খাবার আমরা সবাই খাই। কিন্তু খাবার গ্রহনের যে নিয়মগুলো আছে সেগুলো আমরা কয়জন মেনে চলি? খাবার খাওয়া শুরু করা থেকে শেষ অব্দি- পুরোটা সময়েই কিছু নিয়ম রয়েছে যেগুলো মেনে চললে আপনি আরো একটু বেশি উপকার পাবেন, থাকবেন একদম ফিট। আর তাই চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক খাবার খাওয়ার বিভিন্ন নিয়ম।
খাবার কখন খাবেন?
খাবার গ্রহন করার সঠিক কিছু সময় আছে। আপনার ক্ষুধাবোধ হতেই পারে, আপনি জানতে চাইতেই পারেন যে, অন্যসময়ে কি আপনি খেতে পারবেন না? হ্যাঁ, অবশ্যই পারবেন। তবে নীচে উল্লেখ করা সময়গুলোতে সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার এবং নৈশভোজ করে নেয়াটাই শ্রেয়।
সকালের নাশতা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। গবেষণায় দেখা যায় যে, ঠিক সময়ে সকালের নাশতা করেন না যারা, কিংবা নাশতা একেবারেই বাদ দিয়ে দেন, তাদের মধ্যে পুরুষদের ক্ষেত্রে ২৭ শতাংশ হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। সকালের নাশতা না গ্রহণ করলে সাধারণত দুপুরে আমরা অতিরিক্ত খেয়ে ফেলি। সেটা পরবর্তীতে বদহজম, গ্যাস্ট্রিক এবং ডায়াবেটিস সহ শারীরিক নানা সমস্যা সৃষ্টি করে।
সকালের নাশতা সাধারণত সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে খেয়ে ফেলা ভালো। অন্যদিকে, দুপুরের খাবারটা সকালের চাইতে একটু কম ভারি হিসেবেই খাওয়া উচিত। তবে আপনার যদি অভ্যাস থাকে দুপুরে কম খাওয়ার এবং পরবর্তীতে একটু বেশি খেয়ে নেওয়ার, তাহলে সেটাও করতে পারেন। মূল ব্যাপারটি হচ্ছে শক্তি পাওয়া। কাজ করতে গেলে আমাদের দরকার পড়ে শক্তির। আর সারাদিনের সেই শক্তির যোগান হিসেবেই সকাল ও দুপুরের খাবার ভালো করেই আমাদের করা উচিত। দুপুরের খাবার সাড়ে বারোটার পরপরই খেয়ে নেওয়া ভালো। এতে করে সন্ধ্যা নাগাদ পেট অনেকটা খালি হয়ে আসে আর আপনি সুযোগ পান কিছু হালকা নাশতা করার। রাতের খাবার আমাদের দেশের অবস্থান অনুযায়ী রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যেই সেরে নেওয়া ভালো। তবে এটা অনেকটা নির্ভর করবে আপনার ঘুমানোর সময়ের উপরে। এমনকি, দেরি করে ঘুমাতে গেলে রাতের বেলাতেও হালকা কিছু খাবার, এই যেমন- বিস্কুট কিংবা একটু গরম দুধ হতে পারে আপনার জন্য একদম ঠিকঠাক।
কেমন খাবার খাবেন?
খাবারের সময়টা নাহয় ঠিক করে নেওয়া গেল। কিন্তু এই সময়ে ঠিক কোনো ধরনের খাবার খাওয়াটা ঠিক হবে? কথায় আছে- সকালে খাবার খাও রাজার মতো, দুপুরে মন্ত্রীর মতো, আর রাতে ভিখারির মতো। কথাটি খুব একটা ভুল বলা হয়নি। মূলত, আমাদের শরীরের যথেষ্ট শক্তি পেতেই আমরা খাবার খেয়ে থাকি। তাই, যে সময়টায় আমাদের শরীরে শক্তি বেশি দরকার পড়ে আমাদের খাবারের পরিমাণটাও সেই সময়েই বেশি হওয়া উচিত। আমরা সকালে নিজেদের প্রস্তুত করি পরবর্তীতে সারাদিনের কাজ করার জন্যে। সকালে কাজের চাপটাও একটু বেশি থাকে। এর আগে আমরা ঘুমিয়ে থাকি। আমাদের শরীর কাজ করা শুরু করে এবং খুব জোরালোভাবেই কাজ করে সকাল বেলায়। তাই এই সময় আমাদের উচিত ভারি খাবার খাওয়া। এই খাবারের উপরে নির্ভর করে আপনার সারাদিনের ব্লাড সুগারের পরিমাণ নির্ধারিত হয়। সকালে এমন কিছু খাওয়া উচিত যেটা কিনা আমাদের ব্লাড সুগারকে বাড়িয়ে দেবে একটু একটু করে এবং ধীরে ধীরে কমতে সাহায্য করবে। তাই ওট, রুটি, বাটার ইত্যাদি এই সময় খাওয়া ভালো। অন্যদিকে খুব মিষ্টি কোনো খাবার দিয়ে সকালের নাশতা সারলে সেটা যেমন খুব দ্রুত সুগার বাড়িয়ে দেয়, তেমনি খুব দ্রুত অনেক বেশি পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
দুপুরের খাবারের সময় সবজি যেন বেশি পরিমাণে থাকে সেটা নিশ্চিত করুন। এছাড়া চেষ্টা করুন আমিষ খাবার রাখার। পেট অনেকটা ভর্তি করে খাবার খান। সুযোগ রাখুন পানি পানের। রাতের বেলা খাবার রাখুব সবচাইতে কম। সবজি রাখুন। সেই সাথে কম ভারী, অথচ পুষ্টিকর- এমন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
দ্রুত খাবার খাচ্ছেন কী?
খাবার গ্রহণ করার সময় আমাদের মধ্যে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে অসম্ভব দ্রুত, কিংবা অসম্ভব ধীরে খাবার খাওয়া। কিন্তু খাবার গ্রহণের গতি ঠিক কতটুকু হওয়া উচিত? খুব দ্রুত খেয়ে ফেলছেন না তো আপনি? অতিরিক্ত দ্রুত খাবার খাওয়ার ফলে নানা রকম শারীরিক সমস্যায় ভুগে থাকি আমরা। এর মধ্যে রয়েছে, খাবার ঠিক করে হজম না হওয়া, পেটের গোলমাল দেখা দেওয়া ইত্যাদি। এছাড়া আপনার শরীর খুব দ্রুত মুটিয়ে যেতে পারে এই সমস্যাটির কারণে। ভাবছেন, কথাটি সত্যি নয়? একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চিকন মানুষদের অভ্যাস থাকে খুব ধীরে ধীরে খাবার খাওয়ার। খুব দ্রুত খাবার খেলে কিছু বোঝার আগেই অনেক বেশি ক্যালরি শরীরে নিয়ে ফেলি আমরা। এতে করে সমস্যা দেখা দেয় পরবর্তী সময়ে। সম্প্রতি জাপানে এক গবেষণায় জানা যায় প্রায় ১,৭০০ জন নারী জানিয়েছেন যে, খুব ধীরে খাবার খাওয়া আমাদের পেট খুব দ্রুত ভরে যাওয়ার অনুভূতি দেয়। ধীরে খাবার খাওয়ার চাইতে দ্রুত খাবার গ্রহণ করলে আমরা বেশি ক্যালরি গ্রহণ করি।
খাওয়ার সময় কিছু নিয়ম আমাদের অবশ্যই মেনে চলা উচিত। আর তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, খাবারের দিক থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারে এমন সব জিনিসকে আশেপাশ থেকে সরিয়ে ফেলা। অন্যথায়, টেলিভিশন দেখে খাবার খাওয়া শুরু করলে আমরা কিছু বোঝার আগেই অনেকটা বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করে ফেলবো। চেষ্টা করুন কেবল খাবারের দিকেই মন দিতে। খাবার যে প্লেটে নিয়েছেন সেটার আকৃতিকেও মাথায় রাখুন। অনেক সময় বড় প্লেটে অনেক বেশি খাবার রাখা থাকলে মানসিকভাবে আমরা প্রচুর ক্যালরি নিয়ে ফেলেও ক্ষুধার্ত থাকি। খাবারকে উপভোগ করার চেষ্টা করুন। কেক খেতে ইচ্ছে করছে? তাহলে কেকের এক টুকরো মুখে দিন। তবে সেই টুকরোটুকু শেষ হওয়ার আগেই আবার আরেক টুকরোতে কামড় দেবেন না। বরং এক কামড় কেক খেয়ে সেটার স্বাদকে উপভোগ করুন। ধীরে ধীরে খান। দেখবেন, শেষপর্যন্ত খুব কম খাওয়া হচ্ছে।
খাবার খান চিবিয়ে
অনেকের খুব বাজে একটি অভ্যাস থাকে। আর সেটি হচ্ছে না চিবিয়ে কিংবা কম চিবিয়ে খাবার খেয়ে ফেলা। এতে করে আমাদের গ্রহণ করা খাবার পুরোপুরি তৈরি হয় না গ্রহণের জন্য। খাবার সময় ভালো করে চিবিয়ে নেওয়া খুব দরকারি একটি ব্যাপার। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির গুরুত্ব অনেক আগে থেকেই বুঝে এসেছে মানুষ। ভারতে প্রাচীনকালে, ৭,০০০ বছর আগেও জোর দেওয়া হয়েছে ভালো করে চিবিয়ে তারপর খাবার খাওয়ার জন্য। হজমের জন্য এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে জানানো হয়েছে। কতটা সময় ধরে আপনি খাবার চিবিয়েছেন সেটি আপনার খাবারের পুষ্টি হয়তো বাড়িয়ে দেবে না, তবে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষুধাবোধ কমানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। এখন অব্দি বিজ্ঞানীরা কতবার খাবার চিবিয়ে নেওয়া ভালো সেটা বুঝতে না পারলেও চেষ্টা করুন খাওয়ার সময় যতটা সম্ভব বেশি চিবানোর।
ব্যাপারগুলো খুব সাধারণ। খুব অল্প চেষ্টাতেই এই কাজগুলো খাবার ক্ষেত্রে করতে পারবেন আপনি। তাহলে সুস্থতার জন্য এটুকু তো করাই যায়, কী বলেন?
ফিচার ইমেজ: Lifehacker Australia