হ্যারি পটার ফ্র্যাঞ্চাইজির গাদা গাদা চরিত্র চিত্রায়নের মধ্যে দিয়ে সবগুলো চরিত্রকে সমান গুরুত্ব দেওয়াটা বেশ কঠিন। ভিলেন আর নায়ক বাদ দিলে অন্যান্যরা তাদের উপস্থিতি টিকিয়ে রাখতে লড়াই করেছে, কিন্তু ক্ষণিক উপস্থিতির জন্য অনেকে আবার স্মৃতির অতলে ডুবে গেছে। সেদিক থেকে সিরিয়াস ব্ল্যাক চরিত্রটি পুরোপুরি সার্থক। জে. কে. রোলিং সিরিজের মাত্র তিনটি বইয়ে তাকে স্থান দিলেও, পটারহেডদের হৃদয়ে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন পাকাপোক্তভাবে। প্রথম দর্শনে খলনায়ক বিশেষণে বিশেষায়িত হয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি দর্শক, পাঠকদের অনুভূতি নিয়ে খেলেছেন বিয়োগান্তক খেলা। হ্যারি পটারের পিতৃ-মাতৃহীন জীবনে সিরিয়াসের আগমন ছিল সূর্যোদয়ের এক চিলতে আলোর মতো। যেন হ্যারির জীবনে সঞ্চার ঘটেছিল নতুন এক প্রাণের। হ্যারিও পরিবারের স্বপ্ন দেখেছিল, এই সিরিয়াসের কারণেই। অর্ডার অভ দ্য ফিনিক্সের সক্রিয়, বিশ্বস্ত, কর্তব্যনিষ্ঠ, ও অনুরত এই হগওয়ার্টস যোদ্ধাকে নিয়েই আজকের এই আয়োজন।
মৃত্যুমুখে সেভেরাস স্নেইপ
মজার ছলে স্নেইপকে একবার মৃত্যুর মুখে ফেলে দিয়েছিলেন সিরিয়াস ব্ল্যাক। ৫ম বর্ষে থাকাকালীন, স্নেইপের অনুসন্ধানী চোখ হঠাৎ গিয়ে পড়ল রেমাস লুপিনের উপর। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, লুপিন প্রতি পূর্ণিমার রাতে কোথায় যান! সিরিয়াস তখন এমনভাবে এক ফাঁদ পাতলেন, যেটা স্নেইপকে সরাসরি হোম্পিং উইলোতে নিয়ে যায়। সেখানেই লুপিনের মানুষ থেকে ওয়্যারওলফে পরিণত হবার কথা। নেকড়েতে পরিণত হবার পর নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকায়, স্নেইপের উপর আক্রমণ করে বসতে পারতেন নেকড়ে-বেশী লুপিন। কিন্তু জেমস পটার তা বুঝতে পেরে বাধা দেন সেভেরাসকে। সে যাত্রায় জেমসের কারণে প্রাণে রক্ষা পান সেভেরাস স্নেইপ।
পারিবারিক মতানৈক্যের বিরুদ্ধে যাওয়া
ম্যালফয়, লেস্ট্রেঞ্জ পরিবারের মতো ব্ল্যাক পরিবারও শুদ্ধ রক্ত নিয়ে খুব গর্ববোধ করত। তাদের মতে, মাগলদের জাদু শেখা ও জাদু ব্যবহারের কোনো অধিকার নেই। এ ব্যাপার নিয়ে সিরিয়াসের মতামতের স্বচ্ছ কোনো উপস্থাপনা না থাকলেও ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ডেথলি হ্যালোস’ বইয়ে কিছু তথ্য খোলাসা হয়ে উঠে এসেছে।
একসময় নিজ পরিবারের ভাবাদর্শের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন সিরিয়াস। তারা ক্ষিপ্ত হয়, এমন সব কর্মকাণ্ড করে বসলেন একে একে। নিজের ঘর হাউজ গ্রিফিন্ডরের লাল ও হলুদ রঙ দিয়ে সাজালেন তিনি। এছাড়াও তিনি দেয়ালে জন-কতক মাগল রমণীর ছবি টাঙিয়েছিলেন, যেটা তার অনন্য সাহসিকতার পরিচয় ফুটিয়ে তুলেছিল। তখন শাস্তিস্বরূপ তাকে পরিবার থেকে ত্যাজ্য করা হয়।
বন্দী হয়েছিলেন ২২ বছর বয়সে
হ্যারি হগওয়ার্টসে পদার্পণ করার ১০ বছর আগে সিরিয়াসকে আজকাবানে প্রেরণ করা হয়। কারাগারের এক অন্ধকার কুঠুরিতে আঁধারকে নিত্যসঙ্গী করে নিয়েছিলেন তিনি। জেমস ও লিলি পটারের মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল মাত্র ২২। কিন্তু সিনেমায় অভিনেতা গ্যারি ওল্ডম্যান সিরিয়াসের চরিত্রে অভিনয় করার সময় তার বয়স একটু বেশিই মনে হয়েছে।
হ্যারি পটারের গোপন সংরক্ষক
বহু বছর ধরে জাদু জগতের অনেকে মনে করত, সিরিয়াস ব্ল্যাকই জেমস ও লিলি পটারকে ঠকিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন। সবাই সন্দেহের তীর সিরিয়াসের দিকে তাক করে সমস্বরে উচ্চারণ করেছে, ভলডেমর্টের কাছে হ্যারির গোপন ঠিকানা ফাঁস করে দিয়েছে এই সিরিয়াসই। তাই, অর্ডার অভ দ্য ফিনিক্সের এই সদস্যকে অনেক বছর গায়ে বিশ্বাসঘাতকতার তকমা নিয়ে বাঁচতে হয়েছে। হ্যারি পটার মুভি সিরিজের তৃতীয় কিস্তিতে সব খোলাসা করা হলেও, সিরিয়াস যে তাদের গোপন রক্ষক ছিলেন, তা উল্লেখ করা হয়নি। তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, এ দায়িত্ব তিনি পিটার পেট্টিগ্রু’র উপর ন্যস্ত করবেন। এটি ছিল তার অন্যতম ভুল সিদ্ধান্ত। কেননা পিটার নিজেই ছিল ভলডেমর্টের সহচর।
অনুসন্ধানী চোখ
হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য প্রিজনার অভ আজকাবান সিনেমায়, ডেইলি প্রফেট পত্রিকায় উইজলি পরিবারের মিশর ভ্রমণের ছবি গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস ইঙ্গিত করে। সেখানে সবার হাসি-খচিত অবয়বের ছবি দেখে বোঝা যায়, তারা হয়তো মিশর ঘুরে কিছু জয় করে ফিরেছে। সাধারণ অন্যান্য ফ্রেমের মতো এটাও চোখকে পাশ কাটিয়ে গিয়েছে বলে, অনেকেই সেটায় লুকানো মাহাত্ম্য ধরতে পারেনি। কিন্তু জাদু জগতের জন্য সেটা ছিল নিগূঢ় অর্থবহ। সিরিয়াস ওই ছবি দেখেই বুঝতে পেরেছিলেন, রন উইজলির হাতে থাকা তার পোষা ইঁদুরটিই হলো পিটার পেট্টিগ্রু। কারণ, সেই প্রাণীটির পায়ে একটা আঙুল কম ছিল। ওদিকে ওয়ার্মটেল ওরফে পেট্টিগ্রুর হাতেও একটা আঙুল কম ছিল।
আজকাবান থেকে পালানোর কৌশল
সিরিয়াস ব্ল্যাকই প্রথম ব্যক্তি, যিনি মৃত্যুকূপ সদৃশ আজকাবান কারাগার থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন। পাজি ডিমেন্টরদের চোখ ফাঁকি দিয়ে, সেই জাহান্নাম থেকে পালানো মোটেও সহজ কাজ নয়। কিন্তু প্রিজনার অভ আজকাবান সিনেমায়, সিরিয়াস কীভাবে অসাধ্য সাধন করেছিলেন, তার কোনো বর্ণনা দেয়া হয়নি।
এজন্য তাকে সুচতুর এক কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়েছে। তা হলো দীর্ঘদিন অনাহারে থাকা। যতটুকু সম্ভব ওজন কমানোর পর, কুকুরের রূপ ধারণ করে ফাঁক গলে বেরিয়ে এসেছেন। দুঃখের কথা স্মরণ করলেই, ডিমেন্টররা তাদের শিকারকে তীব্র যন্ত্রণা দিয়ে তিলে তিলে মেরে ফেলে। তাই, তিনি সুখের মুহূর্তগুলো চিন্তা করে ডিমেন্টরদের ফাঁকি দিয়ে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন। দীর্ঘদিনের জমাটবাঁধা আঁধার ভেঙে ছুটে গিয়েছিলেন হ্যারি পটারের উদ্দেশে। তিনি আজকাবান থেকে পালিয়েছিলেন শুধু হ্যারিকে বাঁচানোর জন্যই। কারণ, তিনি ছিলেন হ্যারি পটারের ধর্মপিতা। লর্ড ভলডেমর্টের অনুগত শিষ্য পিটার পেট্টিগ্রু যে জীবিত রয়েছে, তা তিনি জানতেন। এ কারণেই তিনি হ্যারিকে বাঁচানোর জন্য আজকাবান থেকে পালানোর মতো দুর্ধর্ষ কাজের ঝুঁকি নিয়েছিলেন।
হ্যারি হরণ
সিরিয়াসকে আজকাবানে পাঠানো হয়েছিল মূলত ওয়ার্মটেল এবং ১২ জন নির্দোষ মাগল খুনের দায়ে। যে রাতে জেমস আর লিলি পটারকে মারা হয়, সে রাতে সিরিয়াস হ্যারিকে নিয়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষমেশ তিনি শিশু হ্যারিকে রুবিয়াস হ্যাগ্রিডের হাতে সঁপে দেন। এমনকি হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য সরসারার’স স্টোন মুভিতে হ্যাগ্রিডকে যে মোটরবাইকটা চালাতে দেখা যায়, সেটিও সিরিয়াসেরই ছিল।
রনকে দেওয়া উপহার
পোষা প্রাণীটা পিটার পেট্টিগ্রুতে বদলে যাবার পর, সঙ্গ হারিয়ে একপ্রকার সঙ্গীজনিত বিষণ্ণতায় ভুগছিল রন উইজলি। হ্যারির ছিল হেডউইগ নামক পেঁচা, হারমায়োনির ছিল ক্রুকশ্যাংক্স নামক বেড়াল, কিন্তু রনের সাথে কোনো পোষা প্রাণী ছিল না। সে সময় সিরিয়াস রনকে পিগউইজন নামে একটা পেঁচা উপহার দেন। প্রথমদিকে রন সেটাকে তেমন সহ্য করতে না পারলেও, পরবর্তী সময়ে বেশ ভালোই বন্ধুত্ব হয় ওদের মধ্যে।
জন্মদিনের উপহার
হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ডেথলি হ্যালোস পার্ট ওয়ান মুভির ডিভিডি ও ব্লু-রে ভার্সন থেকে একটা দৃশ্য ডিলিট করে দেয় স্টুডিও। যেটা ছিল মোটামুটি এরকম, নাম্বার টুয়েলভ গ্রিমাউল্ড প্লেসের বেডরুমে হ্যারি একটা কুড়িয়ে পাওয়া চিঠি পড়ছিল। চিঠিটা পড়ে হ্যারি বুঝতে পারে, সিরিয়াস ব্ল্যাক তাকে নিজের প্রথম ব্রুমস্টিক বা জাদুর ঝাড়ু জন্মদিনে উপহার হিসেবে দিয়েছে। এরকম একটা দৃশ্য থাকলে দর্শকরা কতটা আবেগাপ্লুত হতো, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু আফসোস, সেটা কেটে দেওয়া হয়েছে। কারণ তখনকার কাহিনীতে সিরিয়াস ব্ল্যাক ছিল মৃত।
সিরিয়াস ও হাউজ গ্রিফিন্ডর
সিরিয়াস ব্ল্যাকের পরিবার ছিল বংশগতভাবে বিশুদ্ধ রক্তের অধিকারী। হগওয়ার্টসের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, বিশুদ্ধ রক্তের অধিকারী জাদুকরদের স্বাভাবিকভাবেই সর্টিং হ্যাট হাউজ স্লিদারিনে পাঠায়। সেজন্য, সিরিয়াস ব্ল্যাকের পরিবারের প্রায় সবাই ঠাঁই পেয়েছিল ছিল হাউজ স্লিদারিনে। কিন্তু সাহসিকতা ও বেপরোয়া স্বভাবের জন্য সিরিয়াসকে হাউজ গ্রিফিন্ডরের জন্য নির্বাচিত করে সর্টিং হ্যাট। তিনি এতে মন খারাপ করেননি, বরং খুশিই হয়েছিলেন। কিন্তু পরিবারের লোকেরা এজন্য তার উপর ক্ষুব্ধ ছিল।
কঠোর পরিস্থিতি মোকাবিলা করার ক্ষমতা
হ্যারি পটার সিরিজের অন্যতম একটি দিক হলো, এর অনেকগুলো চরিত্র বাল্যকালে রূঢ় বাস্তবতা ও দুর্দশার সাথে লড়াই করে বেড়ে উঠেছে। সে প্রাদুর্ভাব কাটিয়ে উঠতে উঠতে একজন শিশু পরিণত হয় শক্ত মনোবল সমৃদ্ধ যুবকে। সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছায়ায় বেড়ে উঠলেও, সিরিয়াসকে একটা সময় পরিবারের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে পরিবার ছাড়তে হয়, যা ছিল তার জীবনে নিকষ অন্ধকারময় এক অধ্যায়। বিনা দোষে ১৩ বছর আজকাবানের আঁধার কুঠুরিতে নিঃসঙ্গ জীবন কাটানোর পরেও, তার কোনো আক্ষেপ ছিল না। তিনি চেয়েছিলেন সুন্দর একটা পৃথিবী গড়তে। বুকে গুমরে থাকা অসন্তোষকে সমাপ্ত করেছিলেন স্নিগ্ধোজ্জ্বল হাসির মাধ্যমে।
প্রখর মেধা
সিনেমায় সিরিয়াস ব্ল্যাকের ছাত্রজীবন নিয়ে তেমন কিছু দেখানো হয়নি। কিন্তু ছাত্র হিসেবে তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। জাদুকরেরা ইচ্ছা করলেই অ্যানিমাগাসের রূপ ধারণ করতে পারে না, এজন্য জাদুবিদ্যায় প্রবল দক্ষতা অর্জন করতে হয়। অ্যানিম্যাগাস হলো সেই জাদুকর, যিনি মুহূর্তের মধ্যে কোনো জন্তু-জানোয়ারের রূপ ধারণ করে আবার মানুষের রূপে ফিরে আসতে পারে। কিন্তু সিরিয়াস অ্যানিম্যাগাসের ক্ষমতা আয়ত্ত করেছিলেন হগওয়ার্টসে ছাত্রাবস্থায়ই। ছোটবেলা থেকেই বেপরোয়া ও ডানপিটে স্বভাবের হওয়ায়, ছাত্র হিসেবে আঁতেল গোছের ছিলেন না তিনি। অল্প পড়েই ভালো ফলাফল করতে পারতেন। সেটা তার মেধার স্বাক্ষরকেই প্রতিফলিত করে।
প্রেমে অনীহা
হ্যারি পটারের বিভিন্ন চরিত্র একের অধিক প্রেমে হাবুডুবু খেলেও পুরো বইয়ে এমন কোনো ঘটনার উল্লেখ ঘটনার নেই, যেখানে সিরিয়াস ব্ল্যাক কোনো রমণীর সাথে প্রেম সংক্রান্ত ব্যাপারে জড়িয়েছে। স্মৃতিপাত্রে দেখা গেছে, ১৫ বছরের ব্ল্যাকের সাথেও হরমোন কোনো প্রেম-ঘটিত খেলা খেলেনি। সেটা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, সিরিয়াসের কোনো প্রেমিকা ছিল না। বরং এসব প্রেম-ভালোবাসায় তার ইচ্ছার চেয়ে অনীহার পরিমাণই ছিল বেশি।
উইজলি পরিবারের আত্মীয়
হ্যারি পটারে কয়েকটি সম্পর্কের যোগসূত্র সবাইকে অবাক করেছে বেশ। যেমন, জাদু জগতের দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের প্রধান নায়ক ও খলনায়ক যথাক্রমে হ্যারি পটার ও লর্ড ভলডেমর্ট ছিল একে অন্যের সাথে সংযুক্ত। কিন্তু সিরিয়াস ব্ল্যাক একদিক থেকে উইজলি পরিবারের আত্মীয় হয়, তা হয়তো অনেকেরই অজানা। সম্পর্কে অবশ্য বই বা সিনেমার কোথাও ইঙ্গিত দেয়া হয়নি। কিন্তু জে. কে. রোলিং পরে জানিয়েছেন, আর্থার উইজলি আর সিরিয়াস ব্ল্যাক সম্পর্কে কাজিন হয়।
দুই মহাযুদ্ধের দুঃসাহসী যোদ্ধা
সিরিয়াস ব্ল্যাক যে প্রতি পদে পদে ভলডেমর্ট ও তার অনুসারীদের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে চেয়েছেন, তা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। শুরু থেকেই তিনি ছিলেন ভলডেমর্ট ও ডেথ ইটারের বিরুদ্ধে। বিপথগামী কালো জাদুকর আর বাকিদের মাঝে নির্মাণ করেছিলেন এক প্রতিরক্ষা প্রাচীর। হাউজ গ্রিফিন্ডরের শিক্ষার্থী হওয়ায়, দুর্দান্ত সাহসী গোছের ছিলেন তিনি। ভলডেমর্ট যখন প্রথমবারের মতো জাদু জগতে তার কালো হাতের করাল থাবায় সবকিছু গ্রাস করতে চেয়েছিল, তখন তাকে থামিয়েছিলেন স্বয়ং অ্যালবাস ডাম্বলডোর। উল্লেখ্য যে, ভলডেমর্ট শুধু একজন জাদুকরকেই ভয় পেত, আর তিনি হলেন প্রফেসর অ্যালবাস ডাম্বলডোর।
ভলডেমর্টকে পিছু হটানোর জন্য ডাম্বলডোর তার সমর্থনকারীদের নিয়ে অর্ডার অব দ্য ফিনিক্স নামে এক সংগঠন দাঁড় করিয়েছিলেন। এর গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য ছিলেন সিরিয়াস ব্ল্যাক। ভলডেমর্টকে প্রথমবার রুখে দেয়ার পর, দ্বিতীয়বার যখন হ্যারি উপর হামলা করে বসে ডার্ক লর্ড, তখন হ্যারির ধর্মপিতা হিসেবে গুরুদায়িত্ব পালন করেন সিরিয়াস। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে তিনি ছিলেন শহীদদের কাতারে।
তৃতীয় সিরিয়াস
মাগলদের দুনিয়ায় সিরিয়াস ব্ল্যাক শুধু হ্যারি পটারের ধর্মপিতা হিসেবে এক পরিচিত নাম হলেও, পিউর-ব্লাড মহলে সে নামটা অনেক আগে থেকেই পরিচিত। সিনেমা থেকে যে সিরিয়াস ব্ল্যাককে আমরা চিনেছি, তিনি মূলত তার পরিবারের তৃতীয় সিরিয়াস ব্ল্যাক। প্রথম সিরিয়াস ব্ল্যাক মাত্র আট বছর বয়সেই জগৎ সংসারের সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। আর দ্বিতীয় সিরিয়াস ব্ল্যাক বেঁচে ছিলেন ১৮৭৭-১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত।
খামখেয়ালিপনা
বলা-বাহুল্য, সিরিয়াস ব্ল্যাক তার জীবনে অনেক চড়াই-উৎরাই এবং দুর্বিষহ সময় পার করেছেন। সেজন্য, অবশ্য তার মানসিক বিপর্যয় ও উদ্বেলতাকে ততটা দোষ দেওয়া যায় না। কিন্তু মাঝে মাঝে তিনি গম্ভীরতার একেবারে গভীর খাদে নিখোঁজ হয়ে যেতেন। তার কাছে অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র সংরক্ষিত ছিল। সেগুলো ইচ্ছা করলে গুছিয়ে রাখতে পারতেন, কিন্তু এখানে খামখেয়ালিপনার সর্বোচ্চ পর্যায় দেখিয়েছেন তিনি। জিনিসগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছেন, বা নিয়ে গেছে অন্য কেউ চুরি করে।
কাস্টিং কল
গ্যারি ওল্ডম্যান হলিউড পাড়ার দক্ষ একজন অভিনেতা, তাতে সন্দেহ নেই। হলিউডের বিখ্যাত কিছু সিনেমা যেমন, দ্য ডার্ক নাইট ট্রিলজি, সিড অ্যান্ড ন্যান্সি, ডার্কেস্ট আওয়ার, ম্যাঙ্ক, ডন অব দ্য প্ল্যানেট অভ অ্যাপস-এর মতো মুভিতে অভিনয় শিল্পটা দুর্দান্তভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। অবাক করা বিষয় হলেও, সিরিয়াস ব্ল্যাক রোলে গ্যারি ওল্ডম্যান পরিচালকের প্রথম পছন্দ ছিলেন না। পরিচালক ক্রিস কলম্বাস সিরিয়াস ব্ল্যাকের চরিত্রে ইংরেজ অভিনেতা রবসন গ্রিনকে নিতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু, ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রথম দুই মুভি পরিচালনা করার পর সরে যান ক্রিস কলম্বাস। প্রোডাকশন হাউজ এরপর পরিচালনার দায়িত্ব ছেড়ে দেন আলফোনসো কাউরোনের ঘাড়ে। কাউরোন ছিলেন ওল্ডম্যানের একজন ভক্ত, সেজন্য সিরিয়াস চরিত্রে তিনি অন্য কারও কথা না ভেবে গ্যারি ওল্ডম্যানকে কাস্ট করেন।
সিরিয়াস ব্ল্যাকের স্মরণে
কথায় আছে, ‘কীর্তিমানের মৃত্যু নেই’। জে. কে. রোলিং যেন এই বাক্যের জীবন্ত পরিস্ফুটন ঘটালেন হ্যারি পটারের মধ্য দিয়ে। নিজ পিতা জেমস পটার ও ধর্মপিতা সিরিয়াস ব্ল্যাকের স্মরণার্থে হ্যারি তার প্রথম সন্তানের নাম রেখেছিল, জেমস সিরিয়াস পটার। হগওয়ার্টসে ভর্তি হবার পর তাকে সর্টিং হ্যাট হাউজ গ্রিফিন্ডরে পাঠায়।
আগমনের পূর্বাভাস
প্রথম বই পড়ার সময় অনেক পাঠকই হয়তো লক্ষ করেননি, জেকে রোলিং হ্যারি পটার ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রথম বই, ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য সরসারার’স স্টোন’-এ সিরিয়াস ব্ল্যাকের কথা উল্লেখ করেছেন। সিরিয়াস ব্ল্যাককে যে তিনি পরবর্তী বইগুলোতে আনতে যাচ্ছেন, এর পূর্বাভাস দিয়েছিলেন প্রথম থেকেই। বইয়ের প্রথমেই, ‘দ্য বয় হু লিভড’ নামক অধ্যায়ে ব্ল্যাকের নাম পাওয়া যায়। হ্যাগ্রিডকে উড়ন্ত মোটরবাইকটা উপহার দিয়েছিলেন সিরিয়াস ব্ল্যাকই।
সিরিয়াস ব্ল্যাক ছিলেন এমন একজন জাদুকর, যিনি সর্বদা সত্য ও সুন্দরের পক্ষে লড়ে গেছেন। এমনকি সেজন্য মৃত্যুকে বীরের মতো আলিঙ্গন করতেও পিছপা হননি তিনি। জাদু-জগৎ তার এই আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করার পাশাপাশি তার এই কিংবদন্তি ছড়িয়ে দিক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।