার ভাইয়ের চেয়ে বেশি সুযোগ সুবিধা পেতে থাকল, ভবিষ্যৎ সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদের সাথে তার ভালো ঘনিষ্ঠতাও হয়ে গেল। এর ফলে অন্যান্য বন্দীদের তুলনায় সে বেশ ভালো ব্যবহার পেতে শুরু করল এবং একপর্যায়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে রাজসভাতেও নিজের জায়গা করে নিলো।

এদিকে তৃতীয় ভ্লাডকে দিন কাটাতে হচ্ছিল অন্ধকার ডানজনে নিয়মিত চাবুকের বাড়ি খেয়ে। বিদেশ-বিভূঁইয়ের অন্ধকার সুড়ঙ্গে এভাবে বন্দীদের মতো থাকতে থাকতে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠলো তৃতীয় ভ্লাড। তাছাড়া স্বপক্ষ ত্যাগ করে বিধর্মীদের দলে যোগ দেওয়ায় রাদু আর তার উপর প্রভাব বিস্তারকারী সুলতান মেহমেদের উপরও নিজের রাগ পুষে রেখে কিছুটা মানসিক রোগে আক্রান্ত হলেন ভ্লাড।

দুই ভাই বেড়ে উঠছেন অটোমান সাম্রাজ্যে, এমন সময় ভালাকিয়া থেকে দুঃসংবাদ এলো। দ্বিতীয় ভ্লাড আততায়ীর হাতে খুন হয়েছেন, সাথে বড় ছেলে মির্সিয়াও। আততায়ীরা দখল করে নিয়েছে ভালাকিয়ার কর্তৃত্ব। পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে ভালাকিয়ায় যেতে চাইলেন ভ্লাড, অনুমতি চাইলেন সুলতানের কাছে, পুনরায় দখল করে নেবেন ভালাকিয়ার সিংহাসন। আর এখানেই সবচেয়ে বড় ভুল করে বসলো তুর্কিরা। তারা ভেবেছিল, এভাবে দীর্ঘদিন বন্দী হয়ে থাকায় ভ্লাড এখন তাদের কর্তৃত্বাধীন হয়ে পড়েছে এবং তাদের আদেশানুযায়ী ভালাকিয়া শাসন করবে, অনেকটা সামন্ত রাজার মতো। কিন্তু অদ্ভুতভাবে রাদু রাজি হলেন না ভালাকিয়ায় যেতে, নতুন দেশে নতুন পরিচয়ে তিনি বেশ ভালোভাবেই মানিয়ে নিয়েছেন। দুই ভাই তুরস্কে এসেছিলো ভাই হিসেবে, প্রস্থানের সময় দুজনে পরিণত হলো একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বীতে।

Source: Wikimedia Commons

ভালাকিয়ার নেতা

পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে মোড় নিলো। ভ্লাড যদিও সাফল্যের সাথেই আবারো ভালাকিয়ার সিংহাসন দখল করে নিয়েছেন, কিন্তু তার অনভিজ্ঞতা তাকে পরিণত করলো সহজ লক্ষ্যে। কয়েকদিনের মধ্যেই বেদখল হয়ে গেলো ভালাকিয়া, দুর্ধর্ষ হাঙ্গেরিয়ানরা দখল করে নিলো তার রাজত্ব। ভ্লাড এখন একা, পাশে নেই কোনো মিত্র কিংবা পরিবারের একমাত্র বেঁচে থাকা ভাইও। ভ্লাড সম্পূর্ণ ব্যর্থ, পারেননি পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে, এমনকি নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি ভাইয়ের চেয়ে সেরা হিসেবে। বদমেজাজী আর অভিমানী ভ্লাড তার সিংহাসন ফেরত পেতে তাই হাত মিলালেন তার তৎকালীন শত্রু হাঙ্গেরির সাথেই। তুরস্কের অভিজ্ঞতা থেকে তুর্কদের গোপন সব খবর হাঙ্গেরিয়ানদের দিবেন, হাঙ্গেরির সেনাবাহিনী নিয়ে গুড়িয়ে দেবেন অটোমানদেরকে, বিনিময়ে ভালাকিয়ার সিংহাসন তার নামে লেখা হয়ে যাবে।

আট বছর পর ভ্লাড সেই সেনাবাহিনীর সাথেই রাজপথে নামলেন, যে সেনারাই তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তাকে সিংহাসন থেকে টেনে নামিয়েছিল। যা-ই হোক, আট বছর আগের সেই ভ্লাডের সাথে বর্তমান ভ্লাডের পার্থক্য অনেক। নির্মম বাস্তবতার সাথে যুদ্ধ করে ভ্লাড এখন যথেষ্টই পরিপক্ব, ভ্লাড এখন তৈরি তার জনগণকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য। ভালাকিয়ারও এ মুহূর্তে প্রয়োজন একজন দক্ষ শাসক, তার অনুপস্থিতিতে ভালাকিয়ায় নেমে এসেছে অরাজকতার চাদর। বাজার দখলের জন্য ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে মারামারিতে ব্যস্ত, ক্ষমতা দখলের জন্য অভিজাতদের কামড়াকামড়ি তো লেগেই আছে, আর এই সুযোগে চোর-ডাকাতরা সাধারণ জনগণের উপর কায়েম করেছে ত্রাসের রাজত্ব। ভালাকিয়াকে তার পুরনো গৌরবে ফিরিয়ে আনতে তা-ই লৌহকঠিন শাসক না হলেই নয়।

তৃতীয় ভ্লাডের পোর্ট্রেট; Source: Wikimedia Commons

তবে তার আগে প্রয়োজন স্বাধীনতা। তুরস্কের ডানজনের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেলো ভ্লাডের, জনগণকে স্বাধীনতার স্বাদ পাইয়ে দিতে হলে আগে রাষ্ট্র জুড়ে চলা দুর্নীতি আর অরাজকতা বন্ধ করতে হবে, যা এই অভিজাতরা তৈরি করে গিয়েছে। ভ্লাড রাষ্ট্র জুড়ে গ্রাম তৈরি করলেন কৃষকদের জন্য, এই সাধারণ কৃষকদের দিয়েই গঠন করলেন স্থানীয় সরকার। বিদেশী সওদাগররা যেন বেশি লাভ করতে না পারে, সেজন্য অতিরিক্ত কর আরোপ করলেন, সুযোগ করে দিলেন দেশী ব্যবসায়ীদের জন্য, আর এর ফলে ভালাকিয়ার অর্থনীতি চাঙা হয়ে উঠতে বেশি সময় লাগল না।

কিন্তু অভিজাতরা ছাড় পেলো না, ভ্লাড তার বাবার খুনের জন্য এদের উপর আগে থেকেই রেগে ছিলেন। আইন ভঙ্গের জন্য গরীব কিংবা সাধারণ জনগণ যতটুকু শাস্তি পেত, অভিজাতদের জন্য আইন করা হলো তার কয়েকগুণ। আগে কোনো ভিক্ষুক কিংবা চোরকে সামান্য চুরির দায়ে আগুনে পোড়ানো, অঙ্গ আলাদা করে ফেলা বা অন্যান্য অমানবিক শাস্তির মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হতো। সেই একই ধরনের শাস্তি এবার আরোপ করা হলো অভিজাতদের উপরেই।

গরীব আর সাধারণ জনগণের ‘রবিন হুড’ এ সময়েই পরিচিত হলেন ‘দ্য ইমপেলার’ হিসেবে। রক্তপিপাসু তৃতীয় ভ্লাডের বিরুদ্ধাচরণ করলেই তাকে বসিয়ে দেওয়া হতো তীক্ষ্ণ কাঠের ফলার উপরে, কাঠের ফলা ধীরে ধীরে প্রবেশ করতো আসামীর দেহে, সবকিছু ফুটো করে বেরিয়ে আসতো মুখ ফুঁড়ে। এভাবে মৃত্যু হতো খুবই যন্ত্রণাদায়ক আর আসামীও ধীরে ধীরে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতো। ভ্লাডের বিনোদনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিল যন্ত্রণার চোটে আসামীর মুখ থেকে বেরিয়ে আসা গোঙানি! সারা ইউরোপজুড়ে ভ্লাডের কর্মকাণ্ড চাউর হয়ে পড়লো, এমনকি তুর্কিরা, যাদের কাছে ভ্লাড একসময় বন্দী হিসেবে ছিল, তারাও ভয় পেতে শুরু করলো তাদের অত্যাচারের কারণে তৈরি হওয়া এই দানবকে। রোমানিয়ায় তো ভ্লাডের নামের পাশেই যুক্ত হয়ে গেল ‘টেপিস’, যার অর্থ ‘দ্য ইমপেলার’।

ভ্লাড ‘দ্য ইমপেলার’ এর বিখ্যাত ডিনারের চিত্রকর্ম; Source: Wikimedia Commons

ভ্রাতৃত্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতা

যা-ই হোক, কনিষ্ঠ সহোদর রাদুর প্রতি ভ্লাডের রাগই তার পতন ডেকে নিয়ে আসলো। দানিউবের তীর ঘেঁষে এগিয়ে চললেন ভ্লাড, দখল করতে থাকলেন অটোমান এলাকা। উত্তর-পূর্ব থেকে এই রক্তপিপাসু অনেক এগিয়েছে বুঝতে পেরে সুলতানের টনক নড়লো। আর বাড়তে দেওয়া উচিৎ হবে না সিদ্ধান্ত নিয়ে তার বিশাল জ্যানিসারি বাহিনী নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন ভালাকিয়ার উপর। টিকতে পারবে না বুঝতে পেরেই তাড়াতাড়ি পিছু হটলেন ভ্লাড, তবে যাওয়ার পথে নিজেদের গ্রামে আগুন ধরিয়ে দিলেন, কুয়ায় বিষ ঢেলে দিলেন যাতে তুর্ক বাহিনীর খাদ্য-পানীয়ের অভাবে আর সামনে না এগোয়। অবশ্য তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। তবে রাজধানীতে শেষ চমক অপেক্ষা করছিল সুলতানের জন্য। রাজধানীতে ঢুকতেই এক ভয়াবহ দৃশ্য দেখতে পেল তুর্করা। ময়দানের যতদূর চোখ যায় ততদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে তুর্কদের লাশ! ভ্লাডের প্রিয় অস্ত্র, মুখ ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা কাঠের ফলা, ‘দ্য ইমপেলার’ এর নিখুঁত পরিকল্পনা। এই দৃশ্য দেখে আর সহ্য করতে পারলেন না সুলতান, ফিরে গেলেন তুরস্কে। তবে দায়িত্ব দিয়ে গেলেন রাদুর কাঁধে, নিজের ভাইকে শেষ করে দিতে হবে।

সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদ; © Sinan Bey

রাদু নিজের ভাইকে অন্যদের চেয়ে বেশ ভালোভাবেই চিনতেন, তাই খুব একটা ভয় পেলেন না। তাছাড়া তার কাছে রয়েছে যুদ্ধে জেতার অন্যতম প্রধান অস্ত্র- টাকা। অটোমান সাম্রাজ্যের পাহাড় পরিমাণ সম্পদের সাহায্যে ধীরে ধীরে সামনে এগোতে থাকলেন রাদু। টাকা দিয়ে অভিজাতদের সমর্থন আদায় করলেন, আর ক্রমাগত গোলাবর্ষণে গুড়িয়ে দিতে থাকলেন ভ্লাডের পাহাড়চূড়ায় থাকা দুর্ভেদ্য দুর্গগুলো। ধরা পড়ার চেয়ে মৃত্যুই অধিক যুক্তিসঙ্গত মনে করে পাহাড় থেকে নদীতে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করলেন ভ্লাডের স্ত্রী। ভ্লাড সুযোগ পেয়ে পালিয়ে গেলেন হাঙ্গেরিতে। কিন্তু সেখানেও বিপদ! দেশদ্রোহিতার অভিযোগে তাকে ১২ বছর কারাভোগ করতে হলো। ১২ বছর পর ভ্লাড যখন আবার মাতৃভূমিতে ফিরে এলেন ততদিনে পৃথিবীতে তার একমাত্র আত্মীয় রাদু মারা গিয়েছে। রাদু মারা যাওয়ার পর ভ্লাড হঠাৎ বুঝতে পারলেন তার আর কেউ নেই। ভালাকিয়ার রাজত্ব তৃতীয়বারের মতো হাতে পাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই যুদ্ধক্ষেত্রে মারা গেলেন ভ্লাড।

কারো কারো কাছে ভ্লাড স্রেফ একজন রাক্ষস, যিনি নিজের মনোরঞ্জনের জন্য অকারণেই মানুষ খুন করেন। আবার কারো কারো কাছে তিনি মাতৃভূমির রক্ষাকর্তা, রোমানিয়ার ‘রবিন হুড’, যিনি দুর্নীতি আর অরাজকতা থেকে দেশকে রক্ষা করতে একটু বেশিই কড়া পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে যা-ই হোক না, আপনি কখনোই অস্বীকার করতে পারবেন না, ভ্লাড দ্য ইমপেলার তার দেশের চেয়েও বড় রাজায় পরিণত হয়েছেন এবং ইতিহাসের পাতায় বেশ বড়সড় ছাপ রেখে গিয়েছেন।

Source: Ancient History

কিংবদন্তী ড্রাকুলা

কিন্তু ঠিক কীভাবে ভ্লাডের নামের সাথে ‘ড্রাকুলা’ শব্দটি জড়িয়ে পড়লো? সেটি জানতে হলেও ফিরে যেতে হবে তার বাবার আমলে। তৎকালীন সময়ে ইউরোপজুড়ে অটোমানদের প্রভাব বিস্তার লক্ষ্য করে খ্রিস্টানরা একটি সামরিক অর্ডার তৈরি করে, নাম ‘অর্ডার অফ দ্য ড্রাগন’। এই অর্ডারে যোগ দেওয়ার পরেই দ্বিতীয় ভ্লাডকে উপাধি দেওয়া হয় ‘ড্রাকুল’, রোমানিয়ান ভাষায় যার অর্থ ড্রাগন। এর আরেকটি অর্থ হলো ‘ডেভিল’ বা শয়তান। তৃতীয় ভ্লাডের জন্য তাই নাম বরাদ্দ রইলো ‘ড্রাকুলা’ অর্থাৎ ড্রাগনের ছেলে। এভাবেই তৃতীয় ভ্লাডের নামের সাথে মিশে এক হয়ে গেলো ড্রাকুলা।

এদিকে ব্রাম স্টোকার তার বিখ্যাত ‘ড্রাকুলা’ উপন্যাসের মূল চরিত্রের নামটি ভ্লাডের ডাকনাম থেকে ধার নিয়েছিলেন, বলতে গেলে চরিত্রটির অনেক কিছুই উপন্যাসটির মধ্যে রয়েছে। যদিও ভ্লাড কখনোই রক্ত পান করতেন না কিংবা সূর্যের আলোতেও তার কোনো সমস্যা ছিল না। তিনি একজন স্বাভাবিক মানুষ ছিলেন, মোটেই পৌরাণিক ভ্যাম্পায়ার নন। তাছাড়া ট্রানসিলভানিয়া বর্তমান রোমানিয়ার মধ্যে হলেও ঐতিহাসিকদের মতে, ভ্লাড কখনোই সেখানে পা ফেলেননি।

ব্রাম স্টোকার খানিকটা প্রভাবিত হয়েছেন হাঙ্গেরীয় কাউন্টেস এলিজাবেথ বাথোরির দ্বারা, যিনি প্রায় ৭০০ মহিলাকে খুন করে তাদের রক্তে গোসল করেছিলেন! আর উপন্যাসের ড্রাকুলার আচরণের ধারণা এসেছে স্টোকারের সহকর্মী স্যার হেনরি ইরভিং এর কাছ থেকে। তাহলে কেন ট্রানসিলভানিয়া? কেন ড্রাকুলা? এর প্রমাণ জুলস ভার্নের ‘দ্য ক্যাসল অফ দ্য কার্পেথিয়ানস’ গল্প। সেখানেই সর্বপ্রথম ট্রানসিলভানিয়ার সাথে ভ্যাম্পায়ারদের সম্পর্ক গড়ে তোলা হয়, স্টোকার সেটিই অনুসরণ করেছেন। আর ড্রাকুলা নামটিও স্টোকার অনেক গবেষণার পর বের করেছেন, আসল নামটি হলো কাউন্ট ভ্যাম্পির।

ব্রাম স্টোকারের বিখ্যাত উপন্যাস ড্রাকুলা; Source: Grafik

তথ্যসূত্র:

  1. Vlad the Impaler: In Search of the Real Dracula – M.J. Trow

ফিচার ইমেজ: YouTube

Related Articles