Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গেম অফ থ্রোনস: ভ্যালেরিয়ান স্টিলের একাল সেকাল


ভ্যালেরিয়ান স্টিল। এইচবিও নির্মিত ৮ মৌসুমের ‘গেম অফ থ্রোনস’ টিভি সিরিজে এই নামটি শোনা যেতো প্রায় প্রত্যেক এপিসোডেই। জর্জ আর আর মার্টিনের মূল বইগুলো বা সিরিজ, যেকোনো একটির সাথে পরিচয় থাকলেই ভ্যালেরিয়ান স্টিলের মাহাত্ম্য জানা উচিত।

এ লেখায় হোয়াইট ওয়াকার এবং ওয়েস্ট্রোসের নাম প্রায়ই পাওয়া যাবে। তাই পূর্বপরিচয় থাকা ভালো। হোয়াইট ওয়াকার হচ্ছে গেম অফ থ্রোনসের গল্পে অন্যতম পৌরাণিক চরিত্র, যাদের বসবাস ওয়েস্ট্রোসের উত্তরের গভীরে। এরা জীবন্ত মানবজাতির জন্য হুমকিস্বরূপ। এবং ওয়েস্ট্রোস হচ্ছে একটি মহাদেশের নাম; ন্যারো সী নামক এক নদী ইসোস মহাদেশ থেকে এই মহাদেশকে বিভক্ত করে রেখেছে। গেম অফ থ্রোনসের অধিকাংশ গল্প বর্ণিত হয়েছে এই ওয়েস্ট্রোস মহাদেশকে ঘিরেই।

ছবিতে একদম নিচের দিকে ওয়েস্ট্রোস এবং এসোস মহাদেশ, মাঝখানে সুবিশাল ন্যারো সী; Image Credit: ISAAC MCKILLEN-GODFRIED

ভ্যালেরিয়ান স্টিল থেকে নির্মিত হাতিয়ার হোয়াইট ওয়াকার মারার অন্যতম অস্ত্র। তবে এই ধাতব পদার্থ থেকে বানানো অস্ত্রের স্বল্পতা ছিল। ওয়েস্ট্রোসের বিখ্যাত পরিবারের কাছে অল্পসংখ্যক অস্ত্র থাকলেও পূর্বে ঘটে যাওয়া যুদ্ধ বা কালের ইতিহাসে অনেক অস্ত্র হারিয়েও গেছে। কিন্তু এরপর স্বল্পতা থাকার পরও কেন স্টার্ক, টারগেরিয়ান বা ল্যানিস্টারদের মতো ক্ষমতাধর বংশ নতুন করে এই অস্ত্র তৈরি করতে পারেনি? কারণ, ভ্যালেরিয়ান স্টিলের সাথে ওয়েস্ট্রোসের কোনো সম্পর্ক নেই।

রবার্ট ব্যারাথিওনের শাসনের অনেক পূর্বের কথা। এসোস মহাদেশের একটি বিশাল অংশজুড়ে তখন রাজত্ব করত ভ্যালেরিয়া নামক সভ্যতা। জাদুবিদ্য, সংস্কৃতি, আবিষ্কারবিদ্যায় তারা ছিল পৃথিবীর শ্রেষ্ট। তাদের সব থেকে বড় শক্তি ছিল ড্রাগন। কারণ, তাদেরই ড্রাগনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারার ক্ষমতা ছিল। ড্রাগন বা ড্রাগনফায়ারের সহায়তায় আর নিজস্ব কোনো জাদুবিদ্যার ফলে এই ভ্যালেরিয়ানরা তৈরি করেছিল অন্যতম দামি পদার্থ ভ্যালেরিয়ান স্টিল।

কিন্তু ‘ডুম অফ ভ্যালেরিয়া’র পর পুরো ভ্যালেরিয়ান সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেলে, হারিয়ে যায় ভ্যালেরিয়ান স্টিল তৈরির গোপন প্রণালী। তখন হাজারের বেশি ভ্যালেরিয়ার স্টিলের তৈরি অস্ত্র ছিল। তবে ওয়েস্টোসের নামকরা কিছু বংশের কাছে ছিল মাত্র ২২৭টি অস্ত্র। তাও অধিকাংশ হারিয়ে যায় কালের গর্ভে। গেম অফ থ্রোনসের মূল কাহিনী শুরুর পর তাই অল্প কিছু ভ্যালেরিয়ান স্টিল দিয়ে নির্মাণ করা অস্ত্রের দেখা মেলে।

ভ্যালেরিয়ান স্টিল হাতে জেমি ল্যানিস্টার; Image Credit: 2009 – 2020 quickreaver

ভ্যালেরিয়ান সভ্যতার কথাই যখন উঠল, ডুম অফ ভ্যালেরিয়া নিয়ে কিছু বলা যাক।

এই শক্তিশালী সভ্যতার উপর একদিন এক রকম কেয়ামত নেমে আসে। এই ধ্বংসের সাথে পম্পেই নগর ধ্বংস হয়ে বিলুপ্ত হবার গল্পের সাথে দারুণ মিল পাওয়া যায়। যাই হোক, ভ্যালেরিয়ায় পাহাড়গুলো ভেঙে জ্বলন্ত লাভা নেমে আসে ভ্যালেরিয়ানদের উপর। নদী এবং হ্রদের পানি পর্যন্ত ফুটতে থাকে। পুরো সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যায় চোখের নিমিষেই। কোনো মানুষ রক্ষা পাওয়া তো দূরের কথা, ড্রাগনও রক্ষা পায়নি। এই ধ্বংসলীলাকে বলা হয় ‘ডুম অফ ভ্যালেরিয়া’।

ভ্যালেরিয়ায় একজন ড্রাগনলর্ড ছিলেন এইনার টারগেরিয়ান। তিনি আন্দাজ করতে পেরেছিলেন এই ধ্বংসের আগামবাণী। তাই তিনি আগেভাগেই ভ্যালেরিয়া ত্যাগ করেন। তার পরিবার, সম্পত্তি ও ড্রাগন নিয়ে ভ্যালেরিয়ার পশ্চিম দিকে ড্রাগনস্টোন নামে এক দ্বীপে স্থানান্তরিত হন। ফলে ভ্যালেরিয়া ধ্বংস হলেও এই টারগেরিয়ান বংশ টিকে থাকে। পরে এইনার টারগেরিয়ানের বংশধর এগন টারগেরিয়ান সেভেন কিংডম দখল করেন। ব্যারাথিওনদের ক্ষমতা হাতে আসার পূর্বে বেশ অনেকটা সময় ধরেই চলে টারগেরিয়ানদের রাজত্ব।

ডুম অফ ভ্যালেরিয়া; Image Credit: Histories & Lore

যা-ই হোক, ভ্যালেরিয়ান স্টিল প্রসঙ্গে আসা যাক।

মূল বইয়ে অনেকগুলো অস্ত্রের নাম উল্লেখ থাকলেও সিরিজে সে তুলনায় বেশ কম ভ্যালেরিয়ান স্টিলের তৈরি অস্ত্রের কথা বলা হয়েছে। সব থেকে উল্লেখযোগ্য ও বিখ্যাত হাতিয়ার হচ্ছে ‘আইস’, যা ছিল স্টার্ক পরিবারের সম্পত্তি। সর্বশেষ এর মালিক ছিলেন এডার্ড স্টার্ক। স্টার্ক বংশের এ তরবারি দিয়ে ইলিন পেইন এডার্ড স্টার্কের শিরচ্ছেদ করেন। তার মৃত্যু এবং স্টার্ক পরিবারকে হারানোর পর এই তরবারি চলে যায় ল্যানিস্টার পরিবারের হাতে। পরবর্তীতে টাইউইন ল্যানিস্টার এটিকে গলিয়ে নতুন দু’টি তরবারি তৈরি করেন। প্রথমটি ‘ওর্থকিপার’, যার সরাসরি মালিক ছিলেন জেইমি ল্যানিস্টার। পরবর্তীতে তিনি তা ব্রিয়েন অব টার্থকে উপহার দেন। দ্বিতীয়টি, ‘উইডোস ওয়েল’, যেটির মালিক ছিলেন জফ্রি ল্যানিস্টার। পরবর্তীতে তার মৃত্যুর পর হাত বদল হয়ে সেটি পৌঁছায় সার্সেই ল্যানিস্টারের দখলে।

আইস সোর্ড হাতে এডার্ড স্টার্ক; Image Credit: Wallpapers Cave

টার্লি পরিবারের পারিবারিক সম্পত্তি ছিল ‘হার্টসবেইন’ নামক তরবারি। কিন্তু স্যামুয়েল টার্লি যখন ওল্ডটাউন ত্যাগ করেন, তখন তিনি এটি তার সাথে নিয়ে যান। পরবর্তীতে সিরিজে দেখানো হয়, ব্যাটেল অব উইন্টারফেল এপিসোডে স্যামুয়েল জোরাহ মরমন্টকে তা দিয়ে দিচ্ছেন।

‘লংক্ল’ ছিল মরমন্ট পরিবারের সম্পত্তি। কিন্তু জিওর মরমন্ট তা উপহার দেন নেড স্টার্কের পালকপুত্র জন স্নোকে। যদিও সিরিজের গল্প অনুযায়ী, জোরাহ মরমন্টের সাথে জন স্নো’র দেখা হলে, তিনি তাদের পারিবারিক সম্পত্তি ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তবে জোরাহ মরমন্ট লংক্ল ফেরত নিতে রাজি হননি।

নামহীন একটি কুখ্যাত ছুরিও আছে গেম অফ থ্রোনসের গল্পে। এর আসল মালিক কে, তা নিয়ে বেশ ধোঁয়াশা আছে। তবে গল্পের প্রথমে ব্রান স্টার্ককে খুন করার জন্য যে খুনী পাঠানো হয়, তার কাছে এই ভ্যালেরিয়ান স্টিল দিয়ে তৈরিকৃত ছুরির হদিস মেলে। এর মালিক পিটার বেইলিশ হলেও সে পরে দাবি করে, কোনো এক বাজিতে সে এটি টিরিয়ন ল্যানিস্টারের কাছে হেরেছেন। এরপর, এই ছুরি দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে যায়। তবে সিরিজে শেষ পর্বগুলোয় এ ছুরি ফেরত আসে। এবং কাহিনীর সমাপ্তি টানতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

সিরিজে আরিয়া স্টার্কের হাতে সেই ছুরি; Image Credit: HBO

আরও তিনটি অস্ত্রের কথা উল্লেখ আছে। তবে তা নিয়ে বিস্তারিত গল্প বলা নেই। সেগুলো হচ্ছে, করব্রে পরিবারের ‘লেডি কুইন’, ড্রম পরিবারের ‘রেড রেইন’, হাইটাওয়ার পরিবারের ‘ভিজিল্যান্স’। যদিও ‘ভিজিল্যান্স’ কোনো কারণ ছাড়াই অরমুন্ড হাইওয়াটারের মৃত্যুর পর হারিয়ে যায়।

এবার ইতিহাসের সাথে হারিয়ে যাওয়া কিছু ভ্যালেরিয়ান স্টিল নির্মিত অস্ত্রের কথা শোনা যাক।

‘ব্ল্যাকফায়ার’ ছিল এইগন টারগেরিয়ানের তরবারি। এরপর, চতুর্থ এইগন বাদে বাকি সব টারগেরিয়ানই এই তরবারি ব্যবহার করেছেন। কিন্তু চতুর্থ এইগন এই তরবারি দিয়ে দেন তার জারজ সন্তান ডেমনকে। ডেমন ব্ল্যাকফ্রে হাতে পেয়ে ব্ল্যাকফায়ার নামক নতুন বংশের পত্তন ঘটান, এবং আয়রন থ্রোন জয় করতে টারগেরিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। শুরু হয় প্রথম ব্ল্যাকফায়ার বিদ্রোহ।

বিপরীতে, আরেক টারগেরিয়ান ভিসেনিয়ার সম্পত্তি ছিল ‘ডার্ক সিস্টার’। কিন্তু ব্ল্যাকফায়ার বিদ্রোহের সময় ডেমন ব্ল্যাকফায়ার ও ভিসেনিয়া টারগেরিয়ান উভয়ই তাদের তরবারি হারিয়ে ফেলেন। ‘ব্রাইটরোর’ নামে একটি তরবারি ছিল ল্যানিস্টার পরিবারের দখলে। এক সময় এই অস্ত্রের মালিক হন দ্বিতীয় টমেন ল্যানিস্টার। কিন্তু ভ্যালেরিয়া অভিযানে নিখোঁজ হন ‘লায়ন কিং’-খ্যাত দ্বিতীয় টমেন, তার সাথে হারিয়ে যায় ব্রাইটরোর। দুষ্প্রাপ্য ভ্যালেরিয়ান স্টিলে নির্মিত এই তিন তরবারি আর কখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ব্ল্যাকফায়ার; Image Credit:  worldanvil

‘ল্যামেন্টেশন’ নামক ভ্যালেরিয়ান স্টিলের তরবারির উল্লেখ ছিল রয়েস পরিবারের ইতিহাসে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্যার উইলিয়াম রয়েসের দখলে ছিল ল্যামেন্টেশন। কিন্তু ‘স্ট্রোমিং অফ দ্য ড্রাগনপিট’-এ উইলিয়াম রয়েস মৃত্যুবরণ করলে সেখানে হারিয়ে যায় রয়েস পরিবারের বিখ্যাত এই তরবারি।

গেম অফ থ্রোন্সে বর্ণিত ভ্যালেরিয়ান স্টিল ও অস্ত্রের গল্প মোটামুটি এখানেই শেষ। কিন্তু এই ভ্যালেরিয়ান স্টিল কেবলই কি লেখকের মস্তিষ্কপ্রসূত কল্পনা?

লেখক জর্জ আর আর মার্টিন এই ভ্যালেরিয়ান স্টিলের ধারণা পেয়েছিলেন সত্য ইতিহাসের সহায়তায়। ভারতীয় উপমহাদেশ ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু অঞ্চলে একসময় ‘দামাস্কাস স্টিল’ নামক পদার্থে তৈরি অস্ত্র পাওয়া যেত। তীক্ষ্মতা, হালকা ওজন আর মসৃণতার জন্য ডেমাস্কাস স্টিল দারুণ জনপ্রিয় ছিল। ১৮ শতকের দিকে এই অস্ত্র তৈরি করার মূল ফর্মূলা হারিয়ে যায়। পরবর্তীতে অনেক চেষ্টা করেও এই পদার্থ তৈরি করা সম্ভব হয়নি।

ডেমাস্কাস স্টিল ড্যাগার; Image Credit: Perkin

কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া ডেমাস্কাস স্টিলকেই লেখক জর্জ আর আর মার্টিন ফিরিয়ে এনেছেন তার লেখায়, অন্য নামে, অন্য মহিমায়। তাই ইতিহাসের পাতায় থেকেও দামাস্কাস স্টিল কল্পকাহিনীপ্রেমী পাঠক ও দর্শকদের কাছে টিকে আছে ভিন্ন নামে।

Related Articles