“কোথায় এ খাকি চত্বর?
খাকি চত্বর সূর্য থেকে ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে। কাছাকাছি শুক্র আছে, বুধ আছে। এই চত্বরে ২৪ ঘণ্টায় দিন হয় রাত্রি হয়। এখানে বর্ষা আসে, আসে হেমন্ত। পাখিও উড়ে যায় সেখানে। সত্যি বলতে এ চত্বর পৃথিবী গ্রহের ভেতরেই কিন্তু নিজেই স্বতন্ত্র একটা গ্রহ যেন। অন্যরকম জীবন সেখানে। অন্যরকম অধিবাসী। এ চত্বরে অগণিত অর্বাচীন বালক খাকি পোশাক পরে পিঁপড়ার মতো সারিবেঁধে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যায়। নানারকম কাণ্ড করে তারা। এখানে খুব ভোরে যখন ঘণ্টা বেজে ওঠে তখন একটা সাদা রেখা আকাশকে দিন ও রাত্রিতে ভাগ করছে। ঘণ্টা শুনে ধড়মড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়ে বালকরা। তারা জানে যে, ঘড়িতে তখন বাজে ভোর ৫টা ৫। তাদের হাতে সময় মাত্র ২৫ মিনিট। ভোরের আলো তখনও ফোটেনি।”
ক্যাডেট কলেজ জীবনের স্মৃতিচারণ করে এ পর্যন্ত যে ক’টি গ্রন্থ রচিত হয়েছে তাদের মধ্যে অনন্য স্থান দখল করে আছে শাহাদুজ্জামানের ‘খাকি চত্বরের খোয়ারি’। খাকি পোশাক পরা ক্যাডেটদের আবাসস্থল ক্যাডেট কলেজকে লেখক এখানে ‘খাকি চত্বর’ বলে অভিহিত করেছেন এবং সেই খাকি চত্বরের বৈচিত্র্যময় জীবনপ্রবাহের গল্পই বর্ণিত হয়েছে এই স্মৃতিময় গ্রন্থটিতে। ২০১৩ সালের জুনে বেঙ্গল পাবলিকেশনস থেকে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়।
সমসাময়িক বাংলা সাহিত্যে একটি সুপরিচিত নাম শাহাদুজ্জামান। সাহিত্যের নিয়মতান্ত্রিক বা গতানুগতিক ধারায় না চলে তিনি হাঁটতে চেয়েছেন ভিন্ন পথে। এই বইটির ভাষায়ও তার স্বাতন্ত্র্য এবং অভিনবত্ব পুরোমাত্রায় পরিলক্ষিত হয়। লেখক তার ক্যাডেট কলেজ জীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কোন স্থান, সাল বা তারিখের বাঁধনে সময়কে আটকাতে চাননি, বরং এর গল্পটি প্রবাহিত হয়েছে আপন গতিতে।
বইয়ের শুরুতেই লেখক শুনিয়েছেন তার ‘খাকি চত্বরে’ আটকা পড়ার গল্প। বাবার ছিল বদলির চাকরি। বছর বছর স্কুল বদলানোর ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে খাকি চত্বরের টিকিট পাওয়ার দুর্গম লড়াইয়ে নামতে হলো তাকে। মেধা এবং শরীর যাচাই করে পরীক্ষকরা দেখতে পেলেন ‘একজন ভবিষ্যৎ নেতা হওয়ার সুস্বাদু সম্ভাবনা’ আছে তার ভেতর। অতঃপর হরিণের মতো শিকার হলেন তিনি।
খাকি চত্বরের দৈনন্দিন জীবন এবং বিচিত্র কর্মকাণ্ডকে লেখক ধীরে ধীরে ফুটিয়ে তুলেছেন তার নিজস্ব ভঙ্গিতে। অজস্র রূপক এবং উপমার ব্যবহার কখনো হাস্যরসের জন্ম দেয়, আবার কিশোর হৃদয়ের অজানা গল্পগুলো কখনো হাহাকার সৃষ্টি করে। ক্যাডেট কলেজে ক্লাস সেভেন থেকে টুয়েলভ পর্যন্ত ছয়টি বছর এই একই জীবন যারা পার করে এসেছে তাদেরকে করে স্মৃতিকাতর।
ধীরে ধীরে আমরা পরিচিত হই লেখকের বন্ধুদের সাথে। ‘ক্রিম’ ইফতি, ‘ন্যাত্রকোণার’ ‘কুজ’ সোবহান , ‘কসকো’ রাজিব, ‘সক্রেটিস’ মিলন, ‘বোতল’ রুমি অথবা চশমা পরা লেখকের নিজের নাম কিভাবে ‘চারচোখ’ হয়ে গেল, তার সূক্ষ্ম সরস বর্ণনা বইটিকে উপভোগ্য করে তোলে।
বাবা মাকে ছেড়ে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার প্রতিকূল যাত্রা, বা একসাথে চলতে চলতে কতিপয় কিশোরের হৃদয়ের আত্মিক বন্ধন সৃষ্টি হওয়ার এই বিষয়গুলো ক্যাডেট কলেজ বা যে কোন আবাসিক স্কুলের ছেলের জীবনের একটি অংশ। কাজেই লেখক তার বন্ধুদের যে গল্পগুলো বলেন, তার মাঝে আমাদের নিজেদেরকেই খুঁজে পাই। রুমির মত প্রচণ্ড দুষ্টু একটি ছেলে যে সারাক্ষণ তার বিচিত্র কর্মকাণ্ড দিয়ে বন্ধুদেরকে মাতিয়ে রাখে, ক্ষেত্রবিশেষে শিক্ষকদেরকে নানাভাবে অপদস্থ করে, প্রতিটি ক্লাসেই এমন দু’একজন উপস্থিত থাকে। আবার মিলনের মত চিন্তাশীল গম্ভীর কোন ছেলে, যাকে লেখকের বন্ধুরা ‘সক্রেটিস’ বলে ডাকে, সেও তো আমাদের মাঝেই বাস করে। ধীরে ধীরে এই গল্পগুলো তাই আমাদের অনেক বেশি কাছের, অনেক বেশি আপন হয়ে ওঠে।
ক্যাডেট কলেজে নিয়মকানুনের কড়াকড়ি এবং সেই নিয়ম ভাঙার কারণ লেখক যেভাবে ব্যাখ্যা করেন, তা আমাদেরকে মুগ্ধ করে। লেখক বলেন,
“ক্ষুদে খাকিদের বেলায় অনেক অপরাধই ঘটতো নেহাত অমনোযোগে, অবহেলায়। কিন্তু সিনিয়র হওয়ার পর অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষুদে খাকিরা পরিকল্পিতভাবে নিয়মভঙ্গ করতো। কথা তো এই যে, যেখানে ক্ষমতার চর্চা থাকে সেখানে ক্ষমতাকে উপেক্ষা করার একটা চর্চাও থাকে সবসময়। নিয়মের জাঁতাকলে পড়ে দুর্বলরা যখন বোঝে নিয়ম পালটানোর কোনো ক্ষমতা তাদের নেই, তখন তারা নিয়ম ভেঙে একধরনের প্রতিবাদ করে।”
নিয়মভাঙার এইসব বিচিত্র চর্চা, যেমন কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে কাঁঠাল পেড়ে খাওয়া অথবা কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী সৃষ্টি করে সিগারেট খাওয়ার গল্পগুলো ক্যাডেট কলেজের প্রত্যেক ছেলের স্মৃতিকে উসকে দেয়। কাজেই এই বিচিত্র দুষ্টুমির গল্পগুলো পড়তে পড়তে প্রত্যেকেই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ে। মনে হয় ক্যাডেট কলেজগুলো কখনো বদলায় না, এর কোণায় কোণায় মিশে থাকা গল্পগুলো চিরদিনই একই রকম থেকে যায়।
লেখক যখন মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে প্রবেশ করেন, তখন দেশ স্বাধীন হওয়ার সবেমাত্র দু’ বছর পেরিয়েছে। দেশের রাজনীতিতে ঘটতে থাকা বিচিত্র ঘটনা থেকে ক্যাডেট কলেজগুলোকে দূরে রাখার চেষ্টা সত্ত্বেও খাকি চত্বরে মাঝেমাঝে তার দোলা লাগে। এমন কিছু কিছু ঘটনা প্রত্যেক পাঠককেই স্পর্শ করে। যেমন,
“মনে আছে একবার আমাদের চত্বর থেকে তিনটি রাইফেল চুরি হলো। আমাদের যারা সেনাবাহিনীতে যেতে ইচ্ছুক তারা অনেকেই মিলিটারি সায়েন্স বলে একটি বিষয়ে পড়াশোনা করতো। তাদের ডেমনস্ট্রেশনের জন্য চত্বরে কয়েকটি সত্যিকার রাইফেল ছিল। একদিন শুনলাম রাতের অন্ধকারে স্টোর ভেঙে কারা যেন সেই অস্ত্র চুরি করেছে। এর দুদিন পরেই আমাদের হাউসের কালচারাল ক্যাপ্টেন টুয়েলভ ক্লাসের হারুন ভাইকে চত্বর থেকে বহিষ্কার করা হলো। আমরা শুনতে পেলাম, ওই অস্ত্র লুটের সঙ্গে তিনি জড়িত। পরে জানলাম তিনি সর্বহারা পার্টি নামে একটি গোপন দলের সদস্য ছিলেন। ব্যাপারটা তখন খুব রহস্যময় ছিল আমাদের কাছে।”
অথবা
“একসময় দেখলাম আমাদের ডিনারের বিলাসবহুল মেন্যুতে পরিবর্তন এসেছে। …প্রতিদিন আটার রুটি দেওয়া হচ্ছে। জানতে পেলাম দেশে দুর্ভিক্ষ অবস্থা বিরাজ করছে সুতরাং খাওয়ার মেন্যুতে পরিবর্তন আসবে। খাবার তালিকার এই পরিবর্তনে আমরা বেশ বিরক্তই হলাম। মনে আছে একবার ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের রাতে আমাদের রুটি দেওয়া হলো। সবাই খুব ক্ষুব্ধ। পরদিন প্রেপ টাইমে রুমি বোর্ডে একটি ছবি আঁকে। বোর্ডে প্রিন্সিপালের ছবি এঁকে তার গলার চারপাশে সে এঁকে দেয় একটি দড়ি। ছবি আঁকা শেষ করে করিডোরে গিয়ে এক ফাঁকে দেখে আসে ডিউটি স্যার আসছেন কিনা। তারপর সবার সামনে দাঁড়িয়ে বলে, ‘আমি এই রায় ঘোষণা করছি যে, প্রিন্সিপালকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হোক।’ তারপর সে বক্তৃতার মতো করে বলে, ‘যে ভাতের জন্য আমরা লড়াই করে এদেশের বিজয় ছিনিয়ে এনেছি সেই বিজয় দিবসে আমাদের কিনা খেতে দেওয়া হলো পাকিস্তানিদের খাওয়া রুটি? এটা দেশদ্রোহিতার শামিল, ফলে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে।”
এভাবে একটা বিশেষ সময়কেও ধারণ করে আছে শাহাদুজ্জামানের এই ‘খাকি চত্বরের খোয়ারি’।
গভীর অনুরাগ বা মুগ্ধতা দ্বারা তাড়িত হয়ে ক্যাডেট কলেজকে দেখার চেয়ে তার জীবনের ঐ অংশটিকে বেশ নিরাসক্তভাবে এবং দূর থেকে দেখার একটি প্রচেষ্টা গ্রন্থটিতে লক্ষ করা যায়। সাধারণত স্মৃতিগ্রন্থগুলোতে লেখকরা তাদের জীবনের অপ্রীতিকর বা অস্বস্তিকর মুহূর্তগুলোকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, তবে শাহাদুজ্জামান এ গ্রন্থে স্বাতন্ত্র্যের পরিচয় দিয়েছেন।
আর্থিকভাবে সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে উঠে আসা ক্যাডেটদেরকে একই জীবনে মেলানোর চেষ্টা করলেও প্যারেন্টসডেগুলোতে সেই পার্থক্য নগ্ন হওয়ার নির্মম বর্ণনা দিয়েছেন লেখক,
“কখনো-কখনো আমাদের পারস্পরিক ভেদাভেদ হয়ে উঠতো প্রকাশ্য। যেমন প্যারেন্টস ডেতে। প্যারেন্টস ডের দিন আমাদের মাঠে বিরাট প্যান্ডেল টানানো হতো। ওইদিন সবার বাবা-মা দেখা করতে আসতেন তাদের ছেলেদের সঙ্গে। প্যান্ডেলে এসে বসতেন তারা। দেখা যেত কারো বাবা-মা আসছেন টয়োটা, ভক্সওয়াগন, ল্যান্ডরোভার গাড়িতে চড়ে, কেউ বা আসছেন বাস, স্কুটারে চেপে। কারো বাড়ি থেকে আসতো প্যাস্ট্রি, নেসেসতার হালুয়া, কারো বাড়ি থেকে চিতই পিঠা, নারকেলের নাড়ু–। … পোশাকের বৈচিত্র্যেও ঘটত শ্রেণিভেদের প্রদর্শনী। অনেকের মায়ের গায়ে থাকতো মূল্যবান শাড়ি, দামি অলঙ্কার, অনেকের মা আসতেন নিতান্তই সাদামাটা বেশে। এই চত্বরে অনেক সামরিককর্তার ছেলেও পড়তো। প্যান্ডেল ঘুরতে-ঘুরতে দেখতাম প্রিন্সিপাল, অ্যাডজুট্যান্ট সেই সামরিক অভিভাবকদের সঙ্গে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে কথা বলছেন। কারো কারো অভিভাবক আবার নগ্ন করে তুলতেন এই শ্রেণি-তারতম্যকে। মনে আছে নেত্রকোনার সোবহানের বাবা প্যারেন্টস ডেতে আসতেন লুঙ্গি পরে। একদিন শুনেছিলাম ইফতির আমলা বাবা ইফতিকে বলছেন, ‘তোদের এখানে লুঙ্গি পরা লোকের ছেলেরাও পড়তে আসে নাকি?’ ফলে এই চত্বরে আমাদের কেটে, ছেঁটে যতই একই ছাঁচে ফেলার চেষ্টা করা হোক না কেন, এই খাকি পৃথিবীতে যতই সাম্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হোক না কেন, প্যারেন্টস ডের দিন এই খাকি পৃথিবীর বাইরের যে বৃহত্তর পৃথিবী, সত্যিকার পৃথিবী, সেই পৃথিবীর ভেদ, বৈষম্য এসে হানা দিতো আমাদের ঘেরাটোপে। অবশ্য ওইদিনটা পেরিয়ে গেলেই আমরা আবার ফিরে যেতাম আমাদের সর্বজনীন খাকিজীবনে।”
আবার আনুগত্য কীভাবে নেতা হওয়ায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে তা ফুটে উঠেছে রাজীবের কলেজ ক্যাপ্টেন হওয়ার মাধ্যমে। টেস্টোস্টেরনের প্রাবল্যে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হওয়া, কিংবা কৈশোরের খেয়ালি মনে সৃষ্ট বিচিত্র আগ্রহের গল্পও নিঃসংকোচে বর্ণনা করেছেন লেখক।
আবার দেখা যায় খাকি চত্বরে মেপে মেপে কথা বলার স্বাভাবিক নিয়ম ভঙ্গ করে সদ্য আগত এক তরুণ শিক্ষক যখন বলে বসেন,
“আমি লক্ষ করছি এই চত্বরে তোমরা অর্ধেক সামরিক, অর্ধেক বেসামরিক, খানিকটা ইসলাম, খানিকটা ব্রিটিশ, কিছুটা বাঙালি এমনি সব বিচিত্র কায়দার মিশ্রণে একধরনের প্রশিক্ষণ পাচ্ছো। এইসব প্রশিক্ষণ তোমাদের সকল কাজের কাজি, দেশ-কালের সঙ্গে সম্পর্কহীন একধরনের চটপটে, চৌকস ছেলে হিসেবে তৈরি করছে। কিন্তু তোমাদের জিজ্ঞাসু, বিশ্লেষণী, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ হিসেবে তৈরি করছে না, যারা এই চত্বর থেকে বেরিয়ে সমাজের বিরাট মেশিনটার চাকাটাকে ঘুরিয়ে দিতে পারবে। নেতার কাজ তো সেটাই। তোমরা বরং তৈরি হচ্ছো এই চত্বর থেকে বেরিয়ে কী করে এই সমাজের বিরাট মেশিনটার নানা সুবিধাজনক জায়গায় নাট-বল্টুর মতো লেগে যেতে পারবে তার জন্য। হয়তো হবে খানিকটা চকচকে নাট-বল্টু।”
তরুণ শিক্ষকটির ভাবনা দু’একজনকে ছুঁয়ে গেলেও বেশিরভাগ ছেলেই তা এড়িয়ে যেতে চায়। চাকরিচ্যুতির নোটিশে শিক্ষকটিকে চত্বর থেকে বিদায় নিতে হয়।
খাকি চত্বর নিয়ে মুগ্ধতার বয়ানে আবদ্ধ না থেকে এখানের প্রচলিত ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন প্রবল হয় এ গ্রন্থটির শেষে। একটি মৃত্যু শোকের গাঢ় আবহ নিয়ে জাপটে ধরে পাঠককে।
লেখকের একান্ত কাছের বন্ধু ছিল মিলন। সবকিছুকে স্বাভাবিক নিয়মে মেনে না নিয়ে প্রশ্ন করার তাড়না অনুভব করত সে। অবিরাম কবিতার চাদর পরে থাকা ছেলেটি মায়াকোভস্কির কবিতা থেকে নিজের নাম দিয়েছিল ‘খাকি পরা মেঘ’। ক্যাডেট কলেজের শৃঙ্খলাবদ্ধ পরিবেশ অথবা পুঁজিবাদী সমাজের বেড়াজাল মেনে না নিতে পেরে ছেলেটি বেছে নিয়েছিল আত্মহননের পথ। এই মৃত্যুটি প্রচণ্ডভাবে প্রভাবিত করে লেখককে। এখান থেকেই খাকি চত্বরকে ভাললাগা অথবা না লাগার প্রশ্নে একটি মিশ্র অনুভূতির সৃষ্টি হয় শাহাদুজ্জামানের। খাকি চত্বরের সাথে লেখকের এই জটিল ও ধোঁয়াটে সম্পর্কটি পুরো লেখাজুড়েই স্পষ্ট হয়েছে।
এই গ্রন্থটির একটি চমকপ্রদ বিষয় এই যে, ক্যাডেট কলেজ জীবন নিয়ে দীর্ঘ এই স্মৃতিময় গদ্যটিতে লেখক একবারেই ‘ক্যাডেট’ শব্দটি ব্যবহার করেননি। ‘ক্যাডেটে’র বদলে লেখক ব্যবহার করেছেন ‘ক্ষুদে খাকি’ শব্দটি, যেমন, ‘সিনিয়র ক্ষুদে খাকি’ অথবা ‘জুনিয়র ক্ষুদে খাকি’। পাশাপাশি শাহাদুজ্জামানের লেখার নিজস্ব ভঙ্গি পুরো লেখাজুড়ে পাঠকের কৌতূহল ধরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
‘খাকি চত্বরের খোয়ারি’ একদিকে যেমন স্মৃতিকাতরতার জন্ম দেয়, অন্যদিকে ক্যাডেট কলেজ তথা পুরো শিক্ষাব্যবস্থার শৃঙ্খলিত রূপটিকে প্রশ্ন করতেও উদ্বুদ্ধ করে। এদিক থেকেই শাহাদুজ্জামানের এ গ্রন্থটি অনন্য।
অনলাইনে কিনুন- খাকি চত্বরের খোয়ারি