দর্শন, নাটক, গণতন্ত্র সহ আধুনিক সভ্যতার বিভিন্ন বিষয়ে অবদানের জন্য গ্রিসের যেমন সুখ্যাতি আছে, তেমনই রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকে উদ্ভট কিছু অর্থনৈতিক কার্যকলাপের জন্য গ্রিসের বদনামও কম নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দেশটি প্রায়ই বড় অঙ্কের অর্থ চড়া সুদে ঋণ নিয়ে পশ্চিমা রাষ্ট্রসমূহ থেকে অস্ত্র কেনাসহ বিভিন্ন রকম অনুৎপাদনশীল ও বিলাসী কাজে এই ঋণের টাকা খরচ করে। ১৯২২ সাল থেকে আজ অবধি যে দেশটির সীমান্ত আক্রান্ত হয়নি, যে দেশটি ১৯৪৪ সাল থেকে অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র গোলযোগ থেকে মুক্ত, সেই দেশটি অস্ত্র ক্রয়ে কেন এত আগ্রহী তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলে থাকেন।
ঠিক কবে আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গ্রিসের জন্ম হয়েছে তা নিয়ে বির্তক আছে। অনেক গ্রিক নাগরিক মনে করেন, ১৮২৭ সালের পহেলা মে ত্রোজানে অনুষ্ঠিত চতুর্থ জাতীয় অধিবেশনের মাধ্যমে আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গ্রিস আত্মপ্রকাশ করে। তবে ১৮৩০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারির আগে ইউরোপের কোনো বড় শক্তি সার্বভৌম দেশ হিসেবে গ্রিসকে স্বীকৃতি দেয়নি।
আবার কারও মতে ১৮২৩ সালের ৩০ নভেম্বর দেশটি প্রকৃত অর্থে জন্ম লাভ করেছিল। কারণ সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে অন্যরা স্বীকৃতি না দিলেও গ্রিকরা এ দিনই বিরাট এক ঋণ গ্রহণ করেছিল। ব্রিটিশ ব্যাঙ্কার সমিতি থেকে অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্য সেই দিন গ্রিস ৮,০০,০০০ পাউন্ড ঋণ নেয়, যার বড় অংশ অস্ত্র কেনায় ব্যয় করা হয়। এর চার বছর বছর পর অদৃশ্য গ্রিস রাষ্ট ঘোষণা দেয়, দেউলিয়াত্বের কারণে গৃহীত ঋণের সুদ পরিশোধ তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
১৮৯৩ সালে দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী চ্যারিলোস ট্রিকৌপিস গ্রিসকে দেউলিয়া ঘোষণা করেন। এথেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক থ্যানোস ভার্মিস বলেন, প্রধানমন্ত্রী ট্রিকৌপিসের সময় যে কারণে গ্রিস দেউলিয়া হয়েছিল তার সাথে দ্বিতীয় দেউলিয়াত্বের কারণ একেবারেই ভিন্ন ছিল। তার মতে, ব্রিটিশদের কাছ থেকে পাওয়া ঋণ ১৮২১ সালের বিপ্লবের অভ্যন্তরীণ সংঘাত বন্ধে ব্যবহৃত হয়েছিলো। সে সময় কাগজে-কলমে গ্রিস দেশটির অস্তিত্বই ছিল না । প্রধানমন্ত্রী চ্যারিলোস ট্রিকৌপিসের সময়ের দেউলিয়াত্ব অতিমাত্রায় ঋণ গ্রহণের ফলে সৃষ্টি হলেও গ্রিসের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ঋণের অর্থ ব্যবহৃত হয়েছিল। তার সময়ে তৈরি হওয়া রেলপথগুলো এখনও গ্রিসে ব্যবহার করা হচ্ছে। দ্বিতীয় দেউলিয়াত্বের সময় রাষ্ট্র হিসেবে গ্রিসের কিছুটা প্রাপ্তিও ছিলো।
আবার এ দেউলিয়াত্ব গ্রিসের রাজনীতির আধুনিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে। এথেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ইয়ান্নিস মাইয়োলসের মতে, ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার দায় এককভাবে গ্রিসের নয়। ঋণদাতা ও গ্রহীতা- উভয়ের সম্মতিতে ঋণ সৃষ্টি হয়। যেকোনো এক পক্ষে বড় কোনো বিশৃঙ্খলা হলে ঋণ বল্গাহীন হয়ে ওঠে। অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, শান্তিকালীন সময়ে শুধুমাত্র বিশ্বময় অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অনেক দেশ ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়। সুসময়ে দাতা এবং গ্রহীতা উভয় ভাবেন, এই সুসময় সব সময় একরকম থাকবে। তারা উভয়েই বিভিন্ন বিষয়ে শৈথিল্য দেখান, যা সংকটকালে বড় ইস্যু হিসেবে সামনে চলে আসে।
১৯৩২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইলেফথেরিয়স ভেনিজেলস অর্থনৈতিক অবনতি এবং স্বর্ণ ও পাউন্ডের বিপরীতে গ্রিক ড্রকমার অবমূল্যায়নের পরিস্থিতি বুঝতে ব্যর্থ হলে দেশটি দেউলিয়া হয়ে পড়ে।
এ প্রসঙ্গে ইতিহাসবিদ থ্যানোস ভার্মিস বলেন, ইলেফথেরিয়স ভেনিজেলোস ও প্যানাজিস স্যাল্ডারিসের সময়কালীন দেউলিয়াত্বের ফলে গ্রিস অভ্যন্তরীন অর্থনীতি ও গ্রামীণ উন্নয়নে নজর দিতে বাধ্য হয়। নিজস্ব স্বনির্ভরতার কারণে গ্রামের সাধারণ মানুষজন উভয় সময়ই সংকটজনক পরিস্থিতির বাইরে ছিল। শহুরে উচ্চ ও মধ্যবিত্তরাই ছিল সমস্যার মূল ভুক্তভোগী, যাদের সংখ্যা আজকের তুলনায় খুবই কম ছিল। গ্রিসের সেসময়কার নাজুক আর্থিক পরিস্থিতির মূল কারণ ছিল মূলত ভারী শিল্পের অনুপস্থিতি, অতি সামান্য রপ্তানি আয় ও পর্যটনের অনুপস্থিতি।
কালের বির্বতনে জাতীয় লাভের অনুপস্থিতি ও শহুরে জনসংখ্যার বিস্ফোরণের ফলে গ্রামাঞ্চলের স্বনির্ভর মানুষের সংখ্যা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে গ্রিসের দেউলিয়াপনা গ্রিকদের অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে তীব্র আকার ধারণ করেছে।
১৯৪০ এর দশকে গ্রিসে কম্যুনিস্টবিরোধী গৃহযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ব্রিটিশ ও আমেরিকানরা গ্রিক অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তি দেবার চেষ্টা করেছিল। উইনিস্টন চার্চিলের পদক্ষেপগুলো ব্যর্থ হবার পর যুক্তরাষ্ট্র মার্শাল প্ল্যানের অধীনে গ্রিক অর্থনীতিকে দাঁড় করানোর দায়িত্ব নেয়। তবে মার্কিন সাহায্য শুধু উচ্চবিত্ত ও অভিজাত মহলে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। পুরো ১৯৫০ এর দশক জুড়ে এথেন্সে নিযুক্ত মার্কিন কূটনীতিকরা গ্রিসের অভিজাতদের বিরুদ্ধে বৈদেশিক সাহায্য আত্মসাৎ করার অভিযোগ করে এসেছে। এমনকি কৃষি যন্ত্রপাতির জন্য পাঠানো জ্বালানী তেলও উচ্চবিত্তরা বন্টন না করে নিজেদের গাড়িতে ব্যবহার করতো। এ প্রসঙ্গে তৎকালীন এক রিপোর্টে বলা হয়, গ্রিসের অভিজাত শ্রেণী পিতৃভূমির জন্য মায়াকান্না করলেও আয়কর না দিয়ে বছরের বেশিরভাগ সময় সুইজারল্যান্ড, নিউ ইয়র্ক আর মিশরে বিলাসী জীবন-যাপনে ব্যস্ত ছিল।
এ সময়কার সরকার প্রধান কনস্টান্টিনোস কারামানলিসের আট বছরের শাসনামলে (১৯৫৫-৬৩) গ্রিসের অবস্থা দিন দিন খারাপ হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে কীভাবে আর্থিক অপচয় হয়েছে তার নমুনা এথেন্সে এখনও দৃশ্যমান। এথেন্সের কংক্রিটের জঙ্গল আর নিম্নমানের রাজপথগুলো সে সময়েই তৈরি হয়েছে। পরবর্তীতে সামরিক শাসক সরকারও (১৯৬৭-৭৪) উচ্চ সুদে ঋণ নেওয়া অব্যাহত রাখে। এবারের ঋণের মূল সুবিধা পায় শাসক ও সামরিক বাহিনী সহ পুরনো অভিজাত বংশগুলো। এ সময় ১৯৭৪ সালে সাইপ্রাস আক্রমণের সময় গ্রিস সামরিক শক্তি প্রদর্শনের কিছু সুযোগ পেয়েছিল। তবে তা তুরস্কের কাছে পরাজয় ঠেকাতে যথেষ্ট ছিল না। পরবর্তীতে অস্ত্র ক্রয়ের জন্য গ্রিসের বড় অঙ্কের নতুন ঋণের প্রয়োজন দেখা দেয়।
১৯৮১ সালে গ্রিস ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেয়। একই বছর সোশ্যালিস্ট পার্টি দেশটিতে ক্ষমতাসীন হয়ে স্বঘোষিত ‘ভূমধ্যসাগরীয় কর্মসূচী’র আওতায় তারা ইউরোপের বড় শক্তিগুলোর কাছে বড় ঋণ দাবি করতে শুরু করে। অনুন্নত অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য এহেন পরিকল্পনা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার ও গ্রিক প্রধানমন্ত্রী অ্যান্দ্রুজ পাপান্দ্রুর মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে। তবে এ কর্মসূচীর মাধ্যমে পাপান্দ্রু অর্থনৈতিক বৈষম্য কিছু কমাতে সক্ষম হন। যদিও বৃহৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জাতীয়করণ প্রক্রিয়া সফলতার মুখ দেখেনি। বরং পাবলিক সেক্টরে কর্মহীনতা, মুদ্রাস্ফীতি ও বাজেট ঘাটতি বেড়েই চলে।
এরপরের বেশ কয়েক বছর দেশটি আর্থিক কৃচ্ছতা সাধন করতে বাধ্য হয়। তবে গ্রিস হুট করে ১৯৯৬ সালে অলিম্পিক গেমস আয়োজন ও ইউরো জোনে প্রবেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কোস্তাস সিমিটাস প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইউরো জোনে প্রবেশে খুব আগ্রহী ছিলেন। ইউরো জোনে প্রবেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তার বিভিন্ন পদক্ষেপ কাগজে-কলমে ভালো ফল দিলেও বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। বর্তমানে ইউরোপের অনেক নেতা সে সময় মিথ্যা পরিসংখ্যান দেওয়ার জন্য গ্রিসকে দায়ী করেন। তবে সে সময় ইউরোপ তার ভূখন্ডের আর্থিক অবস্থা উন্নয়নে নাছোড়বান্দার মত আচরণ করায় গ্রিস ভুল তথ্য দিয়েও পার পেয়ে যায়।
২০০৪ সালের আগ অবধি গ্রিস এক কৃত্রিম সমৃদ্ধির বুদবুদের উপর ভাসছিল। গ্রিসের রাজপথে ছিল নতুন গাড়ির ছড়াছড়ি। ক্রেডিট কার্ড আর সহজ শর্তের ঋণের কারণে গ্রিকরা হয়ে উঠেছিল অতিমাত্রায় বিলাসী। অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে গ্রিসের ব্যাঙ্কগুলো অবসর বিনোদনের জন্যও যে কাউকে ঋণ দিতে শুরু করে ।
তবে এই অনুৎপাদনশীল ব্যয়ের দরুন যে মুদ্রাস্ফীতির জন্ম হয়, তা অবকাঠামো উন্নয়ন, গণমাধ্যম, পর্যটন ও অন্যান্য অনেক খাতের পরিধি বাড়াতে সাহায্য করে। সব মিলিয়ে গ্রিসের অভ্যন্তরীণ মূল্য সূচকে যে আকস্মিক জোয়ার তৈরি হয় তা-ই পরবর্তীতে আরও বড় সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্টক মার্কেটের সূচকের মাত্রা খুব দ্রুতই ১২০০ থেকে ৬৫০০ পয়েন্টে উঠে যায় এবং এক বছরের মাঝেই আবার ৬৬৬ পয়েন্ট পড়ে যায়। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ইয়ান্নোস পাপান্তোনিউ দাবি করেন, গ্রিক স্টক এক্সচেঞ্জের মূল্য সূচকের শক্তি খুবই ভাল। এটি পৃথিবীর বড় বড় বাজারের মূল্য সূচকের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতার যোগ্যতা রাখে। তবে কয়েক বছরের ভেতর গ্রিক স্টক মার্কেট থেকে ১৩৬ বিলিয়ন ইউরো (১৫২ বিলিয়ন ডলার) উধাও হয়ে যায় ।
২০০৪ সালে গ্রিস ইউরো শিরোপা জয়লাভ করে এবং অলিম্পিক আয়োজন করে। অলিম্পিক আয়োজন গ্রিসের অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। অজস্র ঋণের জোয়ারে ভাসতে থাকা গ্রিকদের ব্যক্তিগত ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা তখন তলানীতে নেমে গেছে। এ সময়ই ব্যাঙ্ক খেলাপী ঋণ কমাতে একযোগে তাদের টাকা ফেরত চেয়ে ব্যবসায়ী এবং জনসাধারণের কাছে। শেয়ার বাজার ধ্বসে পড়ে অনেকেই তখন সর্বস্বান্ত। অর্থনীতি দুর্বল থেকে দুর্বলতর হতে থাকে। বেকারত্ব বাড়তে শুরু করে। রাজনৈতিক দলগুলো এ সমস্যা মোকাবেলার চেয়ে একে অপরের প্রতি দোষারোপ করতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে।
গ্রিস অলিম্পিক আয়োজন করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সস্তা অভিবাসী শ্রম কাজে লাগানো শুরু করে। এর মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, এশিয়ান অভিবাসীদের শ্রমিক হিসেবে বিভিন্ন নির্মাণাধীন স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং কাজ শেষ হবার আগ অবধি ছাড়া হচ্ছে না। জনসমক্ষে সে সময় অভিবাসীদের দেখা না যাওয়ায় এরকম গুজব রটে ছিল।
এ সময় বিশ্বব্যাপী ব্যাংকিং খাতে সংকট বাড়তে থাকলে গ্রিক অর্থনীতি অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি হয়। প্রধানমন্ত্রী জর্জ পাপান্দ্রুও পরিস্থিতি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হন। যদিও তিনি তার পিতার অসম্পূর্ণ কাজ সমাপ্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন, তথাপি পরিস্থিতির চাপে ঘোষণা করলেন, আইএমএফ, ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ও ইউরোপীয় কমিশন এর ফাঁদে গ্রিস আটকে গেছে, যা বিগত ৭০ বছরের মধ্যে এযাবৎ কালের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করছে। বেতন, অবসর ভাতা হ্রাস পেতে শুরু করে। বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বেকারত্ব গ্রিসকে চেপে ধরার পাশপাাশি রাষ্ট্রীয় সামাজিক ব্যয়ও হ্রাস পায়। এ সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের ট্রয়কা নীতির কারণেও জনপ্রতি ঋণ মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে যায়। পুরো গ্রিস জুড়ে শুরু হয় বিক্ষোভ ও সংঘাত।
প্রবল জনরোষের মুখে পরিস্থিতি মোকাবেলায় গণভোটের আয়োজন করে প্রধানমন্ত্রী জর্জ পাপান্দ্রু পদত্যাগে বাধ্য হলে গ্রিসের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রধান ট্যাসোস জ্যায়ানিটসিস তার স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি গ্রিসে ইউরো ব্যাঙ্ক নোট প্রচলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। বহু বিতর্কিত ঘটনায় তার নাম থাকলেও মূলত ইউরোপীয় নেতাদের সুপারিশে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ২০১২ সালের মে মাসের নির্বাচনে রাজনৈতিক দল হিসেবে নব্য নাৎসি এক দলের উত্থান নতুন আশংকার জন্ম দেয়। পুরনো রাষ্ট্রব্যবস্থায় ফাটল ধরে। সমাজতন্ত্রী দল ‘পাসোক’ এর ভোটের হার ৪৩% থেকে ১২% এ নেমে আসে আর অতি বামপন্থী জোট শক্তিশালী হতে শুরু করে ।
৩০% বেকারত্ব ও আয় হ্রাসের সময় সরকারের কর্তব্য ও সক্ষমতা সম্পর্কে বিভ্রান্তি জন্মানো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। গ্রিক জনগণের এখনকার আকাঙ্ক্ষা একইসাথে শূন্য ও অসীম। বোঝাই যাচ্ছে, সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে পেতে বেশ মরিয়া হয়ে রয়েছে। তবে এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুনরায় ঋণের জন্য কারো দ্বারস্থ না হবার সংকল্প খুব একটা সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নয়। এমনকি এর বিকল্প কী হতে পারে সে বিষয়েও রাজনৈতিক বিতর্ক গ্রিসে হয়নি।
গ্রিস অর্থনীতিকে বাঁচাতে কঠিন শর্তে বারবার ঋণ নিয়েছে এ কথা যেমন সত্য, তেমনি এ কথাও ঠিক, কোনো রাজনৈতিক দলই সংকটমুক্তির উদ্ভাবক হতে পারছে না। পূর্বের ঐতিহ্য মেনে গ্রিস এখনও সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করেই যাচ্ছে। সামাজিক সংকট ও উত্তরণে গ্রিক সমাজ খুব সহজেই প্রভাবিত হয়। তাই বিশ্লেষকরা গ্রিসে আকস্মিকভাবে গভীর পরিবর্তনের আশংকা করেন। গ্রিসের অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব না অসম্ভব তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। বলা হচ্ছে, উত্তরণ সম্ভব হলেও তা সহসা হবে না। কারণ গ্রিসের অর্থনৈতিক ইতিহাস এক খামখেয়ালী ও দেউলিয়াপনার ইতিহাস।