Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

হৃদয়গ্রাহী এক বন্ধুত্বের গল্প ‘দ্য কাইট রানার’

বইটির লেখক খালেদ হুসেইনী পেশায় একজন চিকিৎসক। ৪ মার্চ ১৯৬৫ সালে জন্ম নেওয়া এই লেখকের বেড়ে ওঠা আফগানিস্তানে। নিয়তির ফেরে রাজনৈতিক আশ্রয়ে পাড়ি জমান আমেরিকায়। এখন পর্যন্ত তার চারটি বই প্রকাশিত হয়েছে। ‘দ্য কাইট রানার’ তার প্রথম উপন্যাস, যেটি প্রকাশিত হয় ২০০৩ সালে। প্রকাশ করে রিভারহেড বুকস। দ্য টাইমস, ডেইলি টেলিগ্রাফ এবং গার্ডিয়ানের মতে, এই বইটি গত দশকের শ্রেষ্ঠ বই।

বইটির প্রেক্ষাপট জুড়ে আছে আফগানিস্তানের কাবুল। বর্তমান সময়ে আফগানিস্তান নামক দেশটির কথা শুনলেই যুদ্ধবিধ্বস্ত এক দেশের ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। যদিও কাহিনীর শুরু সত্তরের দশকের আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে; যেখানে যুদ্ধ-পূর্ববর্তী, বসবাসযোগ্য, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও স্বাধীন এক আফগানিস্তানের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে, যা বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী দুর্লভ।

‘দ্য কাইট রানার’ বইয়ের প্রচ্ছদ; Image Credit: Amazon

কাবুলের অভিজাত ওয়াজির আকবর খান এলাকায় বাস করা কাবুলের ধনী ব্যবসায়ীর মা-হারা একমাত্র ছেলে আমির, তাদের ভৃত্য আলির ছেলে হাজারা সম্প্রদায়ের হাসান, আমিরের ‘বাবা’ আঘা সাহেব, তার বন্ধু রহিম খান এ উপন্যাসের কয়েকটি প্রধান চরিত্র। হাসানের বাবা আলি বহুকাল ধরে আঘা সাহেবদের বাড়িতে ভৃত্য হিসেবে বসবাস করতেন। সেই সূত্রে হাসান আমিরদের বাসাতেই থাকত। সে ছিল আমিরের সার্বক্ষণিক সঙ্গী। তাদের মধ্যে ছিল প্রগাঢ় বন্ধুত্ব। বাবা-ছেলের মধ্যকার সম্পর্ক, বন্ধুদের মাঝে বিদ্যমান বন্ধুত্ব, ত্যাগ, মানসিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব নিয়েই গড়ে উঠেছে উপন্যাসটি।

এছাড়া আরও অনেক চরিত্র আছে, যেগুলো কাহিনীর প্রয়োজনে এসেছে এবং উপন্যাসে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করেছে। যেমন: আসেফ, সুরাইয়া প্রমুখ চরিত্র।

আফগানিস্তানে শীতকালে স্থানীয়ভাবে এক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়, ঘুড়ি উড়ানো প্রতিযোগিতা। একে অন্যের ঘুড়ি কাটাই হলো খেলার মূল লক্ষ্য। এভাবে একে অন্যের ঘুড়ি কেটে যার ঘুড়ি শেষ পর্যন্ত থাকত, সে বিজয়ী হতো। যারা কাটা ঘুড়ি সংগ্রহ করত, তাদের আলাদা নাম ছিল। তাদের বলা হতো ‘কাইট রানার’ বা ঘুড়ি সংগ্রহকারী। এ কাজটিও খুব সহজ ছিল না। বাতাসের গতিবেগ বোঝার সাথে সাথে নিখুঁত পর্যবেক্ষণ ক্ষমতাও থাকতে হতো। আমির ছিল ঘুড়ি উড়াতে পারদর্শী, তাকে সার্বিকভাবে সাহায্য করত হাসান। অপরদিকে, হাসান ঘুড়ি সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে ছিল সিদ্ধহস্ত। বাতাসের গতিবেগ বোঝার ব্যাপারে তার ছিল নিখুঁত পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা।

Image Credit: Rokomari.com

১৯৭৫ সালের এক শীতের ঘটনা। ১২ বছরের আমির সেবার ঘুড়ি উড়ানো প্রতিযোগিতায় জিততে প্রবলভাবে আগ্রহী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তার বিশ্বস্ত বন্ধু হাসানও তাকে সাহায্য করার জন্য উন্মুখ। প্রবল উত্তেজনাপূর্ণ প্রতিযোগিতা শেষে আমির প্রথম হয়। সে সময়ের রীতি অনুযায়ী, বিজয়ী ঘুড়িটিকে কুড়িয়ে এনে স্মারক হিসেবে বসার ঘরে সাজিয়ে রাখা হত। বিজয়ী নীল ঘুড়িটিকে কুড়িয়ে আনার সময় সেই শেষ বিকেলে তাদের জীবনে ঘটে এমন এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, যা ছিল তাদের ধারণারও বাইরে।

তাজা আনন্দের রেশটুকু কেটে যাওয়ার আগেই ঘটে যাওয়া সেই দুঃখজনক ঘটনা আমিরের জীবন ওলট-পালট করে দেয়, আমির আর হাসানের সম্পর্কে চিড় ধড়ায়। আমির আর হাসানের সাথে আগের মতো মিশতে পারে না। তাকে দেখলে অস্বস্তিতে ভোগে, অস্থিরতা নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটায়। হাসান বুঝতে পারে না, কী তার দোষ, কেন আমির তাকে এড়িয়ে চলে, তার কী করা উচিত। সেই শেষ বিকেলের ঘটনা আমির আর হাসানের মধ্যকার সম্পর্কে ছেদ ঘটায় চিরদিনের মতো।

লেখক খালেদ হোসাইনি; Image Credit: EVAN AGOSTINI/AP

এরপর এক সময় যুদ্ধ প্রবেশ করে আফগানিস্তানে। নিয়তির ফেরে ও রাজনীতির নির্মম পরিহাসে আমিররা যুধবিধ্বস্ত কাবুল ছেড়ে পাড়ি জমায় আমেরিকায়। সেখানে আঘা সাহেব চাকরি নেন এক পেট্রোল পাম্পে। যদিও আমেরিকার নতুন জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারেননি, তবুও সেখানে ধীরে ধীরে তাদের জীবনে অনেকটাই স্বাভাবিকতা ফিরে আসে।

কিন্তু একদিন তার বাবার বন্ধু রহিম খানের ফোন তাকে আবার অস্থির করে তোলে। সুপ্ত সেই অস্বস্তিগুলো লাভার মতো ছড়িয়ে পড়তে থাকে, তাকে প্রতিনিয়ত গ্রাস করে নিতে থাকে। সেই শেষ বিকেলের অনভিপ্রেত ঘটনা তাকে দুঃস্বপ্নের মত ক্রমশ তাড়া করে ফেরে। যদিও বা সেটাকে সে পুরোপুরি চেপে রাখতে চেয়েছিল, হৃদয়ের গহীনে সমাহিত করতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি। সেই অস্বস্তিকর শেকল থেকে মুক্ত হতে চায় সে। যার জন্য সে ছুটে যায় আফগানিস্তানে, মুক্তি পাওয়ার জন্য। কোন দুঃসহ স্মৃতি সে বয়ে বেড়িয়েছিল? নতুন কী এমন নগ্ন সত্য উন্মোচিত হয়েছিল তার সামনে? আমির কি আদৌ মুক্তি পেয়েছিল?

এই রিভিউটি পড়ে কেউ যদি উৎসাহী হয়ে বইটি পড়তে শুরু করেন, তবে বইটি শেষ করার পর হতবিহ্বল হওয়ার প্রস্তুতিও নিয়ে রাখবেন, তা না হলে আপনার স্নায়ু অত্যধিক চাপে পড়তে পারে।

This article is in Bangla language. The Kite Runner is the first novel by Afghan-American author Khaled Hosseini. The book was published in 2003 by Riverhead Books. This book rendered the unforgettable, heartbreaking story of the unlikely friendship between a wealthy boy and the son of his father’s servant at a tense and crucial moment of change and destruction. (RB/AS)

Featured Image: The playhouse

 

Related Articles