ধরা যাক, কোনো এক জায়গায় কয়েকজন বন্ধু মিলে বিশ্বের খ্যাতনামা সকল ফ্যান্টাসি ঘরানার সাহিত্য কিংবা সিরিজ নিয়ে আলোচনায় মশগুল আছে। তাহলে সেখানে হ্যারি পটার, দ্য উইচার, গেম অভ থ্রোন্স, স্টার ওয়ার্স, নার্নিয়া, পাইরেটস অভ দ্য ক্যারাবিয়ান, মার্ভেল/ডিসি কমিকস এসবের নামই উঠে আসবে অবধারিতভাবে। তবে আরেকটা জিনিসের প্রসঙ্গ এখানে ওঠাতেই হবে, তা হলো টোলকিনের অমর সৃষ্টি ‘দ্য লর্ড অব রিংস’। কাগুজে বই কিংবা সেলুলয়েডের ফিতা- উভয় স্থানেই চিরস্মরণীয় হয়ে আছে এই ফ্র্যাঞ্চাইজি।
বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, প্রতিহিংসা, ক্ষমতালিপ্সা, জাদুবিদ্যা এবং বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অনুপম মিশ্রণে গঠিত এই ফ্র্যাঞ্চাইজির কল্পকাহিনি যেন বাস্তবতাকেও অনায়াসে হার মানাতে সক্ষম। ২০০১ সালে প্রথিতযশা পরিচালক পিটার জ্যাকসন ‘দ্য লর্ড অভ দ্য রিংস’ ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রথম কিস্তি ‘দ্য ফেলোশিপ অভ দ্য রিং’ সিনেমার মাধ্যমে এই ট্রিলজিকে রূপালী পর্দায় প্রদর্শন করেন। সমালোচক-দর্শক সবজায়গাতেই প্রভূত প্রশংসা কুড়ানোর মাধ্যমে পুরো ফ্র্যাঞ্চাইজিকে তিনি একপ্রকার অমরত্বই দান করেছেন বলা যায়। এই দ্য লর্ড অভ দ্য রিংস ট্রিলজির অজানা কিছু দিক নিয়েই আজকের এই আয়োজন।
১.
শুরুতে ঠিক হয়েছিল, মিরাম্যাক্স প্রোডাকশন হাউজের অধীনে তৈরি হবে এই সিনেমা। মূল প্লটকে ভাগ করা হবে দুই ভাগে, অর্থাৎ দুটি সিনেমায়। কিন্তু বাজেট স্বল্পতায় এই প্রযোজনা সংস্থা পিটার জ্যাকসনকে জানিয়েছিল, একটি মুভির মাধ্যমেই আঁটাতে হবে পুরো গল্পকে। কিন্তু পিটার জ্যাকসন জানতেন, সুবিশাল এই প্লটকে এক সিনেমায় সাজাতে হলে, ফলাফল ভালোকিছু আসবে না। সবটুকু পরিণত হবে জগাখিচুড়িতে। এরপর স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে ওয়ার্নার ব্রোসের অধীনে থাকা প্রযোজনা সংস্থা ‘নিউ লাইন সিনেমা’। এর বদৌলতেই সবুজ সংকেত পায় দ্য লর্ড অভ দ্য রিংস ট্রিলজি।
২.
ট্রিলজিতে সারুমনের ভূমিকায় অভিনয় করা ক্রিস্টোফার লি প্রথমে মহান জাদুকর গ্যান্ডাল্ফের চরিত্রের দায়িত্ব পালন করতে চেয়েছিলেন। পুরো সিনেমায় তিনিই একমাত্র কাস্ট, যিনি সবগুলো বই বহুবার পড়ে শেষ করেছেন। প্রতিবছরই তিনি বইগুলো পড়তেন, এবং বইয়ের অনেক অংশ তিনি মুখস্থও করে ফেলেছিলেন। বলা যায়, দ্য লর্ড অভ দ্য রিংস ফ্র্যাঞ্চাইজির পাঁড় ভক্ত ছিলেন তিনি। আরও মজার ব্যাপার হলো, পুরো ট্রিলজিতে তিনিই একমাত্র লর্ড অভ দ্য রিংসের স্রষ্টা জে. আর. আর. টোলকিনের সাথে সাক্ষাৎ করতে পেরেছেন। বই থেকে মুভি বানানো হবে এই কথা কানে পৌঁছানো মাত্রই তিনি পিটার জ্যাকসনকে ব্যক্তিগত পত্র লিখে অনুরোধ করেছিলেন, তাকে তার প্রিয় চরিত্র গ্যান্ডাল্ফে অভিনয়ের সুযোগ দেওয়ার জন্য। কিন্তু পিটার জ্যাকসন তাকে গ্যান্ডাল্ফের বদলে সারুমনের চরিত্রই বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
ওদিকে স্কটিশ অভিনেতা শন কনেরিকে গ্যান্ডাল্ফের চরিত্রে অভিনয়ের আহবান জানানো হয়েছিল। সাথে বলা হয়েছিল, ট্রিলজির মোট আয়ের ১৫% দেওয়া হবে তাকে। কিন্তু তিনি এই রহস্যময় চরিত্রের জটিলতা ও দুর্বোধ্যতা বুঝতে না পারায় তা নাকচ করে দিয়েছিলেন। এরপর সেটি আসে স্যার ইয়ান ম্যাককেলেনের কাছে। নিজ অভিনয়গুণে তিনি অমরত্ব দান করেন গ্যান্ডাল্ফ চরিত্রকে। উত্তরের বনরক্ষী অ্যারাগর্ন চরিত্রের জন্য নিকোলাস কেইজ, স্টুয়ার্ট টাউনসেন্ড, রাসেল ক্রোর মতো অভিনেতাদের কাছে গিয়েছিলেন পরিচালক। তারা তাতে সাড়া না দিলে শেষমেশ তা পৌঁছায় অভিনেতা ভিগো মরটেনসেনের হাতে। প্রখ্যাত আমেরিকান অভিনেতা জ্যাক গিলেনহাল অডিশন দিয়েছিলেন ফ্রোডো চরিত্রের জন্য। পরবর্তীতে এলাইজাহ ওডকে ফ্রোডো হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।
৩.
বরোমিরের চরিত্রে অভিনয় করা সিন বিনের ছিল প্রচণ্ড হেলিকপ্টারভীতি। ট্রিলজির প্রথম সিনেমাতে পাহাড়ের যত দৃশ্য আছে, তা দৃশ্যায়ন করার জন্য নিউজিল্যান্ডের পাহাড়কে বেছে নেওয়া হয়। ওই পাহাড়ের উপর শুটিংয়ের জন্য সিনেমা কলাকুশলীদের হেলিকপ্টারে করে নিয়ে যাওয়া হতো। কিন্তু হেলিকপ্টারে না চড়ায় সিন বিনকে প্রায় দু’ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে শুটিং সেটে পৌঁছাতে হতো। শুধু তার জন্যই সকল কাস্ট-ক্রুদের পাহাড়ে প্রায় দু’ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করতে হতো।
৪.
এবার বই থেকে সিনেমা অ্যাডাপ্টেশনের ব্যাপারে কিছু পরিবর্তন নিয়ে আলাপ করা যাক। ট্রিলজিতে ফ্রোডোর সাথী হিসেবে চারজন হবিটকে গল্পে স্থান দেওয়া হলেও, বইয়ে ছিল পাঁচজন হবিট। বাদ পড়া একজন হলেন, শায়ারের বাসিন্দা ফ্রেডেগার ফ্যাটি বোলজার। সে শায়ারেই থেকে গিয়েছিল। জাদুকর সারুমন যুদ্ধের শেষদিকে শায়ারে হামলা চালালে, ফ্রেডেগার শায়ারকে রক্ষার দায়িত্ব নেয়। এক্সটেন্ডেড কাটে ফ্রেজারকে কিছুক্ষণ স্ক্রিনটাইম দেওয়া হয়েছে।
ট্রিলজিতে সাওরনের উপস্থিতি সুউচ্চ মিনারের চূড়ায় শুধুমাত্র চোখ দিয়ে দেখানো হলেও, বইয়ে তার দৈহিক বর্ণনাও দেওয়া আছে। সে মহাক্ষমতাশালী ওই আংটিকে খুঁজছিল পুরো দুনিয়াকে শাসন করার জন্য। আংটির প্রসঙ্গ যেহেতু উঠেই এসেছে তাই আরেকটা জিনিস জানানো যায়। সিনেমায় দেখানো হয়, বিলবো ব্যাগিন্সের থেকে আংটিটা পাওয়ার কিছুদিন পরেই তা মাউন্ট ডুমে ধ্বংসের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করে ফ্রোডো ব্যাগিন্স এবং স্যাম গ্যামজি। কিন্তু বইয়ে তাদের সেই ভ্রমণকাহিনি শুরু হয় ফ্রোডো আংটি পাওয়ার ১৭ বছর পর।
সারুমনের মৃত্যুও বইয়ে একটু ভিন্নভাবে উল্লেখ আছে। বইয়ের বর্ণনা অনুযায়ী, মাউন্ট ডুমের আগুনে আংটি ধ্বংসের পর চার হবিট শায়ারে ফিরে এসে দেখে সারুমন পুরো শায়ারের দখল নিয়েছে। তখন তারা সারুমনের সাথে লড়াইয়ের অবতীর্ণ হয়, এবং ওই লড়াইয়ে পতন ঘটে সারুমন ও ভৃত্য গ্রিমার। এই দুজনকে নির্বাসনে পাঠানো হয় ‘স্কোরিং অভ দ্য শায়ার’ নামে স্থানে। সেখানেই গ্রিমা সারুমনকে গলা কেটে হত্যা করে।
৫.
এই ট্রিলজি বিঞ্জ ওয়াচ করাটা একপ্রকার মুশকিল। কারণ, এই মুভির গড় রানটাইম প্রায় পৌনে ৪ ঘণ্টার কাছাকাছি। সিনেমার অরিজিনাল রানটাইমকে একত্র করলে তা হয় ৯ ঘণ্টা ১৮ মিনিট। আর এক্সটেন্ডেড কাট হিসেব করলে তা গিয়ে দাঁড়ায় ১১ ঘণ্টা ৫৫ মিনিটে। ট্রিলজির রানটাইম হিসেবে এটা একটা রেকর্ডই বলা চলে।
৬.
২০০১ সালে দ্য লর্ড অভ দ্য রিংস ট্রিলজির প্রথম সিনেমা যখন মুক্তি পায়, তখন প্রযুক্তির দুনিয়ায় কম্পিউটার জেনারেটেড গ্রাফিক্স, এবং ভিএফএক্সের নবযুগের উত্থান ঘটছে মাত্র। গ্রাফিক্স এবং ভিএফএক্সের বহু নতুন জিনিস এই সিনেমাতেই প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল। এজন্য পরিচালক অনেক জায়গাতে প্র্যাক্টিক্যাল এলিমেন্ট ব্যবহার করেছিলেন। শুনলে অবাক হতে হয়, ট্রিলজিতে ব্যবহৃত কস্টিউম সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার! প্রত্যেকটি মূল চরিত্রের জন্য একই ধরনের ৩০-৪০টি কস্টিউম বানানো হতো, যাতে বস্ত্র সংকটে ফিল্মিং থেমে না থাকে। এর সাথে আবার ২,০০০ আলাদা আলাদা অস্ত্র এবং প্রায় ১০ হাজার তীর ব্যবহার করা হয়েছিল। আনা হয়েছিল ৩০০ এর কাছাকাছি ঘোড়া। চরিত্রের গড়ন ছোট-বড় দেখানোর জন্য ক্যামেরা অ্যাঙ্গেলের কারসাজি এবং নতুন ভিজুয়াল ইফেক্টসের ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মতো।
৭.
ট্রিলজির তিনটি সিনেমা যথাক্রমে ২০০১, ২০০২ এবং ২০০৩ সালে মুক্তি পেয়েছে। বিশাল দৈর্ঘ্যের সিনেমার কাজ সামলাতে গিয়ে নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম হয়েছিল পুরো সম্পাদনা দলের। এমনও সময় গিয়েছে, যেখানে তিনটি সিনেমার কাজ একসাথে চলেছে। পোস্ট প্রোডাকশনে যখন ফেলোশিপ অভ দ্য রিংস সিনেমার সম্পাদনা সবেমাত্র শেষ হয়েছে, তখন দ্য টু টাওয়ার্স মুভির কাজ চলমান। সাথে তৃতীয় মুভির ফুটেজকে এডিটের জন্য কাট করা হচ্ছিল। মামলা এখানেই খতম নয়। থিয়েটারে তৃতীয় মুভি রিলিজের পরেও পিটার জ্যাকসন ওই মুভির কিছু নতুন দৃশ্যকে শুট করেছিলেন এক্সটেন্ডেট কাটে জুড়ে দেওয়ার জন্য।
৮.
অ্যাভাটার (২০০৯) সিনেমায় বিশেষ অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে দ্য লর্ড অভ রিং ট্রিলজি। কীভাবে, তা বলছি। ১৯৯৪ সালে জেমস ক্যামেরন অ্যাভাটারের ৮০% কাজ গুছিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু ওই সময়ে ভিজুয়াল ইফেক্টের মান অতটা উন্নত না হওয়ায় তিনি সিনেমার কাজে হাত দেওয়ার ভরসা পাচ্ছিলেন না। এডভান্সড সিজিআই এবং ভিএফএক্স না থাকার কারণে, সে ধারণাকে আপাতত স্থগিত রেখে টেকনোলজিক্যাল অ্যাডভান্সমেন্টের জন্য তিনি তীর্থের কাকের মতো বসেছিলেন। ২০০২ সালে ‘দ্য লর্ড অভ দ্য রিংস: দ্য টু টাওয়ার্স’ সিনেমায় গলুমের সিজিআই আর মোশন ক্যাপচার দেখে অভিভূত হন ক্যামেরন। তিনি বুঝতে পারলেন, কাজে নামার উপযুক্ত সময় এসে গেছে। এরপরেই তিনি কোমরে গামছা বেঁধে তার ড্রিম প্রজেক্ট বাস্তবায়নে নেমে যান।
৯.
জগদ্বিখ্যাত রক ব্যান্ড বিটল্স্ ছিল এই ফ্র্যাঞ্চাইজির অন্ধভক্ত। সেজন্য তারা খ্যাতিমান পরিচালক স্ট্যানলি কুব্রিকের সাথে লর্ড অভ দ্য রিংস ফ্র্যাঞ্চাইজির উপর মুভি বানাতে চেয়েছিল। যেখানে এই ব্যান্ডের সদস্য পল ফ্রোডোর চরিত্রে, রিংগো স্যামের চরিত্রে, জর্জ গ্যান্ডাল্ফের চরিত্রে, এবং জন লেনন গলুমের চরিত্রে অভিনয় করতে চেয়েছিলেন।
১১.
এখন আলাপ করা যাক টোলকিনের সৃষ্ট ইউনিভার্সের ব্যাপারে। অনেকে এই ইউনিভার্সকে মিডল আর্থ নামে সম্বোধন করে থাকে, যা পুরোপুরি ঠিক নয়। ইয়া নামক ইউনিভার্সের একটি অংশ হলো ‘আর্দা‘ গ্রহ। আর ওই গ্রহে মিডল আর্থ আসলে কোনো একটা মহাদেশ বা দেশের মতো। ইলুভাতার নামে এক ঐশ্বরিক সত্তার গান থেকেই মূলত লর্ড অভ দ্য রিংস ইউনিভার্সের সৃষ্টি। একে আইনুরও বলা হয়ে থাকে। এটি এই ইউনিভার্সের একেকটি সৃষ্টিকর্ম সৃষ্টির জন্য দায়ী।
১২.
লর্ড অভ দ্য রিংস ফ্র্যাঞ্চাইজিতে মোট সাত প্রকার ভাষার অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। এই ফ্যান্টাসি সাগার স্রষ্টা টোলকিন ছিলেন একজন ভাষাবিদ, ইউনিভার্সিটি অভ লিডসের ইংরেজি ভাষার অধ্যাপক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এলভদের ভাষা সিনদারিন এবং কুয়েনিয়া, সাওরনের ভাষা, ভালারের ভাষা এন্টিশ, ডোর্ভদের গোপন ভাষা খুজদুল। প্রত্যেক ভাষার জন্য আলাদা ব্যাকরণিক নিয়মও লিপিবদ্ধ করা আছে। অর্থাৎ কেউ চাইলে বাস্তব জীবনেও এই ভাষা ব্যবহার করতে পারবে।
অনেকে ভাবতে পারে তিনি বোধহয় এই সিরিজের জন্য ভাষা তৈরি করেছেন। কিন্তু এই সাগার গল্প নির্মাণের বহু পূর্বেই তিনি ভাষাগুলো তৈরি করেছিলেন, এবং সে অনুযায়ীই গল্প সাজিয়েছিলেন। কুয়েনিয়া ভাষা তার হাত ধরে সৃষ্টি হয়েছিল ১৯১৭ সালে, দ্য হবিট পাবলিশ হবার ২০ বছর পূর্বে। এরপর তিনি সময় নিয়ে দ্য লর্ড অভ দ্য রিংস এবং দ্য সিলমারিলিয়নের কাজ শেষ করেছিলেন।
কুয়েনিয়া প্রাচীন ইংল্যান্ডের দুর্লভ ভাষা ফিনিশ থেকে অনুপ্রাণিত এবং সিন্দারিন অনুপ্রেরণা পেয়েছে ওয়েলশ ভাষা থেকে। কুয়েনিয়া ছিল উচ্চমার্গীয় এলভেন ভাষা, যা ভ্যালিনরের এলভেরা ব্যবহার করত। আর মিডল আর্থে বসবাসরত গ্রে এলভ এবং শিক্ষিত মানুষেরা (যেমন, অ্যারাগর্ন) সিন্দারিন ভাষায় কথা বলত।
১৩.
ফেলোশিপ অভ দ্য রিং সিনেমার শেষাংশে অগ্নিদানব ব্যালরগের উপস্থিতি দেখা গিয়েছিল। মজার ব্যাপার হলো, এই ব্যালরগ, গ্যান্ডালফ এবং সাউরন একই পূর্বপুরুষ থেকে আগত। প্রাচীন সেই জাতিকে মাইয়ার বলে ডাকা হতো, যাদের রূপ পালটানো ক্ষমতা ছিল। দেবতুল্য জাতি ভালার তাদেরকে সৃষ্টি করেছিল পৃথিবীকে নির্দিষ্ট একটা গড়ন দেওয়া উদ্দেশ্যে। কিন্তু ওই ভালার জাতির মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলে, সাউরন এবং ব্যালরগ বেছে নেয় দুষ্টপক্ষকে, যেখানে সৎপথকে বেছে নেয় গ্যান্ডালফ।
১৪
দ্য লর্ড অভ দ্য রিংস ট্রিলজির বক্স অফিস সাফল্য ছিল অত্যন্ত ঈর্ষণীয়। প্রতিটি মুভির গড় বাজেট ছিল ৯৩ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।
বক্স অফিস কালেকশন থেকে জানা যায়, একেকটি মুভি গড়ে প্রায় ৯৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার করে কামিয়েছে। অর্থাৎ, প্রত্যেক মুভি লগ্নিকৃত অর্থের ১০ গুণ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। তিন মুভির মোট বক্স অফিস কালেকশন ২.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বলা যায়, বক্স অফিসে সবগুলো মুভিই আক্ষরিক অর্থে টর্নেডোর তাণ্ডব চালিয়েছে।
অস্কারে আজ পর্যন্ত এই ট্রিলজির রেকর্ড ভাঙতে পারেনি কোনো মুভি। ‘দ্য ফেলোশিপ অভ দ্য রিং’ চারটি অস্কার, ফেলোশিপ চারটি অস্কার, দ্য টু টাওয়ারস দুটি অস্কার, এবং সর্বশেষ মুভি দ্য রিটার্ন অভ দ্য কিং এগারোটি অস্কার জিতে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। মজার ব্যাপার হলো, ‘দ্য রিটার্ন অভ দ্য কিং’ মোট এগারোটি অস্কার মনোনয়নের প্রত্যেকটাই জিতে নিয়েছিল। এমন রেকর্ড অস্কারের ইতিহাসে খুবই বিরল। এজন্যই মুক্তির দুই দশক পেরিয়ে গেলেও এই ট্রিলজির দর্শকপ্রিয়তায় এতটুকুও ভাটা পড়েনি।