নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানবমনের ঝোঁক চিরন্তন। পৃথিবীতে কেউ পরিচিত হয়ে থাকে বিখ্যাত হিসেবে, কেউ কুখ্যাত হিসেবে, আবার অনেকেই বিলিন হয়ে যায় মহাকালের গর্ভে। হ্যারি পটার ফ্র্যাঞ্চাইজির রচয়িতা জে. কে. রোলিংয়ের সৃষ্ট উইজার্ডিং ওয়ার্ল্ড বা জাদুজগতও এর ব্যতিক্রম নয়। অসীম ক্ষমতা ও শক্তির লোভে পড়ে বহু জাদুকর হয়েছে পথভ্রষ্ট, বেছে নিয়েছে ঘোর অমানিশার পথ। সেজন্য সুপ্রাচীনকাল থেকে হোয়াইট ম্যাজিকের পাশাপাশি অনেক জাদুকর চর্চা করে আসছিল ডার্ক ম্যাজিক বা ডাকিনীবিদ্যা। দুনিয়া কাঁপানো প্রাচীন বিশ্বের সেরা দশ ডার্ক উইজার্ড নিয়েই হবে আজকের আলোচনা, যাদের কথা অনেক হ্যারি পটার ভক্তই জানে না।
এমেরিক দ্য ইভিল
মধ্যযুগীয় গ্রেট ব্রিটেনের এক জাদুকর পরিবারে জন্ম নেন এমেরিক। বাল্যকালেই তার মধ্যে ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থাকে বিভিন্ন জাদুকরী ক্ষমতা। পারিবারিক সূত্রে জাদুর ছড়ি পাওয়ার পর, জাদু-মন্ত্র আয়ত্তের উপর মনোনিবেশ করেন তিনি। একসময় জাদু এসে যায় তার নিয়ন্ত্রণে। জীবদ্দশায় তিনি একবার জাদু জগতের সবচেয়ে শক্তিশালী জাদুর ছড়ি এল্ডার ওয়ান্ডের মালিক হতে পেরেছিলেন।
অসীম ক্ষমতার অধিকারী এ ছড়ি ভুল মানুষের হাতে পড়লে তা কতটুকু বিধ্বংসী হতে পারে, এর স্পষ্ট প্রমাণ এমেরিক। ক্ষমতার লিপ্সায় এমেরিক জড়িয়ে পড়েন সহিংসতায়, পুরো দক্ষিণ ইংল্যান্ডে কায়েম করেন ত্রাসের রাজত্ব। দুনিয়ায় ক্ষীণ আয়ু নিয়ে এলেও, অল্প সময়েই তিনি যুক্ত ছিলেন বহু প্রাণহানি, ধ্বংসযজ্ঞের সাথে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য কুখ্যাত এই ডার্ক উইজার্ডের নামে সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল ‘দ্য ইভিল’ শব্দটি। ড্রাগনসদৃশ একটি পশু ছিল তার বাহক। কালো জাদুচর্চায় তার জুড়ি মেলা ভার। ডুয়েলেও সমান পারদর্শী ছিলেন তিনি। এর মাধ্যমেই জিতে নিয়েছিলেন এল্ডার ওয়ান্ড। মধ্যযুগের নিন্দিত এই কালো জাদুকর এগবার্ট দ্য এগ্রেজিয়াস সাথে ডুয়েলে প্রাণ হারান। হগওয়ার্টসে ‘হিস্ট্রি অভ ম্যাজিক’ বিষয়ে পড়ার সময় প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রায় সময়ই এমেরিক দ্য ইভিল এবং ইউরিক দ্য অডবলের মাঝে গুলিয়ে ফেলত।
একরিজ্ডিস
একরিজ্ডিস মূলত পনের শতকের দিকের একজন ডার্ক উইজার্ড, যিনি বাস করতেন আজকাবান নামক দ্বীপের এক কেল্লায়। ওই কেল্লাকে তিনি কনসিলমেন্ট চার্ম দিয়ে অদৃশ্য বানিয়ে রেখেছিলেন, যাতে এর অস্তিত্ব কেউ টের না পায়। ওখানে একাকী দিন গুজরান করতেন বলে জাদু সম্প্রদায় বা সাধারণ মানুষ কেউই তার সম্পর্কে কিছু জানত না। জনবিচ্ছিন্ন ওই দ্বীপে নিরিবিলি চরম অশুভ ধাঁচের ডাকিনীবিদ্যার চর্চা করতেন তিনি। দ্বীপের আশেপাশে কোনো জাহাজ গেলে ওই জাহাজের নাবিককে ভুলিয়ে নিয়ে আসতেন তার দুর্গে। তারপর তাদের উপর চালানো হতো পাশবিক নির্যাতন, পরীক্ষা করা হতো বিভিন্ন মন্ত্র ও অভিশাপ।
তবে বহুদিন ধরে নির্জন স্থানে বসবাস করায় একসময় বদ্ধ উন্মাদে পরিণত হন তিনি। একরিজ্ডিসের মৃত্যুর পর দুর্গের উপর থেকে কেটে গেল কনসিলমেন্ট চার্মের প্রভাব। একসময় তা ব্রিটিশ জাদু মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর হলে সেখানে অনুসন্ধান চালালেন মন্ত্রণালয়ের অরোরেরা, দেখলেন দুর্গে গিজ গিজ করছে ডিমেন্টরের দল। অত্যাচার, খুন-খারাবি, কালো জাদু চর্চা হওয়ায় সেটি ছিল ডিমেন্টরদের জন্য আদর্শ জায়গা। কারণ, যে জায়গায় আনন্দের ছিটেফোঁটা নেই, সেখানেই ডিমেন্টররা থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। পরবর্তীতে এই কেল্লাকে ব্রিটিশ জাদু মন্ত্রণালয় নরকতুল্য আজকাবান কারাগারে রূপান্তর করে ফেলে।
এথেলরেড দ্য এভার-রেডি
এথেলরেড দ্য এভার-রেডি হলেন মধ্যযুগীয় এক ডার্ক উইজার্ড, যিনি কুখ্যাত ছিলেন নির্দোষ মানুষকে কার্স দেওয়ার জন্য। জীবদ্দশায় বহু কার্স ও চার্ম তৈরি করেন তিনি। এসব কার্স তিনি প্রয়োগ করতেন নির্দোষ এবং নিরস্ত্র মানুষকে বেছে বেছে। এই অভিযোগে একসময় তাকে বন্দী করা হয়। অন্ধকার কুঠুরির নিঃসঙ্গতাকে পুঁজি করেই একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।
গডেলট
মধ্যযুগে কালো জাদুচর্চা করে জাদুজগত কাঁপিয়ে গেছেন গডেলট। এল্ডার ওয়ান্ডেরও মালিক ছিলেন তিনি। এল্ডার ওয়ান্ডকে তিনি নিজের উপদেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করতেন, এবং এই ছড়ির জাদুশক্তি ব্যবহার করেই তিনি ‘Magick Moste Evile’ নামক এক বই লেখেন। বইটি পরিপূর্ণ ছিল প্রচুর ডার্ক ম্যাজিক সংক্রান্ত তথ্যে, এবং সবকিছু লেখা হয়েছিল বিশদ বর্ণনা সহকারে।
এই বই বর্তমানে হগওয়ার্টস লাইব্রেরির নিষিদ্ধ অংশে রাখা হয়েছে। এতে হরক্রাক্সের নামও উল্লেখ ছিল। তার কাছ থেকে এল্ডার ওয়ান্ড বাগানো ছিল একপ্রকার দুঃসাধ্য। একদিন তার ছেলে তাকে প্রতারণা ফাঁদে ফেলে কারাগারে বন্দী করে বাগিয়ে নেয় অধরা এল্ডার ওয়ান্ড। ওই কারাগারেই মৃত্যু হয় গডেলটের।
লক্সিয়াস
বার্নাবাস ডেভেরিলকে খুনের পর এল্ডার ওয়ান্ডের মালিক হন লক্সিয়াস নামে এক ডার্ক উইজার্ড। এই ছড়ি তিনি ব্যবহার করতেন শুধুমাত্র তার শত্রু নির্মূলে, যে কারণে এর নাম পাল্টিয়ে রাখেন ‘ডেথস্টিক’ বা ‘মৃত্যুছড়ি’। নিষ্ঠুর ও উচ্ছৃঙ্খল এই জাদুকরের মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল, সেই সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। অ্যালবাস ডাম্বলডোরের মতে, লক্সিয়াসের সন্ত্রাসী দৌরাত্ম্য থামিয়েছিল তার জন্মদাত্রী মা। আবার জেনোফিলাস লাভগুড দাবি করেন, আরকাস অথবা লিভিয়াসের হাতে প্রাণ যায় লক্সিয়াসের, এবং তাদের মধ্যে যেকোনো একজন হয়ে যায় পরবর্তী এল্ডার ওয়ান্ডের মালিক।
মেরোইন দ্য ম্যালিসিয়াস
মধ্যযুগীয় ডার্ক উইজার্ড মেরোইন দ্য ম্যালিসিয়াস বহু সর্বনাশা মন্ত্রের উদ্ভাবক। তিনি ব্যবহার করতেন বাঁকা এক জাদুর ছড়ি। এই দুর্নাম ও কুখ্যাতির জন্য তিনি অমর হয়ে আছেন এক ব্রোঞ্জ চকলেট ফ্রগ কার্ডের মধ্যে। এছাড়াও হগওয়ার্টস দুর্গে মেরোইনের এক পোর্ট্রেট ঝুলানো আছে, যেটা পাহারা দিচ্ছে তৃতীয় তলার মূল সিঁড়ি এবং এন্ট্রান্স হল সাইড রুমের এক গুপ্ত সরু পথ। এই পথে যেতে হলে ‘Malevolence’ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হয়।
মরগান লে ফে
এই তালিকায় স্থান পাওয়া একমাত্র নারী জাদুকর মরগান লে ফে, যিনি সাধারণত মরগানা নামেও পরিচিত। মধ্যযুগে জন্ম নেওয়া এই কালো জাদুকর বিভিন্ন কারণে ইতিহাস বিখ্যাত হয়ে আছেন। প্রথমত, তিনি সর্বকালের অন্যতম সেরা জাদুকর মার্লিনের প্রধান শত্রু; দ্বিতীয়ত, তিনি সম্রাট আর্থারের বোন। রানী হিসেবে তিনি শাসন করতেন অ্যাভালন দ্বীপ। ওখানেই তার ডার্ক আর্টস চর্চার হাতেখড়ি। ক্রমশ নিজের দক্ষতাকে শান দিয়ে পাকাপোক্ত করে তিনি হয়ে ওঠেন জাদুকর মার্লিনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।
জীবদ্দশায় তিনি বহু শক্তিশালী ও ভয়ংকর কালো জাদুচর্চা করেছেন। এছাড়াও তিনি ছিলেন একজন অ্যানিম্যাগাস, যখন ইচ্ছা তখন পাখির রূপ নিতে পারতেন। অ্যানিম্যাগাস হতে হলে পোশন বানানোতে বেশ দক্ষ হতে হয়। পোশন তৈরিতে চুল পরিমাণ গণ্ডগোল বাধলেও ওই জাদুকর আর প্রাণী থেকে মানুষের রূপে ফিরে আসতে পারবেন না। সারাজীবন তাকে কাটাতে হবে অর্ধ-মানব এবং অর্ধ-পশুর সংকর হয়ে। তাই ধরা যায়, তিনি পোশন তৈরিতেও ছিলেন এক কাঠি সরেস। জাদুর মাধ্যমে যেকোনো ক্ষত নিরাময়ের ক্ষমতা ছিল তার। মৃত্যুর প্রায় শতাধিক বছর পর চকোলেট ফ্রগ কার্ডে জায়গা পান তিনি। ১৯৯১ সালে রন উইজলি যে ছয়টি কার্ড সংগ্রহ করেছিল, সেসবের মধ্যে একটি ছিল মরগানার।
র্যাকজিডিয়ান
জনশ্রুতি অনুসারে, পিশাচরূপী ডিমেন্টর বাহিনীকে সাথে নিয়ে বনের গহীনে এক কালো দুর্গে বাস করতেন র্যাকজিডিয়ান। বনের আশেপাশে ছড়িয়ে ছিল দুর্গম উপত্যকা, সেখানে মিলেমিশে সুখে শান্তিতেই বসবাস করত জাদুকররা। হঠাৎ একদিন ইলিয়ানা নামের এক রূপবতী যুবতী বনে এসেছিল জাম কুড়োতে। ইলিয়ানাকে দেখেই প্রেমে পড়ে গেলেন র্যাকজিডিয়ান। ভাবলেন, একেই আমার জীবনসঙ্গিনী বানাতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। ইলিয়ানার বাবা-মায়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালেন র্যাকজিডিয়ান। কিন্তু তারা নাকচ করলেন সেই প্রস্তাব। র্যাকজিডিয়ান হুমকি দিলেন, যদি ইলিয়ানাকে তার হাতে তুলে না দেয়া হয়, তবে তিনি ডিমেন্টর লেলিয়ে পুরো গ্রাম ধ্বংস করে দেবেন।
জাদুকর গ্রামবাসী র্যাকজিডিয়ানের কাছে আত্মসমর্পণের বদলে তাকে প্রতিহত করার ভাবনা বেছে নিল। গ্রামবাসী ডিমেন্টর ঠেকানোর জন্য জাদুর ছড়ি দিয়ে প্যাট্রোনাস তৈরি করল। প্রথমদিকে সম্মিলিত সকল প্যাট্রোনাস ডিমেন্টরদের দমাতে সক্ষম হলেও ডিমেন্টররা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় গ্রামবাসীদের পাল্লা পরাজয়ের দিকে ঝুঁকতে লাগলো। সকল আশা যখন খোলা কর্পূরের মতো উবে যেতে চলেছে, তখন ত্রাতা হিসেবে হাজির হলো ইলিয়াস নামের এতিম এক তরুণ। সে তার ছড়ি থেকে ইঁদুরের এক প্যাট্রোনাস তৈরি করল, যা তাড়িয়ে দিল সকল ডিমেন্টরকে।
ক্রোধের বশে র্যাকজিডিয়ান তখন নিজ ছড়ি উঁচিয়ে একটি প্যাট্রোনাস তৈরি করতে চাইল। উদ্দেশ্য, ইলিয়াসের প্যাট্রোনাসকে বধ করা। কিন্তু জাদু জগতের নিয়ম হলো কালো জাদুর চর্চাকারীরা কখনো নিজ প্যাট্রোনাস বানাতে পারবেন না। বানাতে চাইলে এর উল্টো প্রতিক্রিয়া ওই জাদুকরের উপরেই পড়বে। ছড়ি দিয়ে প্যাট্রোনাস তৈরি হবার বদলে বেরিয়ে এলো একঝাঁক শূককীট, যা সাথে সাথে খেয়ে ফেলল র্যাকজিডিয়ানের শরীরের পুরো মাংস, পড়ে রইলো শুধু তার দেহের অবশিষ্ট হাড়গোড়।
সালাজার স্লিদারিন
যশস্বী জাদুকর সালাজার স্লিদারিন হলেন হাউজ স্লিদারিন, এবং হগওয়ার্টসের চার প্রতিষ্ঠাতার একজন। তার জন্ম ৯৩৪ সালের ৩১ অক্টোবর, দক্ষিণ আয়ারল্যান্ডের এক পিওর ব্লাড জাদুকর পরিবারে। বাবা টারটিয়াস স্লিদারিন এবং মা করডেলিয়া স্লিদারিনের একমাত্র পুত্রসন্তান ছিলেন তিনি। ইলিয়ানা স্লিদারিন নামে ছোট এক বোনও ছিল তার। পিওর ব্লাড বা বিশুদ্ধ রক্তের পরিবারের ছায়ায় বেড়ে ওঠায় ছোটবেলা থেকেই জাদুর সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পান তিনি। সেসময় জাদুকরদের জাদু প্রশিক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ শেখানোর জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা ছিল না। তাই পরিবারের কাছেই ঘরোয়া প্রশিক্ষণে জাদুতে হাতেখড়ি হয় তার। মা-বাবা দুজনেই নিয়মিত কালো জাদুর চর্চা করায় কালো জাদু হয়ে ওঠে সালাজার স্লিদারিনের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। কালো জাদু অনুশীলনের মাধ্যমে ক্রমশ নিজের দক্ষতাকে পাকাপোক্ত করে জাদু জগতে নিজেকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ জাদুকর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন স্লিদারিন।
শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পা দেওয়ার পর এক ভাইকিং তাদের গ্রামে এসে তাণ্ডব শুরু করলে সেসময় বাবা-মাকে হারান তিনি। এতিম স্লিদারিনের মূল দায়িত্ব হয়ে ওঠে তার ছোটবোনের দেখভাল করা। এভাবেই কেটে যেতে লাগল সময়। সবে চব্বিশে পা দিয়েছেন সালাজার স্লিদারিন। তখনই ডাইনী অপবাদ দিয়ে মাগলেরা হত্যা করে ইলিয়ানা স্লিদারিন এবং তার নবজাতককে। আপনজন হারানোর শোক প্রচণ্ড বিমর্ষ করে তোলে সালাজারের মন। সেই থেকেই মাগলদের প্রতি দারুণ ক্ষোভ জন্মায় তার অন্তরে। ক্রমে তা রূপ নেয় ঘৃণায়।
পরিবারের সকলকে হারিয়ে তিনি ইংল্যান্ডের এক জঙ্গলে পাড়ি জমান। ওখানে সাপ নিয়ে সময় কাটাতে লাগলেন তিনি। একসময় তিনি সফলভাবে ব্যাসিলিস্ক ব্রিডিংয়ে সক্ষম হন। এরপর ব্যাসিলিস্কের শিং আর সর্প-কাঠ (স্নেক-উড) দিয়ে তৈরি করলেন শক্তিশালী এক জাদুর ছড়ি। ওই ছড়ির বিশেষত্ব হলো- তিনি সর্প-ভাষায় মন্ত্র ফুঁকে সেটাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখতেন পারতেন। ছোটবেলায় বাবা তাকে গবলিনদের তৈরি এক লকেট উপহার দিয়েছিলেন, যা তিনি সবসময় গলায় পরতেন। এটাই সেই বিখ্যাত স্লিদারিনের লকেট, যেটাকে ভলডেমর্ট হরক্রাক্সে রূপান্তরিত করেছিল। হঠাৎ একদিন তার মোলাকাত হলো ইংল্যান্ডের তৎকালীন বিখ্যাত যোদ্ধা-জাদুকর গড্রিক গ্রিফিন্ডরের সাথে। একে একে পরিচিত হলেন রোয়েনা র্যাভেনক্ল, হেলগা হাফলপাফের সাথে। সময়ের সেরা চার জাদুকর মিলে ৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন জাদুশিক্ষার প্রতিষ্ঠান ‘হগওয়ার্টস স্কুল অভ উইচক্র্যাফট অ্যান্ড উইজার্ড্রি’।
তারপর পুরো স্কুলকে চারটি হাউজ বা শাখায় ভাগ করা হয়। উদ্দেশ্য, চারজন প্রতিষ্ঠাতা তাদের পছন্দের গুণ অনুযায়ী নিজ হাউজে ছাত্র নির্বাচন করবেন।অন্যান্য গুণ থেকে স্লিদারিন সুচতুরতা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, বিশ্বস্ততা ও রক্তের বিশুদ্ধতাকে প্রাধান্য দিতেন বেশি। তিনি পিওর-ব্লাড ছাড়া বাকিদের তেমন পছন্দ করতেন না বলে নিজ হাউজে পিওর-ব্লাড ছাড়া অন্য কোনো শিক্ষার্থীকে ভর্তি করাতে কোনো আগ্রহ দেখাননি। নিজে বিশুদ্ধ রক্তের অধিকারী ও খানিকটা অহংকারী হওয়ায় অর্ধ-বিশুদ্ধ ও অবিশুদ্ধ রক্তের জাদুকরদের ঘৃণা করতেন স্লিদারিন। তার মতে, জাদুবিদ্যা শুধু পিওর-ব্লাডদেরই শেখার অধিকার আছে, আর মাগলবর্নরা হলো জাদুশিক্ষায় অসমর্থ ও বিশ্বাসের অযোগ্য। সেজন্য, পিওর-ব্লাড ছাড়া অন্য কেউ যাতে হগওয়ার্টসের চৌকাঠ মাড়াতে না পারে, সে বিষয়ে তিনি হগওয়ার্টসের বাকি তিনজনের কাছে এক প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
সে প্রস্তাবে হেলগা, গড্রিক, ও রোয়েনা ঘোর আপত্তি করেন। গড্রিক স্লিদারিনের কাছের বন্ধু হওয়ায়, তার সাথে বাকবিতণ্ডা শুরু করেন, যা একপর্যায়ে দ্বন্দ্বযুদ্ধে গিয়ে গড়ায়। যুদ্ধে জয় পান গড্রিক গ্রিফিন্ডর। এরপর চিরকালের জন্য হগওয়ার্টস ত্যাগ করেন সালাজার স্লিদারিন। ব্যাসিলিস্ককে তিনি হাজার বছর ধরে চেম্বার অভ সিক্রেটসে প্রহরায় নিযুক্ত করে রেখেছিলেন।
এ রকম কানাঘুষাও শোনা যায়, স্লিদারিন চেম্বার অভ সিক্রেটস বানিয়েছিলেন মূলত তার হাউজের শিক্ষার্থীদের কালো জাদু বা ডাকিনীবিদ্যা শেখানোর জন্য। তিনি কিলিং কার্স, ইম্পেরিয়াস কার্সসহ অনেকগুলো অমার্জনীয় অভিশাপের ব্যবহার খুব ভালোভাবে জানতেন। জাদু জগতের দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ভলডেমর্টের অনুসারীদের মধ্যে প্রায় সবাই ছিল হাউজ স্লিদারিনের। ধারণা করা হয়, হাউজ স্লিদারিনের শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবেই নিষিদ্ধ জাদুচর্চার প্রতি আগ্রহ দেখায় বেশি।
হারপো দ্য ফাউল
ডার্ক ম্যাজিক নিয়ে আলোচনা যে নাম অবধারিতভাবেই সবার প্রথমে উঠে আসবে সেটা হলো হারপো দ্য ফাউল। উইজার্ডিং ওয়ার্ল্ডের ইতিহাসে সর্বপ্রথম যে ডার্ক উইজার্ডের সন্ধান পাওয়া যায়, তার নাম ‘হারপো দ্য ফাউল’। তিনি ছিলেন ক্লাসিক্যাল পিরিয়ডের (যা শুরু হয়েছিল খ্রিস্টের জন্মের ৫০০ বছর পূর্বে) সামসময়িক একজন জাদুকর।
প্রাচীন যুগে ছিল না কোনো জাদু মন্ত্রণালয় বা জাদু বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব। জাদুকরেরা তাদের সন্তানদের তখন ঘরে বসেই জাদুশিক্ষা দিতেন। কারণ জাদু নিয়ন্ত্রণ করতে না জানলে তা মাঝেমধ্যে মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াত। জাদুর ছড়িটা পর্যন্ত বানাতে হতো নিজেদের। হারপো দ্য ফাউল ডার্ক ম্যাজিক চর্চার দিকে কেন ঝুঁকেছিলেন, সে বিষয়টা এখনো অজানা। কিন্তু জন্মগতভাবেই তিনি ছিলেন একজন পারসলমাউথ অর্থাৎ তিনি সাপের ভাষায় কথা বলতে পারতেন, এবং সেই ভাষা পুরোপুরি বুঝতেন। এক্ষেত্রে তার অধিক মিল লক্ষ্য করা যায় সালাজার স্লিদারিন এবং লর্ড ভল্ডেমর্টের সাথে। জাদুজগতে পারসলমাউথ এমন এক ক্ষমতা, যা বংশপরম্পরায় বাহিত হয়। সেই হিসেবে, অনেকে সালাজার স্লিদারিনকে হারপো দ্য ফাউলের উত্তরসূরি বলে মনে করেন। পারসলটাংয়ের ক্ষমতা গন্ট পরিবারের সবার মধ্যেও ছিল।
জাদুজগতে সর্বপ্রথম সফলভাবে হরক্রাক্স তৈরিতে সফল হন হারপো দ্য ফাউল। হারপোর আগেও হয়তো হরক্রাক্স বানানোর নিয়ম জাদুকরদের জানা ছিল, কিন্তু কেউ সফল হতে পারেনি। সঠিক নিয়ম প্রয়োগের মাধ্যমে হরক্রাক্স তৈরিতে সফল হবার দরুন হারপো দ্য ফাউলকেই প্রথম সফল হরক্রাক্স নির্মাতা হিসেবে গণ্য করা হয়। এজন্য তিনি ডার্ক ম্যাজিক নিয়ে প্রচুর গবেষণা করেছেন। পুরো জীবন তিনি ব্যয় করেছেন ডার্ক ম্যাজিক নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটির পেছনে। জীবদ্দশায় তিনি বহু ডার্ক কার্স তৈরি করে রেখে গেছেন।
হারপো অমর হবার উদ্দেশ্যে তার আত্মাকে পুরে রেখেছিলেন শুধু একটা হরক্রাক্সেই। তিনি ঠিক কোন জিনিসকে হরক্রাক্সে রূপান্তরিত করেছিলেন, বা সেটা ঠিক কোথায় লুকানো ছিল সেই হদিস পাওয়া যায়নি। জনশ্রুতি আছে, তিনি এই হরক্রাক্স বানানোর জন্য এক মাগলকে হত্যা করেছিলেন। এভাবেই কালো জাদু, হিংস্রতা আর নিজ দক্ষতার সংমিশ্রণে তিনি হয়ে ওঠেন অমর। ফলে তার দেহ পৃথিবী থেকে বিলীন হয়ে গেলেও তিনি ভবঘুরে আত্মা নিয়ে চষে বেড়াতে পারবেন এই পৃথিবী।
হারপো দ্য ফাউল সম্পর্কে একটু অংশ উঠে এসেছে হ্যারি পটার সিরিজের প্রিকুয়েল ‘ফ্যান্টাস্টিক বিস্টস অ্যান্ড হোয়ার টু ফাইন্ড দেম’ বইয়ে। সেখানে হাফলপাফের উইজার্ড নিউট স্ক্যামান্ডার বলেছিল,
জাদু জগতের ইতিহাসে প্রথম ব্যাসিলিস্ক ব্রিডিংয়ের নজির পাওয়া যায় হারপো দ্য ফাউলের কাছে। তিনি ছিলেন একজন গ্রিক ডার্ক উইজার্ড এবং পারসলমাউথ (সর্প-ভাষা জানা লোক)। প্রচুর পরীক্ষানিরীক্ষার পর তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, একটি মুরগির ডিমকে ব্যাঙের নিচে তা দিলে সেটা ফুটে অতি দানবীয় ক্ষমতাসম্পন্ন এক রাক্ষুসে সাপের জন্ম হয়।
তার সৃষ্টি করা ব্যাসিলিস্ককে তিনি পারসলটাংয়ের মাধ্যমে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন। বলতে গেলে, হারপোর কাছে ব্যাসিলিস্ক ছিল এক পোষা প্রাণীর মতো। ধারণা করা হয়, ব্রিডিং করা ব্যাসিলিস্ক প্রায় ৯০০ বছরের মতো বেঁচে থাকতে পারত। হারপো দ্য ফাউল স্বাভাবিকভাবেই মারা গিয়েছেন, নাকি তার হরক্রাক্স ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল তা এখনও জানা যায়নি। যদি হরক্রাক্স ধ্বংস না করা হয়ে থাকে, তবে তিনি এখনও জাদুজগতে বেঁচে আছেন খুবই বিধ্বস্ত অবস্থায়।