একাধারে সফল অভিনেতা, পরিচালক, গায়কের পদ অলংকৃত করে বর্তমানে টালিউডের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ তিনি। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটকের নাতি। এই পরিচয়কে ছাপিয়ে নিজের মহিমায় মহিমান্বিত হয়ে আছেন একদম শুরু থেকে। ২০০৩ সালে ‘বোম্বাইয়ের বোম্বেটে’ চলচ্চিত্রে তোপসে চরিত্রের মাধ্যমে রূপালী পর্দায় রা রাখা কলকাতার সেই ছেলেটি অভিনয় করেছেন বিদ্যা বালানের বিপরীতেও। নাচতে না জানলে নায়ক হওয়া যায় না- চিরায়ত এই ভ্রান্ত ধারণাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে দিব্যি একের পর এক সব কালজয়ী চলচ্চিত্র উপহার দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কিছুদিন আগে তোপসে থেকে ফেলুদা হয়ে যাওয়া সেই নায়কের নাম আর আলাদা করে বলাই বাহুল্য, তিনি টালিউডের বুদ্ধিজীবী হিসেবে খ্যাত পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়।
পড়তে ভালবাসেন জয় গোস্বামী। নাইটক্লাবে গিয়ে পা নাচাতেও খুব একটা মন্দ লাগে না তার। সাদামাটা জামাকাপড় পরা লোকটার বুদ্ধিদীপ্ত জ্বলজ্বলে চোখ দুটো দেখে অনেকেই তাকে সত্তরের দশকের আঁতেল বলে মশকরা করতেও ছাড়েন না। এ বছরের জানুয়ারিতে টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বইয়ের পাতা থেকে মুখ তুলে তিনি জানিয়েছিলেন একেবারে ব্যক্তিগত জীবনের কথা, অচেনা এক পরমব্রতর কথা। পাঠকদের জন্য সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো আজকের আয়োজনে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া: ছিলেন লাভারবয়, হয়ে গেছেন টালিউডের এমরান হাশমী- দর্শকের এ ধরনের মন্তব্যের সাথে একমত?
পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়: সত্যি কথা বলতে বছর দুই আগ থেকে এই ট্রেন্ডটা শুরু হয়েছে (হেসে)। আর আমার সহ-অভিনেত্রীরা এতোটাই আবেদনময়ী যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতেও বেগ পেতে হয়! তাই বলে চুমু খেতেই হব, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা কিন্তু আমার নেই। চরিত্রের প্রয়োজনে কখনো হয়তো বা এগুলো করতে হয়। তবে দর্শককে সুড়সুড়ি দেয়ার উদ্দেশ্যে যদি স্ক্রিপ্টে এ ধরনের কিছু যোগ করা হয়, তাহলে আমার ঘোরতর আপত্তি আছে।
‘কাহানী’ চলচ্চিত্রটি তো খুব সফল ছিল। ‘মাছ, মিষ্টি অ্যান্ড মোর’ দর্শকরা ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। ‘প্রলয়’ এর মতো মূলধারার সিনেমা হোক আর ‘অপুর পাঁচালি’র মতো ভিন্নধারার সিনেমাই হোক, নির্মাতাদের পছন্দের তালিকার শুরুতেই থাকে পরমব্রতর নাম। আপনার প্রযোজিত ‘হাওয়া বদল’ সিনেমাটিও দর্শকদের চোখে আপনাকে আরেকবার হিরো বানিয়েছে। এগুলোকে কী সৌভাগ্য বলে মানেন?
সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ এতসব সাফল্যের জন্য। টেলিভিশন সিরিয়াল দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলাম। এরপর যুক্তরাজ্যে চলে যাই পড়াশোনা করতে, আমার জীবনে এটিও আরেকটি হাওয়া বদল ঘটিয়েছিল। সেখান থেকে ফিরেই ভূতের ভবিষ্যৎ, কাহানী, হেমলক সোসাইটি বা অন্যান্য হিট ছবিগুলো করার সুযোগ পেয়েছিলাম। অভিনেতা হিসেবে নিজেকে একটি বিশ্বাসযোগ্য জায়গায় দাঁড় করাতে পেরেছিলাম। কোনো ছবিতে আমার অস্তিত্ব দর্শককে উদ্দীপ্ত করতে পারে, এই অনুভূতিটা দারুণ। ‘এইচবি’ ছবিটির সাফল্য আমার আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন পরিচালক হিসেবে আমার যোগ্যতা নিয়ে আরও নিশ্চিত আমি। দর্শকের মনোযোগ ধরে রাখতে চলচ্চিত্রে কী কী উপাদান ব্যবহার করা অত্যাবশ্যক, তা এখন আমার আয়ত্তে চলে এসেছে। হয়তো কিছুটা দাম্ভিক শোনাবে, তবে ‘জিয়ো কাকা’ সিনেমাটি তৈরি করার সময় আমি জানতাম পরিচালনা আমাকে দিয়ে হবে। তবে এই ছবিটি তেমন সাফল্যের দেখা না পেলেও ‘এইচবি’ তা পুষিয়ে দিয়েছে।
পরিচালনা তো অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। অনেকে বলছেন অভিনেতা হিসেবে আপনি আগে যতটা নিবেদিত ছিল, এখন আর ততটা নন…
এ ধরনের গুজব যারা রটাচ্ছে, তাদেরকে আমি দেখতে চাই। এই যে আমার ডায়েরি, অক্ষরে অক্ষরে সব লেখা আছে এখানে। এ বছরে এ পর্যন্ত ক’টি সিনেমা করলাম, হাতে আর কী কী আছে সব এখানে উল্লেখ করা আছে। অভিনেতা হিসেবে যদি নিবেদিতই না হতাম, তাহলে প্রলয়, ছায়ামানুষ, সুদীপ্ত চ্যাটার্জীর ছবি, ভূতের ভবিষ্যতের হিন্দি সংস্করণ, গ্ল্যামার, হারকিউলিস, আরেকটি বড় হিন্দি সিনেমা যার নাম এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না, সৌভিক কুণ্ডুর প্রথম ছবি, সুমন ঘোষের পরবর্তী ছবি… কারা যেন বলেন অভিনয়ে আমার মন নেই? (হেসে) সংখ্যার চেয়ে ছবির মান আমার কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি এখনো সেই পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ই আছি, সেই অভিনেতা-পরিচালক, এর বাইরে আর কিছু নই।
হাতে যে পরিমাণ অভিনয়ের প্রজেক্ট আছে, তাতে কি পরিচালনা কিছুদিনের জন্য পিছিয়ে থাকবে?
হ্যাঁ, অন্তত আগামী আট-নয় মাসের জন্য তো পিছিয়ে থাকবেই বটে। দুটো-তিনটে স্ক্রিপ্ট নিয়ে কাজ করছি, দেখা যাক কীভাবে সবকিছু এগোয়। ব্যক্তিগতভাবে বুম্বাদাকে (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) প্রধান চরিত্রে রেখে একটি থ্রিলার ঘরানার সিনেমা বানাতে চাই আমি। তিনি প্রাথমিক স্ক্রিপ্টটি পড়ে ভালো লেগেছে বলে জানিয়েছেন। আমি আর আংশুমান এটা নিয়েই কাজ করছি। অন্য স্ক্রিপ্টটি প্রেমের গল্প নিয়ে।
অভিনয় আর পরিচালনার পাশাপাশি আপনি স্ক্রিপ্ট লেখেন, গানও করেন। কোন কাজটি করতে মন থেকে বেশি উৎসাহ পান?
গান গাওয়াটা আমার শখ। মানুষ হিসেবে এসব কিছুর বাইরেও একটি জগৎ আছে আমার। দুঃখজনক হলেও সত্যি, ব্যক্তি পরমব্রতকে কেউ জানতে চায় না। তা নিয়ে অবশ্য আমার কোনো আক্ষেপ নেই। আমি যে ‘এইচবি’র মতো সাধারণ, বিনোদনমূলক একটি ছবি বানিয়ে ফেলব তা কেউ ভাবতেও পারেনি। সবাই আমাকে বুদ্ধিজীবী ভেবে রেখেছে। আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে বিধায় আমি মজার কোনো সিনেমা করতে পারব না, তার তো কোনো মানে নেই। শিক্ষাগত যোগ্যতাকে এখানে এতটাই ছোট করে দেখা হয় যে, বেসিক কিছু নিয়ম জানলেই আপনি হয়ে যাবেন আঁতেল! বৈশ্বিক সিনেমা সম্পর্কে টুকটাক খবর রাখি বলে যে আমি আঁতেল হয়ে গেছি, এমন কিন্তু নয়। ডেভিড ধাওয়ান আর রোহিত শেঠির সিনেমাও তো আমার ভালো লাগে। আমি যখন জেইউতে ফিল্ম স্টাডিসের উপর কোর্স করছিলাম, তখন জ্ঞানগর্ভ সিনেমা বানাব এমন একটা ঘোর কাজ করতো। সময়ের সাথে বুঝতে পারলাম, দর্শকরা নিজেদের জীবনের সাথে মেলাতে পারবে এমন সিনেমাও কারো বানানো দরকার। এই ইন্ডাস্ট্রি আমাকে ভাবতে বাধ্য করল, সিনেমা কেবল বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার জায়গা নয়। ‘এইচবি’ আপনাকে বিনোদন দেবে, আমার পরের সিনেমা হররই হোক কিংবা কমেডি, দর্শককে বুঝতে হবে আমি কী বলতে চাইছি। আমি একজন সাধারণ বুদ্ধিমান মানুষ যার চোখ, কান সবসময় খোলা থাকে। আমি জয় গোস্বামী পড়তে পছন্দ করি, নাইটক্লাবে পা ঠুকতেও মন্দ লাগে না। কারো সাথে কারো দ্বন্দ্ব কোথায়?
আপনার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ আছে। কাহানীর পর নাকি আপনার নাক উঁচু হয়ে গেছে, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস আর অভদ্রতা নাকি আপনাকে গ্রাস করে ফেলেছে…
তাই? আমার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের নমুনা কোথায়? আমি আজেবাজে কথা পছন্দ করি না, তাই রিঅ্যাক্ট করি। কাহানী আর হেমলক সোসাইটির পর, চাইলে প্রতিদিন পাঁচ-ছ’টি করে কাজের অফার নিতে পারতাম। আর সত্যি কথা বলতে এখানে যে ছবি বানানো হচ্ছে তার মান খুব খারাপ। এতো ছবি হচ্ছে টালিউডে- কী বলবো! কাজেই অর্থহীন কোনো ছবির স্ক্রিপ্ট পেলে না তো আমি করবই। কিন্তু তাদের মধ্যে কয়েকজন এমনভাবে ধরে বসে যে বাধ্য হয়ে বলতে হয়, নমস্কার, ধন্যবাদ, আমি আপনার ছবি করতে পারবো না। তারাই হয়তো অন্যদের কিছু বলেছেন আর সেখান থেকে গুজব রটেছে। যৌক্তিক হওয়া যদি অভদ্রতা হয়, তাহলে আমার আর কিছু বলার নেই। আমার ড্রাইভার, বাড়িওয়ালা বা বন্ধুবান্ধবদের কাউকে জিজ্ঞেস করুন, সত্যিটা জানতে পারবেন। আর আমি যদি অভদ্রই হতাম, তাহলে এত অফার আমার কাছে আসত না।
২০০৮ সালে ব্রেক ফেইলের আবারও আপনি কৌশিক গাঙ্গুলির সাথে কাজ করছেন অপুর পাঁচালিতে। আপনাদের পারস্পরিক অন্তরঙ্গতা বা আস্থার জায়গাটা কেমন?
এই ছবিতে কাজ করতে পারাটা আমার জন্য খুব গর্বের। আর সময় নির্ধারণটাও খুব ভালো হয়েছে। আন্তর্জাতিক সব উৎসব সিনেমাটা লুফে নেবে, কেননা এর সাথে কোথাও না কোথাও সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালি’র একটি সম্পর্ক রয়েছে। অপুর পাঁচালি বানানো হয়েছে এমন একজন অভিনেতাকে নিয়ে যিনি কিনা মানসম্মত বাংলা সিনেমার পোস্টারবয় ছিলেন। পর্দায় সুবীর ব্যানার্জির রোল করতে গিয়ে বেশ নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম। পরে মনে হলো, আমার নয়, সত্যজিৎ রায়ের চরিত্র নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বরং কৌশিকদার নার্ভাস হওয়া উচিৎ।
চুর্নি গাঙ্গুলির সাথে তো কয়েক বছর আগে আপনার সম্পর্ক ছিল। এই বিষয়টি কৌশিকের সাথে আপনার সম্পর্কে কোনো ব্যাঘাত ঘটায়নি?
কখনোই না, তখন আমার বয়স কম ছিল। আমরা দুজনই ঐ জায়গাটা থেকে বেরিয়ে এসেছি। এই সময়টাই অবশ্য আমি কৌশিকদার সাথে কোনো কাজ করিনি। তবে আমাদের মধ্যে কখনোই কোনো তিক্ততার সৃষ্টি হয়নি।
‘প্রলয়’ সিনেমায় তো পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় একাই রাজত্ব করেছেন…
সিনেমার প্রথম অর্ধেকে বরুণ বিশ্বাসের চরিত্রে আমিই রাজত্ব করেছি। পরাণদা এবং অপুদা (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়) শেষের অংশে কারিশমা দেখিয়েছেন।
আপনি তো বেশ শক্তিশালী পরিচালকদের সাথে কাজ করছেন। আপনার কী মনে হয়, কে আপনার কাছ থেকে সবচেয়ে ভালো কাজ আদায় করে নিতে পেরেছে?
একেকজন পরিচালকের একেকটা শক্তিশালী দিক রয়েছে। বিরসার কাজ কখনোই আগে থেকে চিন্তা করা যায় না, তিনি সম্পূর্ণ নতুন কিছু তৈরি করতে পছন্দ করেন। কিন্তু ‘জানি দেখা হবে’ চলচ্চিত্রে তিনি খুব একটা মন দেননি, তার জন্য আমি তাকেই দায়ী করতে চাই। রাজের ভেতর থেকে যেন শক্তি ছিটকে বের হয়, ২৪X৭ কাজ করতে পারে সে। সৃজিত খুব শৃঙ্খলাবদ্ধ, কৌশিকদা একজন অভিনেতার সক্ষমতা-অক্ষমতা ভালো বোঝেন। বোরিং একটি দৃশ্যকেও তিনি চটপটে করে তুলতে জানেন, কারণ তিনি নিজেও দুর্দান্ত একজন অভিনেতা। অনিকদা খুব সচেতন, নির্ভুল, শিডিউল মেনে চলা একজন পরিচালক।
‘চাঁদের পাহাড়’ সিনেমায় কাকে প্রধান চরিত্রে নেয়া হবে সে বিষয়ে শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের বিবেচনায় দুজন অভিনেতা ছিলেন। শেষ পর্যন্ত শংকরের চরিত্রটি দেবের ঝুলিতেই গেছে। আপনার কী মনে হয়, এক্ষেত্রে আপনি ভালো কাজ করতেন?
অভিনয়ের দিক থেকে আমি দেবের চেয়ে ভালো কাজ করতাম। কিন্তু সিনেমায় অভিনয়ই তো সব নয়। পরিচালকের একটি অ্যাথলেটিক শরীরের দরকার ছিল, দেবকেই এখানে ভালো মানায়। তাছাড়াও কাস্টিংয়ে আরও কিছু ব্যাপার থাকে। একই ধরনের সিনেমায় কাজ করতে করতে দেবেরও ভিন্ন কিছুর দরকার ছিল। সব ধরনের দর্শকের কাছে আমার একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে, দেবের জন্য তাই সিনেমাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
শহুরে সব সিনেমায় পরমব্রতকে পাওয়া যায়, এটা কি ভালো লক্ষণ?
আমার মনে হয়, আমার গ্রুমিং, বাচনভঙ্গি শহুরে মুভির জন্য পারফেক্ট। ব্যক্তিগতভাবে এই গণ্ডি পেরিয়ে সর্বস্তরের দর্শকের কাছে পৌঁছাতে আমার কোনো আপত্তি নেই।
শাশ্বতকে বলা হয় ইন্ডাস্ট্রির হিট ম্যাশিন, আপনিও কি সেই পথেই আগাচ্ছেন?
অভিনেতা হিসেবে শাশ্বতদা দুর্দান্ত। অপুদা, আবীর (চট্টোপাধ্যায়) এবং আমাকে এক পাল্লায় মাপাটা ঠিক হবে না। অপুদা একজন খাঁটি অভিনেতা, আমি আর আবীর অভিনেতা এবং নায়ক। নায়ক না হয়েও অপুদা যে স্বীকৃতি পাচ্ছেন, তা ইন্ডাস্ট্রির জন্য খুবই ভালো একটি দিক। ভারতের অন্যতম সেরা একজন অভিনেতা তিনি। তার সমকক্ষ হওয়ার কথা আমি ভাবতেও পারি না।
‘প্রলয়’ সিনেমার জন্য শুরুতে আবীরকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল, আবার ‘বোঝে না সে বোঝে না’র জন্য আপনার কাছে আসা হয়েছিল। আবীর কি আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী?
আমার আর আবীরের মধ্যে একটি সুস্থ প্রতিযোগিতা কাজ করে, এটা আমি খুব উপভোগ করি। এই ব্যাপারে আমরা কথাও বলি। আবীর আমার ভালো বন্ধু।
এবার আরেকটু ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলতে চাই, কিছুদিন আগ পর্যন্তও স্বস্তিকা এবং আপনি প্রণয়ের সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলেন। সামাজিক পার্টিগুলোতে তার সাথে স্বাভাবিক ব্যবহার করাটা কতটা সহজ বা কঠিন?
একবার কোনো কিছু থেকে বেরিয়ে এলে আমি আর পেছনে ফিরে তাকাই না! সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর আমাদের মধ্যে একটা ঠাণ্ডা যুদ্ধ চলছিল। কিন্তু মাস ছয়েক আগেই সে বরফ গলে গেছে। সে ‘এইচবি’র অনেক প্রশংসাও করেছে। এখন সবকিছু ঠিক আছে। আমরা বন্ধুর মতোই কথা বলি, ম্যাসেজ পাঠাই। সম্পর্ককে যথাযথ মর্যাদা দিতে পছন্দ করি আমি। খারাপ সময় থাকতেই পারে, কিন্তু স্বস্তিকার সাথে কাটানো দারুণ মুহূর্তগুলোর কথা আমি কখনোই অস্বীকার করব না।
সৃজিত মুখার্জীর সাথে আপনার তিক্ততা নিয়ে কানাঘুষা চলছে, এটা কতটা সত্যি?
এটা পুরোপুরি লোকের বানানো একটা গল্প। সৃজিত এবং স্বস্তিকাকে সম্প্রতি বেশ কয়েক জায়গায় একসাথে দেখা গেছে, আমি অবশ্য জানি না তাদের সম্পর্ক কেমন, আমি তা জানতেও চাই না। লোকে ভেবে নিয়েছে আমার প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে আমার বন্ধু ঘোরাফেরা করছে, তাহলে নিশ্চয়ই আমাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে! এটা নিয়ে আমরা দুজন বেশ হেসেছি। তবে সৃজিতের উপর কোথাও ছোট্ট অভিমান রয়ে গেছে। আমি জানি না সৃজিত আর স্বস্তিকা ডেট করছে কিনা, তবে দেখে মনে হচ্ছিল করছে। সৃজিত আমাকে এটা জানাতে পারতো। আমি যখন আইকের সাথে সম্পর্কে জড়াই, সবার আগে সৃজিতকে বলেছিলাম আমি আবারও প্রেমে পড়েছি।
আইক যখন শহরের বাইরে থাকে, তখন কী লাভারবয় পরমের রাজত্ব চলে?
বয়স আর পরিপূর্ণতার সাথে আমি ঘরমুখো হয়ে গেছি। এখন ঘরে থাকতেই বেশি ভালো লাগে। আইক আমাকে অনেকটাই ধাতস্থ করে ফেলেছে, এখন বেশ সুখী একটা মানুষ আমি। আমরা পরস্পরকে যথেষ্ট স্বাধীনতা দেই, যা আমার আগের সম্পর্কগুলোতে ছিল না। নিজের লাভারবয় ইমেজকে নিয়ন্ত্রণে আনতে আমি কাজের মধ্যে ডুব দেই (হাসি)।