৯২ এসি। ড্রাগনস্টোনের প্রিন্স ও আয়রন থ্রোনের পরবর্তী উত্তরসূরী অ্যামন টারগেরিয়ান হুট করে মারা গেলেন। তাই প্রয়োজন পড়ল নতুন প্রিন্সের। তখন সাত রাজ্য শাসন করছেন জ্যাহেরিস দ্য কন্সিলিয়েটর। আয়রন থ্রোনের পরবর্তী উত্তরসূরী হিসেবে সামনে এলো মাত্র দুটি নাম। অ্যামন টারগেরিয়ানের মেয়ে রেইনিস এবং জ্যাহেরিসের ছেলে বেইলন। ওয়েস্ট্রোসের অধিকাংশ পরিবার মনে করত, অ্যামন যেহেতু জ্যাহেরিসের উত্তরসূরী ছিল, তাই তার পর তার মেয়ে রেইনিস হবে ড্রাগনস্টোনের প্রিন্সেস। কিন্তু একমাত্র নারী হবার কারণে জ্যাহেরিস তাকে উপেক্ষা করে গেলেন। পুরুষকে পেছনে ফেলে সাত রাজ্য এক নারী শাসন করবে, এমনটা হয়তো তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। তাই তিনি তার ছেলে বেইলনকে আয়রন থ্রোনের উত্তরসূরী হিসেবে বেছে নেন।
টারগেরিয়ান রাজত্বে জ্যাহেরিস ছিলেন অন্যতম সম্মানিত শাসক। মাত্র ১৬ বছর বয়সে সাত রাজ্য হাতে পেয়ে তিনি এই ওয়েস্ট্রোস শাসন করেছেন টানা ৫৫ বছর ধরে। তার মা অ্যালিসা তাকে নিয়ে বলতেন, “জ্যাহেরিস হচ্ছে আমার তিন সন্তানের ভেতর সেরা।” শাসক হিসেবেও তিনি এমন সম্মান আদায় করেছিলেন। তাই তাকে বলা হতো ‘জ্যাহেরিস দ্য ওয়াইজ’। কিন্তু এমন যোগ্য ও শান্তিপ্রিয় রাজা রেইনিসকে তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করবেন, এটা কেউ ভাবেনি।
৮৭ এসি। রেইনিস নিজেকে ড্রাগন রাইডার হিসেবে তুলে ধরলেন। মেলেইস নামক এক ড্রাগন তার বশে এলো। ড্রাগন রাইডার হবার দু’বছর পর রেইনিস জাহেরিসের রাজ্যক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করলেন। তার ড্রাগন নিয়ে তিনি উড়ে গেলে হাই গার্ডেনে। সেখানে জ্যাহেরিসের সাথে শিল্ড আইল্যান্ড ও গ্রিনশিল্ড ভ্রমণ করলেন। এ ভ্রমণপথেই রেইনিস রাজাকে জানান তার মনের কথা। দ্য সি স্নেক খ্যাত লর্ড কারলিস ভেলারিয়নকে বিয়ে করতে চান তিনি।
হাউজ ভেলারিয়ন ওয়েস্ট্রোসের অন্যতম পুরনো পরিবারের একটি। তাদের ধমনীতে বইছে ওল্ড ভ্যালেরিয়ার রক্ত। এ পরিবার বসবাস করত ক্রাউনল্যান্ডের ব্ল্যাকওয়াটার বে’র অন্যতম বড় দ্বীপ ড্রিফটমার্কে। ড্রাগনস্টোনের খুব কাছেই এটি। নিজেদের ড্রাগন পরিচিতি সতেজ রাখতে টারগেরিয়ানদের নিজেদের ভেতর বিয়ের প্রচলন ছিল। যেহেতু ভেলারিয়নদের আদি পরিবার ওল্ড ভ্যালেরিয়া থেকে এসেছে, তাই এই দুই পরিবারের ভেতর বিয়ের প্রচলন ছিল এগন টারগেরিয়ানের সময়ের আরও আগে থেকে। লর্ড কারলিস ভেলারিয়ন ছিলেন রাজা জ্যাহেরিসের অন্যতম প্রিয়পাত্র। তাই তিনি আর দ্বিমত পোষণ করলেন না। বিয়ের সম্মতি দিয়ে সাথে সাথে রাজি হয়ে রেইনিসকে তখনই আশীর্বাদ করলেন।
৯২ এসি। ১৬ বছর বয়সী রেইনিসের সাথে বিয়ে হল কারলিসের। বিয়ের আসরে দারুণ এক কাণ্ড হলো। রেইনিস বিয়েতে এলেন ড্রাগনের পিঠে চড়ে। তবে টারগেরিয়ান বংশে মেয়েরা ড্রাগন রাইডার হয়, এমনটা নতুন নয়। এগন যখন এই সাত রাজ্য জয় করেন, তখন তার দুই স্ত্রী ছিলেন তার পাশে। একইসাথে তারা দুজনে ছিলেন দুর্দান্ত ড্রাগন রাইডার। জ্যাহেরিসের স্ত্রী গুড কুইন অ্যালিসানেও ড্রাগন চালাতে জানতেন। তার ড্রাগনের নাম ছিল সিলভারউইং। কিন্তু ড্রাগনের পিঠে চড়ে বিয়ে করতে এসে রেইনিস যেন নিজেকে পুরো পরিবারের কাছে ভিন্ন এক রূপে তুলে ধরলেন।
জ্যাহেরিস যখন উত্তরসূরী হিসেবে বেইলনকে বেছে নেন, রেইনিস তখন অন্তঃসত্ত্বা। তার স্বামী লর্ড কারলিস ভেলারিয়ন জ্যাহেরিসের স্মল কাউন্সিলে মাস্টার অভ শিপস পদে ছিলেন। রাজার এমন সিদ্ধান্তে সাথে সাথে এ পদ থেকে সরে দাঁড়ান কারলিস। রেইনিসকে সাথে নিয়ে চলে যান ড্রিফটমার্কে। জ্যাহেরিসের এ ব্যাপারে একমত হতে পারেননি অনেকেই। রেইনিসের মা জসেলিন ব্যারাথিওন বা জ্যাহেরিসের স্ত্রী অ্যালিসানে কখনোই জ্যাহেরিসের এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানাননি।
এ ঘটনার কিছুদিন পর রেইনিসের প্রথম সন্তানের জন্ম হলো। নাম লিয়েনা ভেলারিয়ন। কয়েক বছর পরে আরেক সন্তান। এবার ছেলে। রেইনিস ও কারলিস তার নাম রাখেন লিওনর। তাদের দ্বিতীয় সন্তান ছেলে জন্ম নেবার পরে হাউজ ভেলারিওন ও হাউজ ব্যারাথিওন অনেকবার জ্যাহেরিসকে বলেছিল, বেইলন নয়, সাত রাজ্যের রাজা হিসেবে লিওনর সবচেয়ে যোগ্য। কিন্তু জ্যাহেরিস কারও কথা শোনেননি। তিনি তার উত্তরসূরী কখনোই পরিবর্তন করেননি।
১০১ এসি। প্রিন্স বেইলন অসুস্থ হয়ে পাঁচদিনের মাথায় মারা গেলেন। জ্যাহেরিস তখনও সাত রাজ্য শাসন করছেন। এখন প্রিন্স হবার দাবিদার অনেকে। তাই নতুন উত্তরসূরী নির্বাচিত করার জন্য, হ্যারেনহাল প্রাসাদের তিনি তার স্মল কাউন্সিলকে ডাকলেন। রেইনিস ও তার মেয়ে লিয়েনা আসন্ন উত্তরসূরী নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে সবথেকে এগিয়ে। কিন্তু এবারও তারা বাদ থেকে গেলেন একমাত্র নারী হবার কারণে। ওয়েস্ট্রোসের অনেক নামকড়া হাউজ তাদের সাথে থাকার পরও পাশার দান উল্টে গেল। রেইনিস ও কারলিস অনেক চেষ্টা করেছিলেন, যেন উপস্থিত সকল হাউজের লর্ডরা লিওনরকে ভোট দেয়। কিন্তু লিওনরও সেদিন ড্রাগনস্টোনের প্রিন্স নির্বাচিত হননি। জ্যাহেরিসের উত্তরসূরী হিসেবে সেদিন নির্বাচিত করা হয় বেইলন টারগেরিয়ানের ছেলে ভিসেরিসকে।
নিজের প্রাপ্য অধিকার থেকে দুই দুইবার এভাবে ব্যর্থ হবার কারণে, টারগেরিয়ান ইতিহাসে রেইনিসকে বলা হয়, ‘দ্য কুইন হু নেভার ওয়াজ’।
ভিসেরিস টারগেরিয়ানের প্রথম স্ত্রী মারা যাবার পরে রেইনিসের মেয়ে লিয়েনাকে তার বিয়ে করার কথা ছিল। কিন্তু তিনি বেছে নেন অ্যালিস্যান্ট হাইটাওয়ারকে। টারগেরিয়ান হাউজ থেকে রেইনিস তৃতীয়বারের মতো অপমানিত হন। তিনি এতটাই রেগে গিয়েছিলেন যে, ভিসেরিস ও অ্যালিস্যান্টের বিয়েতে ড্রিফটমার্ক থেকে হাউজ ভেলারিয়নের একজনও আসেননি। তবে ভিসেরিস শেষবারের মতো এই দুই পরিবার এক করার চেষ্টা করেন। তার মেয়ে ও ড্রাগনস্টোনের প্রিন্সেন রায়েনারার সাথে লিওনরের বিয়ে ঠিক হয়। আর তার ভাই ডেমন টারগেরিয়ান বিয়ে করেন লিয়েনাকে।
এভাবে হয়তো টারগেরিয়ান ও ভেলারিয়ন হাউজ আবার এক হয়েছিল, কিন্তু রেইনিস আসলেই ছিলেন এই আয়রন থ্রোনের প্রকৃত দাবিদার। কিন্তু তিনি বা তার সন্তান কখনোই সে সুযোগ পাননি। রেইনিসকে বাছাই না করার পেছনে একমাত্র কারণ ছিল তার নারীত্ব। তিনি হয়তো এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ প্রতিবাদ করেননি। কিন্তু রাজা ভিসেরিসের মারা যাবার মধ্য দিয়েই শুরু হয় টারগেরিয়ান গৃহযুদ্ধ। যে যুদ্ধ সূচনাই করেছিল আরেক নারী, রায়েনারা টারগেরিয়ান।
ড্যান্স অভ দ্য ড্রাগনের সময় রেইনিস ছিলেন রায়েনারার পাশে। ব্যাটেল অ্যাট রুক’স নেস্ট লড়াইয়ে প্রথমবারের মতো সম্মুখে এলেন রেইনিস। সেদিনের যুদ্ধে ক্রিশ্চিয়ান কোলের সৈন্যবাহিনীর বিপক্ষে লড়াইয়ের সময় এগনের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেন তিনি। এগন ও এইমন্ড তাদের ড্রাগন নিয়ে হুট করে হামলা চালালে ড্রাগনফায়ারে পুড়ে মারা যান রেইনিস ও তার ড্রাগন মেলেইস। লড়াই শেষে মেইলিসের রক্তাক্ত মৃতদেহের পাশে এক পোড়া দেহভস্ম পড়ে থাকতে দেখা যায়। ধারণা করা হয়, তা রেইনিসের। কিন্তু শুধুমাত্র ভাঙা হাড় দেখে তো আর মানুষ শনাক্ত করা যায় না!
গেম অফ থ্রোন্সের আসন্ন প্রিক্যুয়াল সিরিজ হাউজ অভ দ্য ড্রাগনে দেখা যাবে রেইনিস টারগেরিয়ানকে। ‘দ্য কুইন হু নেভার ওয়াজ’ চরিত্রে অভিনয় করবেন এভা বেস্ট।