অর্থ উপার্জনে আর ধনী হতে কিয়োসাকির উপলব্ধি

এ বইটিতে লেখক অর্থ সম্পর্কে ধনী এবং মধ্যবিত্তদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। লেখক গরীব বাবা বলতে, এখানে নিজের বাবাকে এবং ধনী বাবা বলতে, তার বন্ধু মাইকের বাবাকে বুঝিয়েছেন। রবার্ট কিয়োসাকির বাবা ছিলেন পিএইচডি ডিগ্রিধারী, তিনি সরকারের হয়ে কাজ করতেন এবং সব সময় তার সন্তানকে এই শিক্ষা দিতেন যে- “ভালো করে পড়াশোনা কর, যেন ভালো কোম্পানিতে চাকরি করতে পারো।”

অপরদিকে, ধনী বাবা তথা মাইকের বাবা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন, তিনি বিনিয়োগ করে প্রচুর অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছিলেন এবং সবসময় তার সন্তানদের বলতেন যে- “ভালো করে পড়াশোনা কর, যেন তুমি ভালো একটি কোম্পানি ক্রয় করতে পারো।”

লেখকের বাবা সব সময় চাইতেন যে, কিয়োসাকি যেন এমন একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে যেখানে উচ্চ বেতন আছে, পেনশনের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা রয়েছে। লেখকের বাবা বিনিয়োগে ভয় পেতেন। ধনী বাবা তার সন্তান মাইক এবং লেখককে সব সময় বিনিয়োগে উৎসাহিত করতেন।

লেখক রবার্ট কিয়োসাকি; Image source: thecollegeinvestor.com

কিয়োসাকি তার বইয়ে বন্ধু মাইকের বাবা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাগুলো তুলে ধরেছেন। এগুলো হলো- ধনীরা অর্থের জন্য কাজ করে না বরং অর্থই তাদের জন্য কাজ করে, অর্থের জন্য তারা অন্য কারো উপর নির্ভরশীল নয়। দেখা গেছে যে, আমেরিকানরা বছরের প্রথম পাঁচ মাস শুধু করের টাকা উপার্জনের জন্য কাজ করে। মূলত এটা হচ্ছে এ কারণে যে, তাদের অধিকাংশেরই যথাযথ অর্থনৈতিক জ্ঞান নেই।

মধ্যবিত্ত এবং গরীবরা কঠোর পরিশ্রম করে, যাতে তারা প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারে কিন্তু তারা অর্থ বিনিয়োগ করে না, যে অর্থ ভবিষ্যতে তাদের জন্য কাজ করবে। এ কারণে মধ্যবিত্তরা আজীবন মধ্যবিত্তই থেকে যায়। ধনীরা অর্থকে বিনিয়োগ করে, যা তাদের জন্য ভবিষ্যতে আরো অর্থ নিয়ে আসে। ধনী বাবা আরো দেখিয়েছেন যে, কর্পোরেট জবে কর্মীরা মূলত মালিক পক্ষের অর্থ-সম্পদ বৃদ্ধির জন্য কাজ করে থাকে এবং স্কুল-কলেজ আমাদের ভাল কর্মী হওয়ার শিক্ষা দিয়ে থাকে কিন্তু ভালো মালিক হওয়ার শিক্ষা দেয় না।

ধনীরা তাদের আয় থেকে সবার আগে নিজের জন্য অর্থ রাখে তারপর অবশিষ্ট অর্থ দিয়ে কর ও অন্যান্য বিল পরিশোধ করে। মধ্যবিত্তরা কর ও অন্যান্য বিল পরিশোধের পর অবশিষ্ট যে অর্থ থাকে তা নিজের জন্য রাখে। ধনীরা তাদের উকিল এবং ব্রোকারদের ভালো অংকের বেতন দিয়ে থাকে কারণ পরবর্তীতে তারাই তাদের মালিক পক্ষের জন্য অর্থ বয়ে নিয়ে আসে। অপরদিকে মধ্যবিত্তরা তাদের নিজেদের জন্যে ভাল উকিল এবং ব্রোকার নিয়োগ দেয় না। তাদেরকে প্রচুর কর দিতে হয় কারণ অর্থনীতি সম্পর্কে তাদের প্রয়োজনীয় জ্ঞান নেই।

রবার্ট কিয়োসাকি গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পর ভালো একটি কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছিলেন, যেখানে তার চাকরির নিরাপত্তা ছিল। এতে তার বাবা খুবই খুশি হয়েছিল। তিনি লক্ষ্য করলেন যে, তার কঠোর পরিশ্রমের ফলে মালিক পক্ষ প্রচুর লাভবান হচ্ছে কিন্তু তিনি সে পরিমাণ অর্থের মালিক হতে পারছেন না। তিন বছর পর তিনি চাকরিটি ছেড়ে দেন এবং এমন একটি কোম্পানি স্থাপন করেছিলেন যারা বাজারে প্রথম নাইলন আর ভেলক্রোর ‘সার্ফার’ মানিব্যাগ এনেছিল।

চাকরি ছেড়ে দেওয়ায় তার বাবা খুবই আশাহত হন। ধীরে ধীরে তিনি রিয়েল এস্টেটে অর্থ বিনিয়োগ শুরু করেন এবং প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক হন। তিনি তার বিনিয়োগ সম্পর্কে বলেন- “১০ টি বিনিয়োগের মধ্যে তিনি তিনটিতে প্রচুর লাভ করেন, ২-৩ টিতে লোকসান গুনতে হয় এবং বাকিগুলোতে লাভ-লোকসান কিছুই হয় না।” রবার্ট কিয়োসাকি বলেছেন, “ধনী হতে চাই উচ্চাকাঙ্ক্ষা।” তিনি বলেছেন, মানুষ ধনী হতে পারে না মূলত পাঁচটি কারণে। ভয়, নিন্দা করার স্বভাব, আলস্য, বদভ্যাস, ঔদ্ধত্য। মূলত হেরে যাওয়ার ভয়ের কারণেই অধিকাংশ মানুষ বিনিয়োগ করে তাদের অর্থ বৃদ্ধি করে না, তারা নিরাপদ চাকরি খুঁজে।

প্রচ্ছদ; Image: Amazon

 

মাত্র ৪৭ বছর বয়সে তিনি তার কর্মজীবন থেকে অবসর নেন এবং বর্তমানে তিনি বিভিন্ন দেশে ক্যাশ-ফ্লোর শিক্ষা দিয়ে থাকেন। তিনি বন্ধু মাইকেলের ধনী বাবা থেকে অর্জিত শিক্ষা সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চান। বইয়ের শেষের দিকে তিনি বিনিয়োগ সম্পর্কে বিভিন্ন পরামর্শ তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, আমাদের সবাইকে দুটি সেরা উপহার দেওয়া হয়েছে। এগুলো হল মস্তিষ্ক এবং সময়। মানুষের নিজের উপরই নির্ভর করে, সে মস্তিষ্ক এবং সময়কে কিরূপ কাজে ব্যবহার করবে। ধনী হওয়ার জন্য উচ্চতর ডিগ্রিধারী হওয়ার দরকার নেই, শুধুমাত্র মস্তিষ্ক এবং সময়ের সঠিক ব্যবহার করলেই ধনী হওয়া সম্ভব।

তার মতে এ্যাকাউন্টিং এর জগতে তিনটি ভিন্ন প্রকারের আয় আছে, সেগুলো হলো- অর্জিত আয়, নিষ্ক্রিয় আয় এবং পোর্টফলিও আয়। তার বাবা তাকে বলেছিলেন, “স্কুলে যাও, ভাল নম্বর পাও আর একটি নিশ্চিত নিরাপদ চাকরি খোঁজো।” মূলত তারা বাবা তাকে অর্জিত আয়ের শিক্ষা দিয়েছিলেন। অপর দিকে বন্ধু মাইকেলের ধনী বাবা তাকে, নিষ্ক্রিয় আয় এবং পোর্টফলিও আয়ের শিক্ষা দিয়েছিল। এই পোর্টফলিও আয়ই বিল গেটসকে পৃথিবীর অন্যতম ধনী ব্যক্তিতে পরিণত করেছে, অর্জিত আয় নয়। ধনী বাবার উপদেশ গ্রহণের ফলেই আজ লেখক অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হতে পেরেছেন।

বইয়ের নাম: Rich Dad Poor Dad || লেখক: রবার্ট কিয়োসাকি

প্রকাশক: প্লাটা পাবলিকেশন || অনলাইন প্রাপ্তিস্থান: রকমারি.কম

This Bangla article is a review of 'Rich Dad Poor Dad'. It is written by Robert Kiyosaki on the importance of financial literacy and building wealth through investing.

Featured Image: goodreads.com

RB-RF/SM

Related Articles

Exit mobile version