বলা হয়ে থাকে মানুষের জীবন বহু উত্থান-পতন ও বিচিত্র রং-তামাশায় ভরপুর। বিচিত্র এই রং-তামাশা ও উত্থান-পতনকে পাশ কাটিয়ে সামনে এগোতে হলে পাহাড়সম চড়াই-উতরাই পার হতে হয়। জীবনপ্রবাহের সেই চড়াই-উতরাইয়ের খেলাটা ওয়াল্টার হোয়াইট আর জেসি পিংকম্যান সেলুলয়েডের ফিতায় খুব ভালোভাবে প্রদর্শন করেছে। বলছিলাম অন্যতম হায়েস্ট রেটেড টিভি সিরিজ ‘ব্রেকিং ব্যাড’-এর কথা।
২০০৮ সালের ২০ জানুয়ারি AMC-তে পাইলট এপিসোড এয়ার হবার পর থেকে শুরু হয়েছিল এই সিরিজের মসৃণ জয়যাত্রা। তারপর থেকে একে একে সে সাফল্যের পিঠে সাফল্য চাপিয়ে লিখেছে নিজস্ব ইতিহাস, ধরে রেখেছে দর্শকপ্রিয়তা। ১৪ বছরে এসেও এর জনপ্রিয়তায় এতটুকুও ভাটা পড়েনি।
প্রত্যাখ্যান
সমালোচক-দর্শক মহলে তুমুল প্রশংসা কুড়ানো এবং সর্বকালের অন্যতম সেরা টিভি শো’কে কোন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক মানা করে দিতে চাইবে? কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ব্রেকিং ব্যাডের সাথে শুরুতে এমনটিই ঘটেছিল। Showtime, FX, HBO এর মতো নেটওয়ার্কগুলো ব্রেকিং ব্যাডের ক্রিয়েটর ভিন্স গিলিগানকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। FX ব্রেকিং ব্যাডকে ফিরিয়ে দিয়েছিল এই অজুহাতে যে, এর প্লটের সাথে তাদের শো ‘Weeds’ (2005-2012) এর অনেকটাই মিল ছিল। বাকিরাও গ্রিন সিগন্যাল দেয়নি ব্রেকিং ব্যাডকে। এক ইন্টার্ভিউতে ভিন্স গিলিগান বলেছিলেন, ব্রেকিং ব্যাড প্রদর্শনী নিয়ে টিভি নেটওয়ার্কগুলো সাথে আলাপ হলে, সবচেয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি HBO এর সাথে। নানা টিভি নেটওয়ার্কের দ্বারে দ্বারে ঘুরার পর শেষ পর্যন্ত ব্রেকিং ব্যাড ঠাঁই পায় AMC এর নেটওয়ার্কে।
এপিসোড সংখ্যা
পাঁচ সিজনে ব্রেকিং ব্যাড সিরিজের মোট এপিসোড সংখ্যা ৬২। অনেকের কাছে এটা নিছকই একটা সংখ্যা মনে হতে পারে। আদতে এর পেছনেও রয়েছে রহস্য। রাসায়নিক মৌলের আধুনিক পর্যায় সারণিতে ৬২ নম্বর মৌলটি হলো সামারিয়াম, যা ব্যবহার করা হয় ফুসফুসের ক্যান্সার নিরাময়ে। এটি সিরিজের মূল কাহিনী ওয়াল্টার হোয়াইটের ফুসফুস ক্যান্সারকেই নির্দেশ করে।
সিজন ফিনালে
ব্রেকিং ব্যাডের শেষ সিজনের শেষ এপিসোডের নাম রাখা হয়েছিল Felina. এই শব্দটিও এখানে রূপক হিসেবে বহু অর্থ বহন করে। এপিসোডের শুরুতেই ‘Feleena’ নামে একটি গান বাজতে দেখা যায়। ওই গানে এমন এক মানুষের কথা বুঝা যায়, যিনি তার গভীর ভালোবাসার স্বরূপ মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়াও পর্যায় সারণির মৌল Fe (আয়রন), Li (লিথিয়াম), Na (সোডিয়াম) যথাক্রমে রক্ত, মেথ, এবং চোখের অশ্রুর মধ্যে বিদ্যমান। সিরিজে এই তিন জিনিস বারবার ঘুরেফিরে এসেছে। এছাড়াও Felina শব্দটাকে ওলটপালট করে Finale বানানো যায়, যা দ্বারা Season Finale অর্থাৎ ওই সিজনের সর্বশেষ এপিসোডকে বুঝানো হয়েছে। অতি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম জিনিসগুলো অবশ্যই ভিন্স গিলিগানের গভীর জ্ঞানের প্রতিফলন।
ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ এপিসোড?
সিরিজের ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা এপিসোড হিসেবে ধরা হয় ব্রেকিং ব্যাড সিরিজের পঞ্চম সিজনের ১৪ নম্বর এপিসোড Ozymandias-কে। ১০/১০ রেটিং প্রাপ্ত এই এপিসোডে IMDb মোট ভোট সংখ্যা ১২৪৩০০ এর উপরে। কিন্তু এই এপিসোডের নাম Ozymandias দেওয়া হয়েছিল কেন?
Ozymandias মূলত প্রাচীন মিশরের ফারাও ‘রামেসিস দ্য সেকেন্ড’ এর গ্রিক নাম। ১৮১৭ সালে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রামেসিস দ্য সেকেন্ডের ৬০০ বছরের পুরনো এক স্ট্যাচুর ইনক্লুশন উপলক্ষ্যে বিখ্যাত ইংরেজ কবি পার্সি শেলী ‘Ozymandias’ কবিতাটি লিখেন। ‘Ozymandias’ সনেটে এক পথিকের গল্প বলা হয়; যে কিনা ধু ধু মরুভূমির মাঝে মৃতপ্রায় এক নগরীর মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ মাটিতে পতিত ফারাওয়ের এক বিশালাকার ভাঙা মূর্তির দেখা পায়। যেটার পাদদেশে খোদাই করা ছিল-
“My name is Ozymandias, king of kings: Look on my works, ye Mighty, and despair!”
আর সেই ভাঙা মূর্তির চারপাশ যেন ফারাওয়ের সেই গৌরবাচ্ছন্ন সময়কালের অন্তিম মুহূর্ত নির্দেশ করে। ব্রেকিং ব্যাডের Ozymandias এপিসোডে দেখা যায়, ফারাওয়ের মূর্তির মতন হাইজেনবার্গের বিশাল মাদক সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছে। হ্যাংকের মৃত্যু দেখার পর ওয়াল্টার হোয়াইটের প্রতিক্রিয়া যেন ফারাওয়ের সেই ভাঙা মূর্তিরই প্রতিফলন। এরকম সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বর্ণনা এবং মেটাফোরের ব্যবহারই সর্বকালের সেরা সিরিজ হিসেবে ব্রেকিং ব্যাডের অবস্থানকে আরও বেশি পোক্ত করেছে।
বিকল্প চিন্তাধারা
ব্রেকিং ব্যাডের লিড রোল অর্থাৎ ওয়াল্টার হোয়াইট/হাইজেনবার্গের চরিত্রে ব্রায়ান ক্র্যানস্টন ছাড়া অন্য কারও মুখ মানস-পটে ভাসানোও দায়। কিন্তু লিড রোলে AMC প্রথমে ম্যাথিউ ব্রডেরিক বা জন কুসাক-কে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করেছিল। ‘X files’ সিরিজের এক এপিসোডে ভিন্স গিলিগান ব্রায়ান ক্র্যানস্টনের সাথে কাজ করেছিলেন। ওইখান থেকে তিনি মনে মনে ওয়াল্টার হোয়াইট চরিত্রের জন্য ব্রায়ানকে নির্বাচনের মাধ্যমে, ওই অনুযায়ী ক্যারেক্টার ডেভেলপ করেন। এতে সঙ্গ দিয়েছিলেন খোদ ব্রায়ানও। নিজ চরিত্রের জন্য ব্যাক স্টোরি ডেভেলপের পাশাপাশি কস্টিউম ডিজাইনারের সাথে মিলে তিনি এই ক্যারেক্টারের অবয়বও ডিজাইন করেছিলেন। জেসি পিংকম্যান রোলের জন্য অ্যারন পলকে খানিকটা বয়স্ক মনে হচ্ছিল। কিন্তু পলের অডিশন টেপ দেখার পর গিলিগান আর গড়িমসি করলেন না। অ্যারন পলকে জেসি পিংকম্যানের চরিত্রে বেছে নিলেন।
শুরুতে সিরিজে গাস ফ্রিংয়ের স্ক্রিনিং টাইম নেহাতই অল্প থাকায় জিয়ানকার্লো এসপোসিতো এই চরিত্রে অভিনয় করার জন্য ইচ্ছুক ছিলেন না। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি তার ম্যানেজার ও স্ত্রীর অনুরোধে তা করতে রাজি হন। এই দুইজনই ছিলেন ব্রেকিং ব্যাড সিরিজের সাচ্চা ভক্ত। সেজন্য এসপাসিতো গিলিগানকে তার চরিত্রটা আরও ডেভেলপ করার কথা বললে, গিলিগান তাকে তৃতীয় সিজনে আরও সাত এপিসোডের অফার দেন। ফলে গাস ফ্রিং চরিত্রটা একটা ব্রেকিং ব্যাডের এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হতে পেরেছিল। এসপাসিতো তার ঠাণ্ডা মেজাজের অভিনয়-শৈলী দিয়ে গুরু-গম্ভীর খোলসে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন।
রাইটার্স স্ট্রাইক
মনে প্রশ্ন জাগতে পারে প্রথম সিজনে শুধু সাতটা এপিসোড কেন? কারণ হলো, ২০০৭-০৮ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে রাইটার্স স্ট্রাইক চলছিল। প্রথমত, ফার্স্ট সিজনের জন্য মোট নয়টি এপিসোড ফাইনাল করা হয়েছিল। যা দ্বিতীয় সিজনের শেষে দেখানোর কথা ছিল, তা দ্রুতই প্রথম সিজনের নয় এপিসোডে দেখানোর চিন্তাভাবনা ছিল। কিন্তু রাইটার্স স্ট্রাইকের কারণে গিলিগান এই সিরিজ নিয়ে আরও ভাবার সময় পেলেন। বলা যায়, রাইটার্স স্ট্রাইকই এই সিরিজকে অনন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিল। কারণ, তিন সিজনের কাহিনী এক সিজনে দেখিয়ে ফেললে তাড়াহুড়োর মাধ্যমে জগাখিচুড়ি পাকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। প্রত্যেকটা চরিত্রকে খোসা ছাড়িয়ে ছাড়িয়ে সময় নিয়ে ডেভেলপ করা সম্ভব ছিল না। এমনকি যে জেসি পিংকম্যান চরিত্র ছিল পুরো সিরিজকে টেনে নেবার অন্যতম নিয়ামক, সে পিংকম্যানেরও প্রথম সিজনে মারা যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুরুতেই দর্শক অ্যারন পলের দুর্দান্ত অভিনয় সাদরে গ্রহণ করলে, গল্পে পরিবর্তন এনে তাকে ব্রেকিং ব্যাডের অন্যতম প্রধান চরিত্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়। এমনকি ব্রেকিং ব্যাড সিরিজের সিকুয়েল হিসেবে তিনি El Camino নামে এক মুভিতেও অভিনয় করেছেন।
সেরেব্রাল পালসি
ব্রেকিং ব্যাডের ‘ব্রেকফাস্ট’ ও ‘ছিঁচকাঁদুনে মিম’ দিয়ে ইন্টারনেট দুনিয়ায় খ্যাতি পেয়েছিল ওয়াল্টার হোয়াইট জুনিয়র/ফ্লিন। সিরিজে চরিত্রটা খোঁড়া ছিল বলে, সে ক্র্যাচে ভর দিয়ে চলাচল করত। তবে ফ্লিন চরিত্রে অভিনয় করা আরজে মিট্টে বাস্তব জীবনেও সেরেব্রাল পালসি রোগে আক্রান্ত। এই রোগের কারণে মানুষের পেশি ব্যবহারে সমস্যা হয়। তবে সে ক্যারেক্টারের মতো হাঁটাচলায় এতোটা অক্ষম নয়, চলাচলের জন্য ক্র্যাচের দরকার হয় না। ব্রেকিং ব্যাড টিম এমন কাউকে ফ্লিন চরিত্রের জন্য খুঁজছিল, যার বাস্তবে সেরেব্রাল পালসি আছে। ব্রেকিং ব্যাডের পর তিনি আরও কিছু মুভিতে অভিনয় করেছেন।
টুরিস্ট স্পট
প্রথমে ব্রেকিং ব্যাড শুট করার কথা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতে। কিন্তু ট্যাক্স ফ্রি করে দেওয়ার কারণে, পুরো শুটিং স্পট নিউ ম্যাক্সিকোর আলবাকার্কি সিটিতে শিফট করা হয়েছিল। এতে লাভ শুধু প্রোডাকশন হাউজেরই নয়, পুরো আলবাকার্কি শহরেরই হয়েছিল। রাতারাতি সেটা বদলে যায় টুরিস্ট স্পটে। অর্থনৈতিক পরিবর্তনও আসে। অনেক দোকানি ব্রেকিং ব্যাডের আদলে সাজাতে থাকে তাদের হোটেল, দোকান, রেস্তোরাঁ।
অ্যারন পলের বিপর্যয়
দ্বিতীয় সিজনে গ্যাংস্টার তুকু সালামাঙ্কা জেসি আর ওয়াল্টারকে এক সুনসান জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে জেসির সাথে তুকুর মারামারির একটা দৃশ্য ছিল। দৃশ্যটা ছিল এ রকম- তুকু জেসিকে ধরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে, এবং জেসি দরজায় লেগে আঘাত পাবে। কিন্তু এর মধ্যে ঘটে যায় এক বিপর্যয়। জেসির রোল প্লে করা অ্যারন পলের শরীরে দুর্ঘটনাবশত ছোট ছোট কাঠের স্প্রিন্টার ঢুকে যায়। ওই দৃশ্যে সিরিজের খাতিরে নয়, অ্যারন বাস্তবেই তুকু চরিত্রে অভিনয় করা রেইমন্ড ক্রাজকে থামার কথা বলেছিল। কিন্তু প্রোডাকশন হাউজের কলাকুশলীরা ভেবেছিল সেটা অভিনয়। আহত হয়ে অ্যারনকে হাসপাতালে পর্যন্ত ভর্তি করতে হয়।
বিজ্ঞান অনুসরণ
ব্রেকিং ব্যাড সিরিজে DEA (Drug Enforcement Administration) সবসময় দৌড়ের উপর রাখত ওয়াল্টার হোয়াইটকে। সিরিজে মেথ নামক মাদকের আবহ বজায় রাখার উদ্দেশ্যে বাস্তবে ডিইএ ব্রায়ান ও পলকে মেথ বানানো শিখিয়েছিল। মেথকে স্বচ্ছ স্ফটিকের আকার দেওয়ার জন্যও জন্যও ডিএইএর অফিশিয়াল কেমিস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয়, সিরিজের বিজ্ঞান ধারার যাতে নয়-ছয় না হয়, সেজন্য সবসময় সাথে থাকতেন University of Oklahoma’র কেমিস্ট্রি প্রফেসর ডক্টর ডনা নেলসন। তবে এখানে সবকিছুই দেখানো হয়েছিল উল্টোভাবে। যাতে সিরিজ অনুকরণ করে কেউ মেথ ল্যাব খুলে না বসতে পারে।
প্রথম সিজনে ওয়াল্ট এবং জেসিকে বাথটাবে হাইড্রোফ্লোরিক এসিড দিয়ে একটা লাশ দ্রবীভূত করতে দেখা যায়। Mythbusters নামে এক সিরিজে ২০১৩ সালে সেই পরীক্ষাটি চালানো হয় শুয়োরের মাংসের উপর। হাইড্রোফ্লোরিক অ্যাসিড টিস্যু ভাঙতে সাহায্য করলেও এপিসোডে যেভাবে দেখানো হয়েছে সেভাবে পুরো শরীর এভাবে গলিয়ে দিতে পারে না। বাস্তবে মেথ সবসময় সাদা হয়, নীলচে রঙয়ের নয়। সিরিজে নীলচে রঙয়ের যে মেথ দেখানো হয়েছে, তা মূলত সুগার রক ক্যান্ডি। এগুলো বানানো হয়েছিল, অ্যালবাকার্কির ‘The Candy Lady’ নামক বুটিক ক্যান্ডি স্টোরে। বলা-বাহুল্য এই নীল মেথের কারণে উনার ক্যান্ডির জনপ্রিয়তা হয়েছে আকাশচুম্বী।
ছদ্মনামের আড়ালে
সিরিজে ওয়াল্টার হোয়াইটের ছদ্মনাম ‘হাইজেনবার্গ’ রাখা হয়েছিল জার্মান তাত্ত্বিক পদার্থবিদ ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ এর নামানুসারে। তিনি কোয়ান্টাম বলবিদ্যার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানী। পদার্থবিজ্ঞানে তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি নাৎসি জার্মান পারমাণবিক অস্ত্র প্রকল্পের প্রধান বিজ্ঞানী ছিলেন। বাংলাদেশে ‘হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার নীতি’ উচ্চমাধ্যমিকের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে পড়ানো হয়।
বাস্তবের ওয়াল্টার হোয়াইট
এই সিরিজ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক মানুষ নিজের ঘরে মেথ বানানো শুরু করে। অবাক করা বিষয় হলো, এর মধ্যে শিক্ষকের সংখ্যাই বেশি। যেমন, টেক্সাসের রসায়ন শিক্ষক উইলিয়াম ডানকান, যিনি নিজের ঘরেই মেথ বানিয়ে বাচ্চাদের দিয়ে বেচতেন। ৭৪ বছর বয়সী কলেজ প্রফেসর ইরিনা ক্রিস্টি, নিজের ২৯ বছরের ছেলেকে নিয়ে মেথ বিক্রির সময় ধরা পড়েন। নর্থ ক্যারোলিনার এক সহকারী শিক্ষকও ছিলেন এই দোষে দুষ্ট। বোস্টনের এক শিক্ষক, যার স্টেজ থ্রি ক্যান্সার ছিল, তাকে মেথ বিক্রির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ব্রেকিং ব্যাডের অনুপ্রেরণার কথা বলেন।
সম্পৃক্ততা
ব্রেকিং ব্যাডের স্পিন অফ সিরিজ ‘Better Call Saul’ সিরিজ প্রেমীদের নিকট তুমুল জনপ্রিয় এক নাম, যা মূলত ব্রেকিং ব্যাডের ছয় বছর আগের কাহিনী নিয়ে সাজানো। ২০১৩ সালে AMC তে Talking Bad নামে এক টিভি শো লঞ্চ করা হয়েছিল, যেখানে ব্রেকিং ব্যাডের কুশীলবরা পর্দার পেছনের বিভিন্ন কাহিনী আলোচনা করতেন। ব্রেকিং ব্যাড সিরিজের স্প্যানিশ সংস্করণ ‘Metastasis’ ২০১৩ তে ছাড়া হয়েছিল।
গাস ফ্রিং খ্যাত জিয়ানকার্লো এসপাসিতোর সঞ্চালনায় ২০২০ সালে ‘The Broken and the Bad’ নামে একটি মিনি ডকুমেন্টারি সিরিজ রিলিজ করা হয়েছিল, যেটাতে বাস্তব জগতের মাদক কারবারির তথ্য উপস্থাপন করা হতো। ব্রেকিং ব্যাড সিরিজের পরের কাহিনী নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘El Camino: A Breaking Bad Movie’। যা ২০১৯ সালে নেটফ্লিক্সে রিলিজ দেওয়া হয়।
মার্ভেল অ্যাভেঞ্জারসের ক্রসওভার
নিউ ম্যাক্সিকোতে অ্যাভেঞ্জারস ফিল্মের শুটিংয়ের সময় নিক ফিউরি খ্যাত স্যামুয়েল এল. জ্যাকসনের ইচ্ছা ছিল ব্রেকিং ব্যাড সিরিজে একটা ক্যামিও দেওয়ার। দৃশ্যটা হবে এমন, তিনি নিক ফিউরির বেশে ‘লস পলোস হারমানোস’ এ ঢুকবেন, খাবার অর্ডার করবেন, তারপর চলে যাবেন। কিন্তু সিরিজের প্রযোজক সেই প্রস্তাবে কোনো সাড়া দেননি।
মাছি বিভ্রাট
মশা মারতে কামান দাগা বলে বাংলায় প্রবাদ থাকলেও, শুধুমাত্র একটা মাছি মারা নিয়েও যে সিরিজের আস্ত একটা এপিসোড তৈরি করে ফেলা যায়, সেটা ব্রেকিং ব্যাড দেখিয়ে দিয়েছে। রায়ান জনসনের পরিচালনায় ওই এপিসোডে দেখা যায়, ওয়াল্ট আর জেসি ল্যাবে একটা মাছি মারতেই মারতেই পুরো এপিসোড শেষ হয়ে গিয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, মাছি মারা দিয়ে এই এপিসোড শেষ করার কারণ ছিল বাজেটগত সমস্যা। কম অভিনেতা, কম লোকেশন ব্যবহারের মাধ্যমে ওই এপিসোডের খরচ কমিয়ে আনা হয়েছিল।
ইস্টার ইগ
১। ব্রেকিং ব্যাড সিরিজে অসংখ্য মুভি রেফারেন্স ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ভিন্স গিলিগান বিভিন্ন কালজয়ী মুভির বিভিন্ন দৃশ্য অনুকরণ করে ব্রেকিং ব্যাডে তা জুড়ে দিয়েছেন। যেমন, ‘Reservoir Dogs’, ‘The Godfather’, ‘Pulp fiction’ ইত্যাদি।
২। ইংরেজি সংখ্যা 8 বা ♾ চিহ্নটা বহুবার দেখানো হয়েছে ব্রেকিং ব্যাড সিরিজে।
৩। পাইলট এপিসোডে উড়ে যাওয়া প্যান্টকে জরাজীর্ণ অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল পঞ্চম সিজনের চৌদ্দ নম্বর এপিসোডে।
৪। Ozymandias এপিসোডেই ওয়াল্টার বুঝতে পারেন আশেপাশের সকল সুযোগ হারিয়ে তিনি কোণঠাসা হয়ে কতটা অরক্ষিত হয়ে পড়েছেন। তখন স্ক্রিনে একটি দাবার বোর্ড দেখা যায়, যেখানে রাজা শক্তিশালী সৈন্যসামন্ত ছাড়া কোণঠাসা হয়ে অরক্ষিত হয়ে পড়েছেন। এখানে রাজার ঘুটির সাথে ওয়াল্টার নিজেকে তুলনা করেছেন, যিনি কাছের লোকজন ছাড়া কতটা অসহায় ও অরক্ষিত।
সিরিজের জগতে উচ্চ স্থানে আসীন হওয়া ব্রেকিং ব্যাড তার প্লট, এন্ডিং, সিনেমাটোগ্রাফি, চরিত্র নির্মাণ, মেটাফোর, ডিটেলিং সবমিলিয়ে নিখুঁত এক কাল্ট ক্লাসিকের নাম। একইসাথে কোনো সিরিজের সব দিক নিখুঁত হয় না। কিন্তু এর ক্ষেত্রে সবকিছুর একেবারে অনুপম মিশ্রণ ঘটেছে।