হাউজ র্যাভেনক্ল। বুদ্ধিমত্তা, ধীশক্তি, সৃজনশীলতা ও পাণ্ডিত্যের কারণে সুনাম কুড়িয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরেই। নীল ও তামাটে রঙে সুসজ্জিত এই হাউজের শিক্ষার্থীরা বেশ পড়ুয়া স্বভাবের হয়। পতাকায় খচিত ঈগলের চিহ্ন যেন তাদের ধারালো মস্তিষ্ককেই ইঙ্গিত করে। সময়ে সময়ে এই হাউজ জন্ম দিয়েছে অনেক খ্যাতিমান জাদুকরকে, যারা তাদের জাদুকরী আলোকচ্ছটায় আলোকিত করেছে জাদু জগতের বিস্তীর্ণ ময়দানকে। এত এত জাদুকরদের মধ্য থেকে সেরা ১১ জন বাছাই করা মোটেও সহজ কাজ নয়। তবুও জনপ্রিয়তা, দক্ষতা ও ক্ষমতার ভিত্তিতে সেরা এগারো বাছাইয়ের দুঃসাহসিকতা দেখাতে হলো।
১. চো চ্যাং
চো চ্যাং দক্ষ একজন জাদুকর হলেও, সিনেমায় তার উপস্থাপনাটা তেমন ভালো নজরে করা হয়নি। সেখানে জাদুকরী শিল্পকৌশল থেকে প্রেমিক পাল্টানোর প্রক্রিয়া দেখানো হয়েছে ঢের। হ্যারি, চো, ও সেডরিকের প্রেম ত্রিভুজ রসায়ন ছিল বেশ জটিলতায় পরিপূর্ণ। বইয়ে তার জাদু দক্ষতা সম্পর্কে খানিকটা আভাস দেয়া হয়েছে।
হাউজ র্যাভেনক্ল’র এই ছাত্রীর হগওয়ার্টস অধ্যয়নকাল ছিল ১৯৯০-১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। হগওয়ার্টসের জনপ্রিয় এই শিক্ষার্থী ছিল র্যাভেনক্ল কুইডিচ দলের একজন সিকার। সে পঞ্চম বর্ষে থাকাকালীন, সেডরিক ডিগরি ট্রাই-উইজার্ড টুর্নামেন্টে হগওয়ার্টস চ্যাম্পিয়ন ঘোষিত হয়। সে সময় সেডরিকের সাথে তার সম্পর্ক হয়। সেডরিকের মৃত্যুর পর, ষষ্ঠ বছরে ডাম্বলডোর’স আর্মিতে যোগ দিলে সেখানে হ্যারি পটারের সাথে জড়িয়ে পড়ে চো চ্যাং।
বেশ ভালো উড়তে পারত বলে, সহজেই র্যাভেনক্ল কুইডিচ দলে সিকারের পজিশন বাগিয়ে নেয় চো। মন্ত্র প্রয়োগেও তার দক্ষতার পরিচয় ফুটে উঠে ষষ্ঠ বর্ষে থাকতেই। সে তার তৈরি করা প্যাট্রোনাসকে রাজহাঁসের রূপ দিতে সক্ষম হয়েছিল, যাতে উঁচু-পর্যায়ে জাদু ক্ষমতা আয়ত্ত করতে হয়। এর পাশাপাশি ডাম্বলডোর’স আর্মিতে যোগ দেয়ায় সে ডিফেন্সিভ ও অফেন্সিভ ম্যাজিকও শিখে নিয়েছিল। যার ফলে সে জাদু জগতের দ্বিতীয় মহাযুদ্ধেও নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পেরেছিল।
২. গ্যারিক অলিভেন্ডার
ব্রিটিশ ছড়ি নির্মাণের ইতিহাসে ‘সর্বশ্রেষ্ঠ’ শব্দটার সুনাম কুড়িয়ে নিয়েছেন গ্যারিক অলিভেন্ডার। শব্দটার ওজন মানের সাথে তিনি যথার্থ ও মানানসই। ছড়ি সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান তার ছড়ি নির্মাণ পদ্ধতিতে এনেছিল নতুনত্ব ও মালিক বেছে নেবার দক্ষতা। ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ সেপ্টেম্বর জন্ম নেওয়া এই মাগল-বর্ন (যে জাদুকরের মা-বাবা কেউই জাদুকর নন) জাদুকর হগওয়ার্টসের হাউজ র্যাভেনক্ল’র জন্য নির্বাচিত হন। পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য, ছড়ি নির্মাণের পেশাই বেছে নিয়েছিলেন অলিভেন্ডার। উল্লেখ্য, ৩৮২ খ্রিষ্টপূর্ব থেকেই তার পরিবার এই ছড়ি নির্মাণের পেশায় জড়িত ছিল।
অলিভেন্ডারের স্মৃতিশক্তি ছিল অসাধারণ। কোন জাদুকরের কাছে তিনি কোন ছড়ি বিক্রি করেছিলেন, তা পুরোপুরি স্মরণে রাখতে পারতেন। হগওয়ার্টস পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ছড়ির দরকার হলে সিংহভাগই ডায়াগন অ্যালিতে তার ঘিঞ্জি দোকানটাতে ভিড় জমায়। অলিভেন্ডারের দক্ষতার বিবরণ দিতে হলে, প্রথমেই উঠে আসবে ছড়ি নির্মাণের কথা। তিনি জাদু জগতের অন্যতম সেরা একজন ছড়ি নির্মাতা, তা নিয়ে তর্কের অবকাশ নেই। জাদু জগৎ কাঁপানো সেরা সেরা জাদুকর তার তৈরি করা ছড়িই ব্যবহার করেছেন। ছড়ি দেখলেই তিনি এর বৈশিষ্ট্য ও ইতিহাস সম্পর্কে আদ্যোপান্ত বলে দিতে পারতেন। নন-ভার্বাল ম্যাজিক, ট্রান্সফিগারেশন, চার্মের দুর্দান্ত প্রয়োগের ফলে জাদু জগতে তিনি নিজের একটা পাকাপোক্ত স্থান বানিয়ে নিয়েছেন।
৩. সিবিল ট্রিলনি
মোটা ফ্রেমের চশমা পরিহিত, ভীতু গোছের, এলোকেশী সোনালি চুলের একজন শিক্ষিকা ভবিষ্যদ্বাণীর ক্লাস নিচ্ছেন হগওয়ার্টসে। এ রকম দৃশ্যের সাথে হ্যারি পটার মুভি ফ্র্যাঞ্চাইজি দেখা প্রায় সবাই পরিচিত। পুরো সিরিজ জুড়েই ট্রিলনি চরিত্রটাকে দেখা গেছে মোটামুটি উন্মাদরূপে। খ্যাতনামা ভবিষ্যদ্দর্শী ক্যাসান্ড্রা ট্রিলনির এই বংশধর হগওয়ার্টসের র্যাভেনক্ল হাউজের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সবসময় ভীতু বনে থাকা এই শিক্ষককে কেউ হয়তো তেমন তোয়াক্কা করেনি, কিন্তু তিনি এমন অনেক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যেগুলো বাস্তবে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ভবিষ্যদ্বাণী হলো ‘দ্য চোজেন ওয়ান’, যার ফলে পতন ঘটেছিল লর্ড ভলডেমর্টের। প্রফেসর ডাম্বলডোরের মৃত্যু সম্পর্কিত তার করা ভবিষ্যদ্বাণীও কাঁটায় কাঁটায় মিলে গিয়েছিল। ক্রিসমাসের সময় তাকে একটি টেবিলে বসে ভোজনে যোগ দেয়ার অনুরোধ করা হলে, তিনি সেটি অগ্রাহ্য করে বলেন,
“যখন তেরোজন একসাথে খায়, প্রথমে উঠা ব্যক্তিই প্রথম মারা যায়!”
সবার দৃষ্টির অগোচরেই পিটার পেটিগ্রু সহ ঐ টেবিলে মোট তেরোজন উপস্থিত ছিল। আর প্রথম ব্যক্তি হিসেবে টেবিল থেকে উঠে যাওয়ায় অ্যালবাস ডাম্বলডোর ঠিকই মৃত্যুমুখে পতিত হন।
এ রকম তার আরও করা কিছু ভবিষ্যদ্বাণী পরবর্তীতে বাস্তবে পরিণত হয়েছিল। মন্ত্র প্রয়োগ ও নন-ভার্বাল ম্যাজিকেও বেশ পটু ছিলেন তিনি। ব্যাটেল অভ হগওয়ার্টসের সময় তিনি জাদুমন্ত্র উচ্চারণ করা ছাড়াই, শুধুমাত্র ছড়ির মাধ্যমেই শত্রুপক্ষের দিকে ক্রিস্টাল বল ছুঁড়ে মেরেছিলেন।
৪. হেলেনা র্যাভেনক্ল
হেলেনা র্যাভেনক্ল হগওয়ার্টস ও হাউজ র্যাভেনক্ল’র প্রতিষ্ঠাতা রোয়েনা র্যাভেনক্ল’র মেয়ে। ‘দ্য গ্রে লেডি’ নামে পরিচিত এই নারীর ভূতকে হগওয়ার্টসে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। রোয়েনা র্যাভেনক্ল নিজ কন্যা হেলেনা র্যাভেনক্লকে নিজ হাউজে ভর্তি করেছিলেন। প্রথম ব্যাচ গ্রাজুয়েশন শেষ করলে, গ্র্যাজুয়েট হয়ে বের হন তার মেয়ে হেলেনাও। কিন্তু সে সময় হেলেনা তার মায়ের মুকুট চুরি করে নিয়ে যান। তখন একটা ধারণা প্রচলিত ছিল, এ মুকুট যে পরবে, তার ধীশক্তি দিন দিন শুধু বাড়তেই থাকবে। সেজন্যই মায়ের উপর ঈর্ষান্বিত হয়ে, মুকুট চুরি করে আলবেনিয়ায় পালিয়ে যান হেলেনা।
রোয়েনা তখন হেলেনার প্রাক্তন প্রেমিক ব্যারনকে অনুরোধ করেন, তার মেয়েকে খুঁজে এনে দিতে। ব্যারন আলবেনিয়ার এক জঙ্গলে হেলেনাকে খুঁজে পেলেও, হেলেন তখন তার সাথে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানান। ব্যারন অনেক অনুরোধ করেন তাকে। একসময় ব্যারনের ক্রোধ চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে, ক্রোধের বশে হেলেনার বুকে ছুরি বসিয়ে দেন তিনি। তারপর অনুশোচনায় নিজেকেও বলি দিয়ে দেন ব্যারন। সেই থেকে ব্যারন হাউজ স্লিদারিনের এবং হেলেনা হাউজ র্যাভেনক্ল’র ভূত হয়ে হগওয়ার্টসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
ভূত হবার পরেও পড়ালেখা করার ইচ্ছা দমে যায়নি হেলেনার। তার ছিল শিক্ষার প্রতি গভীর অনুরাগ। জ্ঞানপিপাসায় তৃষ্ণার্ত এই নারীকে তাই অনেকসময় দেখা গেছে গ্রিফিন্ডর টাওয়ারের কমনরুমে। হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য চেম্বার অভ সিক্রেটসে হ্যারি পটার গ্রিফিন্ডর টাওয়ারের কমনরুমে যখন টম রিডলের ডায়েরি নাড়াচাড়া করছিল, তখন হেলেনা সেখানে বসেই বই পড়ছিলেন।
৫. ল্যাভারনে দ্য মন্তমরেন্সি
১৮২৩ খ্রিষ্টাব্দে জন্ম নেওয়া জাদুকর ল্যাভারনে দ্য মন্তমরেন্সি পোশন তৈরির জন্য বিখ্যাত ছিলেন। ১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দে হগওয়ার্টসে ভর্তি হবার পর ১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দে সেখান থেকে গ্রাজুয়েট হন তিনি। এরপর মনোনিবেশ করেন পোশন গবেষণায়। তার গবেষণালব্ধ ফলাফল হলো লাভ পোশনের প্রভূত উন্নতি সাধন। তিনি অনেক নতুন লাভ পোশনও তৈরি করেন, যেগুলোর বর্ণনা পাওয়া যায় চকোলেট ফ্রগ কার্ডে। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর, র্যাভেনক্ল’র প্রিফেক্ট রবার্ট হিলিয়ার্ড র্যাভেনক্ল টাওয়ারে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে দেওয়া সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ল্যাভারনে দ্য মন্তমরেন্সি’র কথা উল্লেখ করে।
৬. মিলিসেন্ট ব্যাগনল্ড
জাদু জগতের প্রথম মহাযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ জাদুমন্ত্রী ছিলেন মিলিসেন্ট ব্যাগনল্ড। তিনি এ পদে যোগ দিয়েছিলেন ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে। তার আমলেই বার্টি ক্রাউচ জুনিয়র ডিপার্টমেন্ট অভ ম্যাজিক্যাল ল এনফোর্সমেন্টের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। প্রথম মহাযুদ্ধে ভলডেমর্টের পতন ঘটলে, ডেথ ইটার ধরপাকড়ে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন তিনি। কুখ্যাত কিছু ডেথ ইটার, যেমন ইগর ক্যারক্যারফ, রডোলফাস, বেল্লাট্রিক্স লেস্ট্রেঞ্জ, বার্টি ক্রাউচ জুনিয়রকে আজকাবানে পাঠিয়েছিলেন। সে সময় লিলি ও জেমস পটারের খুনের সাথে যুক্ত থাকার ফলে সিরিয়াস ব্ল্যাককেও তিনি নিজ হাতে আজকাবানে প্রেরণ করেন।
৭. কুইরিনাস কুইরেল
ভলডেমর্টকে সঙ্গ দেওয়ার দরুন প্রফেসর কুইরেল মন্দ বিশেষণে বিশেষিত হলেও, তার প্রখর মেধার কথা ভুলে গেলে চলবে না। তবে তার আসল সমস্যা হলো, ব্যবহারিক জ্ঞান থেকে দূরে থেকে তাত্ত্বিক শিক্ষায় দক্ষ ছিলেন বেশি। প্রথমে হগওয়ার্টসে মাগল স্টাডিজের অধ্যাপক হিসেবে থাকলেও, ১৯৯১-১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কালো জাদুর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা বিষয়ের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। কুইরেলের প্রখর বুদ্ধিমত্তা ও চতুরতার কাছে ধোঁকা খেয়েছেন স্বয়ং ডাম্বলডোরও। পরশপাথর চুরি করার জন্য তিনি জাদু মন্ত্রণালয়ের নামে ডাম্বলডোরকে পাঠিয়েছিলেন এক ভুয়া চিঠি, যা বিশ্বাস করে ডাম্বলডোর মন্ত্রণালয়ে পর্যন্ত গিয়েছেন। যেখানে ব্রিটিশ জাদু মন্ত্রণালয় ভলডেমর্টের অবস্থান চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে তিনি তার অবস্থান জেনে গেছেন এক তুড়িতেই।
প্যাট্রোনাস তৈরি, ভার্ডিমিলিয়াস চার্ম, ওয়ান্ড-লাইটিং চার্ম, ডেপ্রিমো চার্মে ছিল তার বিশেষ দক্ষতা। তিনি অ্যানিমেটিং অবজেক্টও তৈরি করতে পারতেন খুব সহজে, নিজের চারপাশে প্রতিরক্ষা তৈরি করা তার কাছে ছেলেখেলা ছিল মাত্র। কালো জাদুতে তিনি কতটা দক্ষ ছিলেন, তা হ্যারি পটারের প্রথম কুইডিচ ম্যাচেই প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেখানে তিনি হ্যারি পটারের ঝাড়ু নিম্বাস ২০০০ কে মন্ত্র ফুঁকে খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিলেন। এছাড়াও ট্রান্সফিগারেশন, নন-ভার্বাল ম্যাজিক, ম্যাজিজুলোজি, হার্বোলজি, মাগল স্টাডিজ, অভিনয় দক্ষতা প্রতিটি ক্ষেত্রই ছিল তার নখদর্পণে।
সঠিক পথ বেছে নিলে হয়তো তিনি জাদু মহলে থাকতে পারতেন অমর হয়ে। কিন্তু ভলডেমর্টের সাথে যোগ দিয়ে পরিণত হয়েছেন ঘৃণার পাত্রে।
৮. লুনা লাভগুড
হগওয়ার্টসের ইতিহাসে লুনা লাভগুড এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। পাণ্ডিত্য, ধীশক্তি, বুদ্ধিমত্তার জন্য র্যাভেনক্ল হাউজ বিখ্যাত। লুনা লাভগুড ছিল সবগুলো গুণের এক অনুপম মিশ্রণ। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই সে কর্পোরাল প্যাট্রোনাস চার্ম প্রয়োগ করতে পারত। ১৯৮১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেওয়া এই ব্রিটিশ জাদুকর হগওয়ার্টসে ভর্তি হয় ১৯৯২ সালে। জাদু জগতের দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে তার অবদান ছিল অনস্বীকার্য। ব্যাটেল অভ ডিপার্টমেন্ট অভ মিস্ট্রিস, ব্যাটেল অভ অ্যাস্ট্রোনমি টাওয়ার, ব্যাটেল অভ হগওয়ার্টস, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছিল তার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। হ্যারিকে রোয়েনা র্যাভেনক্ল’র ডায়াডেম (হরক্রাক্স) খুঁজে পেতে সাহায্য করেছিল লুনা। মল্লযুদ্ধ, চার্ম, সৃজনশীলতা, নন-ভার্বাল ম্যাজিকের প্রতি ক্ষেত্রেই সে নিজের প্রতিভার পরিস্ফুটন ঘটিয়েছে।
স্কুল ছেড়ে যাবার পর পুরো পৃথিবী চষে বেড়িয়ে বিচিত্র সব প্রাণী সংগ্রহ করেছিল লুনা লাভগুড। তখন সে হয়ে উঠেছিল পৃথিবী বিখ্যাত এক উইজার্ডিং ন্যাচারালিস্ট। সে এমন সব প্রাণী আবিষ্কার করেছিল, যেগুলোর অস্তিত্ব সম্পর্কে কারো কোনো ধারণা ছিল না। লুনা বিয়ে করেছিল তার মতোই আরেক পশুপ্রেমী রফ স্ক্যামান্ডারকে। রফ স্ক্যামান্ডার ছিল বিখ্যাত জাদুকর ও ‘ফ্যান্টাস্টিক বিস্টস অ্যান্ড হোয়্যার টু ফাইন্ড দেম’ বইয়ের লেখক নিউট স্ক্যামান্ডারের দৌহিত্র। বইটি হগওয়ার্টসের সব শিক্ষার্থীর জন্যই অধ্যয়ন করা বাধ্যতামূলক।
৯. ফিলিয়াচ ফ্লিচউইক
হ্যারি পটার হগওয়ার্টসে অধ্যয়নকালে ফিলিয়াচ ফ্লিচউইক ছিলেন চার্ম বিষয়ক প্রফেসর। ১৯৫৮ সালে জন্ম নেওয়া এই পার্ট-গবলিন উইজার্ড জাদু জগতের খ্যাতনামা এক জাদুকর। তাকে হাউজে নির্বাচনের সময় বিপাকে পড়েছিল সর্টিং হ্যাট। হাউজ র্যাভেনক্ল নাকি গ্রিফিন্ডরে পাঠানো হবে, তা নির্বাচন করতেই সর্টিং হ্যাটের লেগেছিল পাক্কা পাঁচ মিনিট সময়। খাটো গড়নের এই জাদুকর হগওয়ার্টসের সেরা কয়েকজন ছাত্রের মধ্যে অন্যতম। চার্ম বা মন্ত্রের শিক্ষক হওয়ায়, সে বিষয়ে তার দক্ষতা ছিল একেবারে আকাশচুম্বী। ব্যাটেল অভ হগওয়ার্টসের সময় অন্যান্য জাদুকরদের সাথে মিলে তিনি সুরক্ষার ছাদে হগওয়ার্টসকে ঢেকে দিয়েছিলেন। মল্লযুদ্ধ, নন-ভার্বাল ম্যাজিক, কালো জাদুর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা, ইত্যাদি বিষয়ে দক্ষতা থাকায় প্রখর বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন এই প্রফেসরকে হাউজ র্যাভেনক্ল’র প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
১০. ইগন্যাশিয়া ওয়াইল্ডস্মিথ
ইগন্যাশিয়া ওয়াইল্ডস্মিথ ছিলেন র্যাভেনক্ল হাউজ থেকে বের হওয়া এমন এক জাদুকর, যার ছোঁয়ায় হার্বোলজি বিভাগ অনেক উন্নতি লাভ করেছে। হার্বোলজি নিয়ে গবেষণার সময় তিনি ফ্লু উদ্ভিদের জাদুকরী কিছু বৈশিষ্ট্য উদ্ভাবন করেন। তিনি ফ্লু নেটওয়ার্ক নামক নতুন এক ভ্রমণ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন, যেটা দিয়ে ফায়ার-প্লেসের দ্বারা মুহূর্তের মধ্যেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হওয়া যায়। ১২২৭ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করা মহীয়সী এই জাদুকর ১৩২০ খ্রিষ্টাব্দে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
১১. রোয়েনা র্যাভেনক্ল
স্কটল্যান্ডের খ্যাতনামা নারী জাদুকর রোয়েনা র্যাভেনক্ল ছিলেন হগওয়ার্টস স্কুল অভ উইচক্র্যাফট অ্যান্ড উইজার্ড্রির অন্যতম একজন প্রতিষ্ঠাতা। দশম শতাব্দীর কাছাকাছি কোনো এক সময়ে স্কটল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। হগওয়ার্টস নামটি মূলত এই তার মাথা থেকেই এসেছিল। রোয়েনা নিজ হাউজের জন্য শিক্ষার্থী বাছাই করতেন তাদের বুদ্ধিমত্তা, সৃষ্টিশীলতা, ও বিচক্ষণতা মূল্যায়নের মাধ্যমে। এছাড়াও তীক্ষ্ণ মস্তিষ্ক, ধীশক্তি, চতুরতাকেও বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হতো। জাদুমন্ত্রে বিশেষ দখল ছিল রোয়েনার। বাকি প্রতিষ্ঠাতাদের সাথে নিয়ে তিনি গ্রিফিন্ডরের ‘সর্টিং হ্যাট’কে একটি জাদুকরী ক্ষমতা দান করেন, যাতে তাদের মৃত্যুর পরেও সেটা নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী শিক্ষার্থী বাছাই করে নির্দিষ্ট হাউজে পাঠিয়ে দেয়।
এছাড়াও হগওয়ার্টস দুর্গের এভার-চেঞ্জিং ফ্লোর প্ল্যানটা রোয়েনারই নকশা করা। রোয়েনা নিজ হাতে জাদু দিয়ে একটি মুকুট বানিয়েছিলেন। এবং এর মধ্যে এমন ক্ষমতা দান করেছিলেন, যে এই মুকুট পরিধান করবে, তার ধীশক্তি ক্রমশই বৃদ্ধি পাবে। সেটাকে টম রিডল নামে স্লিদারিনের এক চতুর শিক্ষার্থী হরক্রাক্সে রূপান্তরিত করে ফেলে।
রোয়েনা র্যাভেনক্ল ছিলেন তার সময়ের শ্রেষ্ঠ জাদুকরদের মধ্যে একজন। এমনকি জাদু জগতের সেরা জাদুকরদের তালিকা তৈরি করলে, তার নাম অনায়াসেই সেখানে উঠে আসবে।