এইচবিও-র House of the Dragon সিরিজে আমরা দেখছি টারগেরিয়্যান হাউজের কুখ্যাত গৃহযুদ্ধ ড্যান্স অব ড্র্যাগন্সের শুরুর দিকের ঘটনা। এর মধ্যে চলুন জেনে আসি টারগেরিয়্যানদের মধ্যেই ঘটে যাওয়া আরেকটি গৃহযুদ্ধের কাহিনী, যার নাম ‘ব্ল্যাকফায়ার রেবেলিয়ন’!
বি.দ্র.: সাল লেখার সময়ে AC ব্যবহার করা হয়েছে, যার মানে ‘After Conquest’
ঘটনার শুরু এগন নামের এক রাজার মৃত্যুর দিন থেকে, এগন দ্য ফোর্থ। বর্তমানে ‘House of the Dragon’ সিরিজে আমরা যে সময়ের কাহিনী দেখছি, তার প্রায় ৫০ বছর পরের কাহিনী এটা। ইতোমধ্যে ড্যান্স অব ড্র্যাগন্সের ফলে বিলুপ্ত হয়ে গেছে টারগেরিয়্যানদের ড্র্যাগন। ড্র্যাগনের আগুনের ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের পরে অযোগ্য এক রাজার ভুলে আবার তুলকালাম লাগবে হাউজ টারগেরিয়্যানে, এবার যুদ্ধ ঢাল-তলোয়ার আর রাজনীতিতে!
এগন দ্য ফোর্থের কুখ্যাতি ছিল তার অসংখ্য অবৈধ সন্তানের জন্য। নিজের উত্তরাধিকার, আইনগত সন্তান প্রিন্স ডেইরনের চেয়ে তার অবৈধ সন্তানরাই অগ্রাধিকার পেত এগনের কাছে, উল্লেখযোগ্যভাবে ডেইমন ওয়াটার্স এবং এগর রিভার্স। এমনকি ১৮২ AC এর এক টুর্নিতে ডেইমন ওয়াটার্সকে এগন নাইটহুডের সাথে ‘ব্ল্যাকফায়ার’ তলোয়ার উপহার দেয়। ‘ব্ল্যাকফায়ার’ ছিল এগন দ্য কনকারারের তলোয়ার, যে তলোয়ার হাতে তিনি ওয়েস্টরসের সাত রাজ্য জয় করেন। টারগেরিয়্যান হাউজের প্রথানুযায়ী, আয়রন থ্রোনের উত্তরাধিকারকেই এই তলোয়ার সম্প্রদান করা হয়। তলোয়ার পেয়ে ডেইমন নিজের শেষ নাম ওয়াটার্স থেকে ‘ব্ল্যাকফায়ার’-এ বদলে দেয়। ডেইমন ওয়াটার্স পরিণত হয় ডেইমন ব্ল্যাকফায়ারে! এখান থেকেই এগনের কোর্ট দুই দলে ভাগ হওয়া শুরু করে- একদল প্রিন্স ডেইরনের সমর্থক, আরেকদল ডেইমনের।
উত্তরাধিকার নিয়ে কোর্টের কানাঘুষা চরম রূপ ধারণ করে যখন এগন মৃত্যুশয্যায় তার সকল অবৈধ সন্তান বা বাস্টার্ডদের বৈধ ঘোষণা করে। সেভেন কিংডমসের নিয়মানুযায়ী- শুধুমাত্র রাজার বৈধ সন্তানরাই আয়রন থ্রোনের দাবীদার হতে পারবে। অবৈধ সন্তানদের রাজা নিজের খুশিমতো যা ইচ্ছা দিতে পারলেও সিংহাসন একমাত্র বৈধ সন্তানদেরই প্রাপ্য। এগন দ্য ফোর্থের এই সিদ্ধান্তই পরিণত হবে রক্তক্ষয়ী একাধিক গৃহযুদ্ধে, যার ব্যাপ্তিকাল হবে প্রায় ৮০ বছর! টারগেরিয়্যান হাউজের জন্য সর্বনাশা এই সিদ্ধান্তের কারণে এই রাজাকে ভূষিত করা হয় ‘এগন দ্য আনওর্দি’ নামে।
এগন দ্য ফোর্থের মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসে তার বড় ছেলে ডেইরন দ্য সেকেন্ড টারগেরিয়্যান। ডেইরন শাসনকালের শুরুর দিকে বেশ ঠান্ডা মাথার এবং বুদ্ধির পরিচয় দেন। কোনোরকম সংঘর্ষ এড়াতে নতুন বৈধ করা ‘গ্রেট বাস্টার্ড’দের কাছাকাছি রাখা শুরু করেন, এগনের দুর্নীতির কারণে যা ক্ষতি হয়েছে সেসবের মীমাংসার ব্যবস্থা করেন, সক্ষম ও অভিজ্ঞ লোকদের পরামর্শকে গুরুত্ব দেন, এবং ডর্নের সাথেও সম্পর্কের প্রবল উন্নতি করেন। ডেইরন যখন রাজ্য চালনায় ব্যস্ত, তখন ডেইমন ব্যস্ত যোদ্ধায় পরিণত হতে এবং সন্তান বৃদ্ধিতে। দিনে দিনে ডেইমন ব্ল্যাকফায়ার পরিণত হন অতি দক্ষ এবং বিশিষ্ট একজন যোদ্ধায়। রূপালি চুল আর বেগুনি চোখের কারণে অনেকেই ডেইমনের মধ্যে এগন দ্য কনকারারের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায়।
এই শান্তির শাসন বেশিদিন টেকেনি। ডেইরন সিংহাসন পাওয়ার দশ বছরের মধ্যেই ডেইমন নিজেকে রাজা ঘোষণা করে, এবং ১৯৬ AC-তে শুরু হয় প্রথম ব্ল্যাকফায়ার বিদ্রোহ। এগন দ্য ফোর্থের আরেক বাস্টার্ড, ব্র্যান্ডন ‘ব্লাডরেইভেন’ রিভার্সের মাধ্যমে ডেইরন জানতে পারে ডেইমনের পরিকল্পনা। ডেইমনকে আটক করতে কিংসগার্ডদের পাঠানো হলেও পালিয়ে যায় ডেইমন। যুদ্ধের ঘোষণা হিসেবে ডেইমন প্রতিষ্ঠা করে হাউজ ব্ল্যাকফায়ার, যার প্রতীক হিসেবে সে বেছে নেয় লাল মাঠের উপরে এক কালো ড্র্যাগন (টারগেরিয়্যান হাউজের বিপরীত)। এখান থেকে ডেইমনের ডাকনাম হয় ‘দ্য ব্ল্যাক ড্র্যাগন’। সেভেন কিংডমসের অর্ধেক হাউজ ডেইমনের পক্ষে ব্যানার ওড়ায়, আর হাউজ হাইটাওয়ার, বাটারওয়েল, ওকহার্ট এবং টারবেক দুজনকেই সমর্থন করে।
প্রথম ব্ল্যাকফায়ার বিদ্রোহে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছিল সাত রাজ্যের প্রায় সবখানেই, তবে দ্য ভেইল, ওয়েস্টারল্যান্ডস, রিভারল্যান্ডস এবং রিচ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়। এই যুদ্ধের সবচেয়ে স্মরণীয় অধ্যায় ছিল যুদ্ধের শেষ সংঘর্ষ, ‘দ্য ব্যাটল অভ দ্য রেডগ্র্যাস ফিল্ড’। টারগেরিয়্যান এবং ব্ল্যাকফায়ার বাহিনীর সম্মুখযুদ্ধ ছিল, যেখানে ব্ল্যাকফায়ারদের মূল সৈন্যরা ঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারেনি যুদ্ধক্ষেত্রে। তা সত্ত্বেও ডেইমন ব্ল্যাকফায়ার নিজেই টারগেরিয়্যান বাহিনীর লাইন ভেঙে দেন। তাকে থামাতে মুখোমুখি হন ডেইরনের কিংসগার্ডের লর্ড কম্যান্ডার, স্যার গোয়েইন কোরব্রে। স্যার গোয়েইন আর ডেইমন প্রায় এক ঘন্টা ধরে লড়েন, যেখানে ডেইমনের হাতে ছিল ব্ল্যাকফায়ার আর স্যার গোয়েইনের হাতে ভ্যালিরিয়ান স্টিলের তলোয়ার ‘লেডি ফরলোর্ন’। এই এক ঘন্টার লড়াইয়ের একপর্যায়ে ডেইমন জয়ী হয়। কিন্তু ততক্ষণে ডেইরনের সমর্থক, ব্র্যান্ডন রিভার্স তার তীরন্দাজ দল ‘দ্য রেইভেন’স টীথ’ নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে অনবরত তীর মারা শুরু করে। এই তীরের আঘাতে মারা যায় ডেইমন আর তার দুই ছেলে।
ডেইমনের ছেলেদের মৃত্যুর পর ডেইমনের বাহিনী ছত্রভঙ্গ হওয়া শুরু করলে ‘ব্ল্যাকফায়ার’ তলোয়ার তুলে নেয় এগনের আরেক বাস্টার্ড এইগর রিভার্স। তলোয়ার নিয়ে এইগর ডেইমনের বাহিনীকে পুনরায় একত্র করে ব্র্যান্ডন রিভার্সের তীরন্দাজ দল ‘রেইভেন’স টীথে’র বিপক্ষে পাল্টা হামলা শুরু করে। এইগর ‘বিটারস্টিল’ রিভার্স আর ব্র্যান্ডন ‘ব্লাডরেইভেন’ রিভার্সের কিংবদন্তীতুল্য এক দ্বন্দ্বের শুরু এই যুদ্ধক্ষেত্র থেকেই। সামনাসামনি সংঘর্ষে এইগর ব্র্যান্ডনের এক চোখ তুলে নেয়। তবে ঠিক তখনই ডেইরনের বড় ছেলে প্রিন্স বেইলর যুদ্ধে যোগদান করে একঝাঁক ডর্নিশ এবং স্টর্মল্যান্ডার সৈন্যবাহিনী নিয়ে, অন্যদিকে ডেইরনের আরেক ছেলে প্রিন্স মেইকার টারগেরিয়্যান বাহিনীর অবশিষ্ট সৈন্য দিয়ে শিল্ড ওয়াল বা ঢাল দিয়ে এক প্রাচীর তৈরি করে। এই ওয়ালের মধ্যে প্রিন্স বেইলর ব্ল্যাকফায়ার বাহিনীকে চূর্ণ করে দেয়, দুই ভাইয়ের এই চাল পরে ইতিহাসে পরিচিত হবে ‘দ্য হ্যামার এন্ড দ্য এনভিল’ হিসেবে। রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধে নিহত হয় প্রায় দশ হাজার মানুষ।
প্রথম ব্ল্যাকফায়ার বিদ্রোহের সমাপ্তি ঘটে ডেইমন দ্য ব্ল্যাক ড্র্যাগনের সমর্থকদের পরাজয়, এবং শাস্তিপ্রাপ্তির মধ্য দিয়ে। তবে এখানেই এই বিদ্রোহের প্রকৃত সমাপ্তি ঘটে না, বরঞ্চ এটা ছিল টারগেরিয়্যান আর ব্ল্যাকফায়ারদের মধ্যকার সংঘর্ষের সূত্রপাত। আসছে আরো ৬৫ বছর ধরে চলবে এই সংঘর্ষ, রূপ নেবে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ব্ল্যাকফায়ার রেবেলিয়ন এবং অবশেষে সমাপ্তি পাবে ওয়ার অভ দ্য নাইনপেনি কিংস-এর মধ্য দিয়ে। তবে সেই গল্প থাক আরেকদিনের জন্য!