Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দ্য পোস্ট: ইতিহাসের কালজয়ী এক অভ্যুত্থানের গল্প

ইতিহাস নির্ভর সিনেমার বিষয়বস্তু বরাবরই যুদ্ধ, কোনো বিশেষ শাসকের অধীনে থাকাকালীন পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও কোনো নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক বিবর্তন ঘিরেই নির্মিত হয়। আবার অন্যদিকে রাজনৈতিক বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সিনেমার ক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক দল অথবা রাজনীতিবিদের ওপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়ে থাকে। কিন্তু তাই বলে ভিন্নধর্মী সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে না যে, তা নয়। আজকের যুগে মানবজাতিকে সত্যের মুখোমুখি করতে অথবা সাম্প্রতিক কাল থেকে শুরু করে অতীতের কোনো ঘটনার সাথে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার জন্য সিনেমা অত্যন্ত কার্যকরী একটা ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আর তাই, ঐতিহাসিক-রাজনৈতিক কোনো যুগান্তকারী ঘটনা নিয়ে সিনেমা তৈরিতেও নির্মাতারা আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘স্পটলাইট’ সিনেমার কথাই ধরা যাক। ৮৮ তম অস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রেরর পুরস্কার অর্জন করার পাশাপাশি সমালোচক থেকে শুরু করে দর্শক সমাজেও তুমুল প্রশংসার ঝড় তুলেছিল। সিনেমাটির পরিচালক টম ম্যাককার্থি সাবলীল ও বাস্তবসম্মতভাবে একটা পত্রিকা অফিসের এক দল সাংবাদিকের দ্বারা সংঘটিত এক বিপ্লবী সত্য ঘটনাকে পর্দায় তুলে ধরেছিলেন।

‘স্পটলাইট’ সিনেমাটির প্রসঙ্গ তোলার কারণ হলো, আজকে যে সিনেমাটি নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি, সেটার সাথে এই সিনেমার বেশ কিছু ক্ষেত্রে মিল রয়েছে। হয়তো স্পটলাইটের মতো এটি অস্কার জিততে পারেনি অথবা তেমনটা আকাশচুম্বী সাড়া জাগাতে পারেনি, কিন্তু এই ক্যাটাগরির সিনেমার কথা বললে গেলে, এটিও যে এক আলোড়নকারী এক সৃষ্টি তা মানতেই হবে।

হলিউডের ইতিহাসে সেরা পরিচালকদের খাতায় ‘স্টিভেন স্পিলবার্গ’ নামটি আপন মহিমায় জ্বলজ্বল করছে। তার পরিচালিত অগণিত সিনেমার কথা তো বাদই দিলাম। শুধু সেরা পরিচালকের শাখায় অস্কার লাভ করেছিলেন যে দুটি সিনেমার জন্য, সেই ‘সেভিং প্রাইভেট রায়ান’ ও ‘শিন্ডলার্স লিস্ট’ এর নামও যদি উল্লেখ করি, তাহলেও বোঝা হয়ে যায়, তিনি কোন মাপের পরিচালক।

সিনেমার একটি দৃশ্যে মেরিল স্ট্রিপ ও টম হ্যাংক্স; Source: foxmovies.com

২০১৭ সালে যখন সংখ্যাগুরু সিনেমাপ্রেমীরা ‘ডার্কেস্ট আওয়ার’ অথবা ‘থ্রি বিলবোর্ড আউটসাইড এবিং, মিসৌরি’ সিনেমা দুটির জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন, ঠিক তখন অনেকে হয়তো ‘দ্য পোস্ট’ নামের সিনেমার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন। একে তো স্পিলবার্গের মতো নির্মাতা, তার ওপর সিনেমার মূল চরিত্রে থাকা দুই অভিনয়শিল্পীর এক সাথে রূপালি পর্দায় উপস্থিতি। সবমিলিয়ে, সিনেমা নিয়ে আশা ও উদ্দীপনা তখন তুঙ্গে। আর সিনেমার প্রেক্ষাপট সম্পর্কেও যতদূর যা জানা যাচ্ছিল, সেটাও কৌতূহল জাগানোর উপাদান হিসেবে কাজ করেছিল।

‘দ্য পোস্ট’ সিনেমার প্লট গড়ে উঠেছে ১৯৬৬ সালের একটি সত্য কাহিনী অবলম্বনে, যা কিনা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসেই নয়, রাজনীতিতেও আমূল পরিবর্তন বয়ে এনেছিল। সিনেমার গল্প থেকে ঘুরে আসার আগে গল্পটি যে সকল উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে, সেগুলো নিয়ে খানিকটা জেনে আসা যাক।

বাস্তবের তৎকালীন ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ টিম; Source: consortiumnews.com

‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ পত্রিকাটি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির একটি স্বনামধন্য দৈনিক পত্রিকা। ১৮৭৭ সালের ৬ই, ডিসেম্বর স্টিলসন হাটচিন নামক একজন সাংবাদিকের হাত ধরে যাত্রা শুরু করেছিল এই পত্রিকাটি। প্রতিষ্ঠাতা স্টিলসন প্রাথমিকভাবে এর মালিকানাধীন থাকলেও, সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এর মালিকানা বেশ কিছু হাত বদল করে ১৯৩৩ সালের দিকে নিলামের মাধ্যমে ফেডারেল রিজার্ভের সাবেক চেয়ারম্যান ইউজিন মায়ারের হাতে এসে অর্পিত হয়। ইউজিন এই পত্রিকাটির ভার নিজ কাঁধে তুলে নেওয়ার আগে, পত্রিকাটি বেশ কিছু উত্থান-পতনের মুখোমুখি হয়েছিল। এরপর ইউজিনের পর তার মেয়ে জামাই ফিল গ্রাহামের হাতে পত্রিকাটির গুরুভার সমর্পিত হয়। ১৯৬৩ সালে ফিল গ্রাহাম বাইপোলার ডিস অর্ডার নামক মানসিক রোগে আক্রান্ত অবস্থায় আত্মহননের পথ বেছে নেন। আর তারপর ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ প্রতিষ্ঠানটির দায়ভার ফিলের স্ত্রী ও হিউজেনের কন্যা ক্যাথরিন গ্রাহামের ওপর হস্তান্তরিত হয়ে পড়ে। আর সিনেমার গল্পতেও ক্যাথরিন গ্রাহামের পত্রিকাটির দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ের একটি গুরুত্ববহ পরিস্থিতিকে চিত্রায়িত করা হয়েছে। জানিয়ে রাখা ভালো, ক্যাথরিন গ্রাহাম আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম নারী প্রকাশক ছিলেন। তাই বলা যেতে পারে, সিনেমাটিতে নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টার ওপরে দৃষ্টিপাত করা হয়েছে।

এছাড়া সিনেমার আরও একটি প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, ভিয়েতনাম যুদ্ধ। প্রায় বিশ বছর স্থায়িত্বকালের এই যুদ্ধের প্রতিপক্ষ দল ছিল দক্ষিণ ভিয়েতনাম ও উত্তর ভিয়েতনাম। এই দুই ভিয়েতনামের পরস্পরের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত এই যুদ্ধে উত্তর ভিয়েতনামের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন, চায়না সহ আরও কয়েকটি সাম্যবাদী দেশ। অন্যদিকে, দক্ষিণ ভিয়েতনামের পক্ষে যুদ্ধে নেমেছিল যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড সহ আরও কয়েকটি দেশ। দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই যুদ্ধ প্রকৃতপক্ষে একটা ঠাণ্ডা গৃহ যুদ্ধ হিসেবে রূপ নিলেও, এতে ভিয়েতনামের অনেক সেনার পাশাপাশি বাইরের দেশ থেকে আগত ভিনদেশি সেনারাও প্রাণ হারিয়েছিল। আর একসময়, সংখ্যাগুরু আমেরিকানরা এই যুদ্ধটিকে ভিত্তিহীন ও অহেতুক বলে গণ্য করতে শুরু করে। আর তখন যে রাজনৈতিক জটিলতার সৃষ্টি হয়, সেটার অংশবিশেষের চিত্রই সিনেমাতে দেখানো হয়েছে।

বাস্তবিক ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন সেনাদল; Source: incredibleimages4u.blogspot.com

সিনেমার প্রথম দৃশ্য শুরু হয় ভিয়েতনামের যুদ্ধের ভয়াবহতা ও সেই যুদ্ধে আমেরিকান টগবগে তরুণ যোদ্ধাদের অকালে প্রাণ হারানোর উপস্থাপনার মাধ্যমে। এই যুদ্ধে মার্কিন সেনাদলের সাথে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মিলিটারি অ্যানালিস্ট ড্যানিয়েল এলসবার্গও যুদ্ধের সামগ্রিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে ও তা নিয়ে তথ্যানুসন্ধান চালাতে গিয়েছিলেন। আর সেই যুদ্ধে গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন যে, এই যুদ্ধটা একদম শুধু শুধু চলমান রয়েছে ও এতে মার্কিন সেনাদের প্রাণগুলো অকালে ঝরে যাচ্ছে। আর তাই তিনি নিজে দেশে ফিরে, এই পাশবিকতা ও অবিচার বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হন। কিন্তু যেখানে সরকার ও বড় বড় রাজনীতিবিদরা সবকিছু জেনেশুনে চুপ করে এই অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে, সেখানে একজন বিশেষজ্ঞই বা কী এমন করতে পারবেন?

আর তখন ড্যানিয়েল আলসবার্গের মাথায় আসলো সংবাদ মাধ্যমের কথা। তাই তিনি যোগাযোগ করলেন ‘দ্য টাইমস’ এর মতো বিখ্যাত ও জনপ্রিয় সংবাদপত্রের সাথে। কিন্তু সেই ফলাফল সুদূরপ্রসারী হলো না। তার পিছনের গল্প পাঠকদের সিনেমা দেখে জেনে নেওয়ার জন্য তুলে রাখছি। তাই বাধ্য হয়ে, আলসবার্গকে ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ পত্রিকার শরণাপন্ন হতে হয়েছিল। আর তারপর শুরু হয় এক বৈপ্লবিক অধ্যায়ের। ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ পত্রিকার জন্য তো সেই অধ্যায়টি বিশাল এক বিবর্তনের সূচনা ছিলই বটে, এমনকি বিশ্বের ইতিহাসের সংবাদমাধ্যম ঘিরে যত কালজয়ী ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে, তার মধ্যে এটি নিঃসংকোচে অন্যতম একটি।

‘দ্য পোস্ট’ সিনেমার সেই সাংবাদিক দল; Source: thebiography.com

এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, রিভিউয়ের শুরুতে বলা দুজন অভিনয়শিল্পীর কথা, তারা কারা ও কে কোন চরিত্রে অভিনয় করেছেন? সিনেমাটির প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন দুই কিংবদন্তী অভিনয়শিল্পী মেরিল স্ট্রিপ ও টম হ্যাংক্স। সিনেমাতে মেরিল অভিনয় করেছেন ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ পত্রিকার তৎকালীন মালিক ক্যাথরিন গ্রাহামের চরিত্রে ও টম হ্যাংক্স অভিনয় করেছেন পত্রিকাটির সেই সময়ের প্রধান সম্পাদক ব্যান ব্র্যাডলির চরিত্রে। মেরিলের অভিনয় প্রতিভা নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা অবাঞ্ছনীয় ব্যাপার। তবুও বলতেই হয়, এই সিনেমাতে আপনি মেরিলকে কোথাও খুঁজে পাবেন না। ক্যাথরিন গ্রাহামের চরিত্রে তিনি এতটাই সূক্ষ্মভাবে নিজেকে মিশিয়ে নিয়েছিলেন যে, মিসেস গ্রাহামকে চেনার দারুণ এক স্বাদ পেতে দর্শকদের বাধ্য হতেই হবে। সিনেমাতে ক্যাথরিনের সার্বিক পরিস্থিতি, তার সামাজিক জীবন ও পেশা জীবনের টানাপোড়ন, তার ব্যক্তিগত জীবনের আগে নিজের বাবা ও স্বামী গড়া প্রতিষ্ঠানকে প্রাধান্য দেওয়া, তার নানা ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে হিমশিম খাওয়া ইত্যাদি দিকগুলো দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আর ব্যানের একজন সম্পাদকের দায়িত্ব নিষ্ঠা ও সততার সাথে পালনের পাশাপাশি ক্যাথরিনের পাশে একজন বন্ধু ও পরামর্শদাতা হিসেবে সবসময় দাঁড়ানোর বিষয়টাকে সিনেমাতে বেশ তাৎপর্য সহকারে পরিবেশন করা হয়েছে। আর সব সময়ের মতো, টম হ্যাঙ্কস এই চরিত্রেও তার শতভাগ প্রচেষ্টা ঢেলে দিয়েছিলেন, তার প্রমাণ স্বচক্ষে দেখলেই পাওয়া যায়।

১ ঘণ্টা ৫৬ মিনিটের এই সিনেমায় আপনি একবার প্রবেশ করে ফেললে, সিনেমার ঘটনাপ্রবাহের সাথে ভেসে যেতে শুরু করবেন। প্রথম অর্ধাংশে ক্যাথরিন গ্রাহামের দৈনন্দিন জীবনের কার্যকলাপ ও ওয়াশিংটন পোস্টের অভ্যন্তরীণ অবস্থাকে মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে, ধীরে ধীরে গল্পের মোড়কে ঘুরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাই প্রথম অর্ধাংশে, যারা সিনেমাটিকে অল্প ধীরগতি সম্পন্ন মনে করে থাকবেন, তাদের শেষ অর্ধাংশের জন্য প্রতীক্ষা করতে অনুরোধ করবো। শেষ অর্ধাংশে কাহিনী শুধু চমৎকারভাবে এগিয়ে যায় যে তা নয়, এর সাথে কেমন একটা থ্রিল ভাবও আসা শুরু করে সিনেমার গল্পে। সাংবাদিকদের লেখনীর শক্তি যে ততটুকু একটা জাতি ও দেশের শাসনব্যবস্থার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে ও দেশের বিরূপ রাজনৈতিক ভিত্তিপ্রস্তরকে নাড়িয়ে দিতে পারে, সিনেমাটিতে সেটার ঐতিহাসিক নিদর্শন দৃষ্টিগোচর করতে সমর্থ হবেন।

সিনেমার শুটিং স্পটে স্পিলবার্গের সাথে বাকি কলাকুশলীরা; Source: variety.com

‘দ্য পোস্ট’ সিনেমাটির শুটিং শুরু হয়েছিল গত বছরের মে মাসের ৩০ তারিখ থেকে ও সিনেমাটি মুক্তিপ্রাপ্ত হয় একই বছরের ডিসেম্বরের ২২ তারিখ। ইতিহাসকে প্রায় নির্ভুল রেখে, সিনেমাটির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন লিজ হ্যানাহ ও জোস সিঙ্গার। স্পিলবার্গের বেশিরভাগ সিনেমার মতো এরও সংগীতায়োজনে ছিলেন, জন উইলিয়ামস। প্রায় ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেটের এই সিনেমাটি বক্স অফিস থেকে প্রায় ১৭৪.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করতে সক্ষম হয়েছে।

সিনেমাটি নিয়ে সিনে সমালোচক ও সাধারণ দর্শকদের প্রতিক্রিয়া ঘাঁটলে দেখা যায়, বেশিরভাগ রিভিউই পজিটিভ ছিল। রটেন টম্যাটোস এর মতো সিনেমা আলোচনা-সমালোচনা এত বিখ্যাত সাইট থেকে ৩২১টি রিভিউয়ের ভিত্তিতে গড়ে সিনেমাটি ৮৮% রেটিং লাভ করতে সার্থক হয়। আর মেটাক্রিটিক থেকে ৫১টি সমালোচক রিভিউয়ের ভিত্তিতে ৮৩% রেটিং প্রাপ্ত হয়েছিল সিনেমাটি। সিনেমাটি নিন্দিত হবার কথা যদি উল্লেখ করতে হয়, তাহলে ‘দ্য টাইমস’ পত্রিকার কথা বলতেই হয়। সিনেমাটিতে এই পত্রিকাকে একটু কটুভাবে তুলে ধরার পরিপ্রেক্ষিতে, এই পত্রিকাটি সিনেমাটিতে সাদরে গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়। তবে এতে ‘দ্য পোস্ট’ মোটেও কিন্তু শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই থেকে পিছিয়ে পড়েনি। প্রায় ৭০ এর কাছাকাছি এওয়ার্ডের জন্য মনোনয়ন লাভ করার সৌভাগ্য অর্জন করেছে সিনেমাটি। তার মধ্যে অস্কারে সেরা চলচ্চিত্র ও সেরা অভিনেত্রীর জন্য মনোনয়ন লাভ এবং গোল্ডেন গ্লোবে এই দুটি সহ সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা, সেরা মৌলিক আবহ সংগীত ও সেরা চিত্রনাট্যে শাখাগুলোতে মনোনয়ন তো আছেই। আর ‘ন্যাশনাল বোর্ড অব রিভিউ’ থেকে গত বছরের এতগুলো সিনেমাকে হারিয়ে সেরা চলচ্চিত্র, সেরা অভিনেতা ও সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার ছিনিয়ে নিয়েছিল সিনেমাটি। এছাড়া সিনেমাটি আরও বেশ কিছু পুরস্কারও জিতেছে।

দুই কিংবদন্তীকে এক পর্দায় দেখার সুযোগ নিয়ে এসেছিলেন স্পিলবার্গ; Source: heyuguys.com

বিশ্বের ইতিহাসে এত এত বৈপ্লবিক ঘটনার মধ্যে এটার অবস্থান আসলে ঠিক কোথায় আমার তা জানা নেই। হয়তো শত শত কালজয়ী ঘটনার আড়ালে এটা এতদিন খুব সহজে চাপা পড়ে রয়ে গিয়েছিল। ইতিহাস নিয়ে খুব বেশি ঘাঁটাঘাঁটি না করলে হয়তো অনেকেই এই ঘটনার সাথে পরিচিত হতামই না। কিন্তু স্পিলবার্গের সৌজন্য এই ঘটনা বিশ্ববাসীর নজরে পড়েছে। হয়তো এটি মার্কিন ইতিহাসে অবিস্মরণীয় অবদান রাখে, আমাদের ইতিহাসে নয়। তবুও ক্যাথরিন গ্রাহাম ও তার ওয়াশিংটন পোস্ট আমাদের বিশ্বাস করতে বাধ্য করে যে, শুধু অস্ত্র দিয়েই প্রতিপক্ষের বিরোধিতা করতে হবে, এমন কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে একটা কলমই পারে দেশ ও জাতির উন্নয়নে বিস্তর প্রভাব ফেলতে পারে।

যারা ড্রামা ক্যাটাগরির বাস্তব জীবনের গল্পের ওপর নির্মিত সিনেমা ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই সিনেমাটি বিশেষভাবে দেখার অনুরোধ রইলো। এছাড়া সবারই এই সিনেমা একবার দেখা উচিত। হয়তো জীবন ও জাতীয়তাবাদ নিয়ে মনের ভেতর নতুন কোনো দর্শন জেগে উঠতেও পারে।

ফিচার ইমেজ: jamovie.it

Related Articles