আমরা চলচ্চিত্র দেখি মূলত বিনোদনের জন্য, বাস্তব জগতের ব্যস্ততা এবং চাপ থেকে কিছুক্ষণের মুক্তির জন্য। কিন্তু তারপরেও কোনো চলচ্চিত্র যদি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত হয়, তাহলে আমরা সেটার প্রতি আরো বেশি আগ্রহ অনুভব করি। কাল্পনিক চরিত্রের তুলনায় বাস্তবের রক্ত-মাংসের মানুষের জীবনী অবলম্বনে নির্মিত চরিত্রের সাথে বেশি একাত্মতা অনুভব করি। তাদের সাফল্য আমাদেরকে অনেক বেশি আনন্দ দেয়, তাদের দুঃখ আমাদের হৃদয়কে ব্যথিত করে, আর তারা বিপদে পড়লে আমরা সত্যি সত্যিই তাদের জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে উঠি।
আমাদের এই মনস্তত্ত্ব চলচ্চিত্র নির্মাতারা বেশ ভালো করেই জানেন। আর তাই গল্প-উপন্যাস কিংবা মৌলিক চিত্রনাট্যের উপর ভিত্তি করে নির্মিত চলচ্চিত্রের পাশাপাশি জীবনী নির্ভর কিংবা ঐতিহাসিক ঘটনার উপর ভিত্তি করেও প্রচুর চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। আমাদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য এসব চলচ্চিত্রের পোস্টারে, ট্রেলারে বা চলচ্চিত্র শুরু হওয়ার সময়ই বলে দেয়া থাকে, চলচ্চিত্রটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। কিন্তু কথা হচ্ছে, সত্য ঘটনা অবলম্বনে বলতে আসলে ঠিক কী বোঝায়? এ ধরনের চলচ্চিত্রটির ঠিক কতটুকু সত্য? আর কতটুকুই বা কাহিনীকারের কল্পনা?
বেজড অন এ ট্রু স্টোরি
সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যে চলচ্চিত্রগুলোর কাহিনী সত্যের সবচেয়ে কাছাকাছি, সেগুলো সাধারণত নিজেদেরকে দাবি করে “A True Story” বা “Based on a True Story” হিসেবে। এ ধরনের চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে আমরা আশা করতে পারি, যে কাহিনীটা আমাদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে, সেটা বা তার কাছাকাছি একটা ঘটনা বাস্তবে ঘটেছিল। এবং যে চরিত্রগুলোকে পর্দায় দেখানো হচ্ছে, তাদের সবগুলো না হলেও অধিকাংশই বাস্তবের চরিত্র অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে।
সত্যকে প্রায় হুবহু রূপালি পর্দায় তুলে ধরতে পারা চলচ্চিত্রের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। ক্লিন্ট ইস্টউড পরিচালিত এবং অ্যাঞ্জেলিনা জোলি অভিনীত ২০০৮ সালের চলচ্চিত্র চেঞ্জলিংকে (Changeling) এ ধরনের চলচ্চিত্রের একটি সুন্দর উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। চলচ্চিত্রটির শুরুতেই লেখা ওঠে, “This is a True Story.”। প্রকৃতপক্ষেই অতি সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এর কাহিনী হুবহু বাস্তব ঘটনার অনুরূপ। বাস্তবতা যে মাঝে মাঝে কল্পনাকেও হার মানাতে পারে, এই চলচ্চিত্রের কাহিনী তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ।
ওয়াইনভিল চিকেন কুপ মার্ডার্স নামে পরিচিত ১৯২৮ সালের একটি ধারাবাহিক হত্যাকান্ডের উপর ভিত্তি করে নির্মিত চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য রচনা করেছেন জে. মাইকেল স্ট্রাজিনস্কি। হত্যাকান্ডটি সম্পর্কে প্রথমে জানার পর তিনি দীর্ঘ এক বছর ধরে আদালতের নথিপত্র ঘেঁটে এর উপর গবেষণা করেন। তার দাবি অনুযায়ী, চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্যের ৯৫ শতাংশই তিনি রচনা করেছেন আদালতের ৬,০০০ পৃষ্ঠার নথিপত্রের উপর ভিত্তি করে।
চেঞ্জলিং যদিও মৌলিক চিত্রনাট্যের চলচ্চিত্র, কিন্তু সত্য ঘটনার খুব কাছাকাছি অন্যান্য চলচ্চিত্রগুলোর অধিকাংশের চিত্রনাট্যই অভিযোজিত হয় কোনো বই থেকে। সেটা হতে পারে কারো আত্মজীবনীমূলক রচনা, বিখ্যাত কারো উপর লেখা অন্য কারো জীবনীমূলক গ্রন্থ অথবা বিশেষ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো সাংবাদিকের বা অন্য কোনো লেখকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। এসব ক্ষেত্রে বইগুলো যদি প্রশংসিত এবং সত্য হিসেবে স্বীকৃত হয়, তাহলে চলচ্চিত্র নির্মাণের সময় বই অনুসরণ করলেই সেটা সত্যের খুব কাছাকাছি হয়ে উঠতে পারে।
বইয়ের কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত সত্য ঘটনার চলচ্চিত্রে একটি ভালো উদাহারণ হচ্ছে ড্যানি বয়েল পরিচালিত এবং জেমস ফ্রাঙ্কো অভিনীত ২০১০ সালের চলচ্চিত্র ১২৭ আওয়ার্স (127 Hours)। এই চলচ্চিত্রে দেখানো হয়, অ্যারন রালস্টন নামে এক যুবক জলপ্রপাত অভিযানে গিয়ে পা ফসকে পড়ে গেলে বিশাল একটি পাথরের খন্ডের নিচে তার হাত আটকে যায়। ১২৭ ঘন্টা ধরে সেখানে আটকে থাকার পর অবশেষে জীবন বাঁচানোর জন্য পকেট ছুরি দিয়ে নিজের হাত নিজেই কেটে বেরিয়ে আসেন তিনি।
ড্যানি বয়েল চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য রচনা করেছেন অ্যারন রালস্টনের নিজের লেখা আত্মজীবনীমূলক বই Between a Rock and a Hard Place এর উপর ভিত্তি করে। সিনেমাটির পোস্টারে দাবি করা হয়েছে, গল্পটি “A Triumphant True Story”। এটি যে মোটেও অত্যুক্তি ছিল না, সেটার সাক্ষ্য দিয়েছেন রালস্টন নিজেই। তিনি বলেছেন, সিনেমাটি এতটাই বাস্তবসম্মত হয়েছে যে, এটা সিনেমা হওয়া সত্ত্বেও প্রামাণ্যচিত্রের খুব কাছাকাছি।
এই দুটি সিনেমা ছাড়াও সত্যের খুব কাছাকাছি হিসেবে প্রশংসা অর্জন করেছে এরকম সিনেমার মধ্যে আছে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের দুই সাংবাদিকের তদন্তের উপর নির্মিত All the President’s Men (1976), দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ঘটনা নিয়ে নির্মিত The Pianist (2002) ও Schindler’s List (1993), অ্যাপোলো ১৩ মিশনের বিপর্যয় নিয়ে নির্মিত Apollo 13 (1995), মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের জীবনী নির্ভর চলচ্চিত্র Lincoln (2012) প্রভৃতি।
তবে আমাদেরকে সব সময়ই মাথায় রাখতে হবে, চলচ্চিত্র এবং ইতিহাস এক জিনিস না। চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই কাহিনীর বিশুদ্ধতার তুলনায় গল্পের উপস্থাপনা এবং দর্শকের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতাকে প্রাধান্য দেয়া হয়। তাই সত্য ঘটনা অবলম্বনে দাবি করা হলেও এ ধরনের চলচ্চিত্রে শতভাগ সত্য ঘটনা তুলে ধরা কখনোই সম্ভব হয় না। কাহিনীর প্রয়োজনে কারো সকল দোষত্রুটি এড়িয়ে গিয়ে তাকে নায়ক বানিয়ে দেয় হয়, আবার অন্য কাউকে সকল দোষে দুষ্ট খলনায়ক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, যার সাথে হয়তো বাস্তবতার সম্পর্ক খুবই কম।
স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নায়ক উইলিয়াম ওয়ালেসের জীবনী নিয়ে মেল গিবসনের Braveheart (1995), নোবেল পুরস্কারজয়ী অর্থনীতিবিদ জন ন্যাশের জীবনী নিয়ে রন হাওয়ার্ডের A Beautiful Mind (2001), কম্পিউটার বিজ্ঞানের জনক অ্যালান ট্যুরিংয়ের জীবনী নিয়ে মর্টেন টিলডামের The Imitation Game (2014) – এগুলোর প্রতিটিই অত্যন্ত প্রশংসিত, সফল এবং জনপ্রিয় চলচ্চিত্র। কিন্তু একইসাথে এগুলো প্রচন্ড বিতর্কিতও। কারণ সত্য ঘটনা হিসেবে নিজেদেরকে দাবি করলেও বাস্তবতা থেকে এগুলো অনেক বেশি বিচ্যুত।
এগুলোর বাইরেও অনেক সময় ইচ্ছাকৃতভাবেও নির্মাতারা সত্য ঘটনার নাম দিয়ে ইতিহাসকে নিজেদের মতো করে বর্ণনা করেন। বিশেষ করে হলিউডের যুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্রে মার্কিন সেনাদের মানবতা বা শ্রেষ্ঠত্ব দেখানো তো নিয়মিত ঘটনা। তাছাড়া ইতিহাসে সর্বজনগ্রাহ্য সত্য খুঁজে পাওয়াও অনেক সময় কঠিন হয়। একই ঘটনাকে ভিন্ন ভিন্ন লেখক ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে পারেন। একজনের লেখার উপর ভিত্তি করে চলচ্চিত্র নির্মাণ করলে সেটা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে।
যেমন- রুয়ান্ডার গণহত্যা বিষয়ক চলচ্চিত্র হোটেল রুয়ান্ডার Hotel Rwanda (2004) উদাহরণ বিবেচনা করা যেতে পারে। চলচ্চিত্র হিসেবে এটি নিঃসন্দেহে অসাধারণ। রুয়ান্ডার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ভয়াবহতাকে এটি চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। এর চিত্রনাট্যটিও শ্রেষ্ঠ মৌলিক চিত্রনাট্য হিসেবে অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল। কিন্তু পোস্টারে “এ ট্রু স্টোরি” দাবি করলেও পরবর্তীতে অভিযোগ উঠে, চলচ্চিত্রে হোটেলের ম্যানেজার পলকে যেরকম নায়ক হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়েছে, তা পুরোপুরি মিথ্যা। বাস্তবে তিনি নাকি ছিলেন অত্যন্ত সুবিধাবাদী, এমনকি গণহত্যাকারীদেরকে সহায়তাকারী!
বেজড অন অ্যাকচুয়াল ইভেন্টস
বেজড অন ট্রু স্টোরির বাইরে আরেক ধরনের চলচ্চিত্র আছে, যারা নিজেদেরকে দাবি করে “Based on True Events” বা “Based on Actual Events”। শুনতে অনেকটা একই মনে হলেও বাস্তবে বেজড অন ট্রু স্টোরির সাথে এদের কিছুটা পার্থক্য থাকে। ট্রু স্টোরিতে যেখানে মূল গল্পটাকেই সত্য হতে হয় এবং প্রধান প্রধান চরিত্রগুলোকেও বাস্তবের চরিত্র অবলম্বনে নির্মিত হতে হয়, ট্রু ইভেন্টসের ক্ষেত্রে সেটা জরুরী না।
বেজড অন ট্রু ইভেন্টস বলতে বোঝায়, চলচ্চিত্রে প্রদর্শিত ঘটনাগুলো সাধারণভাবে সত্য, কিন্তু ঠিক যাদের গল্প আমাদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে, তাদের হয়তো বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই, বা থাকলেও হয়তো তাদের জীবনে হুবহু এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। অস্ট্রেলিয়ান পরিচালক অ্যান্থনি মারাস পরিচালিত ২০০৮ সালের ভারতের মুম্বাই সিরিজ হামলার ঘটনার উপর নির্মিত Hotel Mumbai (2018) এ ধরনের চলচ্চিত্রের চলচ্চিত্রের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
মুম্বাইর তাজ হোটেলে সন্ত্রাসীদের হামলার যে ঘটনাটির উপর ভিত্তি করে সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে, সেটা বাস্তবে সত্যিই ঘটেছিল। হোটেলে বিদেশী অতিথিদের আটকে পড়ার ঘটনা, স্টাফদের নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও অতিথিদের রক্ষার চেষ্টা করার ঘটনা, সন্ত্রাসীদের ঠান্ডা মাথায় একের পর এক হত্যাকান্ড চালিয়ে যাওয়ার ঘটনা, সবই সত্য। কিন্তু জাহারা, ডেভিডসহ যে প্রধান চরিত্রগুলোকে সিনেমাতে তুলে ধরা হয়েছে, তারা কাল্পনিক। ফলে এটি সত্য ঘটনাবলি অবলম্বনে তৈরি হলেও এর ভেতরের নির্দিষ্ট গল্পগুলো সবগুলো সত্য না।
একইভাবে ক্যাথেরিন বিগলো পরিচালিত ওসামা বিন লাদেনকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে সিআইএর অভিযানের উপর নির্মিত Zero Dark Thirty (2012) সিনেমাটির কথাও বিবেচনা করা যেতে পারে। সিনেমাটি মূলত এই অভিযান সম্পর্কে মার্কিন সরকারি ভাষ্য অনুসরণ করেই নির্মিত হয়েছে। সেই ভাষ্য এবং বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকায় আসা রিপোর্টগুলো বিশ্বাস করলে এখানে দেখানো অধিকাংশ ঘটনাই সত্য। কিন্তু মায়া নামে যে মূল নারী চরিত্রটিকে সিনেমাতে দেখানো হয়েছে, বাস্তবে এই নামে কেউ ছিল না।
নির্মাতাদের দাবি অনুযায়ী, মায়া চরিত্রটি নির্মাণে সিআইএর একজন এজেন্টকে গুরুত্ব দিলেও এটি মূলত দীর্ঘ সময় ধরে সিআইএর বিন লাদেন ইউনিটে কাজ করা একাধিক নারী এজেন্টের চরিত্রের একটি সমন্বিত রূপ। সে হিসেবে জিরো ডার্ক থার্টি সিনেমাটিকে ঠিক বেজড অন ট্রু স্টোরি বলা যায় না, কিন্তু বেজড অন ট্রু ইভেন্টস ঠিকই বলা যায়। সিনেমাটির শুরুতে তাই দাবি করা হয়, এটি হচ্ছে “based on firsthand accounts of actual events”।
ইনস্পায়ার্ড বাই এ ট্রু স্টোরি
যদি কোনো চলচ্চিত্রে দাবি করা হয় এটি “Inspired by a True Story” তথা সত্য ঘটনা দ্বারা অনুপ্রাণিত, তাহলে এটা ধরে নেয়াই সবচেয়ে নিরাপদ যে, মূল ঘটনার সাথে চলচ্চিত্রটির বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। অনুপ্রাণিত কথাটির অর্থ থেকেই এটা পরিষ্কার। সিনেমার কাহিনীকার হয়তো কোনো একটি সত্য ঘটনা দেখে বা শুনে সেটার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সেই প্রেক্ষাপটে সম্পূর্ণ কাল্পনিক একটি কাহিনী তৈরি করে বসতে পারেন এবং সেটাকেই ইনস্পায়ার্ড বাই এ ট্রু স্টোরি দাবি করে বসতে পারেন।
এ ধরনের চলচ্চিত্রের একটি ভালো উদাহরণ হচ্ছে ক্লাসিক হরর চলচ্চিত্র দ্য এক্সরসিস্ট (The Exorcist (1973)। উইলিয়াম ব্ল্যাটি এই সিনেমাটির চিত্রনাট্য রচনা করেছিলেন একই নামের নিজের একটি উপন্যাস থেকে। শুরুতে নির্মাতারা দাবি করেছিল, চলচ্চিত্রটি ইনস্পায়ার্ড বাই এ ট্রু স্টোরি। কিন্তু পরবর্তীতে উইলিয়াম ব্ল্যাটি নিজেই স্বীকার করেন, তিনি শুধু পত্রিকার পাতায় এক ১৪ বছর বয়সী বালকের উপর এক্সরসিজম প্রয়োগ সংক্রান্ত একটা সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট পড়ে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। এর বাইরে পুরো সিনেমার যে জটিল কাহিনী, তার পুরোটাই তার নিজের বানানো।
কাহিনী যতটকুই সত্য হোক না কেন, নির্মাতারা অনেক সময়ই সেটাকে আরো বেশি সত্য হিসেবে দাবি করার চেষ্টা করেন। উদাহরণ হিসেবে এ বছরের বলিউড চলচ্চিত্র Uri: The Surgical Strike (2019) এর কথা উল্লেখ করা যায়। সিনেমাটির পোস্টারে দাবি করা হয়, এটি ‘বেজড অন ট্রু ইভেন্টস’। এ থেকে ধারণা হতে পারে, সিনেমাতে যেভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তানের ভেতরে হেঁটে গিয়ে আক্রমণ করে আবার নিরাপদে ফিরে আসার কাহিনী দেখানো হয়েছে, বাস্তবেও হয়তো সেরকমই ঘটেছিল।
কিন্তু বাস্তবে সিনেমাটির আগে-পরের বেশ কিছু ঘটনা সত্য হলেও মূল যে সার্জিকাল অ্যাটাক অংশের ঘটনা দেখানো হয়েছে, তার পুরোটাই কাল্পনিক। বিবিসির একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, বাস্তবে স্থলভাগ দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তানে আক্রমণ করার কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্লেন থেকেও যে আক্রমণ করা হয়েছিল, তাতেও কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হতাহতের কোনো প্রমাণ বিবিসি পায়নি। সে হিসেবে সিনেমাটি যদি দাবি করত এটি ইনস্পায়ার্ড বাই ট্রু ইভেন্টস, সেটাই বরং অধিক যৌক্তিক হতো।
সব সময় যে এরকম ঘটে, সেটাও না। মাঝে মাঝে বিপরীত ঘটনাও ঘটে। যেমন বিশ্বের অন্যতম সেরা জালিয়াত ফ্র্যাঙ্ক অ্যাবাগনেলের জীবনী নিয়ে স্টিফেন স্পিলবার্গের Catch Me If You Can (2002) চলচ্চিত্রটিকে প্রায় হুবহু সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত বলা যেতে পারে, যেহেতু চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য নির্মিত হয়েছে ফ্র্যাঙ্ক অ্যাবাগনেলের নিজের লেখা একই নামের আত্মজীবনীমূলক বইয়ের উপর ভিত্তি করে। কিন্তু তারপরেও সিনেমাটিতে দাবি করা হয়েছে, এটি ইনস্পায়ার্ড বাই এ ট্রু স্টোরি।
কাহিনীর সত্যতা সম্পর্কে সন্দেহ না থাকলে বা আইনী ঝামেলায় পড়ার আশঙ্কা না থাকলে অবশ্য অধিকাংশ নির্মাতাই সত্য ঘটনা না হলেও সেটাকে সত্য ঘটনা বলে প্রচার করার চেষ্টা করেন। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ সম্ভবত কোয়েন ভ্রাতৃদ্বয় নির্মিত ব্ল্যাক কমেডি চলচ্চিত্র Fargo (1996)। সিনেমার শুরুতে তারা দাবি করেন, এটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত, কিন্তু শেষে আবার উল্লেখ করে দেন, সিনেমাটিতে প্রদর্শিত সকল চরিত্র কাল্পনিক!
এর ব্যাখ্যাও অবশ্য তারাও দিয়েছেন। তাদের মতে, দর্শককে যদি বিশ্বাস করানো যায় যে কাহিনীটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত, তাহলে কাহিনীতে এমন ঘটনাও দেখানো সম্ভব, যা হয়তো কাল্পনিক কাহিনীর ক্ষেত্রে দর্শকরা গ্রহণ করবে না!