গেম অফ থ্রোনস: রবার্টের রাজবিদ্রোহ (শেষ পর্ব)

রবার্টের হাতে রেয়গারের মৃত্যুই ট্রাইডেন্টের ভয়াল যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করল। নেতৃত্বহীন অবশিষ্ট বাহিনী কিংস ল্যান্ডিং ফিরে যেতে বাধ্য হলো। রেয়গারের মৃত্যু সংবাদ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল পুরো ওয়েস্টেরসে। অবশেষে নির্বাক দর্শক হিসেবে বসে থাকা টাইউইন ল্যানিস্টার ও হাউজ গ্রেজয় নড়েচড়ে বসতে শুরু করলেন।

এ যুদ্ধে আসা কিংসগার্ড সদস্য জোনাথন ড্যারি ও লেউইন মার্টেল যুদ্ধের মাঝে মারা গেছেন। তলোয়ার ও তীরের আঘাতে জর্জরিত, স্যার ব্যারিস্টান সেলমি তখনও বেঁচে ছিলেন। রুজ বোল্টন তাকে মেরেই ফেলত, যদি না রবার্ট ব্যারাথিওন তাকে সম্মানের সাথে বাঁচাতেন। তার ব্যক্তিগত মেইস্টারের কাছে আঘাতের চিকিৎসা করানোর পরামর্শ তিনি দেন।

রবার্টের বিদ্রোহী বাহিনীর একাংশ ; Image Source: HBO

যুদ্ধ শেষ হবার পর লর্ড ওয়াল্ডার ফ্রে তার বাহিনী নিয়ে ট্রাইডেন্টে হাজির হন। যুদ্ধের ময়দানে দেরি করে আসায় লর্ড ফ্রে হাসির পাত্রে পরিণত হন। হোস্টার টালি তার নাম দেন ‘দ্য লেইট লর্ড ফ্রে’। যুদ্ধের পর রবার্টের বাহিনীর কিংস ল্যান্ডিং পর্যন্ত যেতে কোনো বাধা ছিল না। কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে রবার্টকে মারাত্মক জখম করেছে রেয়গার। তার চিকিৎসার প্রয়োজন। তাই রবার্টের যুদ্ধ নিজের কাঁধে তুলে নেন এডার্ড। তার বাহিনী নিয়ে রওনা হলেন কিংস ল্যান্ডিংয়ের পথে।

রেড কিপ

ট্রাইডেন্টে রেয়গারের মারা যাবার খবর শুনে ডর্ন থেকে ডোরান মার্টেল লোক পাঠালেন রেয়গারের স্ত্রী ও সন্তানদের ডর্নে নিরাপদে রাখার জন্য। কিন্তু অ্যারিস নিজের অন্তঃস্বত্বা স্ত্রী রায়েলা ও সন্তান ভিসেরিসকে ড্রাগনস্টোনে পাঠিয়ে দিলেও রেয়গারের স্ত্রী ও সন্তানদের বন্দী করে রাখল মেয়গরের দূর্গে। জেইমিকেও অ্যারিস ট্রাইডেন্টে যেতে দেয়নি, সিংহাসন কক্ষে নিজস্ব পাহারার দায়িত্ব দিয়ে তাকে এক প্রকার আটকে রেখেছিল অ্যারিস।

জেইমি ল্যানিস্টার ; Image Credit : Fantasy Flight Games

লর্ড টাইউইন ল্যানিস্টার এবার মাঠে নামলেন। ওয়েস্টারল্যান্ডের সকল ব্যানারম্যানকে জড়ো করে রওনা দিলেন কিংস ল্যান্ডিং। আয়রন আইল্যান্ডের লর্ড কোয়েলান গ্রেজয় এই সুযোগে আক্রমণ করল রিচ রাজ্যের উত্তর অঞ্চল, যেখানে রিচ রাজ্যের লর্ড মেইস টাইরেল স্টোর্মস এন্ড ঘেরাও করে রেখেছেন।

গণহত্যা

এডার্ড স্টার্ক কিংস ল্যান্ডিংয়ে আসার পূর্বেই সেখানে হাজির হলেন টাইউইন ল্যানিস্টার। শহরে প্রবেশ করার প্রধান গেট বন্ধ, পুরো শহরে গিজগিজ করছে টারগেরিয়ান সৈন্যতে। টাইউইন তার বিশাল সৈন্যদল নিয়ে গেটের বাইরে নামলেন। বাইরে থেকে রাজার কাছে খবর গেল, টাইউইন সাহায্য করতে এসেছেন। তিনি রাজার পুরনো বন্ধু। ওয়েস্টারল্যান্ডের সকল শক্তি সাথে নিয়ে বন্ধুকে সাহায্য করতে হাজির তিনি। বিদ্রোহীরা এলে টাইউইন নিজেই তাদের মুখোমুখি হবেন, অ্যারিস যেন গেটের ফটক খুলে দেয়।

পাইসেল, ভ্যারিসের সাথে আতঙ্কিত ‘ম্যাড কিং’ অ্যারিস ; Image Source: HBO

অ্যারিস তখন আতঙ্কিত, তার ভয় কাটছেই না। পাশ থেকে গ্রান্ড মেইস্টার পাইসেল ফিসফিস করে বলল,

“টাইউইন আপনার পুরনো বন্ধু ও সেবক। সে আগেও আপনাকে সাহায্য করেছে। এবারও করবে। ফটক খুলে দিন।”

অন্য পাশ থেকে ভ্যারিসও মাথা নেড়ে সায় দিলেন। অ্যারিস আদেশ দিলেন ফটক খুলে দেবার।

স্যাক অব কিংস ল্যান্ডিং ; Image Source: HBO

এরপর স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যা শুরু হলো। নগরের পথে পথে প্রত্যেক টারগেরিয়ান সৈন্যকে হত্যা করল ল্যানিস্টার সৈন্যরা। পুরো কিংস ল্যান্ডিং চোখের পলকে তছনছ হয়ে গেল। চারিদিকে রক্ত, মৃতদেহ আর কান্নার শব্দ। টাইউইন অ্যারিসের সাথে দেখা করার জন্য রেড কিপের পথ ধরলেন। তার সাথে থাকা স্যার গ্রেগর ক্লেগ্যান ও আমোরি লর্চ ঢুকে পড়লেন মেয়গর দূর্গে। অনেক বছর আগে টারগেরিয়ান গৃহযুদ্ধের সময় এই দূর্গে বন্দী ছিলেন রাজবধূ হেলেনা টারগেরিয়ান। আজ এখানে বন্দী এক রাজপুত্রের স্ত্রী ও তার সন্তানরা।

রেয়গারের মেয়ে রেনিসকে আমোরি লর্চ কুপিয়ে হত্যা করলেন। কয়েক মাস বয়সী এগনকে গ্রেগর ক্লেগেইন দেয়ালে পিষে মারলেন। আর ক্রন্দনরত বিধ্বস্ত এলিয়া মার্টেলকে ধর্ষণের পর হত্যা করলেন তিনিই। এদের এমন উন্মাদ নিষ্ঠুরতায় শিউরে উঠেছিলেন খোদ ল্যানিস্টার সৈন্যরা।

গ্রেগর ক্লেইগেনের নিষ্ঠুরতা, এলিয়া মার্টেলের সামনে খুন হলেন এগন; Image Source: HBO

কিংস্লেয়ার

অ্যারিস সিংহাসন কক্ষে ফেরত এলেন। তার আদেশে পাইরোম্যান্সাররা ওয়াইল্ডফায়ারের ঘড়া লুকিয়ে রেখেছে পুরো রাজ্যে। রাজার নির্দেশ পাওয়ামাত্র আগুন ধরিয়ে দেয়া হবে তাতে। রাজা এসে হ্যান্ড এবং পাইরোম্যান্সার রজার্টের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বললেন,

“Burn them all, Burn them all”

তারপর জেইমিকে আদেশ দিলেন, টাইউইনকে হত্যা করে তার কাটা মুণ্ডু নিয়ে আসতে।

বার্ন দেম অল! Image Source: HBO

হতভম্ব জেইমি দেখলেন রজার্ট কক্ষ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এই কক্ষের বাইরে গেলে সে পুরো কিংস ল্যান্ডিংকে বিধ্বস্ত নগরীতে পরিণত করবে। জেইমি রাজাকে আরও একবার ভেবে দেখার অনুনয় করলেন। তাকে জীবন দিয়ে রক্ষা করার কথাও জানালেন। কিন্তু অ্যারিস এবার তাকে গালাগালি শুরু করলেন।

জেইমি দ্বিতীয়বার আর ভাবলেন না। বাইরে ল্যানিস্টার সৈন্যসহ তার পিতা টাইউইন আছেন, পুরো কিংস ল্যান্ডিংয়ে বহু প্রাণ আছে। তিনি এমন হতে দিতে পারেন না।

জেইমি হত্যা করছেন অ্যারিসকে; Image Source: HBO

জেইমির শাণ দেয়া তলোয়ার বের হয়ে এল। প্রথমে ঢুকে গেল রজার্টের বুকে। জেইমির এমন আচরণ দেখে ভয়ে অ্যারিস সিংহাসনের পেছনে লুকোনোর চেষ্টা করছিলেন। জেইমি তাকে টেনে বের করে আনলেন, রজার্টের রক্তমাখা একই তলোয়ার দিয়ে সাত রাজ্যের রাজাকে হত্যা করতে একটুও কুণ্ঠাবোধ হলো না তার। পুরনো এক প্রতিশোধ নিতে বাইরে গণহত্যা শুরু করেছেন টাইউইন, আর রেড কিপের প্রাসাদের ভেতর সেই প্রতিশোধের সমাপ্তি ঘোষণা করলেন টাইউইনের ছেলে, রাজার রাজরক্ষী, জেইমি ল্যানিস্টার।

দরবারে আরও নাইট থাকলেও খোদ জেইমি রাজাকে হত্যার দায় বিনা বাক্যে নিজের ঘাড়ে নিয়ে নিলেন। এমন উন্মাদ রাজাকে রাজার আসন থেকে উচ্ছেদ করা যেন প্রশংসনীয় কাজ। তাই লোকমুখে প্রচারের পূর্বেই রাজদরবারে নিজের সঙ্গে ‘কিংস্লেয়ার’ খেতাবটা জড়িয়ে নিলেন। অ্যারিসের মৃত্যুর খবর প্রচার করতে তিনি নিজে ওয়েস্টারল্যান্ডের সৈন্যদের আদেশ দিলেন। লর্ড ক্রেইকহল জেইমিকে প্রশ্ন করেন, তিনি এখন কাকে নতুন রাজা হিসেবে চাইবেন? জেইমি তখন ভিসেরিস টারগেরিয়ানের নাম স্মরণ করেন, বিদ্রোহের যুদ্ধে প্রায় জিতে যাওয়া রবার্টের নাম নয়।

এডার্ড এসে দেখলেন রক্তাক্ত তরোয়াল হাতে জেইমি বসে আছেন আয়রন থ্রোনে ; Image Source: Amok

এই ধ্বংসস্তুপের মাঝেই এসে হাজির হলেন এডার্ড স্টার্ক। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে দ্রুত রেড কিপের ভেতরে দরবারকক্ষের দিকে গেলেন। ঢুকতেই তার চোখে পড়ল রজার্টের মৃতদেহ। সিংহাসনের দিকে তাকাতে তার চোখ ছানাবড়া। আয়রন থ্রোনে রক্তমাখা সোনার তলোয়ার হাতে বসে আছে জেইমি, পেছনে রাজার মৃতদেহ। এই পরিস্থিতির মুখেই তার কাছে খবর এলো রেয়গারের স্ত্রী ও সন্তানদের হত্যার খবর। দ্রুত এডার্ড ল্যানিস্টার সৈন্যদের থামালেন। রবার্ট না আসা পর্যন্ত তিনি নিজ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নিলেন না। এমনকি জেইমিকেও নিজ হাতে কোনো শাস্তি দেননি। অনেক বছর পর জেইমি ব্রিয়েন অব টার্থকে এডার্ড সম্পর্কে বলেছিল,

“তুমি কী মনে করো? লর্ড অব উইন্টারফেল আমার দুর্বল ব্যাখ্যা শুনতে চেয়েছিলেন? না, তিনি প্রচণ্ড সম্মানীয় একজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি শুধু চেয়েছিলেন, দোষী জেইমির বিচার করতে।”

রবার্ট – ফার্স্ট অব হিজ নেইম

রবার্ট ব্যারাথিওন কিংস ল্যান্ডিংয়ে প্রবেশ করলেন রাজার বেশে। আয়রন থ্রোনে বসার পর লর্ড টাইউইন তার আনুগত্যের উদাহরণ হিসেবে রেয়গারের সন্তানদের মৃতদেহ ল্যানিস্টার কাপড়ে মুড়িয়ে তার পায়ের কাছে রাখল। যদিও মৃতদেহ না বলে কঙ্কাল বলা যথাযথ হবে। কারণ রেয়গারের ছোট ছেলে এগনের মাথায় শুকনো রক্তমাখা খুলি ছাড়া অবশিষ্ট কিছুই নেই।

এডার্ডকে অবাক করে গিয়ে রবার্ট টাইউইন ও জেইমিকে মাফ করে দিল। রাজাকে হত্যার পরও জেইমিকে নিজের কিংসগার্ডে রাখল। রেয়গারের সন্তানদের মরদেহ দেখে রবার্ট একরকম খুশিই হয়েছিল। এজন্য এমন জঘন্য হত্যাকান্ডের পরও টাইউইন বা জেইমি কোনো শাস্তি পায়নি। 

কিন্তু এডার্ডের কাছে এনিস ও এগনের এমন মৃত্যু, খুন ছাড়া কিছু ছিল না। এ বিষয়ে রবার্টের সাথে তার তর্কবিতর্কও হয়। কিন্তু রবাট তাদের শাস্তি দিতে রাজি হননি। এডার্ড ও রবার্টের ছোটবেলার বন্ধুত্বের ভাঙনের শুরু এখানেই।

কিংস ল্যান্ডিংয়ে রবার্ট ঢুকলেন রাজার বেশে; Image Source: Fantasy Flight Games

ক্রোধে, রাগে বিহ্বল হয়ে এডার্ড কিংস ল্যান্ডিং ত্যাগ করলেন। জেইমির বিনা শাস্তি ছাড়া এমন ক্ষমা তিনি মেনে নিতে পারেননি। হয়তো রবার্টের যুদ্ধ শেষ। লিয়ানার জন্য সকল টারগেরিয়ানদের বিনাশ চাইলেও রবার্ট সিংহাসন পেয়ে সবকিছু ভুলে গেছে। কিন্তু এডার্ডের যুদ্ধ বাকি। রেয়গার মৃত, কিন্তু লিয়ানা এখনও নিঁখোজ।

নর্থের কয়েকজন ব্যানারম্যান আর অতি বিশ্বস্ত কয়েকজনকে নিয়ে এডার্ড স্টোর্মসল্যান্ডের দিকে রওনা করলেন। স্টোর্মস এন্ড তখনও মেইস টাইরেল দখল করে আছেন। প্রাসাদের ভেতর তখন খাদ্য সংকট চলছে। স্ট্যানিসদের খাবার হিসেবে লুকিয়ে লুকিয়ে পেঁয়াজ চালান করছে ডাভোস নামের এক মামুলি চোর। এডার্ড সেখানে যাবার পর বিনা বাক্যে মেইস টাইরেল রবার্টের বশ্যতা স্বীকার করে নিলেন।

এরই মাঝে এডার্ডের কাছে খবর এলো, রিভাররানে তার স্ত্রী কেটলিনের প্রথম সন্তান হয়েছে। ভেবে রেখেছিলেন, রবার্টের নামে নাম রাখবেন। নিজের প্রথম সন্তানের নাম রাখলেন রব, রব স্টার্ক। স্টার্ক বংশের বড় ছেলে। এডার্ড এবার চললেন আরও দক্ষিণে। রেয়গার যুদ্ধে আসার আগে ডর্নের “টাওয়ার অফ জয়”তে আত্মগোপন করে ছিলেন। এখানে লিয়ানাকে পাবার শেষ ভরসা।

প্রভাত তরবারি

লাল পাথুরে অঞ্চলে ঘোড়ার পিঠে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছেন এডার্ড। তার সাথে হাওল্যান্ড রীড, মার্টিন কাসেল, থিও উল, ইথান গ্লোভার, উইলিয়াম ডাস্টিন আর মার্ক রিসওয়েল। টাওয়ার অফ জয়ের নিচে লাল পাথরের খোলা প্রাঙ্গণে যেন তারই জন্য অপেক্ষা করছিল তিন রাজরক্ষী। স্যার আর্থার ডেইন, হাতে প্রভাত তরবারি। সাদা পোশাকে শিরণাস্ত্রহীন বিষাদগ্রস্থ হাসিমাখা সে মুখ এডার্ড আজও ভোলেননি। তার পাশে স্যার অসওয়েল হোয়েন্ট। পাথরে তরবারি শাণ দিচ্ছিলেন তিনি। এদের মাঝে লর্ড কমান্ডার অফ কিংসগার্ড, স্যার জেরোল্ড হাইটাওয়ার।

তিনজন বনাম সাতজন ; Image Source: HBO

এডার্ড: ট্রাইডেন্টে খুঁজেছিলাম তোমাদের। 

স্যার জেরোল্ড হাইটাওয়ার: আমরা সেখানে ছিলাম না।

অসওয়েল হোয়েন্ট: আমরা থাকলে ঐ বিশ্বাসঘাতকের খবর ছিল।

এডার্ড: যখন কিংস ল্যান্ডিংয়ের পতন হল, সোনার তলোয়ার দিয়ে স্যার জেইমি রাজাকে হত্যা করল। আমি তখনও ভাবছিলাম, তোমরা কোথায়!

স্যার জেরোল্ড: অনেক দূরে। আমরা থাকলে অ্যারিস এখনও সিংহাসনে থাকতেন, আর আমাদের প্রতারক ভাইটি নরকের আগুনে।

এডার্ড: স্টোর্মস এন্ড পর্যন্ত এসে টাইরেল আর রেডওয়াইনদের অবরোধ উঠিয়ে দিয়েছি। তারা এবং তাদের সব নাইট মাথা হেঁট করে নতি স্বীকার করেছে। আমাদের প্রতি আনুগত্য জানিয়েছে। ভেবেছিলাম, তোমরা সেখানে থাকবে।

আর্থার ডেইন: এত সহজে আমাদের মাথা হেট হয় না।

এডার্ড: স্যার উইলেম ড্যারি তোমাদের রাণী আর রাজপুত্র ভিসেরিসকে নিয়ে ড্রাগনস্টোনে পালিয়েছে। ভেবেছি তোমরাও ওদের সাথে পালিয়েছো।

স্যার অসওয়েল: স্যার উইলেম সৎ এবং সজ্জন।

স্যার জেরোল্ড: কিন্তু ভালো কিংসগার্ড নন, কিংসগার্ডরা কখনো পালায় না।

স্যার আর্থার: (শিরোস্ত্রাণ পরতে পরতে) কখনোই না।

স্যার জেরোল্ড: আমরা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যুদ্ধের প্রতিশ্রুতি নিয়েছি।

নেডের পাশে তার সঙ্গীরা এসে দাঁড়াল। সকলের হাতে খোলা তলোয়ার। সাতজনের বিপক্ষে তিনজন।

“And now it begins,” said Ser Arthur Dayne, the Sword of the Morning. He unsheathed Dawn and held it with both hands. The blade was pale as milkglass, alive with light.“No,” Ned said with sadness in his voice. “Now it ends.”

ঝনঝন করে উঠল তলোয়ার। ডর্নের লাল পাথরের উত্তপ্ত পরিবেশে ঢলে পড়তে লাগল একের পর এক প্রাণহীন দেহ। একদম শেষে দাঁড়িয়ে দুই পক্ষ, এবার লড়াই দুই দুর্ধর্ষ অসিযোদ্ধার, আর্থার ডেইন বনাম এডার্ড স্টার্ক। এক আহত হাওল্যান্ড রীড ছাড়া সেই অসীম লড়াই উপভোগ করার মতো কেউ নেই। ওয়েস্টেরসের সেরা অসিযোদ্ধাকে সেদিন হারিয়েছিলেন এডার্ড। কীভাবে? তার উত্তর স্পষ্টভাবে কেউ জানে না!

স্যার আর্থার ডেইন, প্রভাত তরবারি; Image Source: HBO

অবশেষে, টাওয়ার অব জয়’তে এডার্ড দেখা পেলেন তার বোনকে। রক্তাক্ত অবস্থায় বিছানা শোয়া, জীবনীশক্তির শেষটুকুও নিংড়ে নিয়েছে কেউ। লিয়ানা যেন বেঁচে ছিল শুধু এডার্ডের একবার দেখা পাওয়ার জন্যই।

এডার্ডকে কাছে পেতেই লিয়ানা তার হাত শক্ত করে ধরলেন। তাকে কাছে নিয়ে ফিসফিস করে কিছুটা একটা বলার চেষ্টা করলেন যেন। লিয়ানা মারা যাবার পরও তার রক্তাক্ত বিছানার পাশে এডার্ড তার হাত ধরে বসেছিলেন। হাওল্যান্ড এসে লিয়ানার হাত থেকে তার হাত আলাদা না করা পর্যন্ত এডার্ডের নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ ছিল না। কিছুদিন পর এডার্ড এই অভিশপ্ত দূর্গ ভেঙে ফেলেন। দূর্গের পাথর ব্যবহার করে আটজন পতিত যোদ্ধার নামে আটটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করেন। 

প্রমিস মি নেড! Image Source: Fantasy Flight Games

আর্থার ডেইনের তলোয়ার পৌঁছে দিতে এডার্ড গিয়েছিলেন তার বাড়ি স্টারফলে। বিষন্ন থমথমে মুখ নিয়ে আশারা ডেইনের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। সেদিন আশারাকে দেখে আরও ভেঙে পড়েন এডার্ড। হ্যারেনহালের অনুষ্ঠানের সেই অপরূপা মেয়েটাকে আজ চেনা যায় না। চেহারায় সেই লাবণ্যতার ছোয়া আজ অনুপস্থিত। এডার্ডের কাছে সব শুনে আশারার মুখ কাগজের মত সাদা হয়ে উঠল। এডার্ড দ্রুত ফিরে এলেন। তার চলে আসার পরদিন স্টারফলের উচুঁ মিনার থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন আশারা। এডার্ডের ভাগ্য ভালো, দ্রুত প্রস্থান তাকে আরও একটি মৃত্যু দেখা থেকে বিরত রাখল।

অনেকদিন পর উইন্টারফেলে ফিরলেন এডার্ড। এই বিদ্রোহ আর লড়াই তাকে পুরোদমে বদলে ফেলেছে। পরিবারের প্রিয় তিন সদস্যকে তিনি হারিয়েছেন, ছোটবেলার বন্ধুত্বে ফাটল ধরেছে। কী পেলেন তিনি এই যুদ্ধ করে? রবার্ট চেয়েছিল লিয়ানাকে। কিন্তু সেই স্থান নিল আরেক ল্যানিস্টার, সার্সেই। সাথে মিললো সাত রাজ্যের রাজার উপাধি। জন চেয়েছিলেন রাজার আসন থেকে অ্যারিসকে হটাতে, অ্যারিস এখন মৃত। রেয়গার আর লিয়ানার রহস্যও অমীমাংসিত থেকে গেল। তার এই অপহরণ কাণ্ড ধ্বংস করে দিল পুরো টারগেরিয়ান পরিবারকে।

রবার্ট বিয়ে করলেন সার্সেই ল্যানিস্টারকে ; Image Source : HBO

এডার্ড ভেবে কূল পেলেন না, আসলে কে জিতল এই যুদ্ধে? কার লাভ হল সবচেয়ে বেশি? শুধুমাত্র এক ভ্রান্তিবসন্ত, নীল গোলাপ ও অজানা প্রেমকে কেন্দ্র করে পুরো ওয়েস্টেরস ছাড়খাড় হয়ে গেল।

[গেম অফ থ্রোনসের মূল ইংরেজি ও বাংলা অনুবাদ কিনতে পারেন রকমারিতে। ক্লিক করুন এখানে।]

This article is in Bangla language. It is about Targaryen dynasty in seven kingdom and the weird friendship between the Mad King Areys II and his hand Tywin Lannister, based on Fire & Blood and The World of Ice and Fire book which is written by Sir George R. R. Martin. 

Feature Image Source: Fantasy Flight Games

Related Articles

Exit mobile version