গল্প- সাহিত্যের এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গল্প বলতেই যেন বোঝায় ছোটগল্প। আর ছোটগল্পের সংজ্ঞা? সে তো বিস্তর এক সাহিত্যিক তর্ক-বিতর্কের ব্যাপার। তবে এডগার অ্যালান পো জানান, আধাঘণ্টা থেকে দু’ঘণ্টার মধ্যে যে রচনা এক নিমেষে পড়ে শেষ করা যায়, তাকেই ছোটগল্প বলা যেতে পারে। অথবা যেকোনো সাহিত্যই যদি একবসায় পড়ে ফেলা যায়, তাকেও ছোটগল্প বলা যেতেই পারে। আবার রবীন্দ্রনাথ সুর করে ছোটগল্পের সংজ্ঞায় বলেন –
অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে
শেষ হয়েও হইল না শেষ।
সংজ্ঞায় সীমাবদ্ধ না থেকে বরং চলে যাওয়া যাক অন্য প্রসঙ্গে। ছোটগল্প বাস্তব জীবনের খণ্ডিত অংশ কিংবা পুরো জীবনের সামগ্রিক চিত্র বিশেষ। বাহুল্য বর্জিত, সীমাবদ্ধ চরিত্র আর সীমিত পরিসরের সাহিত্যকর্ম হিসেবেই প্রসিদ্ধ ছোটগল্প। কিন্তু এর ব্যাপকতা বিশাল আর বিস্তৃত। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যাপকতা আর বিশালতার পরিমাপ করাটাও অনুমানের বাইরে। একটা বিন্দু অণু থেকে মহাবিশ্বের যে ব্যাপকতা, তেমনই একটি ছোটগল্পে যেন বিন্দুতে সিন্ধুর বিশালতা।
তরুণ এবং সদ্য গল্পকারের খাতায় নিজের নাম লেখানো ওয়াসি আহমেদের গল্পগুলোতে ফুটে উঠেছে তেমনই চেনা জগতের পরাবাস্তব দিকগুলো। মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা, পারিপার্শ্বিক পরাবাস্তবতা, বিকৃত মানসিকতার অবিকৃত উপস্থাপনা, কালোত্তীর্ণ আধিভৌতিকতা, দর্শন কপচানো বিকৃত মানসিকতা, নাগরিক জঞ্জালের ভিড়ে এক টুকরো মিথ্যে আশ্বাস, অতীব আবেগঘন এক প্রণয়াকাঙ্ক্ষা, বাস্তব জীবনের অবান্তর এক গল্প, আতঙ্কের ফাঁসে আটকে পড়া মানবজনম, বাস্তব জীবনের চিরাচরিত নিয়তি এবং প্রতীকী গল্পের বাজেভাবে উপস্থাপন।
কুমারী, উত্তর দাও তুমি
যে বাক্য অশ্রুত অন্ধকার
আমার হৃদয় প্রবল ঝোঁকে
চাপ দেয় তোমার হৃদয়ে!
যদি কখনও দেখি রূপান্তরে তোমার অস্থিরতা
তবে সেই অস্থিরতায়
আমি তোমাকে প্রেমের আগে
তোমার প্রেমকে ভালবাসি।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অনূদিত ফরাসী কবি রেনে গী কাদুর কবিতার পঙক্তি হয়ে উঠেছে ওয়াসি আহমেদের গল্পগ্রন্থের শিরোনাম। এই কবিতাকেই প্রেমময় এক আবেগঘন গানে রূপ দিয়েছে মেঘদল ব্যান্ড। যে গানের প্রতিটা শব্দ, সুর আর তাল শ্রোতাকে অদ্ভুত এক ঘোরলাগা ভাব উপহার দেয়। যেন সেই ঘোরলাগা ভাবটাকে মেঘদলের কাছ থেকে ধার নিতেই লেখকের এই প্রয়াস। শিরোনামের সঙ্গে প্রচ্ছদে ফুটে উঠেছে গল্পের আবহ। সবজেটে রঙের মলাটটা তাই মানানসই হয়ে গেছে শিরোনামের সঙ্গে, এমনকি গল্প বলার ঢঙে।
রহস্যে ঘেরা, নাটকীয়তায় পূর্ণ, পারিপার্শ্বিক জীবনযাপনে পরিপূর্ণ এগারটি গল্পকে এক সুতোয় বোনা গল্পগ্রন্থ – যে বাক্য অশ্রুত অন্ধকার। কখনো রহস্য, কখনোবা পারিপার্শ্বিক জীবন, কখনো রোমাঞ্চ, কখনোবা আধিভৌতিকতা, অথবা পরাবাস্তবতার জালে বোনা গল্পগুলোতে, উত্তেজনার উত্থানপতন হলেও ভাষাগত দক্ষতার প্রয়োগ হয়েছে ব্যাপকভাবে। আর তারই খানিকটা প্রমাণ হয়তো লেখক দিতে চেয়েছিলেন প্রচ্ছদপটে –
কেন এক কাকভেজা ভোরে আব্দুল মোত্তালেবের লোমশ পাজোড়া শূন্যে ঝুলে থাকে? চর্যাপদের আদি কবি লুইপার সাথে এক বৃষ্টিভেজা অন্ধকার সন্ধ্যায় নীলক্ষেতে আটকে পড়া কয়েকজন যুবকের কী সম্পর্ক? মধ্যদুপুরে জনৈক গৃহিণীর জীর্ণশীর্ণ হাত জানালার বাইরে কাকে খোঁজে? অবিরাম জ্বরের দিনগুলোতে শহরের রাস্তায় হয় কোন সে আগন্তুক?
বৈচিত্র্যময় ১১টি গল্প নিয়ে সাজানো মাত্র ৯৬ পৃষ্ঠার গল্পগ্রন্থটি ওয়াসি আহমেদের প্রথম গল্পসংকলন। প্রথম গল্পগ্রন্থ হলেও গল্পগুলো যে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে অতীব উজ্জ্বল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পাঠক যেন গ্রন্থটি পড়া শেষে বিন্দুমাত্র অনুশোচনায় না ভোগেন, সে চেষ্টার ছাপ স্পষ্ট লেখকের লেখনশৈলী আর বর্ণনাভঙ্গিতে। গল্পের পটভূমি ভালো লাগতেই হবে, এমন ধারণায় বদ্ধমূল না থেকে, বরং লেখক গল্পের পটভূমিটাকে নিজস্ব ভঙ্গিমায় উপস্থাপনে জোর চেষ্টা চালিয়েছেন। আর এই ব্যাপারটাই পাঠকের কাছে দারুণ উপভোগ্য মনে হবে।
চেষ্টা আর ত্রুটিতে আবদ্ধ না থেকে বরং গল্পের ভুবন পরিভ্রমণে বের হওয়া যাক এবার। শুরুতেই আসে সংক্ষোভ নামক গল্পটি। গল্পটা এক দম্পতির। খানিকটা পশ ধাঁচের উচ্চ-মধ্যবিত্ত দম্পতির ঘরে ছোটাছুটি করে তাদের একমাত্র কন্যাসন্তান। তারপর, ঘর আলোকিত করে আরেক ফুটফুটে শিশু। বাবা-মায়ের সমান পাল্লায় বাটা আদর যেন তখন ঊনিশ-বিশ হয়ে উঠে সন্তানের চোখেই। শিশুদের মনস্তত্ত্ব নিয়ে লেখা এই গল্পটা লেখকের পেশাগত দায়বদ্ধতার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গাটাকেও যেন সূক্ষ্ম ইশারা দেয়। গল্পটা আদতে তরুণ দম্পতির সুখের পরিমাপ নিয়ে শুরু হলেও, শেষটা ধক করে এসে গলার কাছে মাছের কাঁটার মতো অসাবধানতায় আটকে যায়।
‘জীবনের এইসব নিভৃত কুহক’ গল্পটি যেন পারিপার্শ্বিক জীবনের অন্তরালে রয়ে যাওয়া বাস্তবিক সত্যের এক কল্পিত উপস্থাপন মাত্র। খাঁচায় বন্দী এক মধ্যবয়সী গৃহিণীর একাকিত্বের সঙ্গী হওয়া মানুষগুলো, পারিপার্শ্বিকতা এবং মুহূর্তগুলো ফুটে উঠেছে যেন গল্প নামক এক দুঃখী কবিতার আত্মায়। শৈশবের একাকীত্ব, কৈশোরের ক্ষোভ আর বিপন্ন যৌবনের দগ্ধতাকে সঙ্গী করে ফেরা এক শিল্পীর গল্প- ‘একজন ব্যাধিগ্রস্ত মানুষ’। নার্সিসিজমের চরম মাত্রায় পৌঁছেও সহজাত প্রবৃত্তির বশে যার মুখ ফুটে বেরিয়ে আসে –
“বিশ্বাস কর, আমি এরকম হতে চাইনি…!!”
নীলক্ষেতে এক বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যায় আটকে পড়া চার যুবক এক বৃদ্ধের মুখে শোনে হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাস। নীলক্ষেতের বদ্ধ চার দেয়ালের দোকান থেকে বৃদ্ধ তাদের নিয়ে যান চর্যাপদের আদি কবি লুইপার রহস্যময় জীবনে। গল্পটি যে ইতিহাসনির্ভর আর অসাধারণ তথ্যবহুল, তা যেন গল্পের নামেই প্রকাশ পায়, ‘কাআ তরুবর পাঞ্চ বি ডাল’।
‘বিকৃতি’ গল্পটি এক যুবকের। সে যুবক একদিন গ্রামে গিয়ে এক ভণ্ড কবিরাজের সন্ধান পায়। চিকিৎসার অভাবে মৃতপ্রায় তার মেয়ের জন্য মায়া জাগে তার মনের উপরিতলে। একইভাবে আবার মনের ভূতলে সদা জেগে আছে প্রেমিকার খুশি আর সমাজের চোখে তথাকথিত ব্যক্তিত্ব প্রকাশের সুযোগের সদ্ব্যবহার। ভিন্ন জগতের দুই বাসিন্দার অভিন্ন বিকৃত মানসিকতার পরিচয়টাই মেলে ধরেছেন লেখক এই গল্পে।
শহর জুড়ে জ্বরের আধিপত্য। সেই অবিরাম জ্বরের দিনগুলোতেই শহরে এসে হাজির হয় এক আগন্তুক। যাকে অনেকেই চেনে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা নামে। জ্বরের উপসর্গ দৃশ্যমান; জ্বর তাড়াতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আগন্তুক; কিন্তু শহরের অভিভাবক যে সেই পুরনো গল্পেরই নগরপিতা, তা যেন বেমালুল ভুলে গিয়েছিল সে। এমনই কল্পিত গল্পের শিরোনাম- ‘জ্বরের দিনগুলোতে এক কাল্পনিক নগরীর মিথ্যা উপাখ্যান’।
সাত একটি অদ্ভুত সংখ্যা। কেননা, নরক, মহাপাপ, রংধনু, দিন এবং মহাদেশের সংখ্যা সাত। একইসঙ্গে সৌভাগ্য আর দুর্ভাগ্যের প্রতীক সাত। এরকমই সাত সংখ্যায় নির্ভর করে সাত বছর আগেকার এক গল্প রচিত হয়েছে ‘সাতটি তারার তিমির’ শিরোনামে। শুদ্ধতম কবি জীবনানন্দ দাসের কবিতার পঙক্তি গল্পের শিরোনাম হিসেবে বাছাই করে নেয়ার পেছনেও যেন লেখকের স্বপ্রণোদিত উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে। সম্পর্কের জটিলতা, সঙ্গী হারানোর বেদনা, বিষণ্ণতা, বিষাদের সুর আর একাকীত্বের দর্শনগুলো যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে রোমান্টিকতার গহিনে।
জহিরের মৃত্যু খবরটা বয়ে নিয়ে আসে একদল কাক। এনে সেই খবর দেয় মৃত্যু নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকা আবদুল মোত্তালেবকে। দু’জনের মৃত্যু কারণ ভিন্ন হলেও তাদের সত্ত্বায় এক অভিন্ন সুতোর টান। আর সে টানের ব্যাখ্যাটা ‘অবান্তর অথচ অকাট্য’, যেমন গল্পের শিরোনাম। আধিভৌতিক নাকি পরাবাস্তব, এমনই এক দুষ্টচক্রে আবদ্ধ স্বয়ং ‘চক্র’ গল্পটি। জাহিনের জীবনটা খুব কষ্টের। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অদ্ভুত এক কষ্ট তাকে চারদিক থেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে। তবে এসবকিছুর উর্ধ্বে যে তার জীবনটা এক দুষ্টচক্রে আবদ্ধ, তা কি জাহিন জানে?
‘নিয়তি’ তিনজন মানুষের নিয়তিকে কেন্দ্র করেই রচিত। আসগর রশীদ সম্পত্তির পাহাড়ের উপর বসে সুখের সংসার রেখে যান ক্ষণিক বিনোদনের গহিনে। ত্রিমুখী এই জীবনযাপনে অভ্যস্ত আসগর রশীদকে অনভ্যস্ত করতে কেউ একজন আসে ব্ল্যাকমেইল করার ছলে। অপরের জন্য খোঁড়া কুয়ায় নিজেকেই পড়তে হয়, যদি উদ্দেশ্য মহৎ না হয়। আর সবশেষে রয়ে যায় ‘তিনটি বাজে গল্প’। প্রতীকী গল্পের ছলে বলা এই কল্পকাহিনীগুলো ভাবনার খোরাক যোগায়। আদিমতার উত্থান, প্রকৃতির ভারসাম্য এবং নির্মম বাস্তবতার সত্যতা প্রকাশ যেন গল্পগুলো্র অন্তরাল থেকে মাথা উঁচু করে উঁকি দেয় পাঠকের উদ্দেশে।
লেখককে ওয়াসি আহমেদ রাফি নামেই বেশ ভালোভাবে চেনা যাবে। কেননা, ওয়াসি আহমেদ নামে আরো একজন লেখক রয়েছেন আমাদের সাহিত্য প্রাঙ্গণে। পেশায় ডাক্তার, অথচ একমাত্র নেশা বই সংগ্রহ করা এবং বই পড়া। পাশাপাশি গান-বাজনা আর ফটোগ্রাফির ঝোঁক আছে। তবে তা বই সংগ্রহ আর পড়ার মতো নেশায় রূপান্তর হতে পারেনি। কথিত আছে, ওয়াসি আহমেদ রাফির ঘরে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ হাজার বই মজুত আছে। প্রতিবছর গুডরিডসে ২০০-২৫০ বই পড়ার চ্যালেঞ্জ সফলভাবে সম্পন্ন করা একজন পাঠকের ঘরের অবস্থা অমনই হবার কথা।
ওয়াসি আহমেদ রাফি সমসাময়িক সাহিত্য অঙ্গনে পরিচিত নাম একজন পড়ুয়া পাঠক এবং সফল অনুবাদক হিসেবে। এমনকি প্রথম মৌলিক উপন্যাস আঁধারের গহীন নিরুদ্দেশে অর্জন করেছেন পাঠকপ্রিয়তা তরুণ পাঠকদের কাছে। দ্বিতীয় উপন্যাস ‘চমৎকার ধরা যাক দু’-একটা ইঁদুর’ এবার শীঘ্রই প্রকাশিতব্য। ‘যে বাক্য অশ্রুত অন্ধকার’ তার প্রথম গল্প সংকলন।
পুরোদস্তুর লেখক হয়ে ওঠার আগে একজন পুরোদস্তুর পাঠক হতে হয়, এমনটা বলা হয়ে থাকে। তবে ব্যাপারটা কেবলই অনুমানের ভিত্তিতে পূর্ণ। ওয়াসি আহমেদ যে পুরোদস্তুর একজন পাঠক, তা তো আগেই বলা হয়েছে। তবে পুরোদস্তুর একজন লেখক না হলেও, ওয়াসি যে সে পথেই হাঁটছেন, তার প্রমাণ এই গল্পগ্রন্থ। তার লেখনশৈলীর বৈশিষ্ট্য এবং স্বতন্ত্রতা ইতোমধ্যেই তার প্রথম মৌলিক উপন্যাসকেও অতিক্রম করে গিয়েছে।
ওয়াসির সৃষ্ট চরিত্রগুলো বেশ স্বতঃফূর্ত আর প্রাণবন্ত। চরিত্রগুলোই এমন যে মনে হয় – “আরে গতকালই তো জাহিনকে দেখলাম ধানমন্ডি লেকের পাড়ে বসে সিগারেট ফুঁকছে” অথবা “নীলক্ষেতের সেই ঘুপচি গলির চায়ের দোকানের পেটমোটা বেড়ালটা সেদিনই এসে পায়ের সঙ্গে শরীর ঘষটে আদর চাইল”। খুবই পরিচিত চরিত্রগুলোকে এনে দাঁড় করিয়েছেন ওয়াসি তার গল্পের প্রাঙ্গণে।
চরিত্রের পাশাপাশি আরেকটা বিষয় পাঠককে ভাবাবে- গল্পের প্রেক্ষাপট। চেনা গলি, জানা পরিবেশ ধরে হেঁটে চলে গল্প। যেন পাড়ার মোড়ের কোনো টংয়ে বসে কারো মুখ থেকে গল্প শোনা। আর ঠিক সেই চেনা গল্পেই জোর করে মিশে যায় অচেনা অতিপ্রাকৃত বা পরাবাস্তব কোনো উপাদান। অথচ বাস্তব আর পরাবাস্তবের এই দোলাচল, মুহূর্তে মিলিয়ে যায় গল্পে। যেমনটা চিনি নিমেষেই মিলিয়ে যায় গরম লিকারে।
অথচ তা সত্ত্বেও, পাঠকরা এই গল্পগ্রন্থ পড়ার সময় অনিচ্ছায় বা অসতর্কতার বশে গরম চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে জিভে ছ্যাঁক খাওয়ার মতো অসন্তুষ্ট হতে পারেন। অথবা মিষ্টি ভেবে চুমুক দিয়ে তিক্ততার অনুভূতিতেও পর্যবসিত হতে পারেন। কেননা, কয়েকটা গল্প খুব বেশি চেনা, খুব বেশি জানা, খুব বেশি অনুমেয়। আবার কোনো কোনোটা দুর্বোধ্য ঠেকে। এমতাবস্থায় পাঠকের বিরক্তির উদ্রেক ঘটে।
সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে একজন লেখকের দায়িত্ব থাকে সামগ্রিক প্রেক্ষাপটের বর্তমান চিত্রের বর্ণনা। যেটা তিনি করেছেন অনায়াসেই গল্পের মধ্যে ডুবে গিয়ে। যেন সেই বার্তাটা গল্পের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। অবিরাম মৃত্যুর দিনগুলোতে কাল্পনিক এক আগন্তুকের আগমন ঘটিয়েছেন শহরের রাজপথে। বিশ্লেষণ করেছেন বর্তমান প্রেক্ষাপট। আবার তিনি বলে গেছেন মানুষের চিরাচরিত স্বভাবের কথা। পশ্চাৎদেশের ন্যায় দ্বিখণ্ডিত আবেগের কথা। অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে উচ্চবাচ্য করা যায় ঠিকই; কিন্তু সেসবের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া যায় না। তার চাইতে বরং ব্যাপারটাকে ভুলে যাওয়াটাই চিরাচরিত নিয়মের ঐতিহ্যে পর্যবসিত হয়। সেসবই কথাই লেখক মনে করিয়ে দেয় এমন বাক্যে –
চৈত্রের শুরুতে কালবৈশাখী বলে-কয়ে আসে না। প্রতিবছর একই কাণ্ড ঘটে, তবু আমরা ভুলে যাই। ঠিক যেভাবে আমরা ভুলে যাই দেশের বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিকাণ্ড, খুন, ধর্ষণ কিংবা জালিয়াতির কথা। ভুলে গিয়ে হয়তো আমরা শান্তি পেতে চাই, চাই অস্থিরতা দূর করতে। নিজেকে বোঝাই, ভালো আছি। এই ভুলে যাওয়া আমাদের মজ্জাগত স্বভাব।
তবু মানুষের উপর রয়ে গেছে তার আস্থা, কারণ-
“একমাত্র মানুষই তো পারে আরেকজন মানুষকে আপন করে নিতে”।
বই: যে বাক্য অশ্রুত অন্ধকার (গল্পগ্রন্থ)
লেখক: ওয়াসি আহমেদ
প্রচ্ছদ: সজল চৌধুরী
প্রকাশক: অবসর প্রকাশনা সংস্থা
পৃষ্ঠা: ৯৫
মলাট মূল্য: ১৮০/- টাকা মাত্র
যে বাক্য অশ্রুত অন্ধকার বইটি পেতে লিংকে ক্লিক করুন।