ইংরেজি শব্দ ‘হোল’ এর বাংলা প্রতিশব্দ গর্ত। গর্ত হচ্ছে একটি খোলা জায়গা। খোলা জায়গা বলতে এমন একটি জায়গা যার কেবল একটি মুখ খোলা থাকে। তবে অনেকে দুই মুখ বিশিষ্ট খোলা জায়গাকেও গর্ত বলতে চান। যেমন, পাহাড়ের গুহা বা সুড়ঙ্গ। গর্ত প্রাকৃতিকভাবে তৈরী হয়, আবার মানুষও সৃষ্টি করে। এর মধ্যে ব্লাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বর এর ব্যাপারটা তো একেবারেই ভিন্ন। সে ব্যাপারে অন্য কোথাও আলোচনা করা যাবে।
এই নিবন্ধে কেবল পৃথিবীতে আবিষ্কৃত প্রাকৃতিক বা মানুষের সৃষ্ট দশটি বিস্ময়কর গর্ত বা হোলের কথা আলোচনা করবো যেগুলো তাদের বিশেষত্বের জন্য এখন পৃথিবীব্যাপী মানুষের নিকট আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। চলুন তাহলে জেনে আসি সেই গর্তগুলোর কথা।
১০) চুকিকামাহ , চিলি
চুকিকামাহ হচ্ছে দক্ষিণ চিলির কালামা প্রদেশের নিকট অবস্থিত একটি তামা উত্তোলনের খনি যাকে বলা হয় পৃথিবীতে মানুষের সৃষ্ট সর্ববৃহৎ আয়তনের গর্ত। এটি চুকি/চুকুই নামে অধিক পরিচিত। এই খনি থেকে এখন পর্যন্ত পৃথিবীর অন্যান্য তাম্র খনিগুলোর তুলনায় সবচেয়ে বেশি পরিমাণ তামা উত্তোলন করা হয়েছে। তথাপি এই খনি মজুদ তামার পরিমাণের দিক থেকে পৃথিবীর বৃহত্তম নয়।
চুকি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২,৮৫০ মিটার উপরে অবস্থিত। এর গভীরতা ৮৫০ মিটার। ১৮৭৯ থেকে ১৯১২ সালের মধ্যে এই খনি খনন করা হয়। ১৯৫২ সাল থেকে এতে ‘ফ্লোটেশন’ এবং ‘মেল্টিং’ এর যন্ত্রপাতি বসানো হয়। পরে ১৯৬৮ সালের দিকে এতে ‘রিফাইনিং’ বা পরিশোধন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হলে এর বাৎসরিক উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়ায় পাঁচ লাখ টনে। চিলিতে তামার জাতীয়করণের পর থেকেই এর মালিকানা চিলির একটি রাষ্ট্রায়াত্ত কোম্পানি ‘কোডেলকো’ কোম্পানির অধীনে রয়েছে। গভীরতার দিক থেকে এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় গভীরতম।
৯) উদাচনি পাইপ রাশিয়া
উদাচনি পাইপ, রাশিয়ার শাখা প্রজাতন্ত্রের বিশাল কিম্বারলাইট ক্ষেত্রে অবস্থিত একটি হীরার খনি। ১৯৫৫ সালের ১৫ জুন এই খনি আবিষ্কৃত হয়। রাশিয়ান ভূতত্ত্ববিদ ভ্লাদিমির শুকিন এবং তার সহকর্মীরা মিলে এই খনিটি আবিষ্কার করেন। মজার ব্যাপার হলো- এই খনিটি আবিষ্কারের মাত্র দুইদিন আগেই রাশিয়ানরা ‘মির’ নামক আরও একটি হীরা মজুদ আছে এমন খনির সন্ধান পায় যা ভূতাত্ত্বিকভাবে উদাচনির সাথে সদৃশ্যপূর্ণ। এর গভীরতা ৬০০ মিটার যা একে পৃথিবীর তৃতীয় গভীরতম গর্ত হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এর বাৎসরিক উৎপাদন ক্ষমতা ১০ মিলিয়ন ক্যারেট এবং এতে মজুদ আছে প্রায় ২২৫ মিলিয়ন ক্যারেট হীরা! ২০১০ সাল থেকে এই খনি রাশিয়ান কোম্পানি ‘এলরোসা’ এর মালিকানায় রয়েছে।
৮) নতুন আতঙ্ক সিংকহোল
২০০৭ সালে গুয়াতেমালা শহরে এক নতুন ধরণের প্রকৃতি সৃষ্ট গর্তের দেখা পায় পৃথিবী, যার নাম দেয়া হয় সিংকহোল। গুয়াতেমালার উত্তর-পূর্ব দিকে একটি রাস্তার মাঝে প্রায় ৩০ বর্গফুট জায়গা জুড়ে মাটি হটাৎ করে ধসে যায় এবং সৃষ্টি করে ১০০ মিটার গভীর গর্তের। এই ঘটনায় পাঁচ জন মানুষ মারা যায়। ঘটনার পরপরই পুলিশ এর চারপাশে ৫০০ ইয়ার্ড জায়গা জুড়ে ‘নো-গো জোন’ ঘোষণা করে এবং প্রায় এক হাজার মানুষকে সরিয়ে নেয়।
পরে তদন্তে জানা যায় যে, নর্দমার পাইপ ফেটে রাসায়নিক যুক্ত পানি সেই স্থানটির নিচে অবস্থিত ভলকানিক অ্যাশ, চুনাপাথর এবং অন্যান্য পাইরোক্লাস্টিক পদার্থ দ্রবীভূত করে ফেলে এবং সিংকহোলের সৃষ্টি করে। ২০১০ সালে গুয়াতেমালাতেই আরো একটি বড় সিংকহোলের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও বিশ্বের নানা প্রান্তে এরকম ছোট বড় সিংকহোলের দেখা পাওয়া যাচ্ছে যা মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
৭) কানাডার দিয়াভিক মাইন
‘দিয়াভিক ডায়মন্ড মাইন’ কানাডার ইউলোনাইফ শহর থেকে ৩০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত একটি হীরার খনি। এই খনিটি সেই অঞ্চলের আঞ্চলিক অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। এর উৎপাদন ক্ষমতা বাৎসরিক প্রায় ৮ মিলিয়ন ক্যারেট বা ১৬০০ কেজি হীরক। এতে প্রতিদিন কাজ করছে প্রায় এক হাজার শ্রমিক। তবে এটি খুব বেশি দিনের পুরনো নয়। ১৯৯২ সালে এই অঞ্চলে সার্ভে হয় যা থেকে দিয়াভিকের তথ্য পাওয়া যায়। ২০০১ সালের দিকে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
দিয়াভিক হীরক খনির গভীরতা সর্বোচ্চ ৯২ মিটার। তবে গভীরতা নয়, যা এটিকে বিশেষত্ব দিয়েছে তা হচ্ছে এর বরফে ঢাকা একটি অঞ্চলে অবস্থান যা কিনা শীত মৌসুমে বরফে ঢেকে যায়। এই খনিতে ২০০৩ সাল থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। এর মালিকানায় রয়েছে ‘রিও টিন্টো গ্রুপ’ এবং ‘ডোমিনিয়ন ডায়মন্ড কর্পোরেশন’। খনিটি পরিচালিত হয় দিয়াভিকের একটি স্থানীয় কোম্পানি ‘দিয়াভিক ইনকর্পোরেশন’ এর দ্বারা। এর জীবনকাল ১৬ থেকে ২২ বছর বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
৬) মির মাইন, সাইবেরিয়া
মির ডায়মন্ড মাইন যা মিরনি খনি হিসেবেও পরিচিত, রাশিয়ার পূর্ব সাইবেরিয়ার মিরনি অঞ্চলে অবস্থিত পৃথিবীর চতুর্থ গভীরতম গর্ত। এর গভীরতা ৫২৫ মিটার এবং ব্যাস ১২০০ মিটার যা একে করেছে অনন্য। এর উৎপাদন বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। ১৯৫৫ সালের ১৩ জুন রাশিয়ার ভূতত্ত্ববিদ খাবারডিন এর নেতৃত্বে একদল ভূতত্ত্ববিদ মিরনি অঞ্চলে হীরার মজুদ এর সন্ধান পান। এই আবিষ্কারের পুরস্কার হিসেবে তিনি ‘লেনিন প্রাইজ’ পান যা সোভিয়েত রাশিয়ার অন্যতম সম্মানজনক পুরস্কার।
সাইবেরিয়ার ভয়ানক ঠান্ডা পরিবেশে এর নির্মাণ কাজ করা কঠিন হয়ে পরে। তথাপি রাশিয়ান সরকারের আগ্রহে ১৯৫৭ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হবার মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৬০ সাল থেকে এর উৎপাদন শুরু হয়। শুরুর দিকে এই খনি থেকে বছরে ১০ মিলিয়ন ক্যারেট (২০০০ কেজি) হীরক উৎপাদন করা হত। কিন্তু অতিরিক্ত উৎপাদন খুব দ্রুতই এর জীবনকাল হ্রাস করে। মাত্র দশ বছর পরই মির থেকে বছরে কেবল দুই মিলিয়ন ক্যারেট হীরক উৎপাদন হত। ২০০৪ সালে মির খনিতে হীরা উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এবং ২০১১ সালে কর্তৃপক্ষ একে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে।
৫) গ্রেট ব্লু হোল, বেলিজ
ব্লু হোল বা নীল গহ্বর গুলো হচ্ছে পৃথিবীর প্রাকৃতিক বিস্ময়। বেলিজ উপকূলে অবস্থিত গ্রেট ব্লু হোল এমনই একটি দানবাকৃতির ব্লু হোল। বেলিজ শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে লাইটহাউজ প্রবালপ্রাচীরের নিকটবর্তী অবস্থিত এই ব্লু হোলটির গভীরতা ১০৮ মিটার, ব্যাস প্রায় ৩০০ মিটার। গবেষণায় জানা যায় এটি প্রায় ১৫ হাজার বছর পূর্বে গঠিত হয়েছিল। পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ার সাথে সাথে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যায় এবং জলনিমগ্ন হয় এই ব্লু হোলটি। এটি বৃহত্তর বেলিজ প্রবালপ্রাচীরের অংশ এবং জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো স্বীকৃত একটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ।
ব্লু হোলগুলো মূলত এক প্রকার সিংকহোল। পানিতে ডুবে থাকে বলে এদের বলা হয় সাবমেরিন সিংকহোল। ১৯৭১ সালের দিকে কোনো এক জ্যাক কস্তিয়া নামক ব্যক্তি গ্রেট ব্লু হোলকে বিশ্বে পরিচিত করেন। তবে এই নামটি প্রচলিত হয় আরও অনেক পরে। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত বই ‘টেন ইয়ার্স আন্ডার ওয়াটার’ বইয়ে প্রথম ‘গ্রেট ব্লু হোল’ নামটি ব্যবহার করেন এই বইয়ের লেখক ব্রিটিশ ডাইভার নেড মিডেলটন। এরপর থেকেই এই ব্লু হোলটি গ্রেট ব্লু হোল নামে পরিচিত।
৪) বিংহাম ক্যানিয়ন মাইন
বিংহাম ক্যানিয়ন মাইন যা কিনা স্থানীয় অধিবাসীদের নিকট কেনেকট কপার মাইন নামে পরিচিত, একটি অতি পুরাতন (অন্যান্য খনিগুলোর তুলনায়) তামার খনি যা যুক্তরাষ্ট্রের উতাহ প্রদেশের সল্ট লেক শহরের দক্ষিণ-পূর্বে ওকোয়া পর্বতশ্রেণীতে অবস্থিত। এটি পৃথিবীর বুকে মানুষের দ্বারা খোঁড়া গভীরতম গর্ত। এর গভীরতা ১২০০ মিটার এবং প্রস্থ প্রায় ৪ কিলোমিটার। এই খনিতে ১৯০৬ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে তামা উৎপাদন চলছে। ২০০৪ সাল পর্যন্ত বিংহাম থেকে উত্তোলিত মোট তামার পরিমাণ ১৭ মিলিয়ন টন, সোনা ৭১৫ টন, রূপা ৫,৯০০ টন এবং মলিবডেনাম ৩৮৬ কিলোটন। এই বিস্ময়কর উৎপাদন ক্ষমতা একে দিয়েছে বিশ্বের সর্বোচ্চ উৎপাদনশীল খনির স্বীকৃতি। খনিটির মালিকানায় রয়েছে রিও টিন্টো গ্রুপ এবং পরিচালিত হচ্ছে কেনেকট উতাহ কপার কর্পোরেশন এর দ্বারা।
৩) বিস্ময়কর মন্টিসেলো ড্যাম
মন্টিসেলো ড্যাম যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের নাপায় অবস্থিত একটি বিশালাকায় খিলান সদৃশ কংক্রিটের বাঁধ। এটি ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে তৈরী করা হয়। বাঁধটি পুতাহ নামক খাঁড়ির পানি আটকিয়ে ভাকা পর্বতশ্রেণীর মাঝে বেরিয়েসা লেক তৈরীর জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। উচ্চতায় এটি ৯৩ মিটার, দৈর্ঘ্যে ৩১২ মিটার এবং চওড়ায় ৩০ মিটার।
মন্টিসেলো বাঁধটি মূলত সলানো প্রজেক্টের একটি অংশ হিসেবে তৈরী করা হয় যার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল সলানো এবং ইয়োলো প্রদেশের ৯৬ হাজার একর কৃষি জমিতে সেচের ব্যবস্থা করা। তবে জমি অধিগ্রহণের সময় বেরিয়েসা উপত্যকার স্থানীয় অধিবাসীগণ এই সলানো প্রজেক্টের বিরোধিতা করেছিল। ১৯৫৭ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হবার পর এই বাঁধের জলাধার পরিপূর্ণ হতে সময় নিয়েছিল প্রায় ছয় বছরের মতো। মন্টিসেলোর জলাধার সর্বপ্রথম এর সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতায় পৌছায় ১৯৬৩ সালের এপ্রিল মাসে। সেই থেকেই বেরিয়েসা শহর তলিয়ে গেলেও এখনো শুষ্ক মৌসুমে মন্টিসেলোতে বেরিয়েসার ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়। ২০১২ সালের আগে পর্যন্তও মন্টিসেলো বাঁধ এবং বেরিয়েসা লেকে বছরে প্রায় ১.৩ মিলিয়ন দর্শনার্থী ঘুরতে আসতো। কিন্তু সংখ্যাটা ধীরে ধীরে কমে যায় বাজেট সমস্যা, রিসোর্টের অভাব এবং কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায়।
২) দক্ষিণ আফ্রিকার কিম্বারলি হীরক খনি
দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তরাঞ্চলীয় অন্তরীপের কিম্বারলিতে অবস্থিত কিম্বারলি হীরক খনিকে বলা হয় পৃথিবীতে মানুষের হাতে খোঁড়া গভীরতম এবং বৃহত্তম গর্ত। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য ৪২ একর জায়গা জুড়ে অবস্থি ৪৬৩ মিটার প্রশস্ত এই খনিটি সম্পূর্ণই মানুষের হাতে খোঁড়া। প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক প্রাথমিকভাবে ২৪০ মিটার পর্যন্ত খনন করে কেবল গাইতি আর বেলচার সাহায্যে এবং এসময় তারা ৩ লাখ টনেরও অধিক মাটি অপসারণ করে! পরে অবশ্য মাটি ও পাথরের ধ্বংসাবশেষ দ্বারা প্রায় ২৫ মিটার ভরাট হয়ে যায়। অবশিষ্ট ২১৫ মিটারের ৪০ মিটার পানিতে ভরে যাওয়ায় বর্তমানে দৃশ্যমান রয়েছে ১৭৫ মিটার। সাম্প্রতিক সময়ে একে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃত করার প্রচেষ্টা চলছে।
কিম্বারলি ডায়মন্ড মাইন ‘দ্য বিগ হোল’ নামেও পরিচিত। ১৮৬৬ সালে এর খনন কাজ শুরু হয়, শেষ হয় ১৯১৪ সালে। একে মানুষের হাতে খোঁড়া বৃহত্তম গর্ত বলা হলেও এতে রয়েছে বিতর্ক। ‘জ্যাগারসফন্টেইন’ নামে অপর একটি খনি কে এই রেকর্ডের স্বীকৃতি দিয়ে থাকেন অনেকে। এই খনি থেকে মোট তিন হাজার কেজি হীরা উত্তোলন করার পর এটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। কিম্বারলি, জ্যাগারসফন্টেইন কিংবা ব্লুফন্টেইন (তিনটিই দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থিত), বৃহত্তম যেটিই হোক না কেন, প্রতিটি খনিই মানুষের অবিশ্বাস্য পরিশ্রমী এবং সাহসী পদক্ষেপের নিদর্শন হয়ে আছে।
১) জাহান্নামের দরজা!
জাহান্নামের দরজা! নাম শুনেই আঁতকে উঠেছেন নিশ্চই। এবার যদি বলি এই দরজা পৃথিবীতেই কোথাও অবস্থিত তখন কি বলবেন! নাহ, ভয় পাবার কিছু নেই। এই দরজা আসল জাহান্নামের নয়। সেটা কিরূপ হতে পারে তা মানুষের ধারণার বাইরে। তবে তুর্কমেনিস্তানের কারাকুম প্রদেশের দারবাজা গ্রামে এমনই একটি জলন্ত গর্ত আছে যা দেখলে আপনিও হটাৎ জাহান্নামের দরজা ভেবে ভুল করতে পারেন।
আসগাবাদ থেকে ২৬০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত দারবাজা অঞ্চলটি ছিল প্রাকৃতিক গ্যাস সমৃদ্ধ। ১৯৭১ সালে সোভিয়েত ভূতত্ত্ববিদগণ প্রথম এখানে প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান পান। গ্যাসের পরিমাণ ও আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য তারা সেখানে খোঁড়াখুঁড়ি করছিলেন। অকস্মাৎ সেখানে ভূমিধ্বস সংঘটিত হয় এবং প্রায় সাথে সাথেই ৭০ মিটার গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়। মাটি খোঁড়ার যন্ত্রপাতিসহ বিজ্ঞানীদের তাবু তাৎক্ষণিকভাবে গর্তে চলে যায়। সৌভাগ্যবশত সেখানে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিন্তু গর্ত থেকে এতো ব্যাপক পরিমাণে মিথেন গ্যাস বের হচ্ছিল যে, তা আশেপাশের এলাকার মানুষের স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর ছিল। তাছাড়া পরিবেশ দূষণের ব্যাপারটা তো ছিলই।
প্রাথমিকভাবে বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন গ্যাসের পরিমাণ খুব বেশি হবে না। তাই পরিবেশ দূষণ রোধ করতে তারা দ্রুত সেই গর্তের সকল গ্যাস নিঃশেষ করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গর্তের গ্যাসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে সেই আগুন আর নেভেনি, ৪৬ বছর যাবত তা জ্বলছেই! তবে ২০১০ সালে তুর্কমেনিস্তান প্রেসিডেন্ট স্থানটি পরিদর্শন করেন এবং সেখানে আগুন নিভিয়ে গ্যাস উত্তোলনের কথা বলেন। তবে সাত বছর পর আজও কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ চোখে পড়ে না। বরং বিশেষজ্ঞরা বলছেন- এটি বন্ধ করা এতো সোজা হবে না। সে যাই হোক, চার দশকের অধিক সময় ধরে জ্বলতে থাকা এই গ্যাসের গর্তটি এখন বিশ্বজুড়ে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য একটি আকর্ষণীয় জায়গা হয়ে উঠেছে।
তথ্যাসূত্র
১) smashinglists.com/top-10-strange-holes-in-the-world/
২) youtube.com/watch?v=2ZQmQwUKOLs
৩) listverse.com/2014/08/07/10-totally-bizarre-holes-in-the-earth/
৪) planetdolan.com/15-strangest-holes-on-earth/
৫) wn.com/top_10_strangest_holes_on_earth