The sea is calm tonight.
The tide is full, the moon lies fair
Upon the straits; on the French coast the light
Gleams and is gone; the cliffs of England stand,
Glimmering and vast, out in the tranquil bay.
– ডোভার বিচ, ম্যাথিউ আরনোল্ড
কবি ম্যাথিউ আরনোল্ডের ‘ডোভার বিচ’ কাব্যে এভাবেই উঠে এসেছে ইংল্যান্ডের চূড়ার কথা (The cliffs of England)। সমুদ্রের কোল ঘেঁষে সগৌরবে দণ্ডায়মান ডোভারের শ্বেতচূড়াগুলো ইংল্যান্ডের সাহিত্য, ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের অংশ। ইউরোপের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকা এই শ্বেতচূড়া দেশটির অন্যতম প্রাকৃতিক নিদর্শন। ‘দেশের প্রবেশদ্বার’ হিসেবে পরিচিত এই চূড়াগুলো রুখে দিয়েছে বেশ কয়েকটি সামরিক অভিযান। ইংল্যান্ডকে বাঁচিয়েছে জুলিয়াস সিজার থেকে শুরু করে হিটলারের নাৎসি বাহিনীর অবশ্যম্ভাবী আগ্রাসন থেকে। এ যেন সীমান্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী। তাই এই চূড়া নিয়ে ব্রিটিশদের আবেগ অন্যরকম।
ডোভারের শ্বেতচূড়া
ইংল্যান্ডের কেন্ট কাউন্টিতে অবস্থিত ডোভার শহরের সৈকতে ১০ মাইল বিস্তৃত রয়েছে এই শ্বেতচূড়াগুলো। এই চূড়াগুলো ইংল্যান্ডের সাথে ফ্রান্সের সর্বনিম্ন দূরত্ব বিন্দু (প্রায় ২০ মাইল)। প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু এই চূড়াগুলো দূর থেকে নজরে আসলেই আপনি বুঝে যাবেন ইংল্যান্ডে পৌঁছে গেছেন। বিশেষ করে যুদ্ধ চলাকালে এই ডোভারের চূড়াগুলোকে সর্বশেষ বিদায় জানিয়ে সৈনিকরা যুদ্ধে গিয়েছিল। ফের যুদ্ধশেষে এই চূড়ার প্রথম অভিবাদনেই দেশে ফিরেছিল তারা। তাই এটি দেশটির প্রাকৃতিক প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত।
এই শ্বেতচূড়ার দিকে তাকালে মনে হবে সরাসরি সাগর থেকে উঠে এসেছে এই সাদা পাহাড়গুলো। অনেকটা শিশুদের কাঁপা হাতের চিত্রাংকনের মতো দেখতে প্রকৃতির হাতে গড়া এই চূড়াগুলোর শ্বেতশুভ্রতা সারাবিশ্বের পর্যটকদের নজর কেড়েছে।
যেভাবে গঠিত হলো
ইংল্যান্ডের শ্বেতচূড়াগুলো প্রথমে আপনাকে মুগ্ধ করবে। পরক্ষণেই এর গঠনশৈলী দেখে কৌতূহল জাগবে, কীভাবে গঠিত হয়েছিল এই শ্বেতচূড়া? পৃথিবীর ইতিহাসে ঘটা বরফ যুগের সময় এই শ্বেতচূড়াগুলো গঠিত হয়েছে। সময়ের হিসাবে আজ থেকে প্রায় ৩৬ লাখ বছর পূর্বের ঘটনা। এর প্রধান উপাদান হচ্ছে চুনাপাথর। তবে ৭০ মিলিয়ন বছর পূর্বে বর্তমান ইংল্যান্ডের ভূমি সমুদ্রের নিচে নিমজ্জিত ছিল। সেই সাগর জলের নিচের পৃষ্ঠ শ্বেত কাদায় গঠিত ছিল। আর এই কাদার স্তর মূলত ককোলিথ নামক শৈবালের কাঠামোবিশেষ দ্বারা গঠিত হয়েছিল। ককোলিথ শৈবাল তখন সাগরের জলে ভেসে থাকতো। ককোলিথের কঙ্কাল কাঠামো দিয়ে গঠিত সেই শ্বেত কাদা একসময় নানা পরিবর্তনের মাধ্যমে চুনাপাথরে রূপান্তরিত হয়।
তবে এক-দুই বছরে চট করে এই পরিবর্তন সাধিত হয়নি। এ জন্য লেগে গেছে কয়েক মিলিয়ন বছর। এই চুনাপাথর জমা হওয়ার হার ছিল খুবই মন্থর। প্রতিবছর মাত্র আধা মিলিমিটার পরিমাণ চুনাপাথর জমা হতো। এই আধা মিলিমিটার চুনাপাথরে থাকতো ১৮০টি শৈবালের কাঠামো। এই মন্থর গতিতে চুনাপাথর জমতে জমতে একসময় এখানে গড়ে উঠে ৫০০ মিটার বিস্তৃত চুনাপাখরের স্তর। ককোলিথ ছাড়াও এই চুনাপাথরের মাঝে স্পঞ্জ, শামুকসহ বহু বিলুপ্ত সামুদ্রিক প্রাণীর জীবাশ্ম লুকিয়ে আছে। তাছাড়া বরফ যুগের শেষদিকে ইংলিশ চ্যানেলের দিক থেকে চুনাপাথরের আগ্রাসন ঘটে, যার ফলে বর্তমান ইংল্যান্ড সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
তবে শ্বেতচূড়ার মতো বিস্তৃত কোনোকিছু গঠনে বিপুল পরিমাণ শৈবালের প্রয়োজন। সাধারণত দেখা যায়, অন্যান্য অণুজীবের সাথে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এসব শৈবালের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই প্রশ্ন থেকে যায়, শ্বেতচূড়া গঠনের জন্য শৈবালের জনসংখ্যা বিস্ফোরণের কারণ কী? এর কারণ হিসেবে সমুদ্রবিজ্ঞানীরা বেশকিছু ব্যাখ্যা বের করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি ব্যাখ্যা হচ্ছে, ককোলিথ এবং ডায়াটম নামক সামুদ্রিক শৈবালের বৃদ্ধি এবং বংশবিস্তারের পেছনে নাইট্রেট, লৌহ এবং সিলিকেট প্রধান ভূমিকা পালন করে। সাগরের কোনো অংশে লৌহের পরিমাণ বেশি থাকলে সেখানে এই দুই শৈবালের বংশবিস্তারের মাত্রা বেড়ে যায়। লৌহ এবং সিলিকেটের পরিমাণ বেশি থাকলে ডায়াটমের বৃদ্ধি ককোলিথকে ছাড়িয়ে যায়। উপরন্তু, উচ্চমাত্রার নাইট্রেট এবং অল্প পরিমাণ লৌহ থাকলে ককোলিথের বৃদ্ধি বেশি হয়। এ ধরনের পরিবেশই এখানে ককোলিথের উচ্চ হারের বংশবিস্তারের পেছনে দায়ী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে এ ধরনের উচ্চ বংশবিস্তারের কারণে এখানে গড়ে উঠেছে এই চূড়াগুলো।
ইতিহাসের পাতায়
ইংল্যান্ডের ইতিহাসের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছে এই শ্বেতচূড়ার নাম। এর প্রধান কারণ, শত্রুপক্ষ ইংল্যান্ডে প্রবেশের জন্য এই পথটি বেছে নিত। ডোভারের উচ্চভূমি তখন ইংরেজদের সামরিক এবং কৌশলগত সুবিধা প্রদান করত। ইতিহাসের অন্যতম সেরা রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারও ডোভার প্রণালী দিয়ে ইংল্যান্ড আক্রমণ করেছিলেন। ইতিহাসের পাতায় এই চূড়ার অভিষেক ঘটে তখনই- খ্রিস্টপূর্ব ৫৫ অব্দে। সেবার দুই লিজিয়ন রোমান সৈনিক নিয়ে সমুদ্রপথে আক্রমণ করেছিলেন জুলিয়াস সিজার। ডোভার সৈকতের নিকটে আসার পর সিজার বাহিনীর নজর গেলো এই শ্বেতচূড়াগুলোর দিকে। চূড়ার শীর্ষে ঝাঁকে ঝাঁকে সশস্ত্র সৈনিকরা সিজার বাহিনীকে পিছু হটানোর জন্য অপেক্ষা করছে। রণপটু সিজার বুঝতে পেরেছিলেন শত্রুপক্ষ ভৌগোলিক অবস্থানের পূর্ণাঙ্গ সুবিধা আদায় করে তার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। তাই তিনি সেখানে নোঙর ফেলতে ব্যর্থ হন। বরং সিদ্ধান্ত পাল্টে ডিল এর উপকূলে নোঙর ফেলেন। সেই থেকে এই চূড়াগুলো দেশটির ইতিহাসে প্রাকৃতিক দুর্গ এবং প্রহরী হিসেবে সাব্যস্ত হয়। তাছাড়া নির্বাসন শেষে রাজা ২য় চার্লস ১৬৬০ সালের মে মাসে ডোভারের সৈকতে পদার্পণ করেন। এই গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে এই চূড়া।
শত্রুপক্ষের আগ্রাসন রুখে দিতে লৌহ যুগে পূর্বদিনের চূড়ায় স্থাপন করা হয়েছে দুর্গ। একাদশ শতকে স্থাপিত এই দুর্গগুলোতে পরবর্তীতে যুগোপযোগী সংস্কার করা হয়। দুর্গের পাশাপাশি চূড়ার বিভিন্ন অংশে খনন করা হয় একাধিক সুড়ঙ্গপথ। ১ম বিশ্বযুদ্ধের সময় এসব সুড়ঙ্গকে হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। ২য় বিশ্বযুদ্ধেও এসব সুড়ঙ্গের ব্যবহার হয়েছিল। ডানকার্ক থেকে ব্রিটিশ সেনাদের উদ্ধার করার পর এখানে জড়ো করা হয়। সুড়ঙ্গপথে বেশ কিছু কুঠুরি নির্মিত হয়েছিল। এদের একটি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী স্যার উইন্সটন চার্চিলের যুদ্ধকালীন ব্যক্তিগত কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। চার্চিলের নির্দেশে চূড়াগুলোর গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোতে গোলন্দাজ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। এছাড়া অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট অস্ত্রও রাখা হয়েছিল এখানে।
জাহাজডুবির অবশেষ
ডোভারের চূড়ায় উঠলে আপনার চোখে পড়বে সাগরজলে নিমজ্জিত দুটি জাহাজের ধ্বংসাবশেষ। বিগত শতাব্দীতে ডুবে যাওয়া এই দুটি জাহাজ হচ্ছে এস এস ফ্যালকন এবং প্রুসেন। দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ডোভার প্রণালীতে ডুবে যায় এই দুটি জাহাজ। এস এস ফ্যালকন ছিল বাষ্প ইঞ্জিন চালিত একটি স্টিমার। গাঁজা এবং দেশলাই বাক্স বোঝাই এই জাহাজটি সমুদ্রে চলা অবস্থায় অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয় ১৯২৬ সালে। এরপর সেখানেই সলিল সমাধিস্থ হয় জাহাজটি।
আর প্রুসেন আরেকটি জাহাজের ধাক্কায় নিমজ্জিত হয়েছিল ১৯১০ সালে। নাবিকের হিসাবে গণ্ডগোল পেকে গেলে প্রুসেন পথিমধ্যে আর এম এস ব্রাইটন নামক আরেকটি জাহাজের সাথে ধাক্কা খায়। এরপর সেখানেই ডুবে যায়। ডোভারের চূড়া থেকে এই দুটি জাহাজের দিকে তাকিয়ে যেন সেই পুরানো সময়ে ফিরে যায় দর্শনার্থীরা। তাই অন্যতম দর্শনীয় বস্তুতে পরিণত হয়েছে জাহাজ দুটো।
সাহিত্যে ডোভারের চূড়া
শুধু যুদ্ধ, প্রতিরোধ আর ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষীই নয়, একইসাথে বিভিন্ন সাহিত্যিকের মস্তিষ্কপ্রসূত সৃষ্টিতেও স্থান পেয়েছে এই ডোভারের শ্বেতচূড়া। কবিতা, উপন্যাস, নাটকসহ সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় অনুপ্রেরণা এবং ঘটনায় প্রয়োজনে উপজীব্য হয়ে উঠেছে এই চূড়াগুলো। এর অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন হচ্ছে জুলিয়াস সিজারের স্মৃতিলিপি। সেখানে তিনি তার ইংল্যান্ড অভিযানের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এই ডোভারের চূড়ার কথা উল্লেখ করেছেন। এই প্রবন্ধের শুরু উল্লেখ করা হয়েছে কবি ম্যাথিউ আরনোল্ডের বিখ্যাত কবিতা ‘ডোভার বিচ’। এই কবিতায় তিনি ইংল্যান্ডের উঁচু চূড়ার বর্ণনা দিয়েছেন। ১৮৬৭ সালে রচিত এই কবিতার চূড়াই ডোভারের শ্বেতচূড়া। বিখ্যাত নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়ার এই চূড়ায় শুভ্রতায় অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন তার বিখ্যাত ‘কিং লিয়ার’ নাটক রচনা করার। এজন্য তার নামানুসারে একটি চূড়ার নাম রাখা হয়েছে ‘শেক্সপিয়ার চূড়া’।
আধুনিক সাহিত্যেও রয়েছে এই স্থানের বর্ণনা। অ্যাকশন ঘরানার সিনেমা সিরিজ জেমস বন্ডের মূল উপন্যাস লিখেছেন ইয়ান ফ্লেমিং। শেক্সপিয়ারের ন্যায় তিনিও এই চূড়ার শুভ্রতায় লেখার অনুপ্রেরণা পেতেন। তাই চূড়ার পাদদেশে মারমেড কটেজ নামক কুটিরে বসে তিনি একাধিক জেমস বন্ড উপন্যাস রচনা করেছেন। এর মধ্যে ‘মুনরেকার’ উপন্যাসে জেমস বন্ডকে বধ করার জন্য খলনায়ক বোমা মেরে এই চূড়া উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল।
জীবাশ্ম
আমরা আগেই জেনেছি, ডোভারের চূড়ায় ককোলিথ ছাড়াও বহু প্রাগৈতিহাসিক সামুদ্রিক এবং স্থল প্রাণীর জীবাশ্ম লুকিয়ে আছে। এদের মধ্যে বহু বিলুপ্ত প্রাণীর জীবাশ্ম রয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এর ফলে গবেষকদের নিকট এই শ্বেতচূড়ার গুরুত্ব আলাদাভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকটি জীবাশ্ম খননের মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়েছে। ক্রিটেসাস যুগের বিলুপ্ত সামুদ্রিক প্রাণীর জীবাশ্ম হিসেবে এগুলো চিহ্নিত হয়েছে। আজ থেকে ১৪৫.৫ থেকে ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে এই যুগ চলমান ছিল। এসব প্রাগৈতিহাসিক জীবাশ্ম গবেষণার মাধ্যমে আমাদের নিকট তৎকালীন পৃথিবীর সুস্পষ্ট চিত্র ধরা দেবে। এই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ এবং বিস্তার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করা সম্ভব হবে।
এখানে উদ্ধার হওয়া জীবাশ্মের মধ্যে প্রাচীন হাঙরের দাঁত, বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক আরচিন, ভেন্ট্রিকুলাইটস, বিভিন্ন প্রজাতির স্পঞ্জ, সাউরিয়ান, ব্রেন কোরালের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন জাদুঘর এবং গবেষণাগারে এসব জীবাশ্ম নিয়ে বিস্তর গবেষণা হচ্ছে। গবেষণালব্ধ জ্ঞানকে পুঁজি করে উত্তর মিলছে নানা অজানা প্রশ্নের।
শান্তির প্রতীক
২য় বিশ্বযুদ্ধের বর্বরতা এবং ভয়াবহতার কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। নাৎসি বাহিনীর আতঙ্কে পুরো ইউরোপ তখন ত্রস্ত ছিল। ফ্রান্সের পতনের পর নাৎসি আগ্রাসন যখন ইংল্যান্ডকে চোখ রাঙ্গানি দিচ্ছিলো, তখন সৈনিকদের মনোবল ধরে রাখতে রচিত হয়েছিল কবিতা, গান ও গীতিনাট্য। এসব রচনার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিল ভেরা লিন-এর রচিত ‘দ্য হোয়াইট ক্লিফস অফ ডোভার’ গানটি। পুরো যুদ্ধজুড়ে এই গান হয়ে উঠেছিল সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখার খোরাক। “There’ll be love and laughter, and peace ever after, tomorrow, when the world is free…”– এই কথাগুলো তখন ভীত জনতার বুকে সাহস যোগাতে সাহায্য করেছিল। এই ঐতিহাসিক গানের সাথে সেই সময় থেকে শান্তির প্রতীকে রূপান্তরিত হয়েছে ডোভারের সেই শ্বেত চূড়াগুলো। বিশ্বযুদ্ধে যাওয়া এবং যুদ্ধফেরত সকল যোদ্ধার মাতৃভূমির প্রথম দর্শন হতো এই চূড়াগুলো। দেশপ্রেম এবং শান্তির এই চিরন্তন প্রতীক সারাবিশ্বের দেশপ্রেমিকদের জন্য অনন্য নিদর্শন।
তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, ডোভারের শ্বেতচূড়ার অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। তিলে তিলে ক্ষয়ে যাচ্ছে বরফ যুগে শৈবালের কঙ্কাল থেকে গঠিত হওয়া এই অসাধারণ নিদর্শন। ২০০১ সাল এবং ২০১৩ সালে এই চূড়ার বেশ বড় অংশ ক্ষয় হয়ে ধ্বসে যায়। সময়ের সাথে সাথে এই ক্ষয় হওয়ার হারও বেড়ে যাচ্ছে। এর পেছনে বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তন এবং সামুদ্রিক ঝড়ের মাত্রা পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন। জলবায়ু বদলের ফলে সমুদ্রসীমার উচ্চতায় বাড়ছে। এর ফলে ভবিষ্যতে শক্তিশালী ঢেউয়ের আঘাতে ডোভারের চূড়ার ব্যাপক ক্ষয়সাধন হবে। প্রাকৃতিক কারণের বাইরে মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যার কারণে এমনটি হচ্ছে বলে পরিবেশবাদীদের মত। প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটকদের মুগ্ধ করা এই ডোভারের শ্বেতচূড়া একসময় হারিয়ে যাবে প্রকৃতির বুকে, তা মানা সহজ নয়। ইংল্যান্ড ছাপিয়ে এটি একটি আন্তর্জাতিক নিদর্শন। ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং প্রকৃতির খাতিরে এর রক্ষণাবেক্ষণে কার্যকরী এবং দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়া একান্ত কাম্য।