Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

লক, স্টক অ্যান্ড টু স্মোকিং ব্যারেলস: গাই রিচির প্রপার ব্রিটিশ ক্রাইম কমেডি

সিনেমার শুরুতে পরিচালক গাই রিচি আমাদেরকে নিয়ে যান লন্ডনের অপরাধপ্রবণ, ঘিঞ্জি একটি এলাকায়। সেখানে আমরা দেখতে পাই বেকন (জেসন স্ট্যাথাম)-কে। সে ছন্দে ছন্দে কথা বলছে আর বিক্রি করছে চোরাই অলংকার। তাকে ঘিরে রয়েছে ক্রেতার ঝাঁক। সেই ঝাঁকেই ক্রেতা হওয়ার ভান ধরেছে বেকনের বন্ধু এডি (নিক মোরান)। সে-ই শুরুতে একটি অলংকার কিনে নেয় পানির দরের কথা বলে। তারপর মব মেন্টালিটির প্রভাবে সকলেই অলংকার কিনতে শুরু করে। 

বেচা-কেনার ধুম শুরু হয়েছে এমন অবস্থায় বাগড়া দেয় পুলিশ। ক্রেতার ঝাঁক হয়ে যায় ছত্রভঙ্গ। আর দুই বন্ধু ছুটতে আরম্ভ করে পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে। ছুটতে ছুটতে তারা নিজেদের মালামাল ফেলে দেয়। ধারাবিবরণীতে আমরা শুনতে পাই বেকন বুঝতে পেরেছে যে, তাদের এমন ছোটখাট অপরাধের দিন ফুরিয়ে এসেছে। এবার মারতে হবে বড় দান। 

পরের দৃশ্যে দেখা মেলে টম (জেসন ফ্লেমিং) এবং নিক দ্য গ্রিক (স্টেফান মার্কাস)-এর। তারা দামাদামি করছে একটা জিনিস নিয়ে। দামাদামির একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত হয় বেকন আর এডি। নিক চলে গেলে বাকি তিনজন চলে যায় সোপ (ডেক্সটার ফ্লেচার)-এর রেস্টুরেন্টে। আমরা বুঝতে পারি তারা চারজনের বন্ধুত্ব বহুদিনের। এবং এরা সকলেই তাদের ছোটখাট অপরাধের জীবনের উপর বিরক্ত। বেকনের মতো বাকিরাও চায় বড় একটা দান মেরে বাকি জীবন আরাম-আয়েশে কাটাতে।

পরিচালক গাই রিচি; Photo Credit : Wikipedia

বড় দান মারার সুযোগও রয়েছে তাদের সামনে। এ সুযোগের কথা তাদেরকে বলে এডি। এডির একটি গুণ হলো তাস খেলায় তার জুড়ি মেলা ভার। কঠিন থেকে কঠিনতর পরিস্থিতিতেও সে জিতে ফিরে আসে। তাদের সকলের পরিচিত এক মহাজন আছে “হ্যাচেট” হ্যারি লনসডেল (পি. এইচ. মরিয়ার্টি) নামে। তিনি একটি জুয়ার আসর বসান তাস খেলাকে কেন্দ্র করে। ওখানে জিততে পারলে তাদের আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না। তবে হারলে হ্যারির টাকা শোধ না করে বেঁচে থাকা যাবে না। টাকা আদায়ের নানা পন্থা তার জানা। আবার, হ্যারির জুয়ার অংশ নিতে হলে এক লাখ পাউন্ড লাগবে। কিন্তু এত টাকা একলা এডির কাছে নেই। তাই সে বন্ধুদের রাজি করায় ২৫,০০০ পাউন্ড করে দিতে। বাকি ২৫,০০০ সে নিজে দেবে। এবং জেতার পর লভ্যাংশ নিজেদের মাঝে ভাগ করে নেবে। 

এডির বন্ধুরা রাজি হয় এবং তার হাতে টাকা তুলে দেয়। এডিও অংশগ্রহণ করে হ্যারির জুয়ায়। কিন্তু বিধি বাম! জুয়া খেলাটা আসলে পাতানো। পর্দার আড়াল থেকে হ্যারিকে সবকিছুর সংকেত পাঠায় তার বিশ্বস্ত সহচর ব্যারি দ্য ব্যাপটিস্ট (লেনি ম্যাকলিন)। ফলে এডিসহ জুয়ার অংশ নেওয়া বাকিদের জেতার আর কোনো উপায় থাকে না। এডি যদি কেবল নিজেদের টাকা হারাতো, তাহলে হয়তো চলতো। কিন্তু নিজেদের টাকা হারানোর পাশাপাশি সে হ্যারির কাছে আধা মিলিয়ন পাউন্ডের দেনায় দায়ে আটকা পড়ে। ব্যারি বলে যেহেতু এডিকে খেলার টাকা তার বন্ধুরা দিয়েছে। তাই দেনার টাকাও সকলকে মিলে শোধ করতে হবে। সময়ও বেশি নেই, সময়সীমা বেধে দেয়া হয়েছে কেবল ৭ দিনের। নয়তো তাদের খবর তো বের করা হবেই, দখল করে নেওয়া হবে এডির বাবার বারও, যেটার উপর হ্যারির নজর আরো আগেই পড়েছে৷ 

এ খবর হ্যারি তার বন্ধুদের গিয়ে জানালে সকলে মাথায় যেন বাজ পড়ে! সকলে ভাবনা আর নানা ফন্দি-ফিকিরের তালে লেগে গেলেও, এডির স্বস্তির ঠিকানা হয় মদের বোতল। কেননা, বন্ধুদেরকে বলতে পারলেও বাবাকে এ ঘটনা সে কীভাবে জানাবে? 

চার বন্ধু; Photo Credit : Summit Entertainment

একের পর এক প্ল্যান যখন খারিজ করে দিচ্ছে চার মূর্তি, তখনই হঠাৎ করে গল্পের খোলনলচে পাল্টে যায়। একটি হেইস্ট বা ডাকাতির প্ল্যান শুনে ফেলে বেকনরা। এরপর তারা করে কাউন্টার হেইস্টের প্ল্যান। কিন্তু এজন্য তাদের লাগবে অস্ত্র। যার জন্য তারা শরণাপন্ন হয় চিরপরিচিত নিক দ্য গ্রিকের। এভাবে হেইস্ট আর কাউন্টার হেইস্টের প্ল্যানে জমে ওঠে সিনেমার প্লট। নৃশংসতার পাশাপাশি সৃষ্টি হয় নানা ডার্ক কমেডিক প্রেক্ষাপটের। এসব তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে হলে দেখতে হবে ১০৭ মিনিট দৈর্ঘ্যের লক, স্টক অ্যান্ড টু স্মোকিং ব্যারেলস (১৯৯৮)

চার বন্ধুর জুয়া খেলা বা ঋণের বোঝা মাথা চাপা ছাড়াও সিনেমায় আছে আরো নানা সাবপ্লট। যেমন-

নিলামের ক্যাটালগে হল্যান্ড অ্যান্ড হল্যান্ড কোম্পানির দুটো অ্যান্টিক শটগান দেখে পছন্দ হয় হ্যারির। কিন্তু এগুলো তিনি নিলাম থেকে কিনবেন না। সংগ্রহ করবেন বাঁকা পথে। স্বাভাবিকভাবেই এই দায়িত্ব বর্তায় ব্যাপটিস্টের ওপর। ব্যাপটিস্ট শটগানের মালিকের বাড়িতে চুরি করার দায়িত্ব দেন ডিন (জেইক অ্যাব্রাহাম) এবং গ্যারি (ভিক্টর ম্যাগুইয়ার)-কে। চুরি করতে গিয়ে এ দুজনের কাণ্ডকীর্তি দর্শকের হাসির খোরাক যোগাবে। 

আরো দেখা যায় লন্ডনে বসেই ঘরের ভেতর উৎকৃষ্ট মানের গাঁজা উৎপাদনকারী তিন পার্টনার। উইনস্টন (স্টিভেন ম্যাকিনটশ), জে (নিকোলাস রো) এবং উইলি (চার্লস ফোর্বস)। তাদের সাথে উইলির বান্ধবী টানিয়া (ভেরা ডে)-কেও দেখা যায়। উইনস্টনের বার বার বারণ করা সত্ত্বেও সবাই নিরাপত্তার জন্য রাখা গেইট খুলেই ব্যবসা করতে যায়। এর ফলাফলও তাদের ভোগ করতে হয়। 

বিগ ক্রিস চরিত্রে ভিনি জোনস; Photo Credit : Summit Entertainment

বাবা-ছেলে বিগ ক্রিস (ভিনি জোনস) এবং লিটল ক্রিস (পিটার ম্যাকনিকল)-কে দেখা যায় ছায়াসঙ্গী হিসেবে। বাবা কাজ করে হ্যারির লোক হিসেবে। কারো থেকে টাকা আদায় করতে হলেই ডাক পড়ে বিগ ক্রিসের। বাপের সাথে সাথে সেখানে পৌঁছে যায় লিটল ক্রিসও। 

দুই মাদক ব্যবসায়ীও রয়েছে সিনেমায়। এরা হলো ডগ (ফ্র্যাঙ্ক হার্পার) এবং রোরি ব্রেকার (ভাস ব্ল্যাকওয়েল)। উভয়েই আলাদা আলাদা দুটো গ্যাংয়ের সদস্য। তাদের কার্যপদ্ধতি ভিন্ন হলেও উভয়েই নৃশংস এবং প্রতিশোধপরায়ণ। 

আপাতদৃষ্টিতে, সাবপ্লটগুলোকে বিচ্ছিন্ন মনে হলেও একসময় সবগুলো একসাথে মিলে যায়। অথবা আমরা বলতে পারি- এখানকার চরিত্রগুলো একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়। 

‘হ্যাচেট’ হ্যারি লনসডেল; Photo Credit : Summit Entertainment

চুরি করতে গিয়ে চোরদের কর্মকাণ্ড, ডাকাতি করতে ব্রেন গান নিয়ে যাওয়া, হ্যাচেট হ্যারির ‘সুনাম’, দুটি চরিত্রের দামাদামি, এক অঞ্চলের মানুষ আরেক অঞ্চলের মানুষকে পেছনে কী নামে ডাকে, কাউকে টিভির সাউন্ড কমাতে বলা, সামোয়ান বারে গিয়ে ‘রিফ্রেশিং ড্রিঙ্ক’ চাওয়া, বাবার ছেলেকে গালি দিতে বারণ করা, এক বন্ধুর আরেক বন্ধুকে ‘মোটকু’ বলে খোঁচা দেয়া বা ‘বন্দুক হাতে তোকে খুব ভয়ঙ্কর দেখাবে বলা’। সিনেমার এই বিষয়গুলোতে যে সূক্ষ্ম ডার্ক কমেডিক এলিমেন্টের দেখা মেলে, সেটা আসলে বর্ণনা করা অসম্ভব। এসব অনুভব করতে হবে দেখতে বসে। তাহলেই বোঝা যাবে পরিচালক গাই রিচি লন্ডন বা তার অপরাধপ্রবণ অঞ্চলকে কতটা ভালো বোঝেন। যাতে করে এখানকার আচার-আচরণ, কথাবার্তাসহ জায়গাটাই দাঁড়িয়ে গেছে চরিত্র হিসেবে৷ 

পরিচালনার পাশাপাশি স্ক্রিপ্টও লিখেছেন রিচি। আর চরিত্রদের অপরাধপ্রবণতা বোঝাতে পুরো গল্পের সিনেম্যাটোগ্রাফিকে করে দিয়েছেন ধূসর। পরে আরো নানা সিনেমার জন্য আলোচিত হলেও তাকে আন্তর্জাতিক দর্শকের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল এই সিনেমাই। একই কথা খাটে এখানকার অভিনেতাদের ক্ষেত্রেও। যার কারণে এটি অর্জন করেছে কাল্ট স্ট্যাটাস। এবং ‘ব্রিটিশ ক্রাইম ফিল্ম’ বলতে আমরা এখন যা বুঝি, তার স্ট্যান্ডার্ড সেট করতেও এটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

The article is in Bangla. It is a review of the film Lock, Stock and Two Smoking Barrels (1998). Necessary sources are hyperlinked in the article.

Sources :-

1. https://m.imdb.com/title/tt0120735/

2. https://en.m.wikipedia.org/wiki/Lock,_Stock_and_Two_Smoking_Barrels

3. https://www.rottentomatoes.com/m/lock_stock_and_two_smoking_barrels

Related Articles