জার্মান এক্সপ্রেশনিজম; ১ম বিশ্বযুদ্ধের তিক্ত অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে জার্মানিতে গড়ে ওঠা চলচ্চিত্রভিত্তিক আন্দোলন। ইউরোপীয় আভা-গার্দ ও দাদাইজম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে জার্মান চলচ্চিত্রকাররা তুলে ধরতে চেয়েছিলেন জার্মানির ঠুনকো সমাজব্যবস্থার চিত্র, যেখানে মানুষের চরিত্রও ভঙ্গুর। এবং তারা সফলও হয়েছিলেন। ১৯১৯-৩১; এই সময়ের চলচ্চিত্রগুলো তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিল সেসময়কার যুদ্ধপরবর্তী দেশটির শোচনীয় অবস্থা ও দেশটির জনগণের দৈনন্দিন জীবনের আর্তনাদ।
১ম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে জার্মান চলচ্চিত্রগুলো অন্যান্য দেশের চলচ্চিত্রগুলোর তুলনায় প্রযুক্তিগত ও বিষয়গত দিক থেকে অনেক পিছিয়ে ছিল। ১৯১০ সাল পর্যন্ত জার্মান চলচ্চিত্র বলতে শুধু শর্টফিল্ম, পর্নোগ্রাফিক স্নিপেটই ছিল। কেবলমাত্র উদ্ভাবক অস্কর মেসটার নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোতেই ছিল নতুনত্বের ছিটেফোটা। তিনিই জার্মানি চলচ্চিত্রে সর্বপ্রথম ক্লোজ-আপ, কৃত্রিম আলোকসজ্জার ব্যবহারের সূচনা করেন। এছাড়া, শব্দ নিয়েও কিছুটা গবেষণা চালান। কিন্ত, জার্মানিতে সত্যিকার অর্থে উদ্ভাবনী চলচ্চিত্র নির্মিত হয় ২য় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর ঠিক আগের সময়ে। পরিচালক গুইডো সিবার কর্তৃক ১৯১৩ সালে নির্মিত ‘দ্য স্টুডেন্ট অভ প্রগ’-কে প্রথম জার্মান এক্সপ্রেশনিস্ট চলচ্চিত্র হিসেবে ধরা হয়।
১৯১৪ সালে ইউরোপে ১ম বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে উঠলে জার্মানিতে বিদেশী চলচ্চিত্রের যোগান প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। তাই, ১৯১৫ সালে বিতর্কিত আমেরিকান চলচ্চিত্র ‘দ্য বার্থ অভ এ নেশন’-এ আমেরিকান পরিচালক ডি ডব্লিউ গ্রিফিত প্রযুক্তির নতুন সব ব্যবহার করে দেখালেও সেসময় জার্মান পরিচালকরা এসব সম্পর্কে কিছুই জানতে পারেননি। তার উপর ১৯১৬ সালে জার্মান সরকার বিদেশী চলচ্চিত্রের উপর অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। জনগণের চাহিদা পূরণে সেজন্য ১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জার্মান স্টুডিও ইউএফএ।
২য় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত এটা ছিল ইউরোপের সবচেয়ে বড় ফিল্ম স্টুডিও। ১৯১৮ সালে ১ম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর ইউএফএ হয়ে ওঠে হলিউডের একটি বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। ১৯১৪ সালে যেখানে জার্মানিতে সারাবছর মাত্র ১৪টি চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছিল সেখানে এই স্টুডিওর কল্যাণে ১৯১৮ সালে গোটা জার্মানিতে নির্মিত হয় ১৩০টি চলচ্চিত্র। ১৯১৯ সালে দেশব্যাপী চলচ্চিত্রে সেন্সরশিপের বিলুপ্তি ঘটে যা এফ ডব্লিউ মার্নাউ, যুদ্ধফেরত সৈনিক ফ্রিৎস ল্যাং, রবার্ট উইনেদের মতো সাহসী পরিচালকদের নিজেদের মেধার প্রতিফলন ঘটানোর প্ল্যাটফর্ম গড়ে দেয়। ১ম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর সময় থেকেই জার্মান দর্শকরা অ্যাকশন, রোমান্স ঘরানার চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছিল। তাই, দর্শকদের দাবি মেটাতে চলচ্চিত্রকাররা মৃত্যু, ভয়, হিংস্রতা, বর্বরতা, উন্মত্ততা, বিশ্বাসঘাতকতা এসব গভীর বিষয়বস্তু নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের দিকে ঝুঁকে পড়েন।
আমি নৃশংসতা, ভয়, আতঙ্ক এবং মৃত্যুর প্রতি গভীরভাবে মুগ্ধ। আমার চলচ্চিত্রগুলো সহিংসতার প্রতি আমার আচ্ছন্নতাকে প্রকাশ করে এবং দেখায় সহিংসতার রোগবিদ্যা।
— ফ্রিৎস ল্যাং
অন্যান্য চলচ্চিত্র বিষয়ক আন্দোলনের মতো এক্সপ্রেশনিজম শুধুমাত্র চলচ্চিত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, এক্সপ্রেশনিজমের অস্তিত্ব ছিল চলচ্চিত্রের অস্তিত্ব না থাকাকালীনও। সত্যি বলতে, এক্সপ্রেশনিজম জার্মানিতে একটি অনিবার্য আন্দোলন ছিল। এর বীজ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগেই বপন করা হয়েছিল এবং সম্ভবত যুদ্ধটি জার্মান জনগণকে এমন অন্ধকার শৈল্পিক অভিব্যক্তির জন্য এত দ্রুত তৃষ্ণার্ত করে না তুললেও একসময় তারা আপনা-আপনিই তৃষ্ণার্ত হতেন। তবে, এটা অস্বীকার করা যাবে না যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণেই জার্মান এক্সপ্রেশনিজম চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি মূলধারার আন্দোলন হয়ে উঠতে সক্ষম হয়। এক্সপ্রেশনিস্ট চলচ্চিত্রগুলোর সাহায্যে চলচ্চিত্রকাররা সেসময়কার জার্মানদের মধ্যে থাকা অন্তর্দ্বন্দকে পর্দার সামনে আনেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভাসা ভাসা যেসব দুঃস্বপ্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত জার্মানির মানুষদের তাড়িয়ে বেড়াতো সেসব প্রকাশের মাধ্যম হয়ে ওঠে এক্সপ্রেশনিজম। তখনও চলচ্চিত্রে শব্দের ব্যবহার শুরু হয়নি বিধায় তা এক্সপ্রেশনিস্ট চলচ্চিত্রগুলোয় নতুন মাত্রা যোগ করে, যেন নীরবতা দর্শকদের সম্পূর্ণরূপে চলচ্চিত্রের প্রতি নিমগ্ন হতে সাহায্য করে।
শুরুতেই বলেছি, প্রথম এক্সপ্রেশনিস্ট চলচ্চিত্র ধরা হয় ১৯১৩ সালের ‘দ্য স্টুডেন্ট অভ প্রাগ’-কে। এটি একটি ফাউস্টিয়ান গল্পকে কেন্দ্র করে নির্মিত যেখানে একজন দরিদ্র ছাত্র তার ছায়ার বিনিময়ে একটি শয়তান জাদুকরের কাছ থেকে অর্থ নেয়। যদিও চলচ্চিত্রটিতে সামগ্রিকভাবে পরবর্তী জার্মান হরর চলচ্চিত্রগুলোর তুলনায় কিছুটা অযৌক্তিকতা সাথে সুররিয়ালিজমের অভাব রয়েছে, তবুও এর পটভূমি এক্সপ্রেশনিস্ট চলচ্চিত্রে আমরা যেসব ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেখে থাকি তাকে সংজ্ঞায়িত করতে সক্ষম হয়।
এর ২ বছর পর ১৯১৫ সালে মুক্তি পায় ‘দ্য গোলেম’, এতেও মূল চরিত্রে অভিনয় করেন ‘দ্য স্টুডেন্ট অভ প্রাগ-এ অভিনয় করা পল ভেগেনা। এছাড়াও, এসময় মুক্তি পায় ভ্যাম্পায়ারদের নিয়ে নির্মিত প্রথম জার্মান চলচ্চিত্র ‘নাইট অভ হরর’-সহ ‘হুমানকিউলাস’-এর মতো যুগান্তকারী চলচ্চিত্র। তবে, জার্মান এক্সপ্রেশনিজম আন্দোলন এর চূড়ায় পৌঁছায় ১৯২০-র দশকে।
১৯২০ সালে মুক্তি পাওয়া রবার্ট উইনে-র ‘দ্য কেবিনেট অভ ডক্টর ক্যালিগারি’ হয়ে ওঠে এই আন্দোলনের প্রতীকী চলচ্চিত্র, চলচ্চিত্রটির ভিজ্যুয়াল স্টাইল ছিল অনন্য। একই সালে মুক্তি পাওয়া উইনে-র স্বল্প পরিচিত ‘জেনুইন’-এর সেটগুলো ‘দ্য কেবিনেট অভ ডক্টর ক্যালিগারি’-র মতো একই শৈল্পিক পদ্ধতি ব্যবহার করে এক্সপ্রেশনিস্ট চিত্রশিল্পী সিজার ক্লেইনের দ্বারা ডিজাইন করা হয়েছিল। অন্যদিকে, ১৯২৪ সালে মুক্তি পাওয়া একই পরিচালকের ‘দ্য হ্যান্ডস অভ অরলাক’ -এ আড়ম্বরপূর্ণ পরিচালনার সাথে ব্যবহৃত হয় অনেকগুলো স্বপ্নের সিকুয়েন্স।
ক্যালিগারি মুক্তির একই বছরে পল ভেগেনা তার গোলেম চরিত্রকে পুনরায় পর্দার সামনে এনে তৈরি করেন ৫ বছর আগে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য গোলেম’-এর প্রিক্যুয়াল ‘দ্য গোলেম: অর হাউ হি কেম ইন্টু দ্য ওয়ার্ল্ড’।
এতে গোলেমকে দেখানো হয় অন্যান্যদের হাতে নির্যাতিত ইহুদীদের রক্ষাকারী হিসেবে। তখন কে ভেবেছিল জার্মান ইহুদিদের নির্যাতিত বহিরাগত হিসাবে চিত্রিত করা একদিন সত্যি সত্যি অদূর ভবিষ্যতে হলোকাস্টের আগমণীবার্তা হিসেবে রূপ নেবে!
১৯২০’র দশকে জার্মানির একদল পরিচালক, লেখক ও অভিনেতা দের কৃতিত্বে সারাবিশ্বের কাছ থেকে এক্সপ্রেশনিজম আন্দোলনটি প্রশংসা অর্জনে সক্ষম হন। তাদের মধ্যে ফ্রিৎস ল্যাং সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ছিলেন। যদিও তার কাজগুলো সেসময়কার অন্যান্য হরর চলচ্চিত্রগুলোর মতো ছিল না; তা-ও তার ব্যবহৃত অতিপ্রাকৃত উপাদান, ডার্ক স্টোরিলাইন ও শৈল্পিক সেটের মিশেল দর্শক, সমালোচকদের কাছে সমানভাবে সমাদৃত ছিল। তার সেরা কাজগুলোর একটি ১৯২১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ডেস্টিনি’, যা নির্মিত হয়েছিল ‘মৃত্যু’ নামক চরিত্রকে কেন্দ্র করে। এর পরের বছর ভূত দ্বারা আতঙ্কিত একজন খুনীকে কেন্দ্র করে নির্মাণ করেন ‘ডক্টর ম্যাব্যুস দ্য গ্যাম্বলার’। এই দশকে তার সবচেয়ে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘মেট্রোপলিস’ ১৯২৭ সালে মুক্তি পায়, যেখানে দেখানো হয় ভবিষ্যতের একটি শহরের গল্প।
স্টার ওয়ার্স কিংবা ব্লেড রানার সিরিজের চলচ্চিত্রগুলোয় মেট্রোপলিসের ছাপ স্পষ্টভাবেই পরিলক্ষিত হয়। এসময়কার আরেকজন জনপ্রিয় মুখ হলেন এফ.ডব্লিউ. মার্নাউ।
তিনি ১৯২২ সালে নির্মাণ করেন ‘নসফেরাতু’ যা ব্র্যাম স্টোকারের ‘ড্রাকুলা’ উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছিল। তবে, স্টোকারের উত্তরাধিকারীদের অনুমতি না নিয়ে নির্মাণ করায় আদালত থেকে চলচ্চিত্রটির সব কপি পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। ভাগ্যক্রমে, কিছু কপি অক্ষত থাকায় আজও চলচ্চিত্রটির অস্তিত্ব রয়েছে। ‘নসফেরাতু’-ই মার্নাউকে হরর ঘরানার একজন জনপ্রিয় পরিচালক হিসেবে গড়ে তোলে। এর ২ বছর আগে তার ‘দ্য হেড অভ জেনাস’ চলচ্চিত্র নির্মাণের সময় চলন্ত ক্যামেরা ব্যবহার করে তিনি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চলন্ত ক্যামেরা ব্যবহারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এছাড়া, ১৯২৬ সালে মুক্তি পায় তার শেষ জার্মান চলচ্চিত্র ‘ফাউস্ট’। ফাউস্টে ব্যবহৃত প্রযুক্তি ছিল সেসময়কার চলচ্চিত্রের মাইলফলক।
এসময় পল লেনি, হেনরিক গ্যালেন- প্রমুখরাও তাদের ছাপ রাখতে সক্ষম হন। লেনির সবচেয়ে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ছিল ‘দ্য ম্যান হু লাফস’ যা তিনি আমেরিকায় চলে আসার পর নির্মাণ করেন।
পরবর্তীতে এই চলচ্চিত্রের মূল চরিত্রের উপর ভিত্তি করে ডিসি কমিক্সের জোকারের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও, তার উল্লেখযোগ্য দুটি চলচ্চিত্র ‘ওয়াক্সওয়ার্কস’ ও ‘দ্য ক্যাট এন্ড দ্য ক্যানারি’। অন্যদিকে, হেনরিক গ্যালেন শুধু ‘গোলেম’, ‘নসফেরাতু’, ‘ওয়াক্সওয়ার্ক’ লেখেই ক্ষান্ত থাকেননি, নির্মাণ করেছেন প্রথম এক্সপ্রেশনিস্ট চলচ্চিত্র ‘দ্য স্টুডেন্ট অভ প্রাগ’-এর রিমেক।
জার্মান এক্সপ্রেশনিস্ট চলচ্চিত্রের অসাধারণ শৈল্পিকতা হলিউডের স্টুডিওগুলোর দৃষ্টি এড়ায়নি। বিশেষ করে ইউনিভার্সাল স্টুডিও এক্সপ্রেশনিস্ট চলচ্চিত্রগুলো থেকে অন্ধকার রচনাশৈলী ধার করে ‘ড্রাকুলা’, ‘ফ্রাংকেনস্টাইন’, ‘দ্য মামি’-র মতো গথিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করে। স্টুডিওটির প্রচেষ্টায় সহায়তা করেন জার্মানি থেকে অভিবাসী হিসেবে আসা মার্নাউ, ল্যাং, লেনি, ভেইড্ট এবং কার্ল ফ্রয়েন্ডরা।
১৯৩০-এর দশকের শুরুতে জার্মানিতে ‘দ্য টেস্টামেন্ট অভ ডক্টর ম্যাবুস’, ‘ভ্যাম্পির’ এসব এক্সপ্রেশনিস্ট চলচ্চিত্র নির্মিত হলেও ফ্রিৎস ল্যাংয়ের ‘এম’ অনেকভাবে এক্সপ্রেশনিজম আন্দোলনের অবসানেরই ইঙ্গিত দেয়।
‘এম’-এর মতো ন্যয়ার ঘরানার থ্রিলার চলচ্চিত্রগুলো জার্মানিতে আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে। এসময় এক্সপ্রেশনিজম আন্দোলনের মুখপাত্ররা আমেরিকায় বড় বড় স্টুডিওগুলোর হয়ে কাজ করার জন্য দেশত্যাগ করেন, তাছাড়া চলচ্চিত্রে শব্দের ব্যবহার শুরু হলে চলচ্চিত্রকারদের গল্প বলার ধরনও বদলানো শুরু হয়। ১৯৩৩ সালে হিটলার জার্মানির চ্যান্সেলর হওয়ার পর পরই জোসেফ গোয়েবলসকে প্রচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রধান নিযুক্ত করেন।
মন্ত্রণালয়টিকে গোটা জার্মানির সংস্কৃতিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং কেবল চলচ্চিত্র শিল্পের উপর ফোকাস করার জন্য একটি আলাদা বিভাগ তৈরি করা হয়। যা-ই হোক, এর অর্থ এই ছিল না যে— এক্সপ্রেশনিস্ট আন্দোলনের মুখপাত্ররা আর চলচ্চিত্র বানাতে পারবেন না। বরং, গোয়েবলস বিশ্বাস করতেন— তিনি ওসব চলচ্চিত্রকারদের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে জনগণকে প্রভাবিত করতে পারবেন। সেই লক্ষ্যে তিনি প্রথমে ফ্রিৎস ল্যাং-কে ইউএফএ ফিল্ম স্টুডিওর প্রধান হওয়ার প্রস্তাব দেন। ফলাফল? সেই রাতেই ফ্রিৎস ল্যাং ফ্রান্সে পালিয়ে যান। রবার্ট উইনে সেসময় বুদাপেস্টে নির্বাসনে অবস্থান করছিলেন। ১৯৩৮ সালে রবার্ট উইনে মৃত্যুবরণ করেন, ততদিনে ফ্রিৎস ল্যাংও পল লেনি ও এফ.ডব্লিউ. মার্নাউদের পথ অনুসরণ করে আমেরিকায় চলে আসেন।
জার্মানির নীরব চলচ্চিত্র তর্কসাপেক্ষে সমসাময়িক হলিউড চলচ্চিত্রের তুলনায় অনেক এগিয়ে ছিল এবং হিটলারের আমলে জার্মানি থেকে পালিয়ে আসা চলচ্চিত্রকারদের নির্মাণশৈলী থেকে হলিউডের চলচ্চিত্রকাররা অনেক অনুপ্রাণিত হন, নিজেদের চিন্তাভাবনায় আনেন আমূল পরিবর্তন। এই অনুপ্রেরণা বা প্রভাব হলিউডের পরবর্তী চলচ্চিত্রগুলোয় স্পষ্টভাবে লক্ষণীয়।