শুরু করা যাক কার্ল মার্ক্সের ধারণা থেকে। তিনি বিশ্বাস করতেন, পৃথিবীর ইতিহাসে মানুষ সবসময় জমিদার, রাজা বা একনায়কতান্ত্রিক শাসকের শোষণে আবদ্ধ ছিল এবং সমাজের এই মানুষেরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত এবং অসহায়। তিনি বিশ্বাস করতেন, এখন সময় হয়েছে নির্যাতিত এই জনগণের জেগে ওঠার, এখন বিপ্লবের সময়, এখন সময় পরিবর্তনের। যেভাবে এই দাসত্বের বন্ধন থেকে, এই শোষণের জাল থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব তা হলো বিপ্লব।
‘ইকুইলিব্রিয়াম’ ২০০২ সালে নির্মিত একটি সায়েন্স ফিকশন এবং একইসাথে অ্যাকশনধর্মী সিনেমা, যার পরিচালনায় ছিলেন কার্ট ওয়েমার এবং জনপ্রিয় অভিনেতা ক্রিশ্চিয়ান বেল। মূলত এটি এমন একটি ঘটনার আলোকে বানানো, যেখানে কোনো স্বাধীনতার অধিকার নেই, নেই ব্যক্তির নিজ নিজ অবস্থান থেকে চিন্তা করার অধিকার, এবং যেখানে সরকারের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত মোতাবেক সকলকে চলাফেরা করতে হয়। কঠোর দমন-পীড়নের মাধ্যমে সরকার সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্ক, ভয়ভীতির জন্ম দিয়েছে, যেখানে গণতন্ত্র বলতে কোনোকিছুই নেই, জনগণ যেন চুপ হয়ে থাকে একটি খোলসের মাঝে, যে খোলসকে আবৃত করে রেখেছে সেই সরকার।
গল্পটির এবার প্রতিটি ফ্রেমকে আমরা বন্দী করে আলোচনা করবো, তবে চলচ্চিত্রের শুরু থেকেই পুরো ঘটনার একটি সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এবং সারমর্ম পাবো, অর্থাৎ সিনেমাটির ঘটনার স্থান-কাল-বিষয়বস্তু নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা। ২১ শতকের সময়টি, ২০৭২ সালে দাঁড়িয়ে একটি শহর, যেটি নিয়ন্ত্রণ করছে হিটলারের আদর্শে বিশ্বাসী একটি দল, নাম ‘গ্রামাটন ক্লেরিক’।
হিটলারের আদর্শ সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকা উচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে হিটলারের উত্থানের পর তার চিন্তাধারা এবং মতবাদ ব্যতীত অন্য কোনো ব্যবস্থাপনা বা নীতি তার সামনে টিকে থাকতে পারতো না, যার কারণে তার মাঝে উগ্র জাতীয়তাবাদ নীতির জন্ম নেয়। এই উগ্র জাতীয়তাবাদের ফলে তার দেশে অবস্থিত লক্ষ লক্ষ ইহুদীকে হত্যা করা হয় নির্মমভাবে। তার ‘স্বস্তিকা’ চিহ্ন দিয়ে নাৎসি বাহিনী একপ্রকার হিটলারের পূজা করতো, বিশ্বাস করতো তাদের সাদা চামড়ার উগ্র জাতীয়তাবাদী নীতিকে।
ঠিক এমনই একটি প্রেক্ষাপট ২০৭২ সালে লিব্রিয়া নামক একটি শহরে, যার প্রধান কাউন্সিলের নাম টেট্রাগ্রামাটন, এবং যার প্রধান ছিল গ্রামাটন ক্লেরিক নামক সংগঠনের ভাইস কাউন্সিলর ডুপোর্ট। সিনেমার একেবারে শুরুর অংশ থেকে এই সময়টিকে দাবী করা হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়টি, যেখানে গ্রামাটন ক্লেরিকের সৃষ্টি হয়েছে এই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পেছনের কারণ বের করে তাদের ধ্বংস করে দেবার জন্য। তারা বিশ্বাস করে- এক মানুষের উপর আরেক মানুষের অমানবিক আচরণের পেছনে দায়ী মানুষের আবেগ, আবেগের দক্ষতার কারণে। যার কারণে সেই সর্বগ্রাসী সরকার মনে করে, এই সকল মানুষ, যারা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বেঁচে আছে, সেই মানব সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে হলে তাদের মন-মানসিকতা এবং কাজে-কর্মে সরকারের আনুগত্য-ভয়-আইনের বোঝা দিয়ে ডুবিয়ে রাখতে হবে। তবেই তাদের সবকিছুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে পরিচালনা করা সম্ভব।
এমনকি সরকারের চিন্তাভাবনা অনুযায়ী, সরকারের মত ও প্রচারণায় নিমজ্জিত করে রাখবে সকলকে, যেন কোনো মানুষই সরকারের মতের বিরোধীতা না করে, সমালোচনাও যেন কেউ না করে। নয়তো মানুষ জাতীয়তাবোধে অনুপ্রাণিত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ধ্বংস করে দিতে পারে সরকারের অবস্থান, যেটা গ্রামাটন ক্লেরিকের ভাইস কাউন্সিলর চান না। তারা চায় মানুষ থাকুক তাদের হাতের মুঠোয়, তাদের সরকার আজীবন ক্ষমতার মসনদে উপবিষ্ট থাকুক।
এবার আমরা দেখতে পাবো আরেকটি প্রধান চরিত্রকে, যিনি গ্রামাটন ক্লেরিকের একজন প্রধান এজেন্ট হিসেবে থাকেন, প্রেস্টোন, যিনি সরকারের সরাসরি নির্দেশে কাজ করে থাকেন। যেসব মানুষের হাতে চিত্রশিল্প, রঙিন নানা বিষয়বস্তু থাকে, লিব্রিয়া সরকারবিরোধী চিন্তা ধারণ করে, স্বাধীনতাকামী জনগণ, যারা শিল্পকে হারাতে চায় না বা তাদের বুকে আঁকড়ে ধরে রাখে তাদের সরাসরি হত্যা করা হয়।
চলচ্চিত্রের শুরুতেই দেখা যাবে বিভিন্ন চিত্রশিল্প এবং সাথে বইগুলোকে একদল মানুষ একটি গোপন আস্তানায় রেখে দিয়েছে, যাতে এগুলো কেউ ধ্বংস করতে না পারে। কারণ জ্ঞান ও শিল্পকর্ম সবসময় লিব্রিয়া সরকারের কাছে শত্রু।হঠাৎ সেই বাড়ির সামনে ক্লেরিকের পুলিশ ভাইস কাউন্সিলরের নির্দেশে হানা দেয় এবং সকলকে হত্যা করে। দেখা যাবে, যারা শিল্পকর্মকে বুকে জড়িয়ে বাঁচাতে চাচ্ছে, প্রেস্টোন তাদের সবাইকেই হত্যা করছে। তাদেরকে হত্যা করবার পর সেই শিল্পকর্মগুলোকে পুড়িয়ে দেয়, ধ্বংস করে দেয়, মুছে দেয় সংস্কৃতির চেতনা।
এখানে একটি চমৎকার দর্শন রয়েছে। প্রশ্ন থাকাটা স্বাভাবিক- কেনই বা এই চিত্রগুলোকে পুড়িয়ে ফেলতে হবে? কেন সরকারের নীতির সাথে এসব বিষয়বস্তু বিপরীতমুখী?
রেনেসাঁ যুগে বহু চিত্রশিল্পীর উত্থান ঘটে, যেমন- লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, ভ্যান গগ, মিকেলেঞ্জেলো প্রমুখ। তাদের প্রভাবেই সেই সময় সামন্তবাদ-রাজতন্ত্রের পতন ঘটে। সামন্ত তারাই যারা ভূমির প্রভু হয়ে নিম্নশ্রেণীর মানুষদের শোষণ করতো। সেই শিল্পীরাই তাদের তুলির মাধ্যমে তাদের ছবিতে এঁকেছে জনগণের স্বাধীনতার কথা, গণতন্ত্রের কথা, জনগণের মুক্তির চিত্র। আর্ট কালচারের সবচেয়ে বড় সফলতা হলো এটি কম সময়ে, খুব সহজেই মানুষের আবেগকে নাড়া দিয়ে বসতে পারে। তখনই সেই মানুষের মাঝে একটি নৈতিক চেতনার জন্ম নেয়, বিপ্লবী হয়ে ওঠে সকল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে। শুধু তা-ই নয়, স্থাপত্যকলা, কারু ও চারুশিল্পসহ সকল ধরনের সাংস্কৃতিক বস্তুতে একটি জাতির মুক্তির স্বাদ পাওয়া যায়। সেই আকাঙ্ক্ষা যখন কাজ করে, তখন মানুষ তার অবস্থানকে আরো দৃঢ় করতে পারে, কারণ সেই সকল শিল্পে প্রতিটি স্থানেই মানুষের জীবন ও রক্ত মিশে থাকে।
ঠিক এই ভয়টিই পাওয়া শুরু করে লিব্রিয়ার সরকার। তারা মনে করে, এই আর্ট কালচারের কারণে তাদের মনে সরকার বিরোধী চেতনা জন্ম নেবে। তখন এই শহরকে লিব্রিয়া সরকার চালাতে ব্যর্থ হবে। তাই এই ভয়ের কারণেই তারা জনগণকে সবসময় রঙিনের বিরুদ্ধে সাদা-কালোর জালে জড়িয়ে রাখে। রঙ যেন এখানে ‘চেতনার বহিঃপ্রকাশ’, রঙই যেন লিব্রিয়ার প্রধান প্রতিপক্ষ। আর কালো যেন নেতিবাচকের প্রতীক আকারে দাঁড়িয়েছে।
এখানে এবার আমরা দেখতে পাবো, প্রেস্টোনসহ তার কর্মকর্তাদের অবস্থা, যাদের আবেগ যেন সৃষ্টি না হয় সেজন্য তাদের একধরনের সিরিঞ্জযুক্ত ওষুধ গ্রহণ করতে হয়, যেটি দেওয়া হয় ঘাড়েই। এমনকি যারা গ্রামাটন ক্লেরিকের হয়ে কাজ করে, কিন্তু এই ওষুধ যদি কোনো কারণে না নেয়, তবে তাদেরকে সরকারের কাছে এজন্য জবাব দিতে হয়। তাদের হত্যাও করা হয়। মূলত এই ওষুধটি সবার জন্যই।
একটি পর্যায়ে গিয়ে প্রেস্টোনের মনে আমরা একটি উভয় সংকটের খোঁজ পাবো এই সিনেমায়, যেখানে সে সরকারের অপরাধ বুঝতে পারছে, তবুও এসকল কাজে বাধ্য হয়ে নিজেকে জড়িয়েছে চাপের মুখে পড়ে। অপরদিকে তার আবেগ, স্ত্রীর প্রতি গভীর ভালোবাসাকেও সে দমাতে পারছে না। মাঝে মাঝে সে চিন্তা করে, শাসন বনাম ভালোবাসা, কার পক্ষে অবস্থান নেবে?
একদিন সে হঠাৎ ধ্বংসস্তূপের মাঝে একটি কুকুরের সন্ধান পায়। প্রেস্টোন সব নিয়মের কথা জেনেও সকল কিছু অগ্রাহ্য করে কুকুরটিকে নিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। স্বাভাবিকভাবেই প্রাণীর প্রতি প্রাণীর ভালোবাসার একটি বার্তা আমরা প্রেস্টন ও সেই কুকুরের মাঝে পাই। অর্থাৎ এটি প্রেস্টোনের স্বাভাবিক আবেগের একটি বহিঃপ্রকাশ। প্রচুর বাধা বিপত্তির মধ্যে সে খুব কষ্ট করে এই কুকুরটিকে নিয়ে রাখে।
সিনেমার এ জায়গাতেই বোঝা যায়, আসলে প্রেস্টোন কখনোই চায় না কোনো প্রাণীকে হত্যা করতে। কিন্তু একপর্যায়ে আমরা সেই কুকুরেরই নির্মম একটি হত্যার দৃশ্য দেখতে পাই, যেটি সংঘটিত হয় গ্রামাটন ক্লেরিকের সেনাদের মাধ্যমে, যেটি মানবতার বিরুদ্ধে একটি হিংস্র ধারণার জন্ম দেয়।
ঠিক এই দ্বিতীয় পর্যায়ে আমরা আরেকটি ঘটনার মুখোমুখি হই, দেখতে পাই তার স্ত্রীকে তার সামনে থেকেই গ্রামাটন ক্লেরিকের সৈন্যরা গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এমন কিছু জিনিসপত্র, যা খুব আবেগময় এমন রঙিন দ্রব্যসামগ্রী লুকিয়ে রাখার অভিযোগে তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রেস্টোন একবারের জন্যও তাকে বাঁচাবার সুযোগ পায়নি, কারণ সে ছিল সরকারের অনুগত। এই ঘটনার জন্য আমরা প্রেস্টোনকে বারবার অনুতপ্ত হতে দেখি, তার মানসিক বিপর্যয়ের অবস্থা দেখতে পারি। সে নিজেও চায় না এ ধরনের কঠোর, রক্ষণশীল সমাজে বাস করতে। সে মনে মনে আসলে চায় এমন একটি পৃথিবী, যেখানে সত্যিকারের সুখ বলে কিহু আছে। তার প্রমাণ আমরা পাই যখন সে একপর্যায়ে এ সকল কাজে অস্থিরতা অনুভব করছে, তখন তার ঘরের জানালার কাগজ হাত দিয়ে ছিঁড়ে ছিঁড়ে বাইরে রোদের আলোয় আলোকিত পুরো শহর এবং রঙিন রংধনুকে সে দেখছে দাঁড়িয়ে, এবং মনে হচ্ছে, যেন সে এবার একটু স্বস্তিবোধ করছে এর মাধ্যমেই।
ঠিক আরেকটি দৃশ্যে আমরা নতুন এক মহিলার সন্ধান পাই। লিব্রিয়ার পুলিশের মাধ্যমে গ্রেফতার হওয়া ম্যারির সাথে প্রেস্টোনের একটি সংযোগ এবং আবেগতাড়িত হবার দৃশ্য আমরা দেখতে পাই। ম্যারিকে সরকারবিরোধী কাজের জন্য আগুনে পুড়িয়ে শাস্তি দেবার সাজা প্রদান করা হয়। প্রেস্টোন বারবার নিজেকে সংযত রাখতে গিয়েও আবেগকে ঠেকাতে না পেরে সে দ্রুত সাজা প্রদানের স্থানে দৌড়ে যায় ম্যারিকে বাঁচাবার জন্য। কিন্তু তার আগেই তাকে হত্যা করা হয় আগুনের কূপের মাঝে ফেলে দিয়ে।
এখানে নান্দনিকতার এক বিশেষ চিত্র দেখা যায়। আগুন মূলত এখানে পোড়ানোর উপকরণ হিসেবে কাজ করছে, আবার একইসাথে এই আগুনের দৃশ্য প্রেস্টোন যখন দাঁড়িয়ে দেখে, তখন তার মধ্যে এক বিপ্লবী চেতনা, এক রুদ্ধশ্বাসের জন্ম নেয়। আগুনের মতো দৃঢ় হয়ে ওঠে সে এবার।
প্রেস্টোনের মাঝে এবার ভাইস কাউন্সিলরের এসব কাজের প্রতি একটি চূড়ান্ত বিদ্বেষ কাজ করা শুরু করলো। যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়, তাদেরকে সে এবার নিজের হাতে বাঁচানো শুরু করলো। একটি দৃশ্যে আমরা দেখি, একটি দলের মানুষদের হত্যা করা বদলে তাদেরকে উল্টো সে পালাতে সাহায্য করে, কিন্তু শেষরক্ষা হয় না তাদের। তারা গ্রামাটন ক্লেরিকের সৈন্যের হাতে ধরা পড়ে। তাদেরকে প্রেস্টোনের সামনেই হত্যা করা হয়।
এত অন্যায়-অবিচারের সামনে দাঁড়িয়ে সরকারের অনুগত সৈনিক প্রেস্টোন এবার যেন হঠাৎ বিপ্লবী চেতনায় উজ্জীবিত হওয়া শুরু করে। সে সরকারের বিপক্ষে যেসব মানুষ শিল্প-সংস্কৃতিকে বাঁচাবার জন্য সংগ্রাম করে বেঁচে আছে, যারা মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে মানবতাকে বিশ্বাস করে, ঠিক তাদেরই দলভুক্ত হয়ে যায়। সে এবার হত্যা করা শুরু করে লিব্রিয়ার সৈন্যদেরকে এবং লিব্রিয়ার সরকারপন্থী সকলকেই
ভাইস কাউন্সিলর প্রেস্টোনকে বার বার বলছিলেন, তার ভেতর নাকি আবেগ কাজ করছে। কিন্তু সে প্রতিবারই অস্বীকার করেছে, লুকিয়ে রাখতে চেয়েছে এই আবেগ। কিন্তু এবার সে ভিন্ন পথ অনুসরণ করে। পরনের কালো জামা, যেটা লিব্রিয়ার সর্বগ্রাসীতার রূপকে বয়ে বেড়ায়, তার বিপরীতে সে সাদার আশ্রয় নিলো, যেটি শান্তির প্রতীক, যা ধ্বংস করবে সকল একনায়কতান্ত্রিক মতবাদ, ছিন্ন করে ফেলবে পাশবিক-অমানবিক নির্যাতনের চিহ্ন, প্রতিষ্ঠা করবে শোষণহীন সমাজ।
মূলত প্রেস্টোনের অস্ত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবার নৈতিক দর্শন হলো, “বৈষম্যের চেতনাকে ধ্বংস করতে হলে সেই চেতনাধারীদের মূলসহ সকল শাখা ধ্বংস করতে হবে।” প্রেস্টোন তাই হত্যা করতে যায় সেই সর্বগ্রাসী, নাৎসিবাদে বিশ্বাসী ভাইস কাউন্সিলর ডুপোর্টকে, যেখানে আমরা দেখতে পাই একটি আদর্শের পতন ঘটে তাকে হত্যার সাথে সাথেই।
এই সিনেমায় আমরা ঠিক অক্টোবর বিপ্লবের সেই জারতন্ত্র পতনের সময়কালে এই শোষিত শ্রেণীকে দেখেছি অস্ত্র নিয়ে নিজেদের স্বাধীনতার জন্য তারা জারতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়েছে। ঠিক সেই অবস্থাটি এখানে অনুধাবন করা যাচ্ছে শেষ দৃশ্যে এসেই। সকল নির্যাতিতের হাতে অস্ত্র, যারা ধ্বংস করছে লিব্রিয়ার গ্রামাটন ক্লেরিক গোষ্ঠীকে। প্রতিষ্ঠিত করছে মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস, প্রতিষ্ঠিত করছে স্বাধীনতার সংগ্রাম, যেখানের আরেক লেনিন হলো এই প্রেস্টোন, যার হাতে এক ভয়াল রাজ্যের এভাবেই পতন ঘটে এবং ধ্বংস হয় সমগ্র শহর, যার রন্ধ্রে মিশে আছে একনায়কতান্ত্রিক নীতি, প্রতিষ্ঠিত হয় মানবতার ইতিহাস, প্রতিষ্ঠিত হয় গণতন্ত্র ও ভালোবাসা।