টারগেরিয়ান গৃহযুদ্ধ শেষ হবার ১০০ বছরের মতো পেরিয়ে গেছে। ওয়েস্টেরসের সাত রাজ্য এখনও টারগেরিয়ানদের দখলেই, কিন্তু তাদের শক্তিমত্তা খানিকটা কি কমে গেছে? নিজেদের সেরা অস্ত্র ড্রাগন তারা হারিয়েছে নিজেদের ভেতর যুদ্ধে নেমেই। এখন ড্রাগনের ডিম আছে বটে, কিন্তু ড্রাগনের আর দেখা নেই। তবে ড্রাগন পোষার শখ কি আর টারগেরিয়ানদের কমে! তারা এখনও বিভোর হয়ে থাকে ড্রাগন জন্ম দেবার চেস্টায়।
সময়টা তখন ২৩৩ এসি। সেভেন কিংডম শাসন করছেন পঞ্চম এইগন টারগেরিয়ান। যদিও তার অন্য একটি ডাকনামও রয়েছে – ‘দ্য প্রিন্স হু হ্যাড অ্যান এগ’। জন্মের সময় তার কাছে ড্রাগনের ডিম রাখা হয়েছিল, বড় হতে হতে এইগন ভাবতেন – এইদিন এই ডিম ফুটে বাচ্চা হবে। আর এইগন হবেন ড্রাগনরাইডার। এজন্য সামারহল প্রাসাদে যত্ন করে তার ডিম রেখে দিয়েছিলেন তিনি। বাবা মেইকার টারগেরিয়ানের পর অনেকের হাত ঘুরে এই আয়রন থ্রোন তার কাছে আসে। যদিও এখানে কৃতিত্ব বড় ভাই মেইস্টার এইমন টারগেরিয়ানের। আয়রন থ্রোনকে তিনি ফিরিয়ে দেবার পর তিনি রাজা হয়ে আসেন। তবে ওয়েস্টেরসে শান্তি নেই। চতুর্থ এইগন টারগেরিয়ানের খামখেয়ালিপনায় তার অবৈধ সন্তান ডেইমন ব্ল্যাকফায়ার যে ব্ল্যাকফায়ার বিদ্রোহ শুরু করলেন, তার দ্বিতীয় কিস্তি এখনও চলছে।
পঞ্চম এইগন বিয়ে করেছিলেন বেথা ব্ল্যাকউডকে। ২৩৩ এসিতে, তাদের প্রথম সন্তান জন্ম নেয়। এইগনের সব থেকে কাছের বন্ধু ছিলেন লর্ড কমান্ডার অফ কিংসগার্ড স্যার ডানকান দ্য টল। প্রিয় বন্ধুর নামের সাথে নাম মিলিয়ে এইগন তার প্রথম সন্তানের নাম রাখেন ডানকান টারগেরিয়ান। যেহেতু প্রথন ছেলে সন্তান, তাই ডানকান হয়ে যান প্রিন্স অফ ড্রাগনস্টোন। কারণ বাবা এইগনের পরে এই সাত রাজ্যের ভার তো তার কাছেই বর্তাবে।
তার বিয়ে ঠিক হয়েছিল হাউজ ব্যারাথিওনের লর্ড লায়োনেল ব্যারাথিওনের মেয়ের সাথে। ডানকান নিজেও প্রথমে বিয়েতে সম্মতি দিয়েছিলেন। বিয়ে ঠিক হবার কয়েক বছর পর ডানকান ঘুরতে গিয়েছিলেন রিভারল্যান্ডের দিকে। সেখানে গিয়ে তিনি ‘জেনি অফ ওল্ডস্টোন’ নামের এক রহস্যময়ী নারীর প্রেমে পরে যান। অনেকে জেনিকে ডাইনি বলে ডাকতো। তবে ওয়েস্টেরসের নিম্নবিত্ত মানুষদের মাধ্যমে জেনি পুরো সাত রাজ্যে বিখ্যাত ছিলেন।
সাত রাজ্যের প্রিন্স বিয়ে করবে সামান্য এক নারীকে? যেখানে তার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে হাউজ ব্যারাথিওনের লর্ডের মেয়ের সাথে! রাজা এইগন প্রচণ্ড বিরক্ত হলেন, তিনি কোনোভাবেই এই সম্পর্ক মেনে নেবেন না। সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা চালালেন ডানকান আর জেনিকে আলাদা করতে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। ডানকান জেনিকে ছাড়া আর কিছুই বুঝতে চাইছেন না।
রাজা এবার ভিন্ন চাল চাললেন। দুটো সুযোগ দিলেন – হয় এই লৌহমসদ বেছে নাও, নয়তো তোমার প্রেমিকাকে। হাই সেপ্টান, গ্রান্ড মেইস্টার এবং নিজের বাবা রাজা এইগনের সামনে থেকে প্রিন্স ডানকান বেছে নিলেন জেনি অফ ওল্ডস্টোনকে। এক নিমিষে ফিরিয়ে দিলেন প্রিন্স অফ ড্রাগনস্টোন উপাধি। রাজাও আর দ্বিতীয় দফা ভাবলেন না। নিজের আরেক ছেলেন সেকেন্ড জ্যাহেরিসকে বানিয়ে দিলেন প্রিন্স অফ ড্রাগনস্টোন। নিজের ভালোবাসার জন্য ডানকান সাত রাজ্যের রাজা হওয়া থেকে বঞ্চিত হলেন।
তবে ঘটনা এখানে শেষ হলেও পারত। কিন্তু শুধুমাত্র রাজার আসন থেকে ডানকানকে সরিয়ে কিংস ল্যান্ডিংয়ে শান্তি আনা যায়নি। লায়োনেল ব্যারাথিওনের মেয়ের সাথে বিয়ে ভেস্তে যাওয়াতে তিনি প্রচণ্ড রেগে গেলেন। হাউজ ব্যারাথিওনকে অপমান করা হয়েছে – এই অজুহাতে ‘স্ট্রমস কিং’ কিং উপাধি নিয়ে ছোটখাটো বিদ্রোহ করে বসলেন তিনি। তবে এই বিদ্রোহ বেশিদিন টেকেনি। ডানকান দ্য টলের সাথে একক সম্মুখযুদ্ধে লায়োনেল ব্যারাথিওন হেরে যান। তবে রাজা এইগন টারগেরিয়ান লায়োনেলকে একদম নিরাশ করেননি। তার মেয়ে রায়েলাকে পাঠিয়ে দেন স্ট্রমস এন্ডে। পরবর্তীতে লায়োনেল ব্যারাথিওনের ছেলে ওরমুন্ড ব্যারাথিওনের সাথে রায়েলার বিয়ে হয়।
জেনি দ্য ওল্ডস্টোনের বন্ধু ছিল এক বামন মহিলা এবং এক ডাইনি – এদেরকে অনেকে চিলড্রেন অফ ফরেস্ট বলে ডাকতো। জেনির কথায় এরাই একবার এসে সেকেন্ড জ্যাহেরিসের ছেলে প্রিন্স এইরিস আর মেয়ে রায়েলাকে নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করেছিল। বলেছিল, এদের ভবিষ্যৎ সন্তান হবে ‘প্রিন্স দ্যাট ওয়াজ প্রমিসড’। এই ভবিষ্যৎবাণী শুনে তাড়াহুড়ো করে এদের দুজনের বিয়ে দিয়ে দেন তাদের বাবা সেকেন্ড জ্যাহেরিস টারগেরিয়ান। একটা সময় পর জেনিকে মেনে নেওয়া হয়, সবাই তাকে ডাকতে শুরু করে ‘লেডি জেনি’ নামে।
২৫৯ এসি। রাজা এইগন টারগেরিয়ানের ড্রাগন জন্ম দেওয়ার স্বপ্ন তখনও যায়নি। তার শাসনামালে তিনি যেসব সমস্যা-বিদ্রোহের সম্মুখীন হয়েছেন, তিনি মনে করতেন যে ড্রাগন থাকলে এসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো না তাকে। একই সময়ে তার নাতি এইরিস টারগেরিয়ানের প্রথম সন্তান জন্ম নেবে। তাই তার কাছের অনেক লোকজনকে সামারহল প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানালেন। উদ্দেশ্য এইরিস আর রায়েলার সন্তান পৃথিবীতে আসার আগেই আগাম আয়োজন। কিন্তু তার পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। রাজা এইগন চেষ্টা করেছিলেন ড্রাগন জন্ম দেওয়ার। পাইরোম্যান্সাররা আগুন জ্বালাল, সেখান থেকেই দাউদাউ করে জ্বলে উঠল আগুন, কিন্তু আর নিয়ন্ত্রণে রাখা গেল না। সামারহল প্রাসাদের ভেতর পুড়ে মারা গেলেন রাজা পঞ্চম এইগন টারগেরিয়ান, তার ছেলে ডানকান টারগেরিয়ান, সামারহলের মেইস্টার কোরসো এবং লর্ড কমান্ডার অফ কিংসগার্ড স্যার ডানকান দ্য টলসহ আরও অনেকে।
ডর্নে যখন সামারহল দাউ দাউ করে জ্বলছে, তখনই প্রিন্স এইরিসের স্ত্রী রায়েলা সন্তান প্রসব করলেন। আগুন থেকে জন্ম নিলেন দ্য ড্রাগন প্রিন্স – রেয়গার টারগেরিয়ান।
জেনি দ্য ওল্ডস্টোনের পরবর্তীতে কী হয়েছিল, তা নিয়ে অনেক গল্প রয়েছে, নানান গানে নানাভাবে গল্প শোনানো হয়েছে। প্রিন্স ডানকান আর জেনির এই ভালোবাসার গল্প নিয়ে ওয়েস্টেরসে অনেক গান তৈরি করা হয়েছে। ‘আ সং অফ আইস অ্যান্ড ফায়ার’ সিরিজের কয়েকটি বইয়ের মাঝে উঠে এসেছে তাদের নাম। এছাড়াও এই বই থেকে বানানো টিভি সিরিজ ‘গেম অফ থ্রোনস’ এর শেষ মৌসুমের ‘আ নাইট অফ সেভেন কিংডমস’ এপিসোডে পড্রিকের মুখ থেকেও জেনি দ্য ওল্ডস্টোন এবং প্রিন্স ডানকান টারগেরিয়ানকে নিয়ে বানানো গান শোনা যায়।
রাজা পঞ্চম এইগনের মৃত্যুর পর রাজা হয়েছিলেন দ্বিতীয় জ্যাহেরিস টারগেরিয়ান। ২৬২ এসিতে তিনি মারা যাবার পর রাজা হন এইরিস টারগেরিয়ান; যিনি ‘ম্যাড কিং’ নামেই বেশি পরিচিত। অন্যদিকে লায়োনেল ব্যারাথিওনের সাথে শান্তিচুক্তিতে রাজা এইগন তার মেয়ে রায়েলাকে বিয়ে দিয়েছিলেন ওরমুন্ড ব্যারাথিওনের সাথে। এই জুটির ছেলে ছিলেন স্টেফান ব্যারাথিওন – যিনি রবার্ট, স্ট্যানিস এবং রেনলি ব্যারাথিওনের বাবা। এই রবার্ট ব্যারাথিওনের বিদ্রোহের ফলে হাউজ টারগেরিয়ানের পতন ঘটে এবং কয়েক বছর পর ‘দ্য সং অফ আইস অ্যান্ড ফায়ার’ বইয়ের মূল গল্প শুরু হয়।