বিদায় নিয়েছে ২০১৭। হলিউড সাজছে নতুন করে, নতুন সব চলচ্চিত্রের আয়োজনে। তবে তাই বলে পুরনো কিন্তু তার রেশ হারায়নি এখনো। গত বছর সুপারহিরো মুভি এবং আরো অনেক নামকরা চলচ্চিত্রের ভিড়ে হলিউডে মুক্তি পেয়েছিল অনেক অ্যানিমেশন মুভিও। অ্যানিমেশন বলতেই বাচ্চাদের ব্যাপার বলে যারা নাক সিটকান তাদের জন্য নয়, বয়সকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে যারা। অ্যানিমেশন মুভিকে ভালোবাসেন, সারা বছর অপেক্ষা করেন কবে নতুন কোন অ্যানিমেশন মুভি আসবে, হলিউড ২০১৭ সালের সেরা অ্যানিমেশন মুভিগুলো নিয়ে আজ তাদের জন্য রইলো এই আয়োজন।
১) কোকো
খুব বেশি আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু না হলেও কোকো-কে নিয়ে ভালো কিছু হবে এমন আশা ছিল অ্যানিমেশনপ্রেমীদের। দর্শক এবং নির্মাতা কাউকেই হতাশ করেনি কোকো। ১৭৫-২০০ মিলিয়ন ডলার বাজেটে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি আয় করে নিয়েছে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার। ওয়াল্ট ডিজনি থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চত্রটি প্রযোজনা করে পিক্সচার অ্যানিমেশন স্টুডিও।
২০১৭ সালের এই মুভিতে ১২ বছর বয়সী মিগুয়েল রিভেরাকে দেখানো হয়। হঠাৎ করেই মৃতদের দেশে চলে যায় সে। আর সেখানে নিজের সুরকার দাদুর দাদুকে বুঝিয়ে, তার সাহায্য নিয়ে ফিরে আসে পৃথিবীতে, নিজের চেনা জগতে।
২) ডেসপিকেবল মি ৩
২০১৭ সালের সবচাইতে প্রতীক্ষিত অ্যানিমেশন মুভির নামের জায়গায় যদি ‘ডেসপিকেবল মি ৩’-কে বসিয়ে দেওয়া হয় তাহলে খুব একটা ভুল হবে না। আগের সিরিজগুলোর অসাধারণ সাফল্য এবং দর্শকপ্রিয়তার পর আরেকটা বড় ধামাকার জন্য অপেক্ষা করছিল সবাই। হতাশ হতে হয়নি দর্শকদের। যদিও ডেসপিকেবল মি’র এই কিস্তিতে আগেরগুলোর চাইতে গল্পের নাটকীয়তার অভাব ছিল, তবে গ্রু এবং আর তার যমজ ভাই ড্রু- কেউই কম যায়নি একে অন্যের চাইতে। দর্শকদের মাতিয়ে দিয়েছে এই দুই ভাই। আর সাথে মিষ্টি-দুষ্টু মিনিয়নরা তো ছিলোই। মাত্র ৮০ মিলিয়ন ডলারে নির্মিত এই মুভিটি আয় করে নেয় প্রায় ১,০৩৩ মিলিয়ন ডলার।
৩) ফার্দিনান্দ
বছরের শেষের দিকে মুক্তি পায় ফার্দিনান্দ। কোকো এবং ফার্দিনান্দ- দুটো নিয়েই দর্শকদের চাওয়া ছিল অনেকটা মাঝামাঝি ঘরানার। তবে কোকোর মতো ফার্দিনান্দও যথেষ্ট ভালো করে দেখায় সিনেমা হলগুলোতে।
বড় শরীরের অধিকারী ফার্দিনান্দ ষাঁড় হলেও থাকতে ভালোবাসে মানুষের সাথে, সবাইকে ভালোবাসে। লড়তে একেবারেই পছন্দ করে না সে। কিন্তু কেউ তার কথা বুঝলে তো! ষাঁড়ের লড়াইয়ে পাঠানো হয় ফার্দিনান্দকে। অনেকটা জোর করেই। আর তারপর? তারপর নিজের বন্ধুদেরকে কীভাবে ফার্দিনান্দ বাঁচিয়ে আনলো, কীভাবে নিজেকে বাঁচালো, সেই গল্পটাই চমৎকারভাবে পর্দায় উপস্থাপন করেছেন কার্লোস সালদানহা। রবার্ট লসনের ছোটদের গল্পের বই ‘দ্য স্টোরি অব ফার্দিনান্দ’-কে ভিত্তি করে নির্মিত মুভিটি ১৪৪.৬ মিলিয়ন ডলার আয় করে নিয়েছে।
৪) দ্য নাট জব ২: নাটি বাই নেচার
দ্য নাট জব সবার ভালোলাগা অর্জন করেছিল অনেক আগেই। এ বছর এই সিরিজের দ্বিতীয় কিস্তি আসার অপেক্ষা শুরু হতেই শুরু হয় নানারকম আলোচনা। পারবে তো নাট জব ২ এর আগের মুভির মতন হতে? সেসব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে নাট জবের চাইতেও আরো ভালো গল্পকে সাথে করে পর্দায় হাজির হয়েছে নাট জব ২। নায়ক-নায়িকা সেই একই আছে। তবে গল্পের প্রয়োজনে যোগ হয়েছে আরো বেশকিছু চরিত্র।
নিজেদের বাসস্থান হারিয়ে অসহায় ইঁদুর দল সাহায্য চায় শহুরে ইঁদুরদের কাছে। শহুরে ইঁদুরেরা কুংফু-কারাতে জানে। পার্কের ইঁদুরদের পাশে এসে দাঁড়ায় তারা। একসাথে মিলে বন্ধ করে দেয় এমিউজমেন্ট পার্ক। তার বদলে শহরের লোভী মেয়রকে হারিয়ে দখল করে নেয় নিজেদের বাসস্থান। মোট ৬৫.২ মিলিয়ন আয় করে নেয় মুভিটি।
৫) স্মার্ফস: দ্য লস্ট ভিলেজ
ছোট্ট ছোট্ট নীলচে মানুষ। তাদেরকে সবাই চেনে স্মার্ফস নামে। নানারকম জাদুকরী শক্তি আছে তাদের। নিজেদের গ্রামে নিজেদের মতো করে থাকতে ভালোবাসে স্মার্ফসরা। কাজ করে, কাজ শেষে বাড়ি ফিরে যায়। এই স্মার্ফ ভিলেজের প্রধান হলো পাপা স্মার্ফ। আরো অনেকের মধ্যে সেখানে আছে জাদুকর গারগামেলের তৈরি স্মার্ফিটি। খারাপ কাজের জন্য তৈরি করা হলেও স্মার্ফ ভিলেজে আসার পর আর সব স্মার্ফের সাথে থেকে ভালো হয়ে যায় স্মার্ফিটি। কিন্তু স্মার্ফিটির এমন কাজ সহ্য হয় না জাদুকর গারগামেলের। প্রচন্ড রেগে গিয়ে আরেক স্মার্ফকে পাঠায় সে স্মার্ফ ভিলেজ থেকে সবচাইতে শক্তিশালী হওয়ার জাদু আনার জন্য। মোট ১৯৭.২ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে ‘স্মার্ফস: দ্য লস্ট ভিলেজ’।
৬) কার্স ৩
ডেসপিকেবল মি ৩ এর মতো কার্সকে নিয়েও নতুন করে কিছু বলার নেই। মানুষ নয়, এই অ্যানিমেশন মুভির নায়ক-নায়িকা এবং বাকি চরিত্রদের সবাই গাড়ি। মোট ৩৮৩.৮ মিলিয়ন ডলার আয় করে নেওয়া মুভিটি এবারও নির্মিত হয়েছে লাইটিং ম্যাককুইনকে প্রধান চরিত্রে রেখে। টানা সাত বছরের রেসিং চ্যাম্পিয়ন লাইটিং ম্যাককুইন। তবে তাকে হারিয়ে দেয় স্টর্ম। সেই হারের সময় আঘাত পায় ম্যাককুইন। এতসবের পর আর রেসে নাম লেখায় না সে। সবার কাছ থেকে আলাদা করে নেয় নিজেকে। তাহলে এবার? ম্যাককুইন কি আর ফিরে আসবে না? দেখে ফেলেছেন তো কার্স ৩? না দেখলে এখনই দেখে ফেলুন। সময়টা খারাপ কাটবে না।
৭) দ্য বস বেবী
ট্রেলার মুক্তির পর থেকেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়ে যায় দ্য বস বেবী। আর মুভিটিকেও সাদরে আমন্ত্রণ জানায় দর্শকেরা। মারলা ফ্রেজির চিত্রায়িত বই থেকে নেওয়া বস বেবীকে ভালোবেসে ফেলে সবাই।
গল্পের শুরু হয় ৭ বছর বয়সী টিমের কাছ থেকে। একদিন টিমের বাসায় নতুন এক শিশু আসে। বাবা-মা পরিচয় করিয়ে দেয় টিমকে তার নতুন ভাইয়ের সাথে। সব ঠিকই ছিল, তবে ছোট্ট ভাইটিকে দেখে ঠিক সুবিধার মনে হয় না টিমের। কেমন যেন একটা ‘বস বস’ ভাব ছোট্ট ভাইয়ের মাঝে! আর নিজেকে শেষপর্যন্ত বস বেবী হিসেবেই পরিচিয় করিয়ে দেয় টিমের নতুন ভাই। তবে এসবই সে করে টিমের সাথে। বাবা-মায়ের সামনে বেশ ছোট্ট, মিষ্টি এক শিশু সেজে থাকে বস বেবী।
কেন? কেন বস বেবী টিমদের বাড়িতে এল? তার উদ্দেশ্য কী? টিমের বাড়িতেই কি থেকে যাবে সে চিরতরে? জানতে হলে মুভিটি দেখে নিন। ১২৫ মিলিয়ন ডলার দিয়ে নির্মিত মুভিটি আয় করে নিয়েছে ৪৯৮.৯ মিলিয়ন ডলার।
৮) দ্য ইমোজি মুভি
ফেসবুকে নানারকম ইমোজি ব্যবহার করি আমরা। ইচ্ছে করলেই যেকোনো ইমোজি দিয়ে দিতে পারি। কিন্তু কেমন হবে বলুন তো, যদি ইমোজিদের কোনো আলাদা দুনিয়া থাকে? কোথায়? আপনার মোবাইলের ভেতরে!
ঠিক এমন এক গল্প নিয়েই নির্মিত হয়েছে দ্য ইমোজি মুভি। গিনি নিজেকে ঠিক একরকম করে রাখতে পারে না। নানারকম আবেগ কাজ করে তার মধ্যে। কখনো হাসতে ভালো লাগে, কখনো বা কাঁদতে। তাই বাতিল ইমোজির তালিকায় ফেলে দেওয়া হয় তাকে।
এবার? গিনিকে কি মেরে ফেলা হবে? যদিও আইএমডিবি খুব একটা ভালো রেটিং দেয়নি দ্য ইমোজি মুভিকে আর ব্যবসায়িক দিক দিয়েও ভালো করতে পারেনি এটি, তবে ইচ্ছে থাকলে আর সময় হলে দেখে ফেলতে পারেন মুভিটি।
ফিচার ইমেজ: hdqwalls.com