Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ফ্রেন্ডস বনাম সাইনফেল্ড: সেরার দৌড়ে এগিয়ে কোনটি?

আজ থেকে চৌদ্দ বছর আগে ম্যানহাটনের এক কফিহাউজের আড্ডা শেষ হয়ে গিয়েছিল। ছয় বন্ধুর একসাথে পথ চলা, হাসি-কান্না আর খুনসুটির টানা হয় ইতি। বলা হচ্ছে ‘ফ্রেন্ডস’ টিভি সিরিজটি কথা। পুরো পৃথিবীতেই এত বছর পরেও অসম্ভব জনপ্রিয় সিটকম এই ফ্রেন্ডস।

অনেকেই সিটকম বলতে প্রথমে ফ্রেন্ডসের কথাই মাথায় আনেন, সর্বকালের সেরা কমেডি সিরিজ হিসেবেও এগিয়ে রাখেন। জোয়ি, রস, ফিবি, মনিকা, র‍্যাচেল আর চ্যান্ডলার- চরিত্রগুলোর সাথে মিশে যান দশটি সিজন দেখতে দেখতে। পলাতক বধূবেশী র‍্যাচেলের সেন্ট্রাল পার্কে ঢোকা থেকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শেষ করা প্রতিটি দর্শকের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়ায় F.R.I.E.N.D.S.

তবে অনেকেই জানেন না, কিংবা জেনে থাকলেও দেখেননি আরেকটি সিরিজ যেটি কিনা ফ্রেন্ডসের সমসাময়িক এবং সেরার দৌড়ে ফ্রেন্ডসের প্রতিদ্বন্দ্বী। সেটি হলো ‘সাইনফেল্ড’। এখানে দুটি সিটকমের ভালো-মন্দ নানা দিক নিয়ে আলোচনা করা হবে।

Source: The Fandomentals

ফ্রেন্ডস সম্পর্কে মোটামুটি টিভি সিরিজপ্রেমী সকলেই জানেন, হোক নতুন কিংবা পুরাতন দর্শক। কিন্তু ঘটনাক্রমে সাইনফেল্ড বেশি জনপ্রিয় হয়নি বাংলাভাষীদের মাঝে। আর তাই কখনো কাউকে সাইনফেল্ড দেখতে পরামর্শ দিলে প্রবল সম্ভাবনা আছে যে তিনি আকাশ থেকে পড়বেন, কারণ এ নামের সাথে তিনি পরিচিত না।

Source: getwallpapers.com

ফ্রেন্ডস যেমন ছয় বন্ধুর দৈনন্দিন জীবন নিয়ে, তেমনই সাইনফেল্ডও বন্ধুত্ব নিয়েই। তবে সেখানে বন্ধুসংখ্যা ছয় নয়, চার জন। ফ্রেন্ডসের মতো এখানেও তারা বাস করে নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে। ফ্রেন্ডসের মতো, এমনটা বলা উচিত হবে না, বরং বলা উচিৎ সাইনফেল্ড সিরিজের মতোই ফ্রেন্ডসেও চরিত্রগুলো ম্যানহাটনে বসবাস করে। কারণ ফ্রেন্ডস শুরু হয় সাইনফেল্ডের শুরুর পাঁচ বছর পর। তাই ততদিনে মার্কিন দর্শকবৃন্দ অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল নিউ ইয়র্কবাসী ব্যাচেলর বন্ধু বান্ধবদের অর্থহীন কর্মকাণ্ড দেখে হাসাহাসিতে।

সাইনফেল্ড সিরিজের চার বন্ধু; Source: Quora

সাইনফেল্ডের চার চরিত্র হলো- ধনী কমেডিয়ান জেরি সাইনফেল্ড, তার প্রাক্তন প্রেমিকা এবং এখন ‘জাস্ট ফ্রেন্ড’ ইলেইন বেনেজ, তাদের টাক মাথার দুদিন পরপর চাকরি হারানো বন্ধু জর্জ কস্টানজা আর জেরির পাশের ফ্ল্যাটের আধপাগলা লম্বু মানুষ ক্রেমার। যার পদবী নামটা গোড়ার দিকে সে গোপন রাখে কোনো এক কারণে (বিগ ব্যাং থিওরির পেনির মতোই অনেকটা, পার্থক্য হলো পেনির পদবীর কথা কখনোই আসেনি)।

মজার ব্যাপার, জেরি সাইনফেল্ড নামের চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন তার বাস্তব নামও জেরি সাইনফেল্ড, আসলেই তিনি একজন কমেডিয়ান। কমেডি সেন্ট্রালের তালিকায় তিনি সর্বকালের সেরা কমেডিয়ানদের মাঝে দ্বাদশ স্থানে আছেন। তিনি আসলে তার নিজের জীবনেরই একটি কল্পিত রূপে অভিনয় করে দেখাতে চেয়েছিলেন, এবং এতে তিনি পুরোপুরি সফল হন। 

ফ্রেন্ডসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চরিত্রগুলোর প্রেম-ভালোবাসার পরিণতি দেখানো হয়েছে, এটাই ছিল সিরিজটির মূল গল্প- আর ফাঁকে ফাঁকে দৈনন্দিন কার্যকলাপে হাসির ফুলঝুরি তো আছেই। কিন্তু, এনবিসি সাইনফেল্ড সিরিজটি নির্মাণ করেছিল কোনো মূল গল্প ছাড়াই, সত্যি বলতে নয়টি সিজন শেষে সাইনফেল্ডের প্রথম পর্বের সাথে শেষ পর্বের চরিত্রগুলোর কোনোই পার্থক্য নেই, যেন নয় বছরে তাদের অগ্রগতি একদম স্থবির। বার বার সিরিজে ইঙ্গিত করে বলা হয়, এ শো’টা আসলে About nothing!

ফ্রেন্ডসে হয়তো র‍্যাচেল কেন রসের সাথে ঝগড়া করছে এটা বুঝতে হলে আগের কোনো না কোনো পর্বের কাহিনী আপনাকে জানতে হবে। কিন্তু সাইনফেল্ডে এমনটি হবে না। তাদের ঝগড়াগুলো একদমই বন্ধুর সাথে বন্ধুর স্বাভাবিক ঝগড়া, তবে অস্বাভাবিক সব পাগলাটে বিষয় নিয়ে। সেখানেও হয়তো জেরির সাথে তার প্রাক্তন ইলেইন তর্ক করছে, কিন্তু কখনোই তাদের নিজেদের অতীতের প্রেম করাকালীন সময়ের কথা টেনে আনবে না।

আজব কর্মকাণ্ডে সাইনফেল্ড; Source: getwallpapers.com

ফ্রেন্ডসের পর্বগুলো এমনভাবে লেখা যে দর্শক আবেগে বাধা পড়ে যাবে শো’টির সাথে, চরিত্রগুলোর শেষমেশ হলোটা কী, সেটা জানতে আপনি শেষ পর্ব পর্যন্ত দেখে ফেলবেন। কিন্তু সাইনফেল্ড কখনোই চেষ্টা করেনি দর্শককে আবেগে বাধবার। ফ্রেন্ডসে নব্বইয়ের দশকের সারটুকু ওতোপ্রোতভাবে দেখিয়েছে, কিন্তু সাইনফেল্ডের একেকটি পর্বের একেক চরিত্রের হাস্যরসাত্মক ঝামেলাগুলো এই একবিংশ শতকেও বুঝে উঠবার মতো- এখনো কেউ না কেউ নাক খোঁটায়, কেউ মেয়ে পটায়, কেউ অফিস ফাঁকি দেয়।

ফ্রেন্ডস যেখানে চরিত্রগুলোর আবেগকে জোর দিয়েছে, সেখানে সাইনফেল্ড দেখিয়েছে প্রত্যেক মানুষের প্রতিদিনকার সমস্যাগুলো; সত্যি বলতে, প্রতি পর্বের শুরুতেই কমেডিয়ান জেরি সাইনফেল্ড স্ট্যান্ড-আপ কমেডি করতে করতে সেগুলো নিয়ে প্রথমে কথা বলেন, এরপর সে সম্পর্কে একটি পর্ব দেখানো হয়। মোদ্দা কথা, ফ্রেন্ডস যেখানে কেবল ছয় জনের কাহিনী, সাইনফেল্ড সেখানে চারজনের কাহিনী না, বরং যে কারো কাহিনী।

সাইনফেল্ডের কফিশপ আড্ডা; Source: Digital Spy

এক কথায় বলতে গেলে, সাইনফেল্ড পুরোই স্বার্থপর একটি টিভি সিরিজ। ফ্রেন্ডস হয়তো মানুষকে আশার আলো দেখাতে পারে, এক বন্ধু আরেক বন্ধুর জন্য কী না করতে পারে! কিন্তু বাস্তব জীবনে মানুষ অনেকটাই স্বার্থপর, হয়তো ফ্রেন্ডসে যেমনটা দেখানো হয়েছে, এতটা বন্ধু বলতে পাগল নয়। দশটি বছর জুড়ে ছয়জন বন্ধু প্রতিদিন নিয়ম করে আড্ডা দেবে, এমনটা বাস্তবে না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

ফ্রেন্ডসে আপনি হয়তো আগে থেকেই আন্দাজ করে ফেলতে পারেন র‍্যাচেল কখন প্লেনে না উঠে দৌড়ে চলে আসবে রসের কাছে, কিন্তু কেন আসবে? কারণ বাস্তব জীবনে সবসময় এটা হবেই, নাকি কেবল আপনাকে অর্থাৎ দর্শককে একটি আনন্দ আর তৃপ্তির অনুভূতি দিতে? হলফ করে বলা যায়, সাইনফেল্ড শো হলে, র‍্যাচেল কোনোদিনই প্লেন ছেড়ে চলে আসতো না। এখানে নিয়ম করে তারা আড্ডা দেবে না, এমনকি একজন যদি কয়েক সপ্তাহের জন্য ইউরোপ ভ্রমণেও চলে যায়, তবুও আরেকজন টের পায় না। কাউকে হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে দেখলে যে পৈশাচিক আনন্দ পেতে পারে কেউ, সেই আনন্দটাকেও তুলে আনতে ভোলেনি সাইনফেল্ড, ইংরেজিতে যাকে আমরা বলে থাকি ‘স্যাভেজ’।

প্রচণ্ড স্বার্থপর চরিত্রগুলো ছিনতাই হতে দেখে পাশে দাঁড়িয়ে ভিডিও করে আর হাসে, পঙ্গু মহিলার হুইলচেয়ার নষ্ট করে দিয়েও আনন্দ পায়, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে দুঃখবোধ রাখে না, অন্যজনকে বিপদে ফেলে আরেকজন মজা নিয়ে থাকে। ফ্রেন্ডস যদি হয় জীবনের কেবল ভালো দিকগুলো নিয়ে, সাইনফেল্ড সেখানে জীবনের পুরো বাস্তবিক দিকগুলো নিয়ে- যেখানে একটা মানুষের ভালো খারাপ উভয় দিকই আছে। জেরি সাইনফেল্ড একবার বলেছিলেন, “ফ্রেন্ডস আসলে সাইনফেল্ডই, কেবল নায়ক-নায়িকাগুলো দেখতে একটু বেশি সুন্দর আরকি।” 

১৯৯৬ সালে জেরি সাইনফেল্ড; Source: Wikimedia Commons

সাইনফেল্ডের শেষদিকে সবে ইন্টারনেট যুগ আসা শুরু করেছে, কিন্তু ফ্রেন্ডসে ল্যাপটপ কম্পিউটার আর ইন্টারনেটের কথা ভালোই আছে। ফ্রেন্ডস আর সাইনফেল্ডের তুলনায় সবচেয়ে বেশি বলা কথাটি হলো, ফ্রেন্ডস যদি ইউটোপিয়া হয়, তবে সাইনফেল্ড হলো বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি। ফ্রেন্ডস যখন-তখন যেকোনো পর্ব ছেড়ে দেখতে পারেন আপনি, কিন্তু সাইনফেল্ড দেখে অভ্যস্ত হবার জিনিস, কারো অভ্যস্ত হতে কয়েক পর্ব লাগতে পারে, কারো আবার পুরো এক দুই সিজন।

পরিসংখ্যানগত দিক দিয়ে ফ্রেন্ডস কিছু দিকে এগিয়ে, আর কিছু দিকে সাইনফেল্ড। যেমন ধরুন, যেদিন সাইনফেল্ডের শেষ পর্ব প্রচারিত হয়, তখন ৭৬.৩ মিলিয়ন মানুষ দেখেছিল, আর ফ্রেন্ডসের শেষ পর্বের দিন দেখেছিল ৫২.৫ মিলিয়ন মানুষ। আবার রেটিং এর দিক থেকে আবার ফ্রেন্ডস এগিয়ে কিছুটা। ওদিকে গোল্ডেন গ্লোব আর এমি-তে পুরস্কারের দৌড়ে দুটোতেই এগিয়ে সাইনফেল্ড।

অভিনয়ের কথা যদি বলতে হয়, তবে সাইনফেল্ডে মাঝে মাঝে কেউ কেউ অতি-অভিনয় করে ফেলেন, যেমন ভীপ (Veep) সিরিজে চমৎকার অভিনয় করা জুলিয়া সাইনফেল্ড সিরিজের ইলেইন হিসেবে যথার্থ, কিন্তু তাও মাঝে মাঝে অতিরিক্ত ন্যাকামি চলে আসে। ক্রেমার আর জর্জ চমৎকার, কিন্তু জেরি তার স্বভাবজনিত কমেডিয়ান ব্যাপারটি ঝেড়ে ফেলতে পারেননি। অনেক সময় নিজের জোকে নিজেই যেন হাসি আটকে রাখতে পারছেন না।

একদিন ঘুম থেকে উঠে আপনি জানবেন এদের একজন মারা গেছেন, কেমন অনুভব হবে তখন আপনার, ভেবে দেখেছেন কখনো? সাইনফেল্ডের চরিত্র কেউ মারা গেলে কি তেমনটিই লাগবে? Image Source: Wallpaper Cave

তবে ফ্রেন্ডসের অভিনেতা অভিনেত্রী নিয়ে কোনো প্রশ্ন হবে না। একদম অসাধারণ ছিল তাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অভিনয়। জ্যানিসের হাসি কিংবা ‘ও-মাই-গড’, জোয়ির ‘হাও ইউ ডোয়িং’ আর বোকাসোকা কথাবার্তা, মনিকার শুচিবায়ু, চ্যান্ডলারের সারকাজম, রসের আঁতলামি, ফিবির ফিবি-ফিবি ভাব আর র‍্যাচেলের আগ্রাসী মনোভাব- সবই যেন তাদের চরিত্রের সাথে মিশে গেছে একেবারে। স্মেলি ক্যাটের মতো অশ্রাব্য গানও যখন আপনি গুণগুণ করেন, রেস্টুরেন্টের টেবিলে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই না দেয়া বন্ধুটি যখন আপনাকে জোয়ির কথা মনে করিয়ে দেয়- তখন বুঝতে হবে ফ্রেন্ডস আসলে বেশি সার্থক।

জোয়িদের জন্য মন খারাপ হতে পারে আপনার, ফ্রেন্ডস দেখা শেষ হলে মনে হতে পারে জীবন থেকে কী যেন হারিয়ে গেল, আবার এবং আবার আপনি দেখতে থাকবেন পর্বগুলো। কিন্তু সাইনফেল্ড শেষ হয়ে গেলেও তাদের জন্য আপনার মায়া লাগবে না, বরং আবিষ্কার করবেন বাস্তব পৃথিবীর নিষ্ঠুর হৃদয় নিয়ে আপনি সাইনফেল্ডের মাঝের একটি পর্ব আবার একদিন খুলে বসে দেখছেন আর ভাবছেন, আরে এ তো আমার সাথেও হলো সেদিন। 

নিজ নিজ ক্ষেত্রে দুটোই অসাধারণ সিটকম কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু কফিহাউজের আড্ডাটা শেষ হয়ে যাবার পরেও যখন এতগুলো বছর পর জোয়ি চ্যান্ডলারদের জন্য মন কাঁদে, গান্থারের কী হয়েছিল জানতে মন চায়, কিংবা একটি বার সেন্ট্রাল পার্কে কফি খেতে খেতে জোয়ির মুখে শুনতে ইচ্ছে হয় “How you doin’?” তখন আসলেই সেরার দৌড়ে ফ্রেন্ডসকেই যেন এগিয়ে রাখতে হয়। আর যা-ই হোক, কে না চায় বন্ধুদের সাথে শহুরে উদ্দাম এমন একটা জীবন, আর আপনার বিনা সাবটাইটেলের জীবনের সাথে অশ্রুত গলায় কেউ যেন গাইছে-

I’ll be there for you.
I’ll be there for you..
I’ll be there for you…

ইচ্ছে হয় এখানে বসে একবার আড্ডা দিতে? Source: hookedonhouses.net

ফিচার ইমেজ- HuffPost

Related Articles