মধ্য এশিয়ার সবচেয়ে জনবহুল রাষ্ট্র উজবেকিস্তান। রাষ্ট্রটির প্রধান রাষ্ট্রভাষা ও একমাত্র জাতীয় ভাষা উজবেক। বৃহত্তর তুর্কি ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত উজবেক ভাষাটি ১৯২৬ সালের পূর্বে আরবি–ফার্সি বর্ণমালায় লেখা হতো। ১৯২৬ সালে প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের সংখ্যালঘু জাতিসমূহের ভাষাগুলোর প্রমিতকরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং এর অংশ হিসেবে উজবেক ভাষার জন্য ল্যাটিন বর্ণমালার ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৪০ সালে উজবেক ভাষা লেখার জন্য ল্যাটিন বর্ণমালার পরিবর্তে সিরিলিক লিপির ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৯২ সালে উজবেকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান ইসলাম কারিমভ সিরিলিক লিপির ব্যবহার রদ করে পুনরায় ল্যাটিন লিপির ব্যবহার চালু করেন। কিন্তু এখনো উজবেক ভাষা লেখার জন্য সিরিলিক লিপিই তুলনামূলকভাবে বেশি ব্যবহৃত হয়।
উজবেকিস্তান তো বটেই, পার্শ্ববর্তী তাজিকিস্তান, আফগানিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, কিরগিজস্তান ও কাজাখস্তান এবং নিকটবর্তী চীনের জিনজিয়াং ও রাশিয়ায় প্রচুর মানুষ উজবেক ভাষা ব্যবহার করে। প্রায় ২ কোটি ৭০ লক্ষ ভাষাভাষী উজবেক জাতির প্রায় ৯৯ শতাংশ সদস্যই শিক্ষিত।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে বর্তমান উজবেকিস্তান রুশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের পর উজবেকিস্তান যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়, তখন অঞ্চলটির জনসাধারণের সাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ৪%। ৯৬% মানুষই ছিল সম্পূর্ণ নিরক্ষর। সোভিয়েত শাসনামলের একটি বিশেষ কৃতিত্ব হচ্ছে, তারা প্রাক্তন রুশ সাম্রাজ্যের পশ্চাৎপদ প্রদেশগুলোতে ব্যাপকভাবে শিক্ষার বিস্তার ঘটিয়েছিল। ফলে মাত্র কয়েক দশকের মধ্যে উজবেকিস্তানের শিক্ষাক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি ঘটেছিল। ১৯৭৪ সালে উজবেকিস্তানের জনসাধারণের মধ্যে সাক্ষরতার হার ছিল প্রায় ৯৯%। বর্তমানেও উজবেকিস্তানে সাক্ষরতার হার অনুরূপ, কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সরকারের অবহেলার কারণে উজবেকিস্তানের শিক্ষার মান অনেকটাই নিচে নেমে এসেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
বস্তুত প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য শিক্ষাক্ষেত্রে প্রচুর বিনিয়োগ করেছিল। শিক্ষার ক্ষেত্রে সোভিয়েত ইউনিয়নে জাতি, ধর্ম, বর্ণ বা লিঙ্গভেদে কোনো বৈষম্য করা হতো না। এদিক থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ইউরোপীয় ও অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর মৌলিক পার্থক্য ছিল। একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা যখন ভারতবর্ষ ছেড়ে যায়, তখন ভারতবর্ষের জনসাধারণের মধ্যে সাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ১২%। অন্যদিকে, ১৯৯১ সালে সোভিয়েতরা যখন উজবেকিস্তান ছেড়ে যায়, তখন উজবেকিস্তানের জনসাধারণের মধ্যে সাক্ষরতার হার ছিল প্রায় ৯৯%।
সোভিয়েত শাসনামলেই উজবেকিস্তানের প্রথম বিশ্বকোষ (encyclopedia) প্রণীত হয়। এটি ছিল উজবেক ভাষায় রচিত প্রথম বিশ্বকোষ। উজবেকিস্তানের জনসাধারণের মাতৃভাষায় জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে এটি ছিল এক বিশাল অগ্রগতি। ‘উজবেক সোভিয়েত বিশ্বকোষ’ (উজবেক: Ўзбек совет энциклопедияси, ‘উজবেক সোভেত এন্তসিক্লোপেদিয়াসি’) নামক এই বিশ্বকোষটি এখন পর্যন্ত উজবেক ভাষায় প্রণীত বৃহত্তম ও সবচেয়ে বিস্তৃত বিশ্বকোষ। ১৪টি খণ্ডে বিভক্ত এই বিশ্বকোষটি উজবেক ভাষার সিরিলিক লিপিতে রচিত হয়েছিল।
১৯৭১ সালে উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে ‘উজবেকিস্তান সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের বিজ্ঞান আকাদেমি’র উদ্যোগে এই বিশ্বকোষটি প্রণয়নের কাজ আরম্ভ হয়। ‘উজবেক সোভিয়েত বিশ্বকোষ প্রকাশনা সংস্থা’ বিশ্বকোষটির প্রকাশনার কাজে নিযুক্ত ছিল। ১৯৭১ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে বিশালায়তন এই বিশ্বকোষটি প্রণয়নের কাজ সমাপ্ত হয়। তদানীন্তন প্রখ্যাত উজবেক পণ্ডিতরা এই বিশ্বকোষটির সম্পাদনায় অংশ নিয়েছিলেন। বিশ্বকোষটির প্রথম ৯টি খণ্ডের প্রধান সম্পাদক ছিলেন উজবেক সোভিয়েত বিজ্ঞান আকাদেমির সদস্য ডক্টর ইব্রাহিম মুমিনভ এবং পরবর্তী ৫টি খণ্ডের প্রধান সম্পাদক ছিলেন উজবেক সোভিয়েত বিজ্ঞান আকাদেমির আরেক সদস্য ডক্টর কামিলজান জুফারভ। প্রায় ১,০০০ জন জাতিগত উজবেক পণ্ডিত এই বিশ্বকোষটির সম্পাদনায় অংশগ্রহণ করেছিলেন।
বৃহদাকার এই বিশ্বকোষটি ছিল একটি সাধারণ বিশ্বকোষ এবং জ্ঞানের প্রায় প্রতিটি শাখা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এটিকে তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করা যেত এবং এখনো উজবেকিস্তানে গবেষণামূলক কাজে এই বিশ্বকোষটিকে তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিশেষত সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি এবং ফলিত বিজ্ঞানের (পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও অন্যান্য) ক্ষেত্রে বিশ্বকোষটি এখনো প্রাসঙ্গিক। তদুপরি, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং উজবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র সম্পর্কে বিশ্বকোষটিতে অত্যন্ত বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
বিশেষত উজবেকিস্তানের রাজনীতি, অর্থনীতি, শিল্প–সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ উজবেক জাতির জীবনধারার প্রতিটি ক্ষেত্র সম্পর্কে বিশ্বকোষটিতে বিশেষভাবে আলোচনা করা হয়েছে। উজবেক জাতির ইতিহাসে প্রখ্যাত রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক ও অন্যান্য ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে বিশ্বকোষটিতে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে, যা বিশ্বের অন্য কোনো বিশ্বকোষে পাওয়া যাবে না। তদুপরি, উজবেকিস্তানে ইসলাম ধর্মের বিস্তার এবং বিশেষত সুফি মতবাদ সম্পর্কে বিশ্বকোষটিতে প্রচুর তথ্য রয়েছে। উল্লেখ্য, খোজা আহমেদ ইয়াসাভি–সহ অন্যান্য উজবেক সুফি দার্শনিকদের সম্পর্কে বিশ্বকোষটিতে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে এবং তাদেরকে ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে।
বিশ্বকোষটির ১৪টি খণ্ডে সামাজিক ও ফলিত বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে৷ সামাজিক বিজ্ঞানের যেসব শাখা সম্পর্কে বিশ্বকোষটিতে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রত্নতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, অর্থনীতি, শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি, স্থাপত্য, ইতিহাস, আইন, দর্শন, সাহিত্য, লোককথা এবং অভিধান সংকলন। নবম শতাব্দী থেকে সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত উজবেকিস্তানের সমরখন্দ, বুখারা এবং খরজেম নগরী জ্ঞান–বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে মুসলিম বিশ্বের অন্যতম কেন্দ্র ছিল এবং মুসা আল–খাওয়ারিজমী, আল–বিরুনী, ইবনে সিনা ও উলুঘ বেগের মতো মহাপণ্ডিতরা উজবেকিস্তানের মাটিতেই জন্ম নিয়েছিলেন। এই বিষয়গুলো বিশ্বকোষটিতে বিস্তৃত পরিসরে আলোচিত হয়েছে।
উজবেক সোভিয়েত বিশ্বকোষে উজবেকিস্তানের জাতিগত ঐতিহ্য বিশেষভাবে ফুটে উঠেছে। উজবেকিস্তানে মাদ্রাসা, মিনার ও মাজারসমূহ, মধ্যযুগীয় পাণ্ডুলিপিগুলোর সংস্করণ, ইসলামি শাসনামলের প্রখ্যাত ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি, উজবেক প্রজাতন্ত্রের জীবনযাত্রার মান সম্পর্কে সমসাময়িক চিত্রকর্ম, উজবেক থিয়েটার ও নৃত্যকলা, সামাজিক, গোত্রীয় ও ধর্মগত স্বাতন্ত্র, পশুপাখি এবং উজবেক পোশাক, গহনাদি ও অন্যান্য কারুশিল্পের বিস্তৃত চিত্র বিশ্বকোষটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
উজবেক সোভিয়েত বিশ্বকোষটি সোভিয়েত ইউনিয়নের মার্ক্সবাদী আদর্শিক প্রাধান্যের কালে রচিত হয়েছিল, এবং বিশ্বকোষটির রাজনীতি সংক্রান্ত ভুক্তিগুলোতে এর প্রতিফলন ঘটেছিল। কিন্তু সামগ্রিকভাবে বিশ্বকোষটির প্রণেতারা জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবকে দূরে সরিয়ে রাখতেই আগ্রহী ছিলেন। এর ফলে বিশ্বকোষটি বহুলাংশে বস্তুনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। একটি কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাপার হচ্ছে, বিশ্বকোষটিতে উজবেকিস্তানের খরজেমে জন্মগ্রহণকারী প্রখ্যাত মুসলিম দার্শনিক, প্রকৃতিবিদ ও গণিতজ্ঞ আবু রায়হান আল–বিরুনী সম্পর্কে যে ভুক্তিটি রয়েছে, সেটির ব্যাপ্তি সাড়ে পাঁচ পৃষ্ঠা এবং বিশ্বকোষের একটি পূর্ণ পৃষ্ঠা জুড়ে আল–বিরুনীর রঙিন প্রতিকৃতি রয়েছে। অন্যদিকে, বিশ্বকোষটির প্রণয়নকালে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা লিওনিদ ব্রেঝনেভ সম্পর্কে বিশ্বকোষটিতে মাত্র দেড় পৃষ্ঠার একটি ভুক্তি রয়েছে এবং তার ছোট্ট একটি সাদাকালো ছবি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
জোসেফ স্তালিনের শাসনামলে উজবেকিস্তানের বহু বিখ্যাত ব্যক্তিত্বকে ‘বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদে’র দায়ে অভিযুক্ত করে হত্যা করা হয়েছিল। এসব ব্যক্তিত্বের অধিকাংশের সম্পর্কে বিশ্বকোষটিতে বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বন করা হয়েছে। কিন্তু কতিপয় বিখ্যাত উজবেক লেখককে (যেমন: আব্দুরউফ ফিতরাত এবং আব্দুলহামিদ চোল্পান) বিশ্বকোষটিতে নেতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। পরবর্তীতে মিখাইল গর্বাচেভের শাসনকালে এই মার্ক্সবাদী আদর্শিক মূল্যায়নের ধারা পরিত্যক্ত হয় এবং এই লেখকদেরকে বস্তুনিষ্ঠভাবে মূল্যায়ন করা হয়।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির ক্ষেত্রে উজবেক সোভিয়েত বিশ্বকোষে উজবেক প্রজাতন্ত্রের আঞ্চলিক অবস্থানকে বেশি গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। এজন্য বিশ্বকোষে আফগানিস্তান সম্পর্কে অস্ট্রিয়া থেকে বেশি তথ্য রয়েছে, কারণ আফগানিস্তানে প্রচুর জাতিগত উজবেক বসবাস করে। একইভাবে লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসের চেয়ে পার্শ্ববর্তী তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আসখাবাদ সম্পর্কে দ্বিগুণ তথ্য রয়েছে, যদিও সেসময় লিথুয়ানিয়া ও তুর্কমেনিস্তান উভয়েই সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল।
উজবেক সোভিয়েত বিশ্বকোষটির কিছু কিছু ভুক্তি (বিশেষত বিজ্ঞান সম্পর্কিত) রুশ ভাষায় রচিত ‘সোভিয়েত মহাবিশ্বকোষ’ থেকে অনুবাদ করা হয়েছিল, কিন্তু অধিকাংশ ভুক্তিই ছিল মৌলিক। ১৯৮০–এর দশকের শেষদিকে উজবেক সোভিয়েত বিশ্বকোষকে রুশ ভাষায় অনুবাদ করার প্রকল্পও নেয়া হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল উজবেক জাতি এবং উজবেকিস্তান সম্পর্কে সাধারণ রুশ ও অন্যান্য সোভিয়েত জাতির জ্ঞান বৃদ্ধি করা। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ফলে এই প্রকল্পটি আর বাস্তবায়িত হয়নি।
উল্লেখ্য, ১৯৮১ সালে উজবেক সোভিয়েত বিশ্বকোষের মূল বিষয়াবলিকে সংক্ষিপ্ত রূপে ‘উজবেক সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র’ শিরোনামে একটি খণ্ডে প্রকাশ করা হয়। এটিও উজবেক ভাষায় লিখিত হয়েছিল। ১৯৮৮ সালে এই খণ্ডটিকে রুশ ভাষায় অনুবাদ করা হয়।
উজবেকিস্তানে সোভিয়েত শাসনের অবসানের পর উজবেকিস্তান সরকারের উদ্যোগে ‘উজবেকিস্তান জাতীয় বিশ্বকোষ’ নামে একটি নতুন বিশ্বকোষ প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু এই নতুন বিশ্বকোষটি একদিকে যেমন ‘উজবেক সোভিয়েত বিশ্বকোষে’র তুলনায় ক্ষুদ্রতর, অন্যদিকে এটির বেশিরভাগ তথ্যই উজবেক সোভিয়েত বিশ্বকোষ থেকে নেয়া। তদুপরি, বিশ্বকোষটিতে উজবেকিস্তানের দীর্ঘকালীন একনায়ক ইসলাম কারিমভকে অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, ফলে নতুন বিশ্বকোষটির বস্তুনিষ্ঠতা প্রশ্নসাপেক্ষ এবং অধিকাংশ উজবেক পণ্ডিত ও গবেষক পুরাতন উজবেক সোভিয়েত বিশ্বকোষকেই গবেষণামূলক কাজে ব্যবহার করে থাকেন।
সবশেষে, যেকোনো বিশ্বকোষ সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য জ্ঞানের বিস্তার হলেও এর রাজনৈতিক ও আদর্শিক তাৎপর্য উপেক্ষা করা যায় না। উজবেক সোভিয়েত বিশ্বকোষ একদিকে যেমন উজবেক জাতির জনসাধারণের জন্য মাতৃভাষায় জ্ঞানচর্চার সুযোগ উন্মুক্ত করে দিয়েছিল, অন্যদিকে তেমনই এই বিশ্বকোষের মাধ্যমে উজবেক জনসাধারণের মধ্যে তাদের জাতিগত ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে তাদেরকে বৃহত্তর সোভিয়েত জাতির অন্তর্ভুক্ত করে নেয়াও ছিল সোভিয়েত ও সোভিয়েত উজবেক কর্তৃপক্ষের অন্যতম উদ্দেশ্য। এদিক থেকে উজবেক সোভিয়েত বিশ্বকোষ সৃষ্টির শিক্ষাগত উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়েছিল, কিন্তু রাজনৈতিক বা আদর্শিক উদ্দেশ্য কতটুকু সফল হয়েছিল সেটি নির্ণয় করা দুঃসাধ্য। কিন্তু ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নকে রাষ্ট্র হিসেবে বজায় রাখা উচিত কিনা সে সম্পর্কে যে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তাতে উজবেকিস্তানের প্রায় ৯৪% জনসাধারণ সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে থাকার পক্ষে ভোট দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও ঐ বছরই সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্ত হয় এবং উজবেকিস্তানে সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার অবসান ঘটে।